![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।
অতঃপর
...........সুমনের ভালোবাসা
লিখেছেনঃ নিশিথের নিশাকর
অপরাহ্ণে সুমন অবিশ্বাস্য এক খবর পেলো, অন্য কোন খবর নয়।নদীর ফেরার খবর।ভালোবাসার মানুষটি ফিরে এসেছে শুনে খুশির থেকে কষ্টই বেশি পাচ্ছে সুমন।কারন নদী কয়েক দিন আগে সুমনকে ফাঁকি দিয়ে পারি জমিয়েছে অন্যের ঘরণীর বেশে।কিন্তু বাস্তবতার কষাঘাত আর নিয়তির নির্মম পরিহাস, নদীকে হেরে দিয়েছে।সর্বশান্ত করেছে নদীকে।এতো অল্প বয়সে বিয়ে তারপর বাসরের আগে বিধবা।নদী জেনো, না ফুঁটিতে ঝরে যাওয়া ফুলের মত।অপয়া আর কুলক্ষির অপবাদ নিয়ে আজ সর্বহারার ঘরে ফেরা।অবিনশ্বর যন্ত্রণা নদীর মনে, ক্ষত-বিক্ষত মন নিয়ে সুমনের মুখোমুখি হওয়ার সাহস নদীর নেই।নদীর অনুক্ত কথাগুলো সুমন হয়তো কখনো জানতে পারবে না।অনির্বাণ এক তুষের অনলে পুড়ছে নদীর বর্তমান জীবন।সুখ প্রায় দুর্লভ হয়ে গেছে।নদী এখন কি করবে, কার কাছে জানাবে তার অনুভূতিগুলো।অতীতের কাছে নেই কি কোন অনাহত ঋণ, যার অভিলাষে শান্তি পেতে পারে নদীর মন।তার সব চাওয়া আর কথাগুলো অকথ্য মনে হয়।নিজেকে একঘরে করে রেখেছে নদী।পৃথিবীতে থেকেও জেনো অন্য গ্রহে বাস করছে।অগোছালো মনের আকুতি বোঝার কেউ নেই।অদম্য এক সুখের আশায় একদিন যাকে অস্বীকার করেছে তাকে ডাকবে কিসের ছলে?
আল্লাহ্.........
আমার নিরাকার ভালোবাসার সীমারেখা পার করে যাকে একদিন আমার থেকে পর করেছো, আজ কেন সে নিরাশ্রয়!!তুমি জানতে, তার চলে যাওয়ার পর পীড়িত জীবন হয়েছে আমার।আমি তোমার আরাধ্য করেছি কখনো নিজের জন্য কিছু চাইনি, শুধু নদীর ভালো চেয়েছি।কি ভেবেছো, আমার নদী অসহায়?না, আমি বেঁচে থাকতে কষ্টের কোন দাগ তার মনে রাখবো না।তুমি যে কালিতে লিখও না কেনো, আমি তা মুছে দেবো।
মরণশীল জীবন তোমার দেওয়া কিন্তু আমার ভালাবাসা অমর।আমি আগেও নদীকে ভালবেসেছি, আজও নির্বোধের মত ভালবাসি।একমাত্র মৃত্যু আমাদের ভালোবাসার মাঝে দেয়াল হতে পারে।দয়া করে আমাদের নিষ্পাপ দুটি মনের মিলনে আর বাঁধা দিয়ো না।
আমাদের জীবনে অতিথির নামে আর কোন কষ্টকে হাজির কর না, খোদা।আমি তাকে কত ভালবাসি তা যেমন আমি জানি, তেমন তুমিও জানো।তবে কেনো অনিলে ভেসে আসে ভায়োলিনের সুর?ঐ আকাশের পিছনে বসে খুব তো খেল দেখালে।এবার মুক্তি দাও আমাদের দুজনাকে।আজ আমি চললাম নদীর কাছে, দেখি কি কর তুমি।তোমার সুবিচারের আশা কিন্তু আজও ছারিনি।তোমার বন্ধ আঁখি দুটো দিয়ে আমাকেও দেখো, আমিও তোমার অবহেলিত এক বান্দা।
নদী......
আমি আসছি নদী তোমার কাছে, তোমার বন্দি জীবন থেকে মুক্তি দিতে।একদিন যে স্বপ্ন বুনেছি আজ তাকে সঙ্গে করে বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে, জয়ের খুশিতে নিয়ে আসবো তোমাকে।তোমার নিভে যাওয়া সব কটা প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করবো তোমার জীবন।তুমি আবার ভাসবে রঙ্গিন স্বপ্নে।সমাজের চোখে তুমি আজ অলক্ষি তাই তোমার সমাজের চোখের পর্দাটা সরিয়ে দিচ্ছি।এই পৃথিবী জানবে, তুমি শুধু আমার।তুমি অপয়া নও।
আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো, আমার আসতে মনে হয় একটু বেশি দেরি হল।তুমি হয়তো অনেক নিশি ভোর করেছো আমার অপেক্ষায়।আমি তোমার সব ক্লান্তি, অভিমান ভেঙ্গে নতুন সাঁজে রাঙ্গিয়ে দেবো বলে আজ পারি দিয়েছি তোমার উদ্দেশ্যে।দেখেছো স্রষ্টা কত দয়ালু, এতো কিছুর পর আমাদের মিলন করে দিচ্ছে।
তুমি জানো, আমি তোমার জন্য কত কিছু নিয়ে আসছি- সব তোমার পছন্দের।ঐ যে নুপুর দুটো, মনে আছে তোমার?আরও কত গয়না আর সাজবার জিনিস পত্র নিয়ে আসছি।আজ কিন্তু তোমাকে সাঁজতেই হবে, বধুর বেশে দেখবো বলে অনেক ঘুরে শাড়ি কিনেছি।তোমার দেওয়া শেরওয়ানী পড়েছি আজ, কত আশা করেছিলে আমাকে এই পোশাকে দেখবে বলে।আজ তোমার সব স্বাদ, সব আশা পূরণ করবো।তুমি জানো বাসর ঘরের কথা মনে হলে বড্ড লজ্জা লাগে।তুমি যখন আমার লজ্জা ভরা মুখ দেখে হেসে বলবে- ছেলেদের এতো লজ্জা থাকে।সুমন তুমি মেয়েদের মত করছো।
আমি তখন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তোমার হাসি মুখটা দেখবো।তাই কিত্রিম আলোতে সাজিয়েছি আমার কুঁড়ে ঘরটি।হা হা হা আর ভাবতে পাচ্ছি না।
আর বেশি দূর নেই প্রিয় একটু পর নিশির সমাপ্তি আর প্রভাতে তোমার আমার দেখা হবে।ড্রাইভারটা যে কি না, গাড়ি খুব আস্তে চালাচ্ছে।ও কি বুঝবে তোমার জন্য আমার মনের অস্থিরতা।
.......................................
তারপর ভোর হল, বিয়ের সাঁজে সাজানো সুমনের গাড়িটি ধীর গতিতে গ্রামের পর গ্রাম পার করে নদীর বাড়ির সামনে দাঁড়ালো।নদীর বাড়িতে প্রচুর মানুষ, সবাই কাঁদছে।সুমন ভাবছে গ্রামের মেয়ের বিয়ে সবাইকে ছেড়ে যাবে তাই এই বিদায় কান্না।হটাত একটা ছোট ছেলে এসে কান্না করতে করতে বলল- সুমন ভাইয়া নদী আপু, আপু মারা গেছে।
এ কথা শুনে- এক নিমিষে সুমন স্তব্ধ হয়ে গেলো, গাড়ি থেকে নেমে পাথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে রইলো।কারন সামনে যাওয়ার সাহস আর ক্ষমতা দুটোই হারিয়ে ফেলেছে সুমন।
আবার ছোট্ট ছেলেটি বলল- ভাইয়া আপুকে শেষ দেখা দেখবে না?এই নাও আপু তোমাকে একটা চিঠি দিয়েছে।(সুমন জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়লো দেখে) ভাইয়া, ভাইয়া ও মা, মা দেখো সুমন ভাইয়া রাস্তায় শুয়ে পড়লো।
আশেপাশের কিছু মানুষ সুমনকে ভিতরে নিয়ে শুয়ে জ্ঞান ফেরালো।তারপর নদীর নিথর দেহটা দেখে আবার জ্ঞান হারালো।অনেক কষ্টে নিজেকে জ্যান্ত রেখে নদীর জানাযা সম্পূর্ণ হল।
তারপর নদীর দেওয়া শেষ চিঠিটা খুলে পড়তে লাগলো সুমন...............
সুমন,
আমি তোমার ভালোবাসার কাছে হেরে গেছি কিন্তু হেরে যাওয়াটা খুশিকে পেছনে ফেলে প্রশ্নের সামনে দার করিয়েছে।আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে, কেমন করে তোমার এতো ভালোবাসা অপেক্ষা করে অন্যের কাছে যেতে চেয়েছি?
কোন উত্তর আমার জানা নেই।সমাজ আজ আমাকে একটা নাম দিয়েছে অপয়া আর আমি চাইনা তোমার ঘরণী, কোন অপয়া হোক।কিন্তু বেঁচে থেকে তোমার আড়াল হওয়া সম্ভব নয় জেনে আবার পারি দিলাম নতুন এক ভুবনে।তুমি সুন্দর একটা মেয়ে দেখে সংসারি হও।এ জীবনে তো হল না, পরের জনমে না হয় আমার হইয়ো।এই আশায় বিদায়............।
............তোমার নদী।
দু চোখে অঝোর ধারায় গরম জলে ভেসে যাচ্ছে সুমনের মুখ।
হাহা হা হা হে হে হে হি হি হি হি .................................
এরপর পর সুমন পাগল হয়ে ঘুরে ঘুরে খোঁজে নদীর ভালোবাসা।সবাই তাকে পাগল প্রেমি বলে চিনে।
বিঃ দ্রঃ এই গল্পের সুমন ও নদী বাদে পৃথিবীর বাকি সব সুমন ও নদীর কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থী।হয়তো আর কোন সুমনের জীবনে এমনটা হবে না।তাই যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন আমাকে ক্ষমা করবেন।
©somewhere in net ltd.