![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।
অরণ্যের ভালোবাসা..................
By…নিশীথের নিশাকর
কলেজে সবার পিছনে বসা ছেলেটা হল অরণ্য।সবার থেকে আলাদা কারও কাছে কোন প্রশ্ন নেই, তবে সবার প্রশ্নের উত্তর দেয়।সবাই তাঁকে ভালো পায়।ওদের সাথেই পড়ে নিশি।নিশিকে প্রথম থেকেই ভালো লাগতো অরণ্যের।কিন্তু সামনে দাঁড়িয়ে তা বলার সাহস নেই।চার মাস পর অরণ্য একটা উপায় খুঁজে পেলো, কলেজের (সামছু ভাই) বাদামের দোকানি।এই মানুষটির সাথে কারো মনোমালিন্য নেই।তাই চুক্তি করলো প্রতিদিন নিশিকে একটা চিঠি আর বাদাম দিবে, বিনিময়ে প্রতিদিন ৩০ টাকা পাবে।তখন ৩০ টাকা কম ছিল না,তাই সামসু ভাই রাজি হল।শর্ত একটাই জীবনে কাউকে একথা বলতে পারবে না।সামসু ভাই বলল আরে না আমি কত জনের লাইন করে দিলাম।এ কথা শূনে অরণ্য একটু ভরসা পেল।
তাঁরপর থেকে প্রতিদিন একটা করে চিঠি নিশিকে দিতো।প্রথমে নিতে চায় নি কিন্তু সামসু ভাইয়ের অভিজ্ঞতা ছিল তাই বুঝায় দিয়ে দিতো।কিন্তু কে দিতো এটা বলেনি।নিশিও জানতে চায় নি।
একদিন সামছু অরণ্যকে প্রশ্ন করল-এই দিনেও চিঠি দাও কেন,কেন নিশিকে জানাও না?
অরণ্যঃ ভাই কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফোনে কথা বলা যায় না, কিন্তু চিঠি দেয়া যায়।অন্তত হতাশায় ভুগতে হয় না।কাউকে বিরক্ত করে তার ভালোবাসা পাওয়া যায় না।আমিও নিশিকে বিরক্ত করতে চাই না।
সামসু ভাই কখনো ছেড়া পোশাক পড়ে কলেজে এসেছেন।আসলে দেখতেন মনটা কতো ছোট হয়।নিশির সামনে যাওয়া আর ছেড়া পোশাক পড়ে ভালো জায়গায় যাওয়া একি মনে হয়।
সামসুঃ আরে ভাই আমিও এস এস সি পাশ করেছি, ভাগ্য আমাকে আজ বাদাম বিক্রির রাস্তায় নামিয়েছে।ভালোবাসা আমিও বুঝি।ভালবাসার চোখে কোন কিছুই খারাপ লাগে না।তাছাড়া তুমিত দেখতে খারাপ না।
অরণ্যঃ আমি নিশিকে জানাবো সেদিন, যেদিন সে আমাকে খুজবে।আসলে আমার নিজেকেই পছন্দ হয় না তাই নিশিকে বলার সাহস পাই না।
সামসুঃ তোমারে বুঝাইতে পারবো না।চিঠি দাও দিয়ে আসি...............।
-নাও।দিয়ে জানার চেষ্টা করবে।নিশি চিঠি পড়ে না রাস্তায় ফেলে দেয়?
-আচ্ছা..................।
অরণ্য কলেজের মাঠে বসে নিশিকে দেখছে, সে কোথায় যায়, কার সাথে কথা বলে, কি খায়?নিশির চলা ফেরা একটু মাস্তান মাস্তান ভাব।গায়ের রং শ্যামলা,আল্লাহ্ তাঁকে এমন ভাবে গড়েছে মনে হয় মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমান।ওর হাসি মাখা ঠোঁটের দিকে তাকালেই কেমন জেনো এলোমেলো হয়ে যায়।আরও বেশি সুন্দর লাগে হালকা কাজল মাখা আঁখি দুটোকে।এক কথায় নিশির দিকে তাকালেই মনে হয় হারিয়ে যাওয়া বা খুঁজে নেয়ার সব সুখ ওর কাছে।যে সুখের সাথে অভিমান অরণ্যের, সেই সুখের সাথে সন্ধি নিশির।
হটাত করে একজন বাইক নিয়ে কলেজে এসে নিশিকে নিয়ে গেলো।দেখেই অরণ্যের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।বুকের ভিতর একটা ব্যথা অনুভব করছে।মাঠে শুয়ে পরল।কিছুক্ষণ পর বাসায় চলে গেলো।কোন কিছুই ভালো লাগছে না কেমন অস্থির লাগছে অরণ্যকে।
পরের দিন কলেজে এসে নিশির সামনে দাঁড়িয়ে কি বলবে বুঝতে পাচ্ছে না।
নিশিঃ কিছু বলবে অরণ্য .........?
অরণ্যঃ (একটু চমকে উঠে বলল) কাল তুমি কার সাথে বাসায় গেলে?
নিশিঃ তোমাকে বলবো কেন?তুমিত আমাদের ফ্রেন্ড লিস্টে পর না।তুমি একটা অন্য গ্রহের মানুষ না?
অরণ্যঃ (ত্যাড়া উত্তরে একটু কষ্টই পেল।কারন সব প্রেমিক চায় তার পছন্দের মেয়েটা সুন্দর করে কথা বলুক।) ও.........।আমি ভেবেছি প্রশ্ন করতে পারবো কিন্তু ভাবিনি সেটা আমার ভুল ছিল।ওকে বলতে না চাও বল না।ত্যাড়া কথা না বলাই ভালো না?
নিশিঃ ওকে,সরি।উনি আমার ভাইয়া।এদিক দিয়ে যাচ্ছিলো তাই যাওয়ার সময় নিয়ে গিয়েছে।হ্যাপি...।
-ওকে।বাই ।
আজ অরণ্য পৃথীবির অর্ধেক সুখ পেয়ে গেলো।একটা মেয়ের সাথে কথা বললে এত ভালো লাগতে পারে আগে জানা ছিল না।মন কখনো খুব অল্প পাওয়াতে খুব বেশি সুখ পায়।
এভাবে এক বছর হয়ে গেলো।অরণ্য ঠিক করলো চিঠি দেয়া বন্ধ করবে।আজ শেষ চিঠি লিখে সামসুকে দিলো।ভালো লাগছে না, তাই বাসায় গেলো অরণ্য।এদিকে নিশি আজ কলেজে আসেনি।তাই সামসু চিঠিটা সুন্দর করে রেখে দিলো।
সামসু বাসায় গিয়ে দেখে তার স্ত্রী অসুস্থ।তাঁকে নিয়ে মহা ব্যস্ত সামসু।চারটা না পাঁচটা না একটা বউ।যাকে অনেক ভালোবাসে সে।
এদিকে নিশির আজ মন খারাপ কলেজে সামসুকে না দেখে, না অপরিচিত চিঠি না পেয়ে, বুঝতে পাচ্ছে না।রাতে ঘুমাতেও পাচ্ছে না।নিশি কি চিঠিগুলোকে ভালবেসে ফেলেছে?আজ কয়েক দিন থেকে কোন চিঠি আসে না।আগে চিঠি আসতো বলে রাগ হতো এখন না আসলে রাগ হয়।মানুষের হৃদয় এমনি অবুঝ কারো অধীন সে নয়।যাকে চায় শুধু তাকেই চায়, না মানে কোন লাজ ভয়।নিশি অরণ্যের সব চিঠি পুনরায় পড়ছে।কি পাগলামি করছে বলা বাহুল্য।
“মানুষ এক বড়ই আজব প্রাণী।একটা জিনিস নিয়মিত ঘটতে থাকলে সেটা যতই বিরক্তিকর হোক না কেন সে সেটাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।পরে সেটা যদি হটাত করে বন্ধ হয়ে যায় তবে সেটারে প্রবলভাবে মিস করতে শুরু করে।যেমন নিশি অরণ্যের চিঠি মিস করছে”।
কিছুদিন পর সামসু কলেজে আসলো।এসেই একগাধা বকা খেল নিশির।বকা শুনে সামসু একটুও কষ্ট পেল না বরং মনে মনে খুশিই হল।এই খুশির আলো তার মুখে দেখা যাচ্ছে।
নিশিঃ ভাই আমি আপনাকে বকা দিচ্ছি আপনি হাসছেন ?
সামসুঃ হাসবো না, আচ্ছা বল কি হয়েছে?
নিশিঃ একটু দাবি নিয়ে বলল- আমার এত দিনের চিঠি কই?সব দেন?
সামসুঃ পাগলি আমি চিঠি লিখি, যে আসার সময় নিয়ে আসবো।চিঠি তো.....................।ও একটা আছে সেটা নিতে পার।
নিশিঃ খুব আগ্রহের সহিত বলল- দেন।
সামসুঃ নাও।সেদিন তুমি আসনি তাই দিতে পারিনি।এই বলে নিশির কাছ থেকে চলে গেল।
নিশি কমন রুমে ঢুকে চিঠি খুলল।চিঠি ছিল এই রকম.........
নিশি.........
এ আমার শেষ চিঠি।জানি উত্তর পাবো না, তবুও বলছি।তোমার পছন্দ তোমার বুদ্ধি আমার থেকে অনেক উপরে।তোমার সাথে একত্রে পথ চলতে গেলে একদিন হয়তো তোমার থেকে বহুদূর পিছনে পড়ব, তখন হয়ত আর আমাকে ফিরে ডাকবে না।তাই আমি ভেবে দেখলাম অধিকাংশ সময় আমরা যাকে পাওয়া বলি সে আর কিছু নয়, পুলিশের হাতকড়া হাতকে যেরকম পায় সেই আর-কি।সেদিন বুঝেছি তোমাকে একটু সময় কাছে পেলে অনেক সুখ পাওয়া যায়।কিন্তু নিজের ভাবতেও ভয় হয়।
তবুও বলা হল না।কেননা এই অন্য গ্রহের ছেলে কি পারবে একটা চঞ্চল মনের মেয়েকে ভালবাসতে?যার স্থান পিছনের সিট, সে সামনের মানুষকে ভালবাসতে পারলেও বলতে পারে না-I Love You Nishi.অবশেষে ভালো থেকো।
............... ইতি
.....................।অরণ্য............
নিশি চিঠি পরে কেঁদে ফেললো।পাগলের মত খুজছে অরণ্যকে।কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলো না।সামসু ভাইকে জিজ্ঞাস করে কিছুই জানতে পারলো না।
তার কয়েক দিন পরে নিশি অরণ্যের বাসায় গেলো,
অরণ্য অসুস্থ একলা ঘরে পরে আছে।
সম্ভবত অপেক্ষার সাথে যুদ্ধে হেরে বিছানাকে সঙ্গী করেছে।
নিশি অরণ্যের পাশে বসে কাঁদছে।
আর বলছে—ভালবাসো, তাহলে না বলে এলে কেন?
আমি কি খেয়ে ফেলতাম?হা ............।
অরণ্য—আই লাভ ইউ নিশি।
নিশি—আই লাভ ইউ ঠু অরণ্য।
(বিঃ দ্রঃ সত্যিকারের ভালোবাসা সব সময় কষ্ট দেয় না।আর যাকে দেয় না সেই হল প্রকৃত সুখি।অরণ্যের মত সুখি।)
©somewhere in net ltd.