![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।
আকাশের ভালোবাসা….........
By-- নিশিথের নিশাকর
আজ কয়েক দিন থেকে আকাশ ফেসবুকে আসে না।অনেক বন্ধুর মধ্যে কিছু বন্ধু আছে যারা আকাশের সাথে সুখ দুঃখ শেয়ার করত।সবার মনে একটা ভালো লাগার সৃষ্টি হয়েছে তাই আকাশের wall এ অনেক বন্ধু পোষ্ট করছে।
১ম পোষ্টঃ ভাই আপনি ফেসবুকে আসেন না কেন?আপনাকে খুব মিস করছি প্লিজ আসেন ভাই?
২য় পোষ্টঃ আপনার সাথে কথা বলে এত ভালো লেগেছে যে এখন সব সময় ফেসবুকে আপনাকেই খুঁজি।আপনি আসেন প্লিজ?
৩য় পোষ্টঃ তুমি সব সময় আমাকে হাসিয়েছেন।অনেক সমস্যার সমাধান দিয়েছেন।এখন আমার আপনাকে ভীষণ দরকার।প্লিজ আসো বন্ধু।
৪র্থ পোষ্টঃ মামা আমি জয়।তুমি ফেসবুকে আসো না কেন?জাননা তোমার সাথে চ্যাট করার জন্য ফেসবুক চালাই।
৫ম পোষ্টঃ আমি শুধু তোমার জন্যই ফেসবুকে আসি।
এমন কিছু বন্ধু আকাশের wall পোষ্ট দিয়ে ভরে দিয়েছে।কিন্তু আকাশ আর ফেসবুকে আসে না।কি হয়েছে আকাশের?কোথায় আকাশ?
আকাশঃ
পৃথিবীর প্রকৃতির সুন্দর্য কার না ভালো লাগে?নির্বিশেষে সকলেই সুন্দরের পূজারী।কেউ অসুন্দর চায় না।কিন্তু আকাশের আজ কোন কিছুই ভালো লাগছে না, তাই বাসা থেকে অনেক দূরে এক নির্জন অরণ্যে বসে কাঁদছে।আল্লাহ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ট হল মানুষ।এই মানুষের দেহের মধ্যে বাম পাশে বুকের ভিতর একটা নরম মাংস থাকে, তার নাম মন।যখন কেউ মনে আঘাত পায়, তখন এভাবে কাঁদে,যেভাবে আকাশ কাঁদছে।আবার এই মানুষ জাতিকে বাস্তবতার কষাঘাতে একটা প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয় যার উত্তর তার কাছে থাকে না।তখন শুধু চিৎকার করে কাঁদতে মন চায়।এটাই হল জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসেব করার সময়।আকাশ ভাবছে এইতো তিন বছর আগেও ভালো ছিলাম।কি ছিলাম, কি পেলাম আর কি হারালাম।বইয়ের একটা কথা মনে পড়ছে- “যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তা চাই না”।
তিন বছর আগে..................
চাদনি নামের একটা মেয়ের সাথে ফোনে পরিচয় হয়।আসলে আকাশ চাঁদনিকে না দেখলেও তার কথা অনেকের মুখে শুনেছে।আকাশের বন্ধু হাসান তার চাচাতো বোন চাঁদনি।হাসানের কাছ থেকেই নাম্বার নিয়েছে আকাশ।
কিছুদিন কথা বলে দুজনেই খুশি।এই খুশিই তাঁদের সম্পর্কটা বছরের পর বছর টিকিয়ে রেখেছে।এক বছর পর দেখাও করে তারা।অবশ্য দেখা হয়েছে চাঁদনির বাসায়।তিন দিন চাঁদনির বাড়িতে থেকে আসার দিন আকাশ চাঁদনিকে কল দিলো...............।
চাঁদনিঃ হ্যালো।আকাশ বল......?
আকাশঃ কেমন আছো?
চাঁদনিঃ আরে দুঘণ্টা আগেও তো দেখেছো, মনে নেই?
আকাশঃ আচ্ছা আমাকে তোমার কেমন লাগলো?
চাঁদনিঃ খারাপ লাগার মত তুমি না।ভালই লাগে?আমাকে তোমার ভালো লাগেনি, না?
আকাশঃ (আজকের এই সময়টা প্রত্যেক প্রেমিক প্রেমিকার একটা খুশির সময়, যখন তার পছন্দের মানুষটি বলে তাঁকে তার ভালো লাগে) সত্যি?তোমাকে আমার ভীষণ ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে আরও আগে কেন দেখা হল না।
চাঁদনিঃ (খুশি হয়ে)তাই.........আমারও এটাই মনে হচ্ছে।
আকাশঃ আমি রাখি বাসায় গিয়ে কথা বলবো।
চাঁদনিঃ ওকে বাই.........।
এভাবে দুজনের জীবন থেকে আরও একটা বছর কেটে গেল............
ভালো লাগা থেকে কখন যে তা ভালোবাসা হয়েছে বুঝতে পারেনি আকাশ।চাঁদনিও আকাশকে বাঁধা দেয়নি।তবে আকাশ এটা চাঁদনিকে জানায় নি।বাংলাদেশে ভালো ছেলে নির্বাচন করার দায়িত্ব যদি চাঁদনিকে দেয়া যায় তাহলে ১ম ২য় ৩য় সবখানে আকাশের নাম লিখত।দুজন দুজনের জন্য পাগল কিন্তু কেউ কাউকে বলে না “ভালবাসি”।হাসন বলেছে ভালবাসার কথা সে চাঁদনিকে বলে দিবে।আকাশের অনুরোধে সেও বলতে পারেনি।চাঁদনি যদি একবার বলে আকাশ তোমাকে দেখতে মন চাচ্ছে, তাহলে আকাশ পাগলের মত ছুটে যেত চাঁদনির কাছে।আবার আকাশ যদি বলে, তাহলে চাঁদনি তার কাজিনকে(হাসান) বলে যেভাবে হোক আকাশকে তার সামনে আনত।দুজনের পছন্দ এক, মনে হয় একটা মোবাইলের দুটো সিম।জীবনের মধুর সময় পার করছে দুজনে।আকাশ একদিন হাসির ছলে বলল- চাঁদনি আমার আকাশে মনে আগাগোড়া তোমার বসবাস।তুমি সব সময় আমার বুকে থাক।দিনের আলোয় সূর্য হয়ে অন্ধকারে চাঁদনী রাত হয়ে।দেখেছো তোমাকে পেয়ে আমি কতটা সম্পূর্ণ?
- (যদিও চাঁদনির কথাগুলো ভালো লেগেছে তবুও) হা হা হা।আকাশ এসব কি বলছ তুমি?
- (আকাশ একটু ভয় পেল।মনে করল না চাঁদনি মনে হয় এসব পছন্দ করে না।তাই কথা ঘুরিয়ে দিলো।) কেন তুমি চাঁদ আর আমি আকাশ।চাঁদ তো আকাশেই থাকে চাঁদ থাকাতে আকাশ যে পূর্ণতা পেয়েছে তাই বললাম।নামের কি মিল দেখো?
- তাইতো।কিন্তু আমি চাঁদ হতে চাই না।
- কেন?
- চাঁদে তো কলঙ্ক আছে আমার নেই।তাছাড়া চাঁদ হলে সব সময় আকাশের বুকে থাকতাম।কই আমিতো তোমার বুকে থাকি না।হা হা হা হা হা...।
- হা হা হা হা।ঐ কাজ কর না কারন দুষ্টুমিতে পি এইচ ডি করা আছে।
- তাই না......।
আজকেও আকাশ বলতে পারলো না।ভয় একটাই চাঁদনি যদি না করে দেয়?কোন কিছুর বিনিময়ে তাঁকে হারাতে পারবে না আকাশ।তাছাড়া এই সম্পর্কের কাছে কতো প্রেমের সম্পর্ক হার মানবে।কি পায় না চাঁদনির কাছে?শুধু ভালবাসি কথাটা ছাড়া সব কথা হয়।আর যে সম্পর্কে শারীরিক চাহিদা থাকে তাঁকে তো সম্পর্ক বলে না, বলে ব্যবসা।আকাশ মনে মনে তার বন্ধুকে ধন্যবাদ দিচ্ছে এমন একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক করিয়ে দেয়ার জন্য।
একদিন হাসান বলল কিরে তুই চাঁদনিকে সত্যি ভালবাসিস?দেখিস আমার বোন জেনো কোন কষ্ট না পায়, ও খুব ভালো মেয়েরে।
-তোকে চাঁদনির হয়ে ছাপাই গাইতে হবে না।তাকে যেটুকু চেনার চিনেছি।
-যদি তাই হয় তাহলে আজো বলছিস না কেন, তুই ওকে ভালবাসিস?
-বলবো সময় হলে।এত তাড়া কিসের?
-দেরিতে বললে তোরই লছ।যেদিন কারো প্রেমে পরবে সেদিন দেখবো কি করিস?
-একটু কম কথা বলবি।হাসান ভালোবাসা কি তুই বুঝিস না।দেখ লাভ লছ ব্যবসায় হয় ভালবাসায় নয়।ও যদি কাউকে ভালোবাসে সুখি হয়, তাহলে আমার তাকে ছেড়ে দেয়া উচিৎ?
-না ভালোবাসা তো তুই বুঝিস তাই যাকে জীবন দিয়ে ভালবাসিস তাকে বলতেই পারিস না।
-(বিরক্ত হয়ে) চুপ থাক আমি রাখলাম।
ফোনটা কেটে দিয়ে ভাবছে না, হাসান তো ঠিক বলেছে।সময় থাকতে যদি নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে না পারি তাহলে তো এটা কোন ভালবাসাই হল না।ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরল।
পরের দিন হাসান ও আকাশ চাঁদনিদের বাসায় গেলো।চাঁদনি আকাশদের দেখে অনেক খুশি হল।কিন্তু আকাশ ভুলেও ভাবেনি এই হাসির পিছনে লুকানো চরম সত্যিটা আকাশের মন ভেঙ্গে তছনছ করে দিবে।কিছুক্ষন পর চাঁদনির আম্মুও গল্পের মধ্যে যোগ দিলো।জানতে চাইল বাসার সবাই কেমন আছে।তারপর বলল বাবা তোমরা এসেছ ভালই হল।আজ চাঁদনিকে দেখার জন্য ছেলের বাসা থেকে মেহমান আসবে।তোমরা আজ থেকে যাও।আকাশ হাসানের দিকে তাকে,হাসান আকাশের দিকে তাকে, কারো মুখে কোন কথা নেই।আকাশ বলল চাচি আম্মা আমিতো থাকতে পারবো না, হাসান থাকবে।একটু হাসি মুখে বলল চাঁদনি তুমি আর পরবে না?পড়তে তো চাই কিন্তু দেখি কি হয়।ততক্ষণে চাঁদনির আম্মু গিয়ে চা,নাস্তা আনল।কি ব্যাপার তোমাদের তিন জনের মন খারাপ?একবারে সবাই বলল না?তাহলে কারো মুখে কথা নেই যে?চা খাওয়া শেষ করে আকাশ উঠে বলল আমি বাসায় চলে যাবো।
-আজ কেন যেন চাঁদনি নিষেধ করলো না।শুধু বলল তোমার না একটা ফেসবুক আইডি খুলে দেয়ার কথা ছিল?
-হাসানের কাছে নিয়ো।আর মেহমান যাওয়ার পর একটা কল দিয়ো।
-আচ্ছা দিবো।
আকাশ একটু দাড়া আমিও বাহিরে যাবো।এই বলে দুই বন্ধু বাসার বাহিরে এসে দাঁড়াল।
-হাসান ভুলেও জেনো বলিস না, আজ আমরা কেন এসেছি।তাহলে চাঁদনি কষ্ট পাবে।
-আমি বলবো।তোকে আমি এমন ত্যাগ করতে দেবো না।
-তুই যদি আমাকে বন্ধু হিসেবে একটুও ভালবেসে থাকিস তাহলে কখনো কাউকে কিছু বলবি না।
-না আকাশ এমন কথা বলিস না।আমি জানি তুই চাঁদনিকে কত ভালবাসিস।
-ভালবাসি বলেই তো দুরে যাচ্ছি।আমার ভাগ্যটাই এমন।আমি গেলাম।
-আচ্ছা যা আমি তোকে ফোনে সব জানাবো।আর শোন মন খারাপ করিস না।
আকাশ কোন কথা না বলেই চলে গেলো।আকাশ একটু অন্য রকম আবেগে লুতুপুতু করা পছন্দ না।একটু চাপা স্বভাবের।
বাসায় এসে ভালো লাগছে না।তাই ফোন ল্যাপটপ সব ভাবিকে দিয়ে কিছু দিনের জন্য ভাবির বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলল।কারন ওখানে একটা শাল বন আছে।আকাশ তার কষ্টের সময় গুলো একা কাটায়।যাবার আগে হাসানকে কল দিয়ে জানতে পারলো বর ওদের পরিচিত তাই হয়তো আজ বিয়ে রেজিস্ট্রি করে রাখবে।এ কথা শুনে তখনি বের হল আকাশ।
চার বছর পর তাওয়াইয়ের বাড়িতে আসাতে বাড়ির সবাই অন্যরকম খুশি কিন্তু আকাশের কিছু ভালো লাগে না।তাই প্রতিদিন শাল বনে যায় আসে কাউকে সঙ্গে নেয় না।
বনের ভিতর আকাশ উপরের দিকে তাকিয়ে বলছে-এ গাছ,এ আকাশ,এ দিনের আলো তোমরা কেউ বলতে পারো কেন আমার প্রিয়া আমার হবে না।চাঁদনি তোমাকে কতদিন কত ভাবে বোঝাতে চেয়েও বোঝাতে পারিনি।কত ভালবাসি তোমাকে।তুমি যদি আমাকে ছাড়া থাকতে পারো তাহলে তোমার সুখের কাছে নিজের ভালোবাসা বিলিয়ে দেব।
সাত দিন পরে আকাশ বাড়িতে আসলো।এসেই হাসানের সাথে দেখা।হাসান কেমন আছিস।আমি ভালো তুই কেমন আছিস, এতদিন ফোন অফ রাখছিস আর চাঁদনি আমাকে বার বার কল করে মারছে।তোকে একবার দেখতে চায় চাঁদনি?গিয়ে বলিস আমি মরে গেছি,কবে যাবি?এইতো এখন আজ রাতে ওর বিয়ে।
আকাশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ওকে যা তাহলে...
কিন্তু চাঁদনি তোর কথা বললে?
একটা ছবি উঠায় নে।যদি বলে এমন হয়েছি কেন,তাহলে বলবি নিরব প্রেমে বলি হওয়া আকাশের কার্বন কপি এটা।
রাগ করে আকাশ বাসায় চলে যায়।হাসান বিয়ে বাড়িতে যায়।
বিকেলে আকাশ ফেসবুকে লগ ইন করল।একটার পর একটা পোষ্ট পরছে আর লাইক দিচ্ছে।তিন মিনিতে ত্রিশটা এস এম এস আসলো সবাই জানতে চাচ্ছে কি হয়েছে?
আকাশ স্ট্যাটাস দিলো একটা.........।
আপনাদের সবার পোষ্ট আমি পরেছি।সবাই একি প্রশ্ন করেছেন তাই উত্তর একটাই দিলাম।...তিন বছর থেকে একটা মেয়েকে ভালবাসি তার নাম চাঁদনি।এক সপ্তাহ আগে তার রেজিস্ট্রি হয়েছে, আজ তার বিয়ে।আজ একটা নতুন সম্পর্কের শুরু।যেটা আমার হওয়ার কথা ভেবেছি।আমি কখনো ভাবিনি আমার জীবনেও এমন দিন আসতে পারে।...।
আর একটা কথা-এখন বুঝছি উপদেশ দেওয়া খুব সহজ কিন্তু মেনে চলা কত কঠিন।আমি আজ থেকে আর ফেসবুক চালাবো না।আমি অনেক দিন থেকে আপনাদের অনেক প্রশ্নের সমাধান দিয়েছি।তাই আজ আপনারা তার বদলে যদি আমাকে সান্ত্বনা দিতে চান তাহলে ভুল করবেন।কেননা আপনারা কেউই আমার সম্পর্কে জানেন না।ওকে বাই ফেসবুক।
(বিঃ দ্রঃ আকাশ শুধু ফেসবুক থেকে নয় নিজের জন্মস্থান থেকেও বাই বলে চলে যায় অজানা এক ব্যস্ত শহরে।এই গল্পে কোন আবেগ জরানো নেই।কারন এটা বাস্তবতার কাছে বলি হওয়া একজনের সত্যি ভালোবাসা।আমি হয়তো গোছাতে পারিনি।আবারো নিজের ব্যর্থতা প্রকাশ করছি।)
©somewhere in net ltd.