নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
গণবাহিনীর চক্রান্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। বেশ বড় রকমের আয়োজন চলছে। সব কিছু সাজানো গোছানো, চুনকাম, রঙ করা চলছে, নতুন করে সাজচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। কলাভবনে একটা কর্মসূচী ছিলো, সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বৃন্দ আনুষ্ঠানিক ভাবে 'বাকশালে' যোগদান করবেন। সেই অনুষ্ঠান উপলক্ষে গণবাহিনী বেশ তৎপর হয়ে উঠেছিলো তাদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য। মাস্টার্সের পরীক্ষা চলছিলো, ছাত্র শিক্ষক সবাই ব্যস্ত। কোন প্রতিবাদ বা বিক্ষোভ আয়োজনে ব্যর্থ হয়ে, গণবাহিনীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪ অগাস্ট তিনটি বোমা বিস্ফোরন করেছিলো। কলাভবনের লাইব্রেরী সামনে, সায়েন্স এনেক্স ও অপরটি কার্জন হলের সামনে।
সেই বোমার নাম ছিলো 'নিখিল'। চুয়াত্তরের নভেম্বরে বোমা বানাতে গিয়ে জাসদ নেতা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার নিখিল রঞ্জন সাহা নিহত হয়েছিলেন, তার নামে ওই বোমার নামকরণ হয়েছিলো, ‘নিখিল’। নিখিলের প্রস্তুত প্রণালীতে কিছুটা ত্রুটি ছিলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির লেকচারার আনোয়ার হোসেন ‘নিখিল’ ইমপ্রুভাইজ করেদিলেন এবং তার নির্দেশে গণবাহিনীর সদস্যরা ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে তিনটি ‘নিখিল’ বিস্ফোরন ঘটিয়েছিলো। আনোয়ার হোসেন, গণবাহিনীর ফিল্ড কমান্ডার লে.কর্ণেল আবু তাহেরের ছোট ভাই।
জাসদের ও গণবাহিনী প্রধান নেতা সিরাজুল আলম খান তখন কলকাতার ভবানীপুরে চিত্তরঞ্জন সুতারের বাড়িতে ছিলেন। চুয়াত্তরের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারি হলে সিরাজুল আলম খান ভারতে চলে যান। মাঝে দুবার তিনি ঢাকায় এসেছিলেন শেষবার এসেছিলেন পঁচাত্তরের জুলাই মাসে।
১৫ আগস্টের পর গণবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হযেছিলো, শিরোনাম ছিল, ‘খুনি মুজিব খুন হয়েছে,—অত্যাচারীর পতন অনিবার্য।’
তৎকালীন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ তার বইয়ে একটি জায়গায় লিখেছে , কর্ণলে আবু তাহের আক্ষেপ করে বললেছিলেন,
‘ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।’
২.
ব্যর্থ গোয়েন্দা, অদ্ভুত?
গণবাহিনীর সাংগঠনিক দুর্বলতা ও তৎপরতা উপর চক্রান্তকারীরা সম্পুর্ণ নির্ভর করতে পারেনি, বিধায় অন্য বিকল্প পন্থা বেছে নিয়েছিলো।খন্দকার মোস্তাক খন্দকার কর্ণেল রশিদ, কর্ণেল ফারুক, মেজর শাহরিয়র, মেজর ডালিম, মেজর নূর প্রমুখ দের সংগঠিত করেছিলেন। যদিও ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের সঙ্গে গণবাহিনীর কোনো অংশের সাথে ভালো যোগসূত্র ছিলো।
আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার গভর্নর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খন্দকার মোস্তাক উপস্থিত ছিলেন। মোস্তাক ইঙ্গিত পূর্ন হাসি দিয়ে গভর্নর আলী আজ্জম বলেছিলেন, 'গভর্নর তো হয়েছেন, কাজ শুরু করতে পারবেন তো?'
১৩ অগাস্ট বিকেলে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর, বঙ্গবন্ধুর সাথে গণভবনে দেখা করেছিলেন। দেখা করার পর তিনি খন্দকার মোস্তাকের সাথে দেখা করেছিলেন, মোস্তাক সেদিন তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে অবশ্যই যেন ঢাকায় অবস্থান করে, এই কথা বলেছিলেন।
১৪ অগাস্ট মোস্তাক বড় কই মাছ রান্না করে, ৩২ নাম্বারে পাঠিয়ে ছিলেন, কই মাছ শেখ মুজিবের বেশ প্রিয় ছিলো। কর্ণেল রশিদ ১৪ আগস্ট বিকেলে আগামসি লেনে মোস্তাকের বাড়িতে গিয়েছিলেন সাথে ছিলো মেজর নূর, বাসায় গিয়ে রশিদ বলেছিলেন, পরদিন সকালে তিনি যেন নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন।
দীর্ঘ দিন যাবত এত চক্রান্ত চলছে, এত কিছু ঘটে যাচ্ছে, দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কোন কিছুই টের পেলো না? চরম ব্যর্থতা।
দেশের জনগণের ওপর অগাধ বিশ্বাস ছিলো শেখ মুজিবের। তিনিও অকৃত্রিম ভাবে ভালোবাসতেন দেশ ও দেশের জনগণকে। এতটাই বিশ্বাস হৃদয়ে ধারণ করতেন যে কেউ তাঁকে অন্তত হত্যা করবে না। সেই বিশ্বাসে রাষ্ট্রপতি হয়েও সরকারী নিরাপদ আবাস গণভবনে না থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে অবস্থান করেছিলেন।
হায়রে ভালোবাসা, ভীষণ অদ্ভুত রাজনীতি ও ক্ষমতা।
৩.
১৪ অগাস্ট দিবাগত রাতে
আজ বিপ্লবী গণবাহিনীর তিনটা বোমা রিস্ফোরিত হওয়ায় ভার্সিটির আনন্দঘন পরিবেশ কিছুটা বিঘ্নিত হয়েছিলো। শহবাগ 'রেখায়নের' রাগীব আহসান কয়েকদিন যাবৎ কাজ করছে ভার্সিটিতে লেখালেখির, সকালে বঙ্গবন্ধু আসবেন। টিএসসির সামনে দেখা হলো, একটা নতুন দেয়াল তোলা ডাস্টবিনে লিখছে, 'আমাকে ব্যবহার করুন' বঙ্গবন্ধু যেই যেই পথ দিয়ে যাবেন, সেই পথে টানানো হচ্ছে বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন। রাতের ভেতর কাজ শেষ করতে হবে। আরো কয়েক জন আর্টিস্ট নিয়ে এসেছে, সবার কাজ তদারক করছে নিজেও রঙ তুলি হাতে নিয়ে লিখছে। রাত তিনটা সাড়ে তিনটা নাগাদ আমরা সেখানে ছিলাম। রাগীব কাজ শেষে শাহবাগে বাসায় দিকে ফিরলো, আমি ও কাওসার হলের দিকে রওনা হলাম।
আমাদের আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, ছাত্রছাত্রীরা যেন রাতে নিজ নিজ রুমে অবস্থান করে। দুজনে বাংলা একাডেমীর সামনের পথ ধরে ফজলুল হক হলের ১৪৬ নাম্বার রুমের দিকে যাচ্ছি। দোয়েল চত্বরে কোণায় এসে আমি বল্লাম, চল বটতলায় ঢু মেরে যাই। বটতলা তখনও জাগেনি ছিমছাম নিরিবিলি। জব্বারকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তামাক সাজিয়ে দিতে বল্লাম। চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে জব্বার বল্লো,
-স্যার আজ এতো সকালে।
- সারারাত টিএসসির ওখানে ছিলাম, দেরী করবো না রুমে যাবো, সকালে বঙ্গবন্ধু আসবেন। কার্জন হল ঘুরে তারপর বঙ্গবন্ধু আর্টস ফ্যাকাল্টি যাবেন।
আমাদের দেখে আরো কয়েক জন পাশে এসে বসলো। এমন সময় দুটো ট্যাঙ্ক হাইকোর্ট ক্রস করলো ভোরের আলো তখনও ফুটেনি। একটা ট্যাঙ্ক চলে গেলো আবদুল গণি রোড ধরে স্টেডিয়ামের দিকে, অপরটি কার্জন হলের পাশ দিয়ে নিমতলী'র দিকে। এতো সকালে ট্যাঙ্ক কেন? একটু উৎকন্ঠিত হলাম। জাব্বার তামাক সাজিয়ে দিলো, কুপির আলোটা নিভিয়ে দিলাম।
এমন সময় ঢাকা মেডিকেল থেকে একজন এলো, প্রায়ই আসে হাসপাতালের ফোর্থ ক্লাশ এমপ্লাই, চোখে মুখে ভীষণ উৎকন্ঠা, আতঙ্ক তখনও হাঁপাচ্ছে আর বলছে,
স্যার সর্বনাশ হয়ে গেছে আর্মি ক্যু করেছে মনে হয়, রাতে ইমার্জেন্সিতে আর্মিরা কতগুলো লাশ নিয়ে এসেছে, সাথে কয়েক জন গুলিবিদ্ধ মহিলা ও শিশু।
৪.
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
দ্রুত হাইকোর্টের বটতলা থেকে উঠে মেডিকেল চলে যাই। ক্যাজুয়েলটিতে। খবর পেলাম আহতরা উপরে আছে। গিয়ে বাকরুদ্ধ। মাঝ রাতে শেখ ফজলুল হক মনি ও আবদুর বর সেরনিয়াবত এর বাড়িতে আর্মি ব্রাশ ফায়ার ও গুলি করে সবাইকে হত্যা করেছে। ক'জন বেঁচে আছে মহিলা ও শিশু, সবাই গুলিবিদ্ধ। বারান্দায় সেরনিয়াবাতের মেয়েকে সেলাইন পুশ করে রেখেছে। ফজলুল হক মনির স্ত্রী যন্ত্রণায় চিৎকার করছে। দুই জন ডিউটি ডাক্তার সামাল দিতে পারছে না। দুই তিন জন নার্স আছে। আমি ও কাওসার ডাক্তারকে বল্লাম আমরা কি সাহয্য করতে পারি, আমরা ফজলুল হলের ছেলে। শিওর, একটু হেল্প করেন। আমরা এটা ওটা এগিয়ে দিলাম। ড্রেসিং -এর জিনিষ পত্র। এমন ভয়বাহ পরিস্থিতিতে আগে কখনও পরিনি। মনি ভাইয়ের শালী কিছুটা সুস্থ কথা বলতে পারে, শুধু বলেছে কেউ বেঁচে নেই। এক দুজন শিশু ছিলো হাসপাতালে। ডাক্তার আপ্রান চেষ্টা করেও আরজু ভাবীকে (মনি ভাইয়ের স্ত্রী)বাঁচাতে পারেনি। তখন মনে হয় সাড়ে ছয়টা মতো বাজে। সেখানেই শুনতে পাই, ছোট্ট শিশু সুকান্ত, শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুর রব সেরনিয়াবাত সব্বাই কে হত্যা করেছে। পরে জানতে পারি আবুল হাসনাত আবদ্দুলাহ্ সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে, লন্ডীর কাপড়ের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন বিধায় তাকে খুঁজে পায়নি।
এখানে উল্লেখ্য আবদুর রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্য। শেখ ফজলুল হক মনির বঙ্গবন্ধু আরেক বোনের ছেলে এবং সেরনিয়াবাতের মেয়ে আরজুর স্বামী।
মেডিকেলে থাকতেই খবর পাই, ভোররাতে ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে এ্যাটাক করেছে। সেখানে একজনও বেঁচে নেই। খবর পেলাম লাশ মর্গে আছে। ঢাকা মেডিকাল কলেজের মর্গটা ছিলো ওপরে টিন দেওয়া একটা ঘর। দরোজা তালা দেওয়া। তবে কড়া ও তালার ফাঁক দিয়ে ভেতরটা দেখা যায়, একটা ১০০ ওয়াটের বাতি জ্বলছে। ডোম বল্লো স্যার, রাতেই এনেছে, ১৪/১৫ জন হবে, ছু্ঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছে। প্রথমে চোখে পড়ে একটি ধপধপে সুন্দর কৈশোর উর্ত্তিন যুবক, একটি শিশু সুকান্ত, মনি ভাইকে চিনতে পারলাম গেঞ্জি গায়ে ছিলো, আবদুর রব সেরনিয়াবাতকে দেখতে পাই। রক্তে ভেসে আছে মর্গের ফ্লোর, একটার ওপর আরেকটা লাশ পরে আছে। এতো লাশ একসাথে কখনও দেখিনি। কে একজন এসে খবর দিলো আর্মি আবার আসছে, দ্রুত চলে যান বলা যায় না কি হয়, মনে হয় ৩২ নম্বারে নিহতদের এখানে আনবে।
আমরা একটা ওয়ার্ডে ঢুকে গেলাম, সেখানে গিয়ে দেখি আমার ডিপার্টমেন্টের জুনিয়র একটা ছেলে চিকিৎসাধীন। শওকত ভাই, বলে ডাক দিলো। পাশে গিয়ে বসালাম, রুগীর সাথে মিশে গেলাম। বেশ কয়েক জন আর্মি মেডিকেলের বারান্দা দিয়ে হেঁটে গেলো ভীষণ অস্থির অস্থির ভাব, তাড়াহুড়ো করছে, হাতে রাইফেল। রাতের সব ঘটনা যারা ওয়ার্ডে ছিলো তাদের কাছে শুনলাম। পুরো মেডিকেলে আতঙ্ক। আর্মি বেশী সময় সেখানে থাকেনি। ৩২ নাম্বার থেকে মেডিকেলে কোন লাশ আনেনি। আর্মি চলে যাবার পর সবাই এদিক ওদিক থেকে আবার বেরিয়ে এলো। মেডিকেল আউটডোরের সামনে দেখা হলো, শেখ মনির ছোট ভাই শেখ মারুফের সাথে। খবর পেয়ে ভাই-বোন, প্রিয় জনদের দেখতে এসেছে। মারুফকে বুঝিয়ে বল্লাম এই জায়গাটা আপনার জন্য এখন মোটেও নিরাপদ নয়, আপনিও নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। মারুফ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। প্রিয় পরিজন হারানোর শোকে পাথর হয়ে গেলো। অমন একটা মুখ কখনও দেখিনি।
আমি ও কাওসার রাস্তা নিরাপদ নয় জেনে ভেতরের করিডোর দিয়ে ইমারজেন্সির গেটে আসলাম। মেজর ডালিম রেডিও থেকে ঘোষণা করছে সারা দেশে কারফিউ। রাস্তাটা সন্তর্পণে পার হয়ে ঢাকা হলের গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলাম।
৫.
শেষ অধ্যায়
মেডিকেল থেকে ঢাকা হলের গেট দিয়ে ঢুকে দেখি অনেকেই ড্রেসআপ হয়ে বের হচ্ছে। একটু পরেই বঙ্গবন্ধু আসবেন ফুল হাতে সম্বর্ধনা দেবে। খবরটা তখনও রটেনি। কার্জন হলের পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে এসে দেখি, নিরাপত্তা জন্য ব্যাপক পুলিশ সমাবেশ। একজন অফিসার কে বল্লাম, এখানে আর কি করবেন থেকে সব শেষ হয়ে গেছে। রাতে আর্মি ক্যু করেছে আবদুর রব সেরনিয়াবত ও শেখ ফজলুল হক মনির বাড়ির সবাইকে হত্যা করেছে মাঝ রাতে এবং ভোর রাতে ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধু সহ বাড়ির সবাই কে হত্যা করেছে। মেডিকেলে লাশ দেখে এলাম মনি ভাইদের। আমাদের ঘিরে সবাই দাঁড়ালো উদগ্রীব হয়ে, অবিশ্বাস্য! পুলিশ অাফিসর বিস্মিত হয়ে বলেছিলো কি বলছেন? ওয়াকিটকি হাতে নিয়ে কারো সাথে কথা বলে নিশ্চিত হলো, কার্জন হলে ডিউটিতে আসা সব পুলিশ দের ডেকে আনলো। ফজলুল হক হলের কে যেন ট্রানজিস্টারে ডালিমের বুলেটিন শুনে বেরিয়ে এলো। শোকের ছায়া নেমে এলো, অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর। পুলিশ গুলো লাইন ধরে ফজলুল হক হলের গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
পাকিস্তান আমলে ২৩ বৎসরে ১৮ বারে ১১ বৎসর জেল খেটেছেন। একাত্তরে মার্চে বন্দী করে নিয়ে গেছেন পশ্চিম পাকিস্তানে। শত শত মামলা দিয়েছেন সামরিক আয়ুব সরকার, ইয়াহিয়া সরকার, কিন্তু সাহস করেনি গায়ে টোকা দিতে। অথচ নিজ দেশের চক্রন্তকারী কতিপয় সেনা, স্বপরিবারে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমানকে হত্যা করতে একটুও দ্বিধা করেনি।
সোনার বাংলার স্বপ্ন দ্রষ্টার পরিবার পরিজন এবং রক্ত সম্পর্কীয় ভাই বোন ভাগিনা কাউকে রেহাই দেয়নি।
সেদিন ৩২ নাম্বারে ছিলেন বঙ্গবন্ধু একমাত্র ছোট ভাই শেখ নাসের, খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছিলেন কোন কাজে, নিয়তি টেনে এনেছিলো। শুধু দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন বিধায় বেঁচে গেলেন।
স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছরে শেখ মুজিবর রহমান একদিনও স্বস্তিতে ছিলেন কিনা জানিনা। ক্ষমতার নামে একটি তপ্ত কড়াইয়ে ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা একটাও নেই। যে আমাদের দেশ এনে দিলো তার পরিবারকে সেই দেশ থেকে সম্পুর্ন নিশ্চিহ্ন করে দিলে এ কেমন ষড়যন্ত্র?
বঙ্গবন্ধু তোমার বরণ ডালার ফুলগুলো মুহুর্তেই তোমার বেদীতে অর্ঘ হয়ে গেলো।
আমি আমার ঠিকানা রুম নাম্বার ১৪৬ ফজলুল হক হলে চলে এলাম।
নেমে এলো অন্য অধ্যায়।
শেষ।
শওকত আহসান ফারুক
২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:২২
রাজীব নুর বলেছেন: বহু কষ্টের পরে দেশ স্বাধীন হলো।
আজও মানুষ না খেয়ে থাকে। রাস্তায় ঘুমায়।
৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:২১
চাঁদগাজী বলেছেন:
মুল প্রজেক্ট সিআইএর'র
৪| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৫১
প্রবালরক বলেছেন: ব্যাপারটা সম্পূর্ন কাকতালীয়। আহমদ ছফার রচনাবলীতে চোখ বুলাচ্ছিলাম। “মুজিবের শাসন – একজন লেখকের অনুভব” শিরোনামে লেখাটির (লেখা হয়েছে ২০-৯-৭৫ তারিখে) শেষাংশটা এরকম:-
১৪ই আগষ্ট সন্ধ্যের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। শুনলাম কার্জন হলে এবং লাইব্রেরীতে বোমা ফুটেছে। পরিবেশটা থমথমে হয়ে এসেছে। উৎসবমুখর পরিবেশ হঠাৎ যেন কেমন থিতিয়ে এসেছে। মিনিটে মিনিটে পুলিশের গাড়ি টহল দিয়ে বেড়াচ্ছে। সকলের চোখেমুখে আশন্কা। ছাত্রদের সিংহভাগ যাঁরা এই সুবিশাল এলাহিকান্ডের নীরব নিরুপায় দর্শকমাত্র ছিলেন, তাদের মনের গতিটা অনুসরন করতে চেষ্টা করলাম। তাদের চোখমুখ দেখে মনে হল এ রকম একটা অভাবনীয় কান্ড ঘটায় সকলে যেন মনের গভীরে খুশি হয়েছে। হাতে পায়ে শেকল, শেকলের পর শেকল পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বারুদ এবং আগুনের ভাষায় শেষ পর্যন্ত আসন্ন মুহুর্তটিতেই কথা কয়েছে। অর্থাৎ কোন স্বেচ্ছাচারীকেই এই পবিত্র বিদ্যাপীঠ কোনদিন অতীতে বরন করেনি এবং ভবিষ্যতেও বরন করতে প্রস্তুত নয়।
কথাগুলো ভেবে নিয়েছিলাম আমি। মনের ভেতরে একটা ভয়ার্ত আশন্কাও দুলে উঠেছিল। দুয়েকটা বোমা ফুটেছে এই ভয়ে শেখ মুজিবুর রহমান আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা স্থগিত রাখবেন তিনি তেমন মানুষ নন। তিনি নিশ্চিতভাবে আসবেনই। অপার শক্তিবলে মুখরা নগরীর স্পর্ধিত জিহ্বা যিনি স্তব্ধ করে দিয়েছেন, দুয়েকটি বোমা ফুটলে কি তিনি সেই ভয়ে ঘরের কোনে চুপটি করে ভেজাবেড়ালের মত বসে থাকবেন? তাঁর প্রতি সবচেয়ে বিরূপ শ্রেনীটি আগামীকাল সকালে সদলবলে নতমস্তকে আস্থা নিবেদন করতে যাচ্ছেন। নাটকের এই রোমাঞ্চকর দৃশ্যে তিনি কি করে অনুপস্থিত থাকতে পারেন? হয়ত আরো বোমা ফুটবে। পুলিশ ছাত্রাবাসসমুহের কক্ষে কক্ষে খানাতল্লাশী চালাবে, সন্দেহজনক কিছু ছাত্রদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে। কিন্তু তাঁর আসা বন্ধ হবে না।
রাতে হেঁটে ফিরছিলাম সাতাশ নম্বর সড়কের দিকে। মনে এসব কথা তোলপাড় করছিল ভয়ন্করভাবে। শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘবাহু প্রসারিত করে সমস্ত দেশটাকে কঠিন আলিঙ্গনে আবদ্ধ করছেন, যা কিছু বাধা দিচ্ছে, প্রতিবাদ করছে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই শক্তিদর্পী মানুষটি যা করতে চাইছেন বাস্তবে তার অবিকলটি ঠিক ঠিক ঘটে যাচ্ছে। কোথাও কোন কথা নেই, কোন বাধা নেই। বাংলাদেশে কন্ঠ একটি, সেটি শেখ মুজিবুর রহমানের – মানুষ ওই একজন, তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। ভয়ে দুরু দুরু করছিল বুক। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পনেরজন শিক্ষক বাকশালে যোগ দেবার আবেদনপত্রে সই করেননি, তাঁদের অনেকেই আমার চেনাজানা বন্ধু-বান্ধব। তাঁদের অবস্থার কথা চিন্তা করছিলাম। তাঁদের কি হবে? তাঁদের কি চাকুরী চলে যাবে? তাঁরা কি খাবেন? এই বাজারের বউ ছেলে নিয়ে কিভাবে জীবনধারন করবেন? তাঁদের কি পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে? কি হতে পারে এই রাজদ্রোহীতার পুরস্কার?
ভয়ন্কর চাপ অনুভব করছিলাম। একা একা হাঁটছিলাম। ভয়ানক একা বোধ করছিলাম। চারপাশের লোকজনের কারো সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই, যেন কোনকালে ছিলও না। একা একা আমি যেন সুড়ঙ্গ পথে বিচরন করছি। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল আমি ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমি দেখে আসছি, কিভাবে আমার লালিত মূল্যবোধগুলো ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। লোভীর লোভ, প্রবলের অন্যায়কে এমনভাবে রূপ ধরে জেগে উঠতে আমি কোনদিন দেখিনি। এত অশ্রুতে ভেজা, এত গাঢ়রক্তে রন্জিত আমাদের স্বাধীনতা আমাদেরকে এমনভাবে প্রতারিত করছে প্রতিদিন, সে কথা কার কাছে যেয়ে বোঝাই। যাদেরকে মনের কথা ব্যক্ত করতে যাব, তাঁদের অব্স্থাও আমার মত। এ কেমন স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতা আমাদের গোটা জাতিটাকে সম্পূর্ন ভিখিরীতে পরিনত করে? এমন স্বাধীনতা যে স্বাধীনতায় আমরা একটা কথাও বলতে পারব না। চোখের সামনে সত্য মিথ্যের আকার নিচ্ছে। জলজ্যান্ত মিথ্যে নধর তাজা সত্যি হিসেবে এসে প্রতিদিন হাজির হচ্ছে। শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের গোটা জাতিটাকে নিয়ে কি করতে চান? তাঁর কথায় কথায় উঠে বসে এ জাতির তো আর কোনকিছু অবশিষ্ট নেই। এত অত্যাচার দেখেছি, এত জমাট দু:খ দেখেছি, এত কাপুরুষতা দেখেছি এ জাতি আর মানুষের পর্যায়ে নেই। ক্রমশ পশুর নিচে চলে যাচ্ছি আমরা। দূর্নীতির জাতীয়করন করে সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তর বিষিয়ে তুলেছেন। এই জাতির যা কিছু গভীর, যা কিছু পবিত্র, উজ্জ্বল এবং গরীয়ান বিগত তিন বছরে সমস্ত কিছু কলুষিত করে ফেলতে পেরেছেন।
তাঁর বাহীনি অশ্বমেধ যজ্ঞের মত যেদিকেই গেছে সবকিছু ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে ফেলেছে। শেষমেষ ছিল আমাদের একটা বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা ভাবতে শিখেছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়ই স্বাধীনতা, শান্তি, কল্যান, প্রগতি, সাম্য এবং হরিৎবরন আশা-আকাঙ্খার লালনক্ষেত্র। এইখানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন এক শন্কাহীন স্বাধীনতা নিবাস করেন, বিরাজ করেন এমন এক সুস্থশালীনতা আমাদের জ্ঞানদায়িনী মা বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গে অঙ্গে এমন এক প্রসন্ন স্রোত প্রবাহিত হয়, কোন রাজন্য, কোন সমরনায়ক, কোন শক্তিদর্পী মানুষ কোনদিন তা স্থুল হস্তের অবলেপে কলন্কিত করতে পারেনি। আকাশের মত উদার, বাতাসের মত নির্ভর, অনির্বার ঝর্নার উৎসের মত স্বচ্ছ এবং সুনির্মল স্বত:স্ফুর্ত স্বাধীনতা এইখানে প্রতিদিন, প্রতিদিন বসন্তের নতুন মুকুলের আবেগে অন্কুরিত হয়। এই অকুন্ঠিত স্বাধীনতার পরশমনির ছোঁয়ায় প্রতিটি আপদকালে এই জাতি বারে বারে নবীন হয়ে উঠে। এর প্রতিষ্ঠাকালের পর থেকে আমাদের জন্মভূমির ওপর দিয়ে কতই না ঝড় বয়ে গেছে। কতবার ঘোড়ার খুরে, বন্দুকের আওয়াজে কেঁপে উঠেছে আকাশ, গর্বিত মিলিটারির বুটের সদম্ভ পদবিক্ষেপে চমকে উঠেছে রাত্রির হ্রদয়। কত শাসক এল, কত মানুষ প্রান দিল। আমাদের এই ধৈর্যশীলা জ্ঞানদায়ীনি মা সংহত মর্যাদার শক্তি, সাহস, বলবীর্য সবকিছু ফুরিয়ে যাবার পরেও শিখিয়েছে কি করে প্রতীক্ষা করতে হয়। নীরব ভাষায় মৌন আকাশের কানে কানে বারেবারে জানতে চেয়ে গেছে শক্তি, ক্ষমতা, দম্ভ এসবের পরিনতি কোথায়? ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অতন্দ্রপ্রহরীর দল, তারা কোথায়? কোথায় জিন্নাহ, কোথায় নাজিমুদ্দীন, কোথায় নুরুল আমিন? জেনারেল আইয়ুবখান, আবদুল মোনেম খান, ইয়াহিয়া খান এই সমস্ত শক্তিদর্পী মানুষেরা আজ কোথায়? তাঁর যে আতন্ক, যে ঘৃনা, যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এ দেশের জনপদবাসীদের জীবনধারায় ঘুর্নিঝড়ের সুচনা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কি আপন সন্তানদের তার আর্তি থেকে বেরিয়ে আসার প্রেরনা দেয়নি?
৫| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৪০
চাঁদগাজী বলেছেন:
মুল প্রজেক্ট সিআইএ'র
২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৫
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: আমার ধারণা আইএস এর
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:৫৩
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: মাত্র সাড়ে তিনবছরের একটি নতুন স্বাধীন দেশ। গোয়েন্দা শক্তিশালী হওয়ার কথা না।
কর্ণেল তাহের সম্পর্কে আমিও কিছু বই, প্রবন্ধ পড়েছি; উনার কর্মকাণ্ড সন্দেহজনক বলেই মনে হয়েছে। কিন্তু আমাদের অদ্ভুত রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরা এখন কর্ণেল তাহেরকে তুলসী পাতা প্রমাণের অপচেষ্টা করে থাকেন।