নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেজা সিদ্দিক

রেজা সিদ্দিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের চলে যাওয়া এবং -------

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৮:৫২

মা যেদিন চলে গেলেন সেদিন ছিল ১৮ সেপ্টেম্বর। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ। দুই বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন তিনি। মা চলে যাওয়ার কষ্ট যে কেমন সেটি হয়তো সন্তানদের চেয়ে আর কেউ বেশি বোঝে না। মায়ের এই চলে যাওয়া নিয়ে কিছু লিখবো এমন ভেবেছি। আবার এটাও ভেবেছি আমার কষ্ট থাকনা আমাদের নিজেদের কাছেই। কিন্তু এটাও ঠিক যে আমার মা কেবল তো আমাদেরই মা নন। তিনি তো আরো অনেকের মা। আমার সহকর্মী বন্ধু ড. কালী প্রসন্ন দাস আমার মায়ের চলে যাওয়া নিয়ে একটি ছোট্ট লেখা পাঠালেন ই মেইল এ। সেই লেখাটি তুলে ধরছি সবার জন্য।

-----

আরেকজনের মা মারা গেছেন, আমাদের কাছে তিনি আমাদের রানাভাইয়ের মা।রানাভাইয়ের বোনদের মা। কিন্তু এর বাইরেও তাঁর একটি পরিচয় আছে। তিনি এই জাতির, বাঙালী জাতির, লক্ষ লক্ষ সন্তানের মা। আমাদেরও মা। আমরা তাঁর মধ্যে যে জীবনবোধ দেখেছি, যে প্রতিশ্রুতিশীলতা দেখেছি, যে নৈতিকতা ও মাতৃত্ব দেখেছি, যে দৃঢ়তা বিনয়ী তেজোঃশক্তি দেখেছি তা রানাভাইয়ের মা‌-কে আমাদের সকলের মা এর ভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলার গ্রামেগঞ্জে সাধারণ পরিবারে, যে সব অসাধারণ মায়েরা সন্তান জন্ম দিয়েছেন, পরম যত্নে ও দায়িত্বশীলতায় সন্তানদের বড় করে তুলেছেন, সহস্র প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাঙালীর শাশ্বত মূল্যবোধের মানদণ্ডে সন্তানদের মানুষ করে, দেশের জন্য ভবিষ্যত সুনাগরিক তৈরি করে, জাতির জন্য অসীম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন আজকের প্রয়াত মা তাঁদের অন্যতমদের একজন।

৬ কন্যা ১ পুত্রের জননীর ১৩ বছরে বিয়ে ২৭ বছরে অকালে স্বামী হারানো। তারপর অসীম ধৈর্য্যে পুত্রকন্যাদের লালন-পালন, তাদের স্বাবলম্বী করে সমাজের মানুষ হিসেবে তৈরি করা, তাদের এবং তাদের সন্তান সন্ততিদের চরিত্রে উন্নত নৈতিক আদর্শ ও প্রগতিশীলতার বীজ গভীরভাবে বপন করা, জীবনের যুদ্ধে বিজয়ীর ভূমিকায় তাঁদেরকে দাঁড় করাতে নিরন্তর ও সর্বব্যাপক ভূমিকা রাখা, উৎসাহ-উদ্দীপনা, সাহস ও শক্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা, এবং জীবনের শেষ দিনগুলোতে মরনবন্ধু ক্যান্সারের সঙ্গে মানসিক দৃঢ়তা ও শারিরীক শক্তি দিয়ে বসবাস করা--- এ সবই এ মায়ের কাছ থেকে আমাদের অনন্য শিক্ষা। আজকের দিনটির জন্য, ক্যান্সারের বাসস্থান তাঁর নিজের দেহের সঙ্গে তাঁর চেতনার সম্পর্ক ছিন্ন করার দিনটির জন্য আমরা প্রতীক্ষায় ছিলাম। তিনি আমাদের দেখিয়ে গেছেন , কীভাবে জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত জীবনকে যাপন করতে হয়।

তাঁর পরিবার, পুত্র-কন্যা-পুত্রবধু-জামাতা-নাতি-নাতনী-নিকটাত্মীয়-স্বজন শেষ দিন পর্যন্ত যেভাবে এই মায়ের জীবনের সঙ্গী হয়েছেন তা দৃষ্টান্তপূর্ণ। তাঁরা এই প্রয়াতকে সম্মান দেখিয়েছেন, সেবা দিয়েছেন। দেশের একজন বয়োজেষ্ঠ নাগরিকের প্রতি তাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁকে মর্যাদা দিয়েছেন। অনিরাময়যোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত একজন এ মাকে তারা স্বদেশ-বিদেশরে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন, এবং সবশেষে আপন বাসগৃহ, প্রিয় মানুষদের ভালবাসা ও সেবাযত্নে ঘিরে রেখে শেষ বিদায় জানিয়েছেন। একজন মায়ের প্রতি এরচেয়ে বড় সম্মান আর কী দেখানো যেতে পারে! পরিবারের জেষ্ঠতম সদস্যের প্রতি এই পরিবারের আচরণ আমাদের কাছে শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে রইলো। তথ্য ও পণ্য-প্রাধান্যের বর্তমান আইটি বিশ্বে মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক এখন ভঙ্গুর। এই পরিবার এই ভঙ্গুর সময়ে বাঙালীর বহু প্রাচীন ঐতিহ্যের গৌরবময় অংশের পুনরাবৃত্তি করলো। আমরা অবনত মস্তকে প্রয়াত মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, আমাদের একজন মায়ের যত্নের দায়িত্ব পালন করার জন্য এই পরিবারকে অভিনন্দিত করি। তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কামনা করি সমাধিক্ষেত্রে আমাদের মায়ের ৭২ বছর বয়সী মরদেহ স্বস্তিতে মাটির সাথে মিশে যাক, এবং তাঁর স্মৃতি ও শিক্ষা আমাদের কাছে অমলিন থাক। পরধন হরণ না করা এবং সততার প্রতি তাঁর যে নিষ্ঠা ছিল আমরা যেন আমাদের জী্বনাচরণে এই নিষ্ঠার অনুশীলন করে আমাদের মাতৃভক্তির পরিচয় দিতে পারি।

কেপি দাস, ১৮.০৯.২০১২। দুপুর ২:৩০, গুলিস্তান-ধামরাই বাস।


-----

মা চলে গেছেন প্রায় ১৫ দিন। আজ মনে হলো, মায়ের এই চলে যাওয়ার বেদনাটি তো কেবল আমার না, আমার সহকর্মী, বন্ধু, শুভানু:ধ্যায়ী সকলেরই। তাছাড়া এই ব্লগে অসংখ্য পাঠক আমার মায়ের জন্য দোয়া করেছেন। তাদের প্রতিও আমার কৃতজ্ঞতা।

মায়ের চলে যাওয়া নিয়ে আমার বন্ধুর এই অনুভুতিটুকু জানানোর জন্যই এই পোস্ট।



মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:১৮

দীপ্তপন বলেছেন: এই মাকে শ্রদ্ধা জানানোর এই চিঠির মাঝে আমার অন্তরদৃষ্টি আজ দেখতে পেল কেমন করে সম্মানিত মানুষকে যথাযথ সম্মান জানাতে হয়। মা তুমিতো এত সুন্দর একটি অনুভুতি প্রকাশ করার পেছনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গিয়েছ সারাজীবন, স্বার্থক আজ হয়েছ,মোরা ধন্য। কেপি দাস ধন্যবাদ আপনাকে জাগিয়ে তুলার মত একটি চিঠির জন্য।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:২৭

রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। আমার কৃতজ্ঞতা কেপি দাসের প্রতিও।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:২০

অচিন্ত্য বলেছেন:
মা শুধুই মা। সবার মা। আপনার মা আমারও মা। আমি মা'কে নিয়ে একটি গান লিখেছিলাম। আজ এই মায়ের উদ্দেশ্যে তা উৎসর্গ করলাম।


মা-ছেলেবেলা-বৃষ্টি

ঠিক এখন রাত যখন
চুপচাপ চারিদিক
ঘুম চোখে রাত জাগে
নিশ্চুপ জোনাকি
দূর প্রবাস মন উদাস
কৈশোর মেলে ডানা
মায়ের মুখ টুকরো সুখ
কেন জানি না

রাত বাড়ে চোখ জুড়ে
স্মৃতির ওড়াওড়ি
লেপ কাঁথা রূপকথা
ঘুমের জড়াজড়ি
ওই দূরের সিত মেঘের
পরীর মত হেসে
বুলিয়ে চুম আঁকত ঘুম
কে গো ভালবেসে

খুঁজছি ফের শৈশবের
ফেরারী সাত কাহন
স্বপনরা নীড়হারা
প্রাত্যহিক যখন
দূর প্রবাস মন উদাস
সময় বলে যায়
পঙ্খীরাজ মেঘের সাজ
কোথায় আজ হারায়

অবাক রাত নীল হঠাৎ
বৃষ্টি নামে ওই
বৃষ্টি নামে চোখ বলে
মেঘের পরী কই
দূর উধাও নেই কোথাও
সেই হারানো মুখ
ছলছলে মেঘের জলে
দু’চোখ আজ ভাসুক

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৯:২৮

রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:০৮

hasan03 বলেছেন: মারা কেবল সারাজীবন কষ্টই করে যায়। আফসোস বিনিময়ে আমরা তাদের তেমন কিছুই দিতে পারি না।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৩

রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১০:৩০

রঙ তুলি ক্যানভাস বলেছেন: " মায়ের এই চলে যাওয়া নিয়ে কিছু লিখবো এমন ভেবেছি। আবার এটাও ভেবেছি আমার কষ্ট থাকনা আমাদের নিজেদের কাছেই। "

জীবনযুদ্ধে সংগ্রামী এই মায়ের জন্য শ্রদ্ধা।
মায়েরা ভাল থাকুক পৃথিবীর ওপাড়ে কিংবা এপাড়ে........

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৪

রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

৫| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ১১:৫০

সানজিদা হোসেন বলেছেন: কালী প্রসন্ন মামাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:১৭

রাতুল_শাহ বলেছেন: কথাগুলি অনেক সুন্দর।

মা এর তুলনা শুধু মা-ই হয়।

আর এটা সবাই বুঝে যখন মা পাশে থাকে না।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:১৪

রেজা সিদ্দিক বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.