নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যা-ই লিখি, কাঠবিড়ালীর মত এখানে জমিয়ে রাখি। https://rimsabrina.blogspot.com/
পাহাড়ে সন্ধ্যা নামে ঝপ করে। আকাশে পূর্নিমা পেরোনো ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ আজকে ল্যাম্পপোস্টকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে। কাছে-দূরের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাড়িগুলোকে লাগছে যেন দেয়াশলাইয়ের বাক্স আর লাল-মাথা শলাকা দিয়ে সাজানো পুতুলের ঘর। সাদা কুশি কাটার পর্দা গলে কম ওয়াটের স্নিগ্ধ কমলা আলো উঁকি দিচ্ছে। বুঝি বা কোনো বিরাট শিশু সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে দিয়ে গেছে খেলাঘরে।
শহুরে হুশ হাশ নেই, নেই কোনো কলরব। তবুও এই নিস্তরঙ্গ সাঁঝের একান্ত একটা কোলাহল আছে। পাতার মর্মরে, ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডানায় আর খেয়ালী হাওয়ায় কান পাতলে সেই কোলাহলের আশ্চর্য নিস্তরঙ্গ গর্জন শোনা যায়। মন্ত্রমুগ্ধের মত আল্পবাখের বাঁক ঘেঁষে হেঁটে চলছি।
রেস্তোরাঁর ভারী পাল্লা ঠেলে উঁকি দিতেই মনে হল, আরে এ কি। জাদুঘরে ঢুকে গেছি নাকি ভুল করে। দেয়ালে হরিণের খুলি। তার পাশে ভালুকের চামড়া টাঙ্গানো। স্টাফ করা শেয়াল থাবা উঁচিয়ে ধূর্ত চোখে তীক্ষ্ণ তাকিয়ে। এই বুঝি দিল এক লাফ। রেস্তোরাঁর মালিক শখের শিকারী ছিল বোধহয় এককালে। খুটিয়ে দেখছি সব, হঠাৎ কি যেন নড়ে উঠলো মনে হল। আঁতকে গিয়েও আবার হেসে ফেললাম। ধুর! মোটা মত নধর এক কালো বেড়াল। গুটিসুটি মেরে বসে ছিল এতক্ষন। কিন্তু শেয়ালের থাবার নিচে থাকতে আর স্বস্তি লাগছে না। হোক না যতই মমি-শেয়াল। তাছাড়া হেঁশেল থেকে জোর বাসনা বেরিয়েছে। একবার গিয়ে তদারকি না করলেই নয়। রেস্তোরাঁর ঝুটোকাটা খেয়ে খেয়েই যে বেড়াল বাবার এমন খোলতাই চেহারা হয়েছে, তা আর বলে দিতে হয় না। লোমশ, জয়ঢাক পেট মাটি ছুয়েছে। নবাবী কেতায় হেলেদুলে সে বেরিয়ে গেল।
খালি টেবিল চোখে পড়তেই টিং টিং আর আমি চটপট দখলে নিয়ে নিলাম। চারপাশে প্রফেসর আর রিসার্চ গ্রুপ লিডাররা ঘোট পাকিয়ে আলাপে মশগুল। মগ উপচানো বিয়ারের ফেনার সাথে সুগন্ধি মোমবাতির ফুলেল ঘ্রান মিলে কড়া ঝাঁঝ হয়ে নাকে ঝাপ্টা মেরে যাচ্ছে।
আমরা ডানে-বামে তাকিয়ে কোথাও মনিকাকে খুজে পেলাম না। সুতরাং টিং টিংয়ের সাথে খুচরো আলাপ জুড়লাম। তার পোস্ট ডক কেমন চলছে, জার্মানি কেমন লাগছে ইত্যাদি মামুলি কথাবার্তা। আলাপের ফাঁকে নকশাকাটা টেবিল ন্যাপকিনটা দিয়ে নৌকা বানিয়ে ফেললাম। হতাশ করে দিয়ে কাপড়ের নৌকাটা একদিকে হেলে পড়লো। উশখুশ লাগছে। মনিকাকে লাগতো। চাইনিজ টিং টিং আর বাঙালি আমি কথা জমাতে পারি না। আলাপের বিরিয়ানি পাকাতে ভারতীয় মশলা দরকার।
এমন সময় কোত্থেকে প্রফেসর আল্টেহাউস উদয় হল। ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের ওস্তাদ লোক। তার অন্য কলিগদের টেবিলে না গিয়ে সে এদিকে এল কি ভেবে, তাই ভাবছি।
‘জায়গা দেখি খালি পড়ে আছে, বসে পড়ি?’। নিজের প্রশ্নটা মাটিতে পড়ার আগেই প্রফেসর আল্টেহাউজ জাঁকিয়ে দখল করে নিল চেয়ারটা।
‘খেতে এসে বিজ্ঞান-টিজ্ঞান ভাল লাগে না, কি বলো?। মনের কথা এমন অকপটে কেউ বলে দিলে তাকে ভাল না লেগে যায় না। টিং টিং আর আমি আড়ষ্ট ভাবটা থেকে বেরিয়ে এসে ফিক্ করে হেসে সায় দিলাম। আজকের সন্ধ্যায় গল্প জমে ক্ষীর-ছানা-সন্দেশ হতে সময় লাগবে না।
প্রফেসর আপাতত কাটা-চামচ দিয়ে কাঠের টেবিলে তবলা ঠুকছে, ‘কই খেতে দিচ্ছে না কেন এরা? পাহাড়ে আপ-ডাউন করে তো হজম হয়ে গেলাম’। তারপর হুমহাম হাঁক-ডাক জুড়ে দিল, ‘এই, হেই, অন্তত ঘাসপাতার অ্যাপেটাইজার দিয়ে যাও। বিরাট অ্যাপেটাইট নিয়ে বসে আছি তো’। প্রফেসর আল্টাহাউজের শিশুসুলভ চঞ্চলতা দেখতে মজা লাগছে।
আর হল্লাহাটিতে চিরকালই কাজ হয়। বাহারি ঘেরওয়ালা স্কার্ট দুলিয়ে সুশ্রী মত ওয়েট্রেস এসে হাজির। হাতে পাঁচ-সাতটা থালা। তাতে সবুজ লতাপাতা লতিয়ে নামছে। ভীষন অনিচ্ছায় হাত বাড়ালাম। আরেক হাতে মেন্যু ধরিয়ে দেয়া হল। পাতা ওল্টাতে গিয়ে ভাবলাম, কি আর থাকবে। নির্ঘাত আধকাঁচা স্টেক, নইলে বিস্বাদ কোনো সবজির ঘ্যাটঁ। আল্পবাখে আসার আগে মেন্যু- বিষয়ক একটা ফর্ম পূরন করতে হয়েছে। রবারের মত ইলাস্টিক স্টেক-ফেক এড়াতে ভেজিটেরিয়ানের ঘরে টিক মেরেছিলাম। আর নিচে ছোট্ট করে লিখে দিয়েছিলাম, ‘মাছ খাই’। অবশ্য ‘হ্যাঁ‘ কিংবা ‘না‘-এই বাইনারি নিয়মে চলা জার্মানরা বিটুইন-দ্যা-লাইন পড়বে কি না সন্দেহ। এই মেছো বাঙ্গালের মাছের আর্তিটা হয়তো আমলেই নেবে না।
চারপাশের টেবিল থেকে টুকটাক কথাবার্তা ভেসে আসছে। তবে টুকরো কথাগুলো ভাল করে শুনলে বাইরের লোকে চমকে যাবে বই কি। শব্দগুলো ভয়ংকর। থার্ড কি ফোর্থ-স্টেজ ক্যান্সার, স্টমাক কি কোলন ছাড়িয়ে ফুস্ফুসে ছড়িয়ে পড়া মেটাস্ট্যাসিস, আর কাজ না করা কেমো- আর রেডিওথেরাপি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা সেসব পাশ কাটিয়ে নির্বিকার ঘাসের জাবর কাটছি কচর মচর। আর করবোই বা কি। আমাদের পুরো গবেষনা দলটারই কাজ ক্যান্সার নিয়ে। তাই এ ধরনের বাৎচিত ডাল-ভাতের মত মামুলি লাগে। তবুও হাসপাতালের রিসার্চ ইন্সটিটিউটের সীমানা ছাড়িয়ে এই জমকালো রেস্তোরাঁয় বসে কর্কট রোগের আলাপ খানিকটা কর্কশ শোনায়, মানতেই হল। (চলবে)
১৪ ই মে, ২০২২ রাত ৩:১৯
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আপু, আপনি পড়াতে কি যে খুশি হই। অনেক ধন্যবাদ নেবেন এই অধমের।
২| ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ৯:৪৮
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনার চাকুরীর কি অবস্হা?
১৪ ই মে, ২০২২ রাত ৩:২১
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: স্যার, সালাম। জেনে খুশি হবেন, চাকরি মিলেছে। মেডিকেল রাইটার হিসেবে। নতুন ড্রাগ আর ভ্যাক্সিনের ওপর রিপোর্ট, প্রটোকল ইত্যাদি রেগুলেটরি লেখালিখি করতে হবে। মাস খানেক পরেই শুরু। দোয়া করবেন যেন কাজ দেখাতে পারি।
৩| ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ৯:৫৪
বিজন রয় বলেছেন: অপরূপ!
আপনার বর্ণনাও সুন্দর।
তৃপ্ত হলাম।
১৪ ই মে, ২০২২ রাত ৩:২২
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: বিজন দাদা, শ্রদ্ধা জানবেন। আপনার উৎসাহ আগ্রহ ভরে নিলাম।
৪| ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ১০:০৫
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: দারুণ।
১৪ ই মে, ২০২২ রাত ৩:২২
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
৫| ১৩ ই মে, ২০২২ রাত ১০:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর।
১৪ ই মে, ২০২২ রাত ৩:২৩
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: রাজীব ভাই, বরাবরের মতই আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল।
৬| ১৪ ই মে, ২০২২ ভোর ৫:৪৩
ইসিয়াক বলেছেন: আপনার লেখা বরাবরই আমার ভালো লাগে।
লিখতে থাকুন।
শুভকামনা সব সময়।
১৪ ই মে, ২০২২ রাত ৯:১৪
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ভাই ইসিয়াক, উৎসাহের জন্যে সব সময়ে কৃতজ্ঞতা জানবেন। আপনিও ভালো থাকবেন।
৭| ১৪ ই মে, ২০২২ বিকাল ৪:১৩
তারেক ফাহিম বলেছেন: পোস্টে ভালোলাগা।
১৪ ই মে, ২০২২ রাত ৯:১৪
রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: তারেক ফাহিম ভাইকে অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৬
শায়মা বলেছেন: কর্কট রোগের আলাপের মাঝেও চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য দেখে মন ভরালো আপুনি।