নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/
"রিম,
ছাপা বই হাতে আসার পর সুযোগ বুঝেই 'ক্যাফে বোহেমিয়ান' পড়ে ফেললাম। সত্যিকারের কিছু অবকাশ- আনন্দ পেলাম তোমার সাথে জড়িয়ে পড়া নানা দলের ভেতরে নিঃশব্দে ঢুকে গিয়ে, তাদের কাণ্ডকারখানা দেখে। দারুণ আনন্দ, ছন্দপতন, রসনা স্বাদ, লেজেগোবরে অবস্থা, কিছুই বাদ যায়নি। এভাবে লেখা দিয়ে আটকিয়ে ফেলতে পারাটাই তো বাহাদুরি।
এর মধ্যে যে কজন বিশেষ চরিত্রের মানুষ হঠৎ হঠাৎ এসে চমকে দিয়েছে বা ভাবনায় ফেলেছে তারাতো এদিকেও একই কাজ করছে। যেমন মাফিয়া প্রফেসর- ডক্টরাল ছাত্রীর আতঙ্ক , লিসবনের গাইড পেদ্রো লিসবনের স্বর্ণ যুগের থেকে আজকের সেখানকার সুশ্রী সুবেশী পকেটমারের মতিগতি পর্যন্ত যার নখদর্পনে। আর কিছুতেই মন থেকে ফেলতে পারছিনা পান্না সবুজ ইভনিং গাউন পরা শান্ত সমাহিত ফ্রাউ ব্রাউনআইসকে - গবেষণা হাসপাতালে প্রিয়জনের মুখটা শেষবার দেখানোটাই যাঁর দৈনন্দিন কাজ।
করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছে করলো লেখিকা সাইকেল চালককে আনাড়িপনার জন্য অনেকের গালি খেতে খেতেও যে মিউনিখের পুরো রাস্তা অতিক্রম থেকে বিরত হয়নি। আর স্ট্যান্ডিং করতালি একই জনকে নারী বিজ্ঞানী হিসেবে খাড়া পর্বতটি আরোহন আর সে অবস্থায় একই সঙ্গে দুরন্ত শিশু পুত্রের সঙ্গে চিরন্তন ম্যাজিক সম্পর্ক স্থাপনের আরেকটি পর্বতারোহন করে , কোনোটার কোনো কম্প্রোমাইজ না করে যেই শেরপা গভীর তৃপ্তি পেয়েছে।
বইটি আমাকে স্মৃতির মধ্যে মেলা দৌড়াদৌড়ি করিয়েছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে , আমার বিশ্বাস নানা ভাবে সব পাঠককেই করাবে। টেনেরিফের ডলফিন আর তিমির নিপুন কসরতের খেলা আমাকে মুহূর্তে চৌদ্দ বছর বয়সে জাপান গিয়ে দ্বিতীয় দিনেই একেবারে নতুন রকম মানুষের দঙ্গলে ও নতুন ভাষার ধারা বিবরণীর মধ্যে হুবহু ডলফিনের একই খেলায় নিয়ে গেলো।বাহাদুর ডলফিনকে বার বার মাছ খাওয়ানো সহ প্রত্যেকটি ধাপ একেবারে একই, স্মৃতিতে এখনো জ্বলজ্বল করছে।
ফ্লেমেনকো নাচের নিপুণা সুদর্শনা ও সুপুরুষদেরকে কিছুক্ষণ পরেই নকল দাঁত ,পরচুলা, কন্টাক্ট লেন্স ইত্যাদি খুলে ক্লান্ত ,ঘর্মাক্ত , মোটা চশমার আটপৌরে মানুষ বেশে দেখে যে মজা তুমি পেয়েছো সেটি মাল্টায় সমুদ্র তীরে বন্দরে জাহাজ থেকে নেমে দুর্ধর্ষ চেহারার আর বেশের গত যুগের এক দল জলদস্যুর মহড়া দেবার কথা মনে করালো , যাদের কয়েকজনকে দেখলাম নিরীহ নিপাট চশমাপরা ভদ্রলোক হয়ে হোটেলের ব্রেকফাস্ট টেবিলে আমাদের সঙ্গে গল্প করতে ।
পেদ্রোর সাবধান বাণীর কারণেই হোক তুমি লিসবনে সুবেশী পকেটমারকে ঠিক সময়ে ধরে ফেললে , অথচ সুইজারল্যান্ডের ছোট্ট শহর ইন্টারলোখেনের স্টেশনে ভদ্রবেশী পকেটমার আমাকে বোকা বানাতে পারলো এই আক্ষেপ এতো দিন পর আবার নতুন ভাবে জাগলো । তোমার পর্তুগালে সমুদ্র তীরে ধরে চলা বাসে ঝিমিয়ে ভাস্কো দা গামা লোকটিকে স্বপ্ন দেখার কথায় আমিও এক রকম ঘোরের মধ্যে পড়লাম , কারণ দুবছর আগে লোকটি আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে যখন আমার শিকড় বইটিতে পালতোলা জাহাজের ইতিহাস লেখার জন্য তাকেও রিসার্চ করছিলাম ।
তবে স্মৃতিতে একেবারে বিষণ্ণ থ' করে এসেছে আঠারো নম্বর টেগোর স্ট্রিটে তোমাদের রুমে যা ঘটেছে তা - রুমমেট অফিস সহকারী পেত্রা যখন সারা ঘর তছনছ করে খুঁজছিলো আত্মহত্যা করা মানুষটির লাশের সঙ্গে দেবার ডকুমেন্টটি যেটি কোথায় কোন কাপড়ের ভাঁজে আটকে চোখের আড়াল হয়েছে, তোমার তখন নির্বাক চিন্তা লোকটি মরতে গেলো কেন ? আর এটি আমাকে নিয়ে গেলো আমার ছাত্রজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে নিয়ে আবার একই প্রশ্নে , যে সুইডেনে এই কাজ করেছে, সে এটি কেন করতে গেলো , কী ভেবে? বইটি মিউনিখে সব কিছু টাটকা সামনে রাখা তোমার চিন্তা, ঢাকায় আমার চিন্তা এবং আরো কত পাঠকের একই চিন্তাকে হয়তো জীবনানন্দের সেই চিরন্তন প্রশ্নে শামিল করবে :
...শোনা গেছে লাশকাটা ঘরে
নিয়ে গেছে তারে,
কাল রাতে ফাল্গুনের রাতের আঁধারে
যখন গিয়েছে ডুবে পঞ্চমীর চাঁদ
মরিবার হলো তার স্বাদ...।
পাঠকের চিন্তা ধরে রাখার সব উপাদান তুমি ব্যবহার করতে পেরেছো, অভিনন্দন। তোমার বিজ্ঞান গবেষণা অভিজ্ঞতাকে আরো সরাসরি এ রকম উপাদান করা যায় কিনা ভেবে দেখো।
অনেক শুভেচ্ছায়,
ইব্রাহীম "
(অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইব্রাহীম,
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
১১ ই মে, ২০২২ রাত ১:৫৮
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ভাই তাসনিম, আন্তরিক মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ আর শুভেচ্ছা জানবেন। বইটা রকমারিতে আছে। আগ্রহ হলে আর সুযোগ থাকলে পড়ার অনুরোধ রইল।
২| ০৯ ই মে, ২০২২ সকাল ১১:৩৮
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: চমৎকার রিভিউ। পড়ার লোভ জাগছে।
১১ ই মে, ২০২২ রাত ২:০০
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: পড়লে ভীষন খুশি হবো। সময়টা হয়তো বিফলে যাবে না, এটুকু বলতে পারি।
৩| ১০ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
১১ ই মে, ২০২২ রাত ২:০০
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: রাজীব ভাই, বরাবরের মত অনেক ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
৪| ০১ লা জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:২৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: কি সুন্দর করেই না রিভিউটি লিখেছেন অধ্যাপক ইব্রাহীম! শব্দের কৃচ্ছতায় তার অন্তর্দৃষ্টির গভীরতা এবং ভাবনার বিশালতা ঢাকা পড়েনি। আন্তরিক মমতায় এক বিজ্ঞানী আরেক বিজ্ঞানীর সাবলীল সাহিত্য কর্মকে গভীর মনোনিবেশে পাঠ করেছেন এবং নিজেও প্রাঞ্জল ভাষায় লিখে গেছেন তার পাঠোত্তর ভাবনাগুলোকে, যা একজন প্রতিষ্ঠিত সাহিত্য সমালোচকেরও ঈর্ষার কারণ হতে পারে।
বইটির লেখককে যেমন অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, ইব্রাহীম স্যারকেও এমন সুন্দর একটা রিভিউ লেখার জন্য জানাচ্ছি সাধুবাদ। উভয়ের জন্য মঙ্গল কামনা!
সাহিত্য ও বিজ্ঞান কখনোই একে অপরের প্রতি বৈরী ছিল না, এখনও নয় বলে মনে করি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ২:১৫
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: রিম সাবরিনা জাহান সরকার
বই কতোটা মনোযোগ আর ভালোবাসা দিয়ে দিয়ে পড়েছেন যিনি রিভিউ মনোযোগ সহকারে পড়বেন না তার পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়।
সুনর রিভিউ এবাউট 'ক্যাফে বোহেমিয়ান' ।
বইটির প্রচ্ছদও দারুণ।