নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিশিথের নিশাকর

নিশিথের নিশাকর

নিশিথের নিশাকর

জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।

নিশিথের নিশাকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুটি মনের একটি চাওয়া

১০ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:১৯

দুটি মনের একটি চাওয়া............?

লিখেছেনঃ নিশিথের নিশাকর



প্রত্যেক মানুষ প্রতিষ্ঠিত হতে চায়, কি চায় না?

আমিও চাই, তাই মানিয়ে নেয়ার বৃথা চেষ্টা করছি যান্ত্রিক জীবনের সাথে।কেনোনা অতীতে একটা ভালো কাজ করতে পারিনি বলে সেইরাম সুনাম আছে আমার।তাই ঢাকায় এলাম।যাই হোক আসল কথায় আসি।



বাসায় উঠতে সমস্যা হল ব্যাচেলার ভাড়া দিতে চায় না।তখন মনে হল কেন যে আসলাম।একটা ফ্লাটে উঠলাম, নিজাম ভাইয়ের পরিচয়ে।নিজাম ভাই, আমাদের এলাকায় বাড়ী।কাজ না পাওয়ায় নিজাম ভাইয়ের ছেলে আর তিনটা ছেলে সহ চারটা ফাইভের ছেলেকে পড়ানো শুরু করলাম।দু’মাস পর ছাত্রের সংখ্যা বাড়লো তাই দুটো ব্যাচ করে পড়াচ্ছি।মাষ্টারের ছেলে আমি তাই সহজে সুনামও করলাম।ভালই যাচ্ছে দিন।



একদিন বাড়িওয়ালী ডাক দিলো।আমি গিয়ে ভাবতেছি কি বলে সম্বোধন করবো, মাথায় শয়তান চাপলে যা হয় আর কি।যার মেয়ে আছে সে তো আনটি হবে।আর গরীবের বউ সবার ভাবি।তাই আনটি ঠিক করলাম।



আমিঃ জি... আনটি।যদি আমি ভুল না শুনে থাকি তাহলে আপনি আমাকে ডেকেছেন?

বাড়িওয়ালীঃ ঐ প্রথম দিনের পড়তো তোমার দেখাই পাওয়া যায় না।কেমন আছো?কোন সমস্যা হলে জানাইও?

আমিঃ তা তো অবশ্যই জানাবো।কারণ আপনি আমার কাছে শুধু বাড়ীর মালিক নন, আমার মায়ের মত।আর সমস্যা হলে সন্তান তো মায়ের কাছেই আসবে।(একটু চাপা মারলে এনারা খুশিতে আনমনা হয়ে যায়।)

বাড়িওয়ালীঃ (একটু খুশি হয়ে।) সুন্দর কথা বলতে পারতো।তুমি প্রতিদিন আসতে পারবে?

আমিঃ কেন আনটি?

বাড়িওয়ালীঃ যদি কিছু মনে না কর তাহলে একটা কথা বলি?

আমিঃ আপনি একটা কথা বলবেন তাতে আবার মনে করার কি আছে।বরং আপনার কথা রাখতে পারলে খুশিই হবো।

বাড়িওয়ালীঃ বাবা আমার একটাই মেয়ে ওকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার কিন্তু দেখো একটুও পড়তে চায় না।সারাক্ষণ টিভি নয়তো কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।তুমি যদি একটু পড়াতে।

আমিঃ (মনে মনে একটু খুশিই হলাম।কারণ মেয়েটা দেখতে ভালই ছিল) ও এই কথা, আচ্ছা আমি কাল থেকে পড়াবো।আনটি আসি?

বাড়িওয়ালীঃ তোমার নামটাই তো জানা হল না?

আমিঃ আমার নাম সাগর।(নাম বলাতে নতুন ছাত্রী এমন ভাবে হাসি দিলো।মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।)আমি আসি আনটি বলে চলে আসলাম।



বাসায় বসে ভাবছি এই মেয়ের মতিগতি সুবিধার না।আল্লাহই জানে একে কন্ট্রোল করতে পারবো কি না।বিকাল বেলায় ছাঁদে গেলাম, অবশ্য আগে কখনো আসি নি।বাসায় আমার দৌড় বারান্দা পর্যন্ত।ছাঁদে এসে ভালই লাগছে।একটু ঘুরে দেখি বাড়িওয়ালার মেয়ে ছাঁদে।তাই নিচে নেমে আসলাম কারণ একটু ভালো লাগার জন্য বাসা হারাতে পারবো না।



পরের দিন বিকেলে গেলাম পড়াতে আনটি দেখে খুশিই হল।আনটিকে আমার পড়ানোর কিছু নিয়ম বললাম।রাজিও হলেন।ছাত্রীর রুমে নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়ে আনটি চলে গেলেন।অনেক ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েছি কিন্তু আজ কেন জানি আমারই অন্য রকম লাগছে।একটু নীরবতা পালন হল মনে হচ্ছে।তাই আমিই বললাম-----



- ওকে পরিচয় হওয়া জাক।তোমার নাম কি?কোন ক্লাশে পড়?

- আমার নাম নদী।(বড়ই লজ্জা পেল নাম বলতে)।ক্লাশ এইট।

- ও ভালো।(আজ বুঝলাম মেয়ে কাল হেসেছে কেন?তাই প্রথমের নামটা বললাম।সাগর বললে আবার হাসবে।)আমি মনিরুল ইসলাম।তোমার তো কয়েক মাস পর পরীক্ষা?

- জি স্যার।কিন্তু পড়তে আমার ভালো লাগে না।

- বল কি।ঠিক আছে আজ তোমাকে পড়তে হবে না।আমরা গল্প করি কেমন?

- জি স্যার।

- তোমার কি করতে বেশি ভালো লাগে?

- গেম খেলতে।সিরিয়াল দেখতে।

- (হায় হায় মায়ের স্বভাব পুরায় পাইছে।) কি গেম খেলও?

- ভাইস সিটি, ঝূমা আর গুলো পারি না।

- ঠিক আছে আমি তোমাকে শিখায় দেই?

- (খুশি কারে বলে বুঝতে পারলাম।তাড়াতাড়ি পিসি অন করলো।) স্যার আই জি আই টা পারিনা।

- ভালো করে শিখায় দিলাম।প্রায় দুই ঘণ্টা গল্প করার পর ছাত্রীর মনে জায়গা পাইলাম।বয়স কম হলে কি হবে।চালাকের মগডাল পর্যন্ত উঠেছে।শহরের মানুষের একটা সমস্যা আছে।এরা চায় বড় মাছ ধরতে কিন্তু কাঁদা গায়ে লাগাতে চায় না।আপনি যতোই ভালো পড়ান না কেন?ছাত্রীকে একদিন মারলে চাকরী চলে যাবে।



এভাবে নদীকে খুশি করে পড়াতে পড়াতে এক সময় পরীক্ষা আসলো।পরীক্ষা শেষও হল।আজ পরীক্ষার রেজাল্ট হল A+ পেয়েছে।সত্যি বলছি আমি একদিনও তাকে পড়াই নি।শুধু গল্প করে এসেছি ও নিজেই পড়েছে।সব বিষয়ে প্রাইভেট তো পড়েই আমাকে কেন রাখছে জানিনা।আজ খুশিতে নদীর আম্মু কি করবে, কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।বাবা সাগর তুমি না হলে এটা সম্ভব হত না।যেদিন থেকে তুমি এসেছ সেদিন থেকে নদীর মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি, তাই আশাও করেছি ভালো ফল করবে।কিন্তু এতো ভালো করবে ভাবিনি।সেদিন নদীদের বাসায় খাওয়ার দাওয়াত পেলাম।রাতে গেলাম- দরজা খুলেই নদী বলল এতো দেরি কেন? - বুঝতে পারলাম সবার খাওয়া হয়ে গেছে।তাই বললাম আমি কি চলে যাবো?

- না না।চলে জাবেন কেন।ভিতরে আসেন বলে ওর আম্মুকে ডাক দিলো।

আমরা সবাই এক সাথে বসে খাইলাম।খাওয়া শেষে নদী বলল স্যার আম্মুর সাথে কথা শেষ হলে একটু আমার রুমে আসবেন একটা জিনিস বুঝতে পাচ্ছি না।মেয়ের কথা শুনে মায়ে বলল বাবা তুমি ওর কাছেই যাও(কঠিন বিশ্বাস করে আমাকে)।আমি একটা সিরিয়াল দেখবো।



ভালবাসার প্রথম দিনঃ...............

দরজায় দাঁড়িয়ে-- নদী আসবো?............

- আসেন।আমার ঘরে আসতে কোন অনুমতি লাগবে না।আর কখনো জিজ্ঞাস করবেন না।সোজা ঢুকে পরবেন।

- ছি ছি।তা আমি করতে পারি না।কই দেখি কোনটা বুঝতে পাচ্ছ না?

- স্যার আমার রেজাল্টে আপনি খুশি হন নি?

- (প্রশ্ন করার ভাব দেখেই বুঝতে পারছি পরের প্রশ্ন শোনা যাবে না।কিন্তু কিছুই করার নেই।ঘরটা ওদের।) আমি তোমাকে কিভাবে বোঝাবো কতটা ভালো লেগেছে।তোমার আম্মুর কথাই বলি- দেখেছো সন্তানরা ভালো কিছু করলে বাবা-মা কত খুশি হয়।কত সহজে ভালোবাসা পাওয়া যায়?এরপর আরও ভালো করে পড়বে, তাহলে এই ভালবাসাটা সারাজীবন পাবে।

- কিন্তু আমি আপনার কথা শুনতে চেয়েছি।আপনি ভাবছেন আমার মায়ের কথা, আমি ভাবছি আপনার কথা।আপনার প্রত্যেকটা কথাই আমার মনে কি হয়ে আছে।তা কি করে বোঝাই।আপনি আমাকে পড়ান নাই কিন্তু যা শিখিয়েছেন তাতো ভোলার নয়।আপনি জানেন_শুধু আপনার জন্য আমি আজ এই রেজাল্ট করেছি।যেদিন আপনি বলেছেন আমার সব কথা শুনবেন, রাখবেন।আপনার সব কিছুর বিনিময় আপনার সম্মান বাঁচাতে হবে।সেদিন থেকে আমি যুদ্ধে নেমে পরলাম।আর আপনি...............

- (এসব কেন বলছে আল্লাহ্‌ আজকের মত রক্ষা কর।) দেখো নদী আমি যা কিছু করেছি তোমার ভালোর জন্য করেছি।তার জন্য তোমার আম্মু আমাকে টাকাও কম দেয়নি।আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ।বরং তোমার কথায় মাসের পর মাস ফ্রি তোমাদের টাকা নিয়েছি।

- আপনি কখনো আমাকে বুঝতে পারেন নি।ঠিক আছে আমিই বলছি।আপনি প্রথম যেদিন আমাদের বাসায় উঠলেন, সেদিন থেকে আপনাকে ফলো করেছি।দেখেছি প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথেই কথা বলেন না।তাই আম্মুকে বলে আপনার কাছে পড়েছি।কষ্ট পেয়েছি সেই দিন, যে দিন আমাকে দেখে ছাদ থেকে নেমে এসেছেন।আর কোনদিন ছাদে আসেন নি।খুব কেঁদেছি সেদিন।কেন জানি না।আপনার সাথে কথা বলে আরও বেশি ভালো লাগলো।রসিকতা আমার পছন্দ ছিল না।শুধু আপনার কথায় আমি হেসেছি,পরে যাই করেছেন সব ভালো লাগতো।ভেবেছি রেজাল্টের পর বলবো-আমি আপনাকে খুব ভালবাসি।

- (আজ আমার খুব খুশি হওয়ার কথা কিন্তু হতে পাচ্ছি না, কেন?আমিও তো নদীকে ভালবাসি।তার শিক্ষক হওয়াটাই কি বাঁধা দিচ্ছে ?) নদী তুমি পাগল হয়ে গেছো।এসব কি বলছ তুমি?আমি তোমার স্যার।

- চুপ করেন।আপনি কখনো আমাকে পড়িয়েছেন?আমিও কখনো পড়তাম না।জানি তো এই কথায় বলতেন।আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন-আপনি আমাকে খোঁজেন না?যেমন আমি খুঁজি।আমার অনুপস্থিতি আপনাকে ভাবায় না?যদি না ভাবায়, তাহলে কেন আমায় খুঁজতেন?

- (এই কথা শুনে আমার আর দূরে থাকা সম্ভব হল না।আমাকে কেউ এতো ভালবাসেনি।) নদী তুমি একটু তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেছো।এতো পাকা পাকা কথা বলতে পারলে কেমন করে?তুমি জানো আমি কে?কি আমার পরিচয়?আমি তোমাকে ঠকাতে পারবো না।নদী আমি গ্রামের গরিব ঘরের সন্তান।তোমার সাথে আমার এসব মানায় না।তুমি আর একটু ভাবো।

- মিথ্যে বলতে একটুও বাঁধল না?আপনি আমাকে কি ভাবেন?আমি সব জানি।বাড়িতে রাগ করে এসেছেন।সবাই আপনার পথ চেয়ে আছে।আমি আপনার বাড়িতে কথা বলেছি, আপনার ভাবির সাথে।আমার ভাবার আমি ভেবেছি, এখন আপনার টা ভাবতে পারেন।আমাকে ভালো লাগে না?আপনার নাম না, কি?(একটু হেসে)

- সাগর।(বলেই জিবায় কামড় দিয়ে ধরা পরেই গেলাম।) কবির ভাষায় বলি-তোমার মনের মধ্যে এমন একটি স্বচ্ছতা আছে যে, আকাশের সমস্ত আলো সহজেই প্রতিবিম্বিত হয়।তোমার সব কিছুর মধ্যে ছরিয়ে পড়া সেই আলো আমি দেখতে পাই-তোমার মুখে, তোমার হাসিতে, তোমার কথায়, তোমার স্থির হয়ে বসে থাকায়, তোমার রাস্তা দিয়ে চলায়।আসলে আমরা দুজনেই খুঁজেছি।আজকের রাত তার সাক্ষী।নদী আমি তোমাকে ঠকাচ্ছি না তো?

- (এই সময় প্রেমিক প্রেমিকা চরম পাগলামি করে।যেমনটা মানুষ বাসর রাতেও পায় না।এতো আনন্দ শুধু এই সময়ে হয়।নদী সাগরের পাশে বসলো।) তুমি জাননা-নদী সব সময় সাগরে মিলত হতে চায়, তাই সে বয়ে চলে।সাগর কি চায় না, তার নদীকে নিজের বুকে নিতে?

- (এই সময় নিজেকে থামানো আর আকাশের উড়ন্ত রকেট থামানো এক কথা।তা আমি পারবো না।) জড়িয়ে ধরে দু’জনের এতো দিনের সব না বলা কথা ঠোট দিয়ে পড়ে নিলাম।প্রেমে পরলে রোমিও রা ঠোট, চোখ দুটোরই ভাষা শিখে যায়।আমি ছারতে চাইলাম কিন্তু নদী ছাড়ছে না।আসতে চাইলাম।বার বার বলছে আর একটু থাকো।প্লিজ প্লিজ প্লিজ।





বিঃ দ্রঃ এই ভাবে কয়েক মাস চলার পর নদী সাগরকে রাজি করে বাড়ি পাঠায়।সব কিছু সবাই জানার পর তাদের বিয়ে হয়।কেননা সাগরের পরিবার অপছন্দ করা নদীর মায়ের সম্ভব হয় নি।পড়ে নদী তার পড়াশুনা চালায়।সাগর টেক্সটাইলে চাকরি করছে।তাদের সুখি পরিবারের জন্য।সবাই দোয়া করবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.