নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।\nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।\nধন্যবাদ\n

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুড়ানো ( পর্ব ৩৩ ) নবাব সিরাজউদ্দৌলার পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে :)

১৩ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:০৫



ছবির এই ভদ্রলোকের নাম যুগলকিশোর রায়চৌধুরী। তার জীবনে লুকিয়ে আছে নাটকীয়তা।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদৌল্লার পরাজয়ের কাহিনী কারো অজানা নয়। ঠিক তেমনি মীরমদন ও মোহনলালের বিশ্বস্ততার কথাও সবাই জানি। মোহনলাল ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার একজন পেশকার। প্রভাবের দিক দিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সমান দায়িত্ব পালন করতেন। সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে মোহনলালের সখ্যতা ছিল। মোহনলালের বোনের নাম মাধবী। অসম্ভব রূপবতী এই কন্যাকে সবাই হীরা বলে ডাকতেন।

কাশ্মীর থেকে আগতা হীরার রূপে মুগ্ধ হলেন সিরাজউদ্দৌলা। মোহনলালের বোন হীরার সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলার অন্তরঙ্গতা হল, ক্রমে ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ল! সময়ে অসময়ে সিরাজউদ্দৌলা ছুটে যেতেন হীরার কাছে, তিনি তখন মুর্শিদাবাদেই থাকতেন। হীরার গর্ভে সিরাজের এক ছেলে জন্মগ্রহণ করল। যথারীতি হীরার কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন সিরাজউদ্দৌলা। তার ভেতর ভয়ংকর ভয় কাজ করতে লাগল, তিনি জানতেন বৃদ্ধ নবাব আলিবর্দি খান এই সংবাদ পেলে ভীষণ রাগ করবেন। সিরাজউদ্দৌলা হীরাকে সন্তানের কথা গোপন রাখতে বললেন, কোনোভাবেই যেন এই কথা আলিবর্দি খানের কানে গিয়ে না পৌঁছায়।

চিন্তামুক্ত হতে পারলেন না সিরাজউদ্দৌলা, পুত্র বড় হচ্ছে, খবর বেশিদিন গোপন রাখা যাবে না। আলিবর্দি খান যে কোনদিন জেনে যাবেন। সিরাজউদ্দৌলা কিছুতেই নিজের অস্থিরতা কাটাতে পারলেন না। একদিন সকালবেলা সিরাজউদ্দৌলা হীরার কাছে এসে বললেন, পুত্রকে দাও, পিতা পুত্র ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে আসি!

খুশি হয়েছিলেন হীরা, তিনি পুত্রকে নতুন কাপড়ে সাজিয়ে তুলে দিলেন সিরাজউদ্দৌলার হাতে। সিরাজউদ্দৌলা পুত্রকে নিয়ে গেলেন ফাঁকা মাঠের ভেতর, তাকে ঘোড়ার ওপর বসিয়ে বেঁধে দিলেন। তারপর ঘোড়ার শরীরে তীর ছুঁড়ে মারলেন। তীরবিদ্ধ ঘোড়া পিঠের উপর সিরাজউদ্দৌলার পুত্রকে নিয়ে তীব্রবেগে ছুটে চলল! খবর পেয়ে ছুটে এলেন হীরা, কিভাবে তিনি সন্তানকে বাঁচাবেন? হীরা ছুটে গেলেন ভাই মোহনলালের কাছে।

মোহনলাল নিজের ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন সিরাজউদ্দৌলার ঘোড়া যেদিকে গেছে সেইদিকে। তীরবিদ্ধ আহত ঘোড়ার নাগাল পেয়ে তিনি ঘোড়া থামালেন। হীরার কোলে ফিরিয়ে দিলেন তার প্রাণপ্রিয় সন্তানকে। এই ঘটনায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হলেন মোহনলাল, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে মুর্শিদাবাদ ছেড়ে চলে যাবেন। আলিবর্দি খান খবর পেলেন, ঘটনা শুনে থমকে গেলেন আলিবর্দি খান। বহুদর্শী আলিবর্দি খান বুঝতে পারলেন এই সাহসী ও সৎ দেওয়ান সিরাজকে পরিত্যাগ করলে বিপদটা সিরাজেরই। তিনি এই সমস্যার সমাধান করলেন, পরিস্থিতির চাপে হীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল। তার নতুন নাম হলো আলেয়া। সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে ইসলামী রীতিতে আলেয়ার বিয়ে হয়ে গেল। হীরাঝিল এই সিরাজপত্নীর নামেই, এখানে সিরাজ ও হীরার বিয়ে হয়েছিল বলে জানা যায়।

পলাশীতে নবাবের সেনাবাহিনী যখন বিভ্রান্ত ও বিপর্যস্ত, তখন মোহনলাল বুঝতে পারলেন ইংরেজ সৈন্যরা এবার নবাব পরিবারের সবাইকে আটক করবে। তারা সিরাজউদ্দৌলা আর তার বংশধরদের হত্যা করবে। মোহনলার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে এলেন, চারদিকে তখন হৈ হুল্লোড়। আর্তের বাঁচার আকুতি, হত্যা, চিৎকার! মোহনলাল ইংরেজ গুপ্তচরদের বিভ্রান্ত করতে রটিয়ে দিলেন তিনি যুদ্ধে আহত হয়েছেন। মোহনলালের যুদ্ধে জখম হওয়ার খবর দাবানলের মত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। মোহনলাল ছুটে গেলেন সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদে। তিনি সিরাজের শিশুপুত্রকে নিয়ে পালালেন। তার সঙ্গে রইল আর দুইজন বিশ্বস্ত সাথী বাসুদেব আর হরানন্দ। তারা পালাতে পালাতে আশ্রয় নিলেন ময়মনসিংহের বোকাইনগর দূর্গে। সাথী বাসুদেবের কাকা বিনোদ রায়ের কাছে শিশুটিকে রেখে তার নিরাপত্তা বিধান করলেন মোহনলাল।

মোহনলাল সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে ময়মনসিংহের জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর বড় ছেলে কৃষ্ণকিশোর চৌধুরীর কাছে গেলেন, তাকে ছয় বছরের শিশু সন্তানকে দত্তক নেওয়ার কথা বললেন। জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর দুই ছেলে, কৃষ্ণকিশোর আর কৃষ্ণগোপাল। ছোট ছেলে কৃষ্ণগোপাল দুইবার বিয়ে করলেও তার কোন সন্তান হয়নি। কৃষ্ণগোপাল সন্তান দত্তক নিতে রাজি হলেন। কৃষ্ণগোপাল শুধু জিজ্ঞেস করেছিলেন, কার সন্তান?
মোহনলাল শিশুর সত্যিকারের পরিচয় গোপন করে বললেন, বাসুদেবের কাকা বিনোদ রায়ের দ্বিতীয় সন্তান।

কৃষ্ণকিশোর কিংবা কৃষ্ণগোপাল কেউ জানতে পারলেন না তারা সিরাজউদ্দৌলার পুত্রকে দত্তক নিচ্ছেন। কৃষ্ণগোপাল বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন। পুত্র দত্তক নেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি জমিদারীর সবাইকে নিমন্ত্রণ জানালেন। পুত্রের নাম রাখলেন যুগলকিশোর রায়চৌধুরী। এইভাবে নবাব সিরাজের পুত্র হিন্দু পরিচয়ে বড় হয়ে ওঠেন।
যুগলকিশোর রায়চৌধুরী জেঠামশায় কৃষ্ণকিশোরের তত্ত্বাবধানে জমিদারী পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। ময়মনসিংহের এই জমিদার পরিবারের পারিবারিক সূত্র হতে তার সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। এই পরিবার হতে প্রতি বছর মহাসমারোহে রথযাত্রা উৎসব হতো। ১৭৬৪ সালে রথযাত্রায় এক দুর্ঘটনায় কৃষ্ণকিশোর ও কয়েকজন ভৃত্যের মৃত্যু হয়। এরপরে সেই পরিবারে রথযাত্রা নিষিদ্ধ হয়।

যুগলকিশোর রায়চৌধুরী বিয়ে করেছিলেন ফরিদপুর জেলার ভট্টাচার্য বংশের রুদ্রাণী দেবীকে। তার গর্ভে হরকিশোর ও শিবকিশোর নামে তার দুই পুত্র এবং অন্নদা, বরদা, মোক্ষদা ও মুক্তিদা নামে চার কন্যার জন্ম হয়। রুদ্রাণী দেবীর দুই পুত্র অল্প বয়সেই মারা যায়। যুগলকিশোর দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন পাবনার যমুনা দেবীকে। দ্বিতীয় পক্ষে তার প্রাণকৃষ্ণনাথ নামে এক পুত্র ছিল। যমুনা দেবী ও প্রাণকৃষ্ণনাথ তার সাথে সিলেটের কাজলশাহ নামক স্থানে বাস করতেন। এখানে যুগলকিশোর নতুন জমিদারী ক্রয় করেছিলেন।

সিলেটে তার দিনগুলো অন্যরকম ছিল। কারো সাথে তিনি মিশতেন না, এক প্রকার নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করতেন। তার পুত্র প্রাণকৃষ্ণনাথ পরবর্তীতে জমিদারী গ্রহণ করেন। সিলেটের উন্নতির জন্যে অনেক কাজ করেছিলেন প্রাণকৃষ্ণনাথ। সিলেটের বিখ্যাত যুগলটিলা আখড়া তিনি তৈরি করেন। কিছু কিছু সূত্রমতে কোনো এক ভাবে যুগলকিশোর রায়চৌধুরী তার বংশ পরিচয় জানতে পেরেছিলেন এবং মৃত্যুর আগে নিজ পুত্রকে তা বলে গিয়েছিলেন। ইংরেজ শাসনামলে এই তথ্য গোপন রাখার উপরও তিনি জোর দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এই পরামর্শও দিয়েছিলেন যে, তার বংশধরদের সবাই যেনো সিলেটে না থেকে একটি অংশ পদবী পরিবর্তন করে শিলং-এ চলে যায়।

যুগলকিশোরের জীবনের শেষ দিনগুলো কাজলশাহ-তেই কাটে। মৃত্যুর আগে তিনি তার পুত্র প্রাণকৃষ্ণনাথকে অনুরোধ করেন তাকে যেন সমাধিস্থ করা হয়। ১৮১১ সালে যুগলকিশোরের মৃত্যু হয়। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পারিবারিক জমিদারীতেই তাকে গোপনে সমাহিত করা হয়।

পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল অন্যরকম হলে ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন হয়ে যেতো। হয়তো যুগলকিশোর রায়চৌধুরী হতেন বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার পরবর্তী নবাব।

তথ্যঋণ:
১। রূপমঞ্জরী- নারায়ন সান্যাল
২। সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে- ড: অমলেন্দু দে

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:০৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: তানজীর অােমদ িসয়াম,




আলেয়া পর্বের এমন কথা আগে কোথাও শুনিনি।

১৩ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৫

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: আমি রেফারেন্স উল্লেখ করেছি , দয়া করে পড়ে নিবেন :)

২| ১৩ ই মে, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রথম জানলাম।

১৪ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:১২

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: শুকরিয়া :)

৩| ১৩ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯

অজ্ঞ বালক বলেছেন: অন্যত্র, অন্যভাবে পড়েছি। ঘটনা সত্য। সিলেটবাসী হিসেবে ভেরিফাই করে গেলাম।

১৪ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:১০

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ভেরিফাই করার জন্য কৃতজ্ঞ :)

৪| ১৩ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



ইন্টারেষ্টিং

৫| ১৩ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: চমৎকার একটি পোষ্ট।
এই রকম পোষ্ট আমি বেশ উপভোগ করি।

৬| ১৪ ই মে, ২০১৯ রাত ১:৩০

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: আরো কিছু রেফারেন্স দিলে গ্রহনযোগ্যতার পাল্লা ভারী হত। এমন রোমাঞ্চকর ঐতিহাসিক ঘটনা সবার জানা উচিত।

দারুন লেগেছে। রাজীব নুর ভাইয়ের সাথে সহমত। প্রেম টেমের বানানো কেচ্ছা আর রোচে না।

৭| ১৪ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:১৫

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ :) সময় নিয়ে পড়ার জন্য :)

৮| ১৪ ই মে, ২০১৯ সকাল ১১:৪৬

গরল বলেছেন: ইতিহাসের অজানা তথ্য জেনে রোমাঞ্চিত হলাম।

১৪ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৫

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ :) সময় নিয়ে পড়ার জন্য :)

৯| ১৪ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: জানলাম......

তবে সময় পেলে রেফারেন্স দেখবো.....

১৪ ই মে, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ :) সময় নিয়ে পড়ার জন্য :)
অবস্যই অবস্যই

১০| ১৪ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৪৬

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:



বই দুটো পড়তে হবে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.