নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে আমি কোন ব্লগার নই মন চায় তাই লিখি তথ্য-উপাত্ত সবার সাথে শেয়ার করি ।\nজব এর পাশাপাশি এয়ার টিকেট ও ট্রাভেল ভিসার ব্যাবসা করি ।\nধন্যবাদ\n

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম

তানজীর আহমেদ সিয়াম › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুড়ানো ৫৭ (চেরনোবিল-শেষ)

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৯



চেরনোবিলে ঘুরতে ঘুরতে কখন দুপুর হয়ে গেছে টের পাইনি, ক্ষুধা লেগেছিল বেশ। ট্যুর বুকিং দিয়েছিলাম দুপুরের খাবার ইনক্লডেড। দুপুর দুইটায় গাইড আমাদের নিয়ে গেলো চেরনোবিল রেস্টুরেন্টে।

রেস্টুরেন্টটা প্রিপেত বা রিয়েক্টর ৪ থেকে অনেক দুরে। ৪৫ কিলোমিটার এক্সক্লুশন জোনে। এই রেস্টুরেন্টের খাবার, পানিসহ সবকিছু আসে অনেক অনেক দুর থেকে। চেরনোবিলের পানি পান যোগ্য নয় কোনভাবেই। এখানে যারা কাজ করে তারা প্রতিদিন অনেক দুর থেকে আসে।

গাইড বলে দিয়েছিল, রেস্টুরেন্টে যে দুজন মহিলা খাবার সার্ভ করে তাদের ছবি তোলার চেষ্টা যাতে না করি। এতে তারা ভীষণ বিরক্ত হয়। আসলেও মহিলা দুজনকে দেখে ভয়ই পেয়েছি। কি গম্ভীর মুখ রে বাবা! হাসি দিলেই মনে হয় সর্বনাশ হয়ে যাবে!

রেস্টুরেন্টে ঢুকার সময় স্ক্যানারে পুরো শরীর স্ক্যান করে তবে ঢুকতে হয়। নিশ্চিত হওয়ার জন্য যাতে কারো শরীরে কোন রেডিওএকটিভ পার্টিকল না থাকে।

রেস্টুরেন্টটা ক্যাফের মত। খুবই বেসিক। একটা ট্রে নিয়ে ওই দুজন মহিলার কাছে গেলে ওরা প্লেটে করে খাবার ট্রেতে তুলে দেয়। সবার জন্য একই খাবার। খাবার দিল পাউরুটি, আলু, কেক, স্যুপ, চিকেন আর দুইগ্লাস জুস।

ট্রে নিয়ে খালি দেখে একটা টেবিল নিয়ে বসলাম। অসাধারণ খেলাম মশলাবিহীন খাওয়া। হয়তো বেঁচে থাকাটাকে খুব বড় একটা উপহার মনে হচ্ছিল তখন তাই খাবার এত ভালো লাগছিল।

খেয়ে আবারও স্ক্যানার চেকিং করে রওনা হলাম চেরনোবিলের দ্বিতীয় অংশের ট্যুরের উদ্দেশ্যে।

প্রথমে গেলাম একটা স্টেডিয়ামে। সেই গেইট, সেই স্টেডিয়াম! এখানে বসে কত মানুষ খেলা দেখেছে! লোকে লোকারণ্য ছিল একসময়, আর এখন গাছেদের অভয়ারণ্য। জংগল হয়ে আছে।

পুরো ব্যাপারটা এরকম - ধরা যাক এই মুহুর্তে কোন এক বিরাট দুর্যোগে পৃথিবীর সব মানুষ মরে গেলো, জীবজন্তু মরে গেলো, গাছপালা সব মরে গেলো। তারপর কি হবে? কেমন হবে দেখতে পৃথিবীর চেহারা ত্রিশ বছর পর? প্রাণীহীন পৃথিবী, মানুষের গড়া কিন্তু রেখে যাওয়া সভ্যতার চেহারা কেমন হবে?

চেরনোবিলে সেদিন অনেক হেঁটেছিলাম। দেখছিলাম চিন্তা করছিলাম - এই তো এরকমই হবে পৃথিবীর চেহারা যদি হঠাৎ করে একদিন সব বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই যেমন, বাচ্চাদের জন্য গড়ে তোলা পার্কে নাগরদোলা আর বাম্পি কার এ মরিচা পড়বে আবহাওয়ার কারণে, মিশে যাবে সব মাটির সাথে আস্তে আস্তে। অথচ যেখানে বাচ্চাদের হৈচৈ এ টেকা দায় হতো একটা সময়।

বিস্ফোরণ হওয়ার পর প্রাণী উদ্ভিদ সব মরে গেলো চেরনোবিলের (কিছু কুকুর নাকি ছিল, এ নিয়ে মতভেদ আছে)। এধরণের তেজস্ক্রিয়তায় কোন জীবের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানীরা বলেছে অন্তত ১০০ বছর লাগবে চেরনোবিলের মাটি জীবের জন্য বসবাসযোগ্য হতে।

চেরনোবিল বিরাট এলাকা। ত্রিশ বছর ধরে মানুষের পদচারণা ছিলনা। এই ত্রিশ বছরে সেখানে গড়ে উঠেছে পশু, পাখিদের স্বর্গরাজ্য। যে জায়গায় মানুষের মৃত্যু অবধারিত তেজস্ক্রিয়তার কারণে সেখানে পশুপাখিদের দিব্যি বিচরণ!

কুকুর, শিয়াল, ভাল্লুক হতে শুরু করে বিচ্ছু, প্রজাপতি সব প্রাণী আস্তানা গড়েছে। এমনকি যেসব প্রাণী দুইশো বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল সে প্রাণীর অস্তিত্বও আছে। কেমন করে তা সম্ভব হলো তার উত্তর কারো জানা নেই।

এনিম্যাল চ্যারিটিগুলো পরিসংখ্যান রাখে এসব প্রাণীদের। সিসি ক্যামেরাতে সন্ধ্যার পর অদ্ভুত সব জিনিস দেখা যায় প্রাণীকুলের। ২০১৬ সালে প্রথম ট্যুরিস্ট যাওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়। মানুষের বিচরণ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রাণীরা একটু সতর্ক হয়ে গেছে। সন্ধ্যা ছয়টায় শেষ ট্যুরিস্ট বাসটা ফিরে এলেই এরা বের হয়। এদের অবাধ বিচরণ শুরু হয় সন্ধ্যা ছয়টার পর। এরা কেন মানুষ ভয় পায় তা জানা নেই। তবে কুকুর আর শিয়াল তেমন মানুষ ভয় পায়না। বিকেলে ফেরার পথে বাসের সামনে এসেছিল কয়েকটা কুকুর। কুকুরগুলোর আচরণ এত শান্ত!

এনিম্যাল চ্যারিটি থেকে এদের কানে ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে পরিসংখ্যানের সুবিধার্থে।

অনেক ফলের গাছও দেখলাম। বিভিন্ন ধরনের ফল। তবে সবকিছুই ধরতে মানা কারণ দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে তেজস্ক্রিয়তা লুকিয়ে আছে সবকিছুর মধ্যে।

প্রাণীদের স্বর্গরাজ্য, গাছেদের অরণ্য চেরনোবিলকে দেখলে যতটা কষ্ট হয় ততটা ভালোও লাগে। প্রকৃতির শক্তির কাছে আসলেই আমরা নস্যি তবুও আমরা ধ্বংস করি নিজেদেরকে নিজেদের উদ্ভাবনেই।

মানুষের অনুপস্থিতিতে প্রাণীজগৎ তেজস্ক্রিয়তা এডাপ্ট করেই টিকে ছিল, বেড়ে উঠছে। কে জিতলো? মানুষ নাকি প্রকৃতি? অবশ্যই প্রকৃতি। মানুষ আসবে, মানুষ যাবে কিন্তু প্রকৃতি থাকবে মহাশক্তি নিয়ে নিজের মত করে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:২০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অদ্ভুত বিষাক্ততায় মৃত্যুর নিরব হাতছানি নিয়ে দাড়িয়ে প্রকৃতি!

কি বিস্ময়কর!
অথচ বিপরীতে বন্য প্রানীদের কি অবাধ জীবন যাপন !!!

এত দ্রুত শেষ হয়ে গেল? ভেবেছিলাম রহস্যের ভুবনে বুঝি আরো অনেক কিছু জানা হবে।
অনেক ধন্যবাদ দারুন সিরিজে দারুন দারুন তথ্য, ছবি জানানোয়।

আপনার ভ্রমন ঝুলি’র না বলা গল্প শোনার অপেক্ষায় :)

+++

২| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:১০

করুণাধারা বলেছেন: এই পর্ব তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেললেন, আরেকটু বড় করলে ভালো হত। আপনার এই সিরিজ পড়ে একটা উপন্যাসের অনূবাদ লিখতে ইচ্ছা হচ্ছে- পারমাণবিক বিস্ফোরণের পরের পৃথিবী নিয়ে।

একটা কথা, আপনি বলেছেন আপনি সিঙ্গেল মাদার, কিন্তু আপনার নাম এবং প্রোপিক দেখে আপনাকে কিন্তু মা বলে মনে হয় না।

৩| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন।

৪| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৪০

আনমোনা বলেছেন: আপনার চেরোনোবিল সিরিজটা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। আসলেই ভয়াবহ।

৫| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫২

শের শায়রী বলেছেন: আপনার এই পর্বগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি। দারুন লেখা। অভিনন্দন।

৬| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫৭

তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: সবাইকে অন্নেক অন্নেক ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.