![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।
পরদেশী পরাগ এসেছে
লিখেছেনঃ নিশীথের নিশাকর
আজ প্রায় এক বছর পর দেশের মাটিতে পা রাখলো পরাগ।
এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হাটছে,
রাস্তা ভরা গাড়ি গুলোর পি পি শব্দ আর ছুটে চলা দেখছে।
হাটতে হাটতে একটা ওভার ব্রীজের এক কোনায় বসলো।
বসে ভাবছে,
......সেই তো ভালো ছিলাম।কুড়িগ্রামের ঐ বালু চরের মানুষগুলোই তো, খুব মহান।
আসলে লোভ আর টাকার নেশা আমাকে এতোটা অন্ধ করেছে যে, ভুলটা দেখতেই পারি নাই।
কিন্তু এখন কি করবো, কোথায় যাবো আমি?কিছুই তো অবশিষ্ট নেই।
বেঁচে আছি এই বড়, বললে তো ধার দেনা পরিশোধ হবে না।বাবাকে বলতেও পারবো না।
তাহলে কি মৃত্যু আমার সমাধান!!কিন্তু মারা গিয়ে হয়তো আমি ঋণের দায় থেকে বেঁচে যাবো,
কিন্তু আমার পরিবার।তাদের তো আমার মত মরা ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না।
না, না, এ আমি করতে পারবো না।আমাকে কিছু একটা করতে হবে।
কিন্তু আজ যে থাকবো তারও তো জায়গা নেই।তাহলে বাবাকে জানাবো।
উনি কি মানতে পারবে, এই বাস্তবতা?
পরাগ অনেক ভেবে সে রাত ওভার ব্রীজে কাটিয়ে দিলো।
গ্রামে যাকে বিদেশী বলে ডাকে, সে কি না, রাস্তায় ঘুমায়।
আসলে এক বছর আগে পরাগ সুদূর সিঙ্গাপুর গিয়েছে।কাজের আশায়।
আর সিঙ্গাপুর যাওয়ার টাকা মেনেজ করতে,
তাদের সবটুকু জমি বন্ধক রাখতে হয়েছে।
এখন বাড়ী ভিটা ছাড়া সবটাই অন্যের কাছে।
দুচোখ ভরা স্বপ্ন ছিল পরাগের,
ছোট ভাইকে ডাক্তার বানাবে।মায়ের ভালো চিকিৎসা করাবে।
শেষে বাবাকে একটা ভালো দোকান ধরিয়ে বসিয়ে দিবে।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে পারি দেয় অন্য রাষ্ট্রে কিন্তু পরাগ বিদেশের মাটিতে পা দিয়েই বুঝতে পেরেছে।
সে ভুল মানুষকে টাকা দিয়েছে, চিটিং বাজের পাল্লায় পরেছে।তাই শেষ ঠিকানা জেল হয়।
ভাগ্যের খেলায় একটু সুবিধা পেয়ে এক বছরে ছাড়া পেল জেল থেকে।
এই এক বছরে পরাগের স্বপ্ন, আশা সব কিছুই জেলের মাকড়শা আর ইঁদুর খেয়ে ফেলেছে।
মদ্ধবিত্ত ঘরের ছেলে হলেও, তার কাছে জেল খাটার মত লজ্জাকর কাজ আর কিছু নেই।
তার উপর বেঁচে থাকার সবটুকু অক্সিজেন একা নিয়ে যে,
পথে পারি দিয়েছে তার শুরুতেই সব শেষ হয়ে গেছে।
এখন সে পারছে না গ্রামে গিয়ে সাধারণ ভাবে বেঁচে থাকতে,
পারছে না পাথরে গড়া শহরটায় থাকতে।উভয় সংকটে পরে, হতাশায় ভুগছে।
চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ দৌড়াচ্ছে,
কিন্তু পরাগ একা কেন বসে আছে তা কারো নজরে পরছে না।
অবশেষে পরাগ রিক্সা চালা শুরু করে।কোন ভাবে দিন যাচ্ছে পরাগের।
এভাবে কয়েক মাস চলে যাওয়ার পর,
একদিন পরাগ অসুস্থ হয়ে পরে।
সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে রোগটাও পরাগকে কাছে টেনে নেয়।
এক সময় পরাগের অবস্থা বাচা-মরা সমান হয়ে যায়।
রিক্সার মালিক পরাগের বাড়ীতে খবর দেয়।
বাড়ীতে তার বাবা খবর পেয়ে ছুটে আসে ঢাকা।
কত দিন পর পিতা-পুত্রের দেখা হবে।
কিন্তু পরাগের বাবা তখনো জানতো না,
পরাগের পরিণতির কথা।
ঢাকায় এসে পরাগের বাবা পরাগকে দেখে ভয় পেয়ে গেছে।
আপন সন্তানকে চিন্তে কষ্ট হচ্ছে।পরে পরাগের মুখে সব কথা শুনে,
তার বাবা বলল,
তুই আমাকে জানাইতে পারতিস।তুই তো ইচ্ছা করে ফীরে আসিস নাই।
যত কষ্ট হোক আমরা সমস্যার সমাধান করতাম। কেন জানালি না বাপ।
পরাগঃ (চোখে জল এসে গেছে) বাবা কি ভাবে জানাবো, আমি তো জানি আমাদের ক্ষমতা।
বাবা যারা এভাবে মানুষকে ঠকায়, তারা কি খুব সুখে থাকে?মানুষ হয়ে মানুষের এতো বড় ক্ষতি করতে পারলো।
বাবাঃ ওরা মানুষ না, অমানুষ।শোন, অন্যকে ঠকিয়ে কখনো কেউ সুখে থাকতে পারে না বাপ।বাদ দে চল, বাড়ী ফীরে চল।
পরাগঃ(দুচোখ অশ্রুতে ভিজে যাচ্ছে) মন তো খুব চায় বাড়ী যাইতে কিন্তু আমি মনে হয় যাওয়া পর্যন্ত থাকবো না বাবা।
বাবাঃ (কেঁদে কেঁদে) চুপ কর।আর কোন কথা নয়, চল আমরা এখনি বাড়ী যাবো, আমাদের ঐ গ্রামেই ভালো।
এদিকে.........
গ্রামের সকল মানুষ পরাগের ফীরে আসার কথা শুনে গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
কেউ আছে বিদেশটা কেমন তা জানতে, সেখানে কি ভাত পাওয়া যায়।
ওখানে দিন হয় কখন আর রাত হয় কখন।বিভিন্ন প্রশ্ন মনে নিয়ে অপেক্ষমান গ্রামবাসী।
ছোট ভাইটি সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে তার ভাইয়া আসছে, হয়তো তার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসছে।
ভাই আসলে একটা বাই সাইকেল, একটা মোবাইল নিবেই নিবে।কারন তার ভাই কখনো তার কোন চাওয়া অপূর্ণ রাখেনি।
অবশেষে,
......দুঃখিনী মায়ের চোখ বেয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝড়ছে, মনে অনেক প্রশ্ন।
খোকা তো একাও আসতে পারতো, সে কি অনেক টাকা নিয়ে আসছে-তাই একা ভয় পাচ্ছে।
না কি অন্য কিছু, খোকার কিছু হয়নি তো?ওর বাবাকে ডাকলো কেনো?
আমার কথা কি ভুলে গেছে, একটা কথা বলতে পারতো।বলতো মা আমি আসছি,
খুব ক্ষুধা লাগছে রান্না উঠাও।কই বলল না তো।
আল্লাহ্ আমার মানিককে তুমি দেখো মাবুদ।আল্লাহ্ আমার খোকাকে ভালোয় ভালোয় ফীরে দাও।
পরাগ ও তার বাবা বাড়ী আসতে শেষ রাত হয়ে গেলো।
খুব ভোরে বাড়ি আসলো।মা তার ছেলেকে দেখে কান্নায় সারা গ্রাম মাথায় নিলো।
ছোট ভাইটি বোবার মত করে, পাথরের মত দাড়িয়ে তার ভাইয়াকে দেখছে।
কঙ্কালের মত চেহারা, ভালো করে খাওয়া হয়নি কত দিন।
টাকার অভাবে সেভ আর মাথার চূলটাও কাটাতে পারেনি।
সব মিলে অচেনা এক মানুষ।ভিতরটা পরাগ।
সেই বিদেশী পরাগ।গ্রামের অনেকেই আপন ভেবে কেঁদে যাচ্ছে।
জেনো সব প্রশ্ন, সব জানার ইচ্ছা ভুলে গেছে।কান্না ছাড়া কিছুই করার নেই।
কিন্তু এই মায়া কান্নায় পরাগের সমস্যাগুলোর সমাধান নয়।
বিঃ দ্রঃ বিদেশে যাওয়া আর বড়লোক হওয়া সবার কথা নয়।
পরাগের এই পরিণতির জন্য কে দায়ী।লক্ষ্য টাকা খরচ করে কোন পরাগ চাইবে না আধামরা হতে।
কিন্তু কিছু মানুষ নামের অমানুষ এর জন্য পরাগের জীবন, পরিবার আজ নিঃস্ব।
কি করবে সমাজ পরাগের জন্য, কিছুই করবে না।কারন সমাজ এখানে অন্ধ।
লজ্জা, ছি ছি এগুলো মানুষ করে।
মানুষ হয়ে মানুষের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে আনন্দে মেথে থাকা মানুষগুলোকে।
চরম ভাবে ঘৃণা করছি।দোয়া করি আর কেউ জেনো পরাগের মত না হয়।
©somewhere in net ltd.