![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হারিয়ে যাবে কবি বিলীন হবে কাব্য বলছে বাস্তবতা এটাই ভবিতব্য
{২৫ শে বৈশাখ লেখাটা ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম।কিছু সমস্যার কারণে ব্লগে পোস্ট করা হয়নি।এখন লেখাটা ব্লগে রেখে দেয়ার ইচ্ছে হলো}
হাজার হাজার বছর পরের কথা।ঠাকুর দাদা মৃণালিনী দেবীর
সাথে ঢাকার কোন এক কৃষ্ণচূড়া গাছের মগডালে বসে গল্প করছেন।
-এই ধরার সকলের মতন তুমিও কি ভুলিয়া গিয়াছো,আজিকে যে আমার জন্মদিন?
-ও মা,তাই তো!
-হুহ!
-অভিমান করিলে?
-(নিশ্চুপ)
-তুমি বারংবার আমারটা ভুলিতে পারো,আমি একটি বার ভুলিলেই দোষ?
ঠাকুরদা চুপচাপ,উদাস মনে তিনি লাল লাল ফুলে হাত বুলাচ্ছেন।এমন সময় মৃনালিনী দেবী ঠাকুরদার “নারী উক্তি” কবিতাটি আবৃত্তি করতে লাগলেন;
মিছে তর্ক-থাক্ তবে থাক্,
কেন কাঁদি বুঝিতে পার না? তর্কেতে বুঝিবে তা কি?
এই মুছিলাম আঁখি এ শুধু চোখের জল,নহে ভর্ৎসনা।।
আমি কি চেয়েছি পায়ে ধরে
ওই সব আঁখি তুলে চাওয়া, ওই কথা,ওই হাসি,
ওই কাছে-আসা-আসি, অলক দুলায়ে দিয়ে হেসে চলে যাওয়া?
কেন আন বসন্তনিশীথে
আঁখিভরা আবেশ বিহ্বল যদি বসন্তের শেষে
শ্রান্তমনে ম্লান হেসে কাতরে খুঁজিতে হয় বিদায়ের ছল?
আছি যেন সোনার খাঁচায়
একখানি পোষ-মানা প্রাণ। এও কি বুঝাতে হয়-
প্রেম যদি নাহি রয় হাসিয়ে সোহাগ করা শুধু অপমান।।
ঠাকুরদা একটুখানি হেসে মৃণালিনী দেবীর হাত ধরে বললেন “আমি তো ভেবেছিলুম,তুমি ভুলিয়াই গিয়াছো”
-কোনবার কি ভুলিয়াছিলাম বলো?
-না।চলো তবে এবার হাঁটিতে হাঁটিতে নেপাল হইতে ঘুরিয়া আসি।এভারেস্টের চূড়ায় বসিয়া তোমাকে নতুন একখানা কবিতা আবৃত্তি করিয়া শুনাইবো।
-নেপাল!!সেতো ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা!
-ভূতের আবার কিসের ভূমিকম্প হে?চলোতো!
ঢাকার অলি গলি দিয়ে দু’জনে হাঁটছেন।ঠাকুরদা হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন।কে যেন আবৃত্তি করছে-
“আজি হতে শত-বর্ষ পরে
কে তুমি পড়িছ আমার কবিতা…..”
ঠাকুরদা মৃদু স্বরে বললেন, “কাহার এত দুঃসাহস!আপাদমস্তক যান্ত্রিক এই যুগে কবিতা আবৃত্তি করিতেছে?এই যুগে যে সাহিত্য-চর্চা দন্ডনীয় অপরাধ ইহা সম্পর্কে কি সে অবগত নহে?এইতো দিনকয়েক পূর্বেই এক নাছোড়বান্দা যুবককে সাহিত্য-চর্চা করিবার দায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হইয়াছে।সাহিত্য-চর্চা নাকি অলস মস্তিষ্কের ফল।এই সমাজ অলস মানুষ চায় না।চায় পরিশ্রমী যান্ত্রিক মানুষ।”
ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি দিলেন দু’জনে।দেখা গেল একদল তরুণ তরুণী কবিতা আবৃত্তি করছে।একই তালে,একই লয়ে।কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে তারা বিশেষ আয়োজন করেছে।একজন মধ্য-বয়সী লোক ঘরে ঢুকে সবাইকে কাছে ডাকলেন।তাদের কথা বার্তা শুনে ঠাকুরদার চোখ ভিজে গেল।এই তরুন তরুনীর দল লুকিয়ে লুকিয়ে সাহিত্য-চর্চা করছে।সদস্য বাড়লে সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়ে শুরু করবে আন্দোলন।এরা সাহিত্যের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।ঘরের এক কোণে বসে একটা বাচ্চা ছেলে পড়ছে-
“আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে,
বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে”
ঠাকুরদা মৃণালিনী দেবীকে নিয়ে সারারাত সেই ঘরের আশেপাশে ঘুরলেন।সেদিন আর তাদের নেপাল যাওয়া হলো না।এখানে এত সুখ রেখে নেপাল যেতে ইচ্ছে হলো না তাঁদের।এত সুখ ঠাকুরদাকে নোবেলও দিতে পারেনি।
©somewhere in net ltd.