নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিশিথের নিশাকর

নিশিথের নিশাকর

নিশিথের নিশাকর

জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।

নিশিথের নিশাকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই দেখ, শেষ দেখা

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:৫৫

হাবিব ক্লিনিকের দ্বিতীয় তলার একটা এসি রুমের ছোট বেটটায় শুয়ে আছে আকাশ।কিছু কিছু জায়গা আছে, যা উন্নত না অনুন্নত বুঝা মুশকিল।হাসপাতাল আর মুসলমানের জন্য কবর এসব যায়গা যত নামিই আর ভদ্র পল্লীর অন্তর্গত হোক না কেন, মূল্যায়নটা একই।হাসপাতালে সবাই কাজে আসে।রোগী চায় তার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে আর ডাক্তার চায় তাদের অতীতের খরচ হওয়া টাকা উঠাতে।আর হাসপাতালের সবার উপরে মানে মালিক থাকে তার আকৃতিটা কুমিরের মত করতে।কবরে তো সবাই স্থান পায় মাটিতে, যেখানে লেখা থাকে না কোনটা উচ্চ মানের মাটি, কোনটা নিম্ন মানের মাটি।মানব জাতি যতই কুত্তার লেজের মত বাকা হোক, এখানে এসে সবাইকে সোজা হতে হয়।মনে হয় মানুষ আর অমানুষকে সোজা করার এটাই শেষ মাধ্যম।



আকাশ উপরে ঝুলিয়ে রাখা স্যালাইনের টুপ টুপ করে দেহে আসার দৃশ্য দেখছে আর ভাবছে জীবন কতটা বিচিত্র।দুদিন আগেও সুস্থ ছিল কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি এই খবর শুনতে হবে ভাবতেই পাচ্ছে না।আকাশের কানে এখনো ডাক্তারের কথাটা আলপিনের মত বাজছে।কারন আকাশের জীবন ডাক্তারের মতে ঐ স্যালাইনটার উপর, তার ব্রেন ক্যান্সার হয়েছে।কিন্তু কি করবে, ঢাকাতে তেমন কেউ নেই যে তার লাশটা নিয়ে যাবে।এই ভেবে চোখে জল এসে গেলো আকাশের।নিয়তির এই খেলায় কখন কে আউট হয়ে যায় তা কেউ নিশ্চিত বলতে পারে না।ডাক্তারও বুজি হাল ছেড়ে আর আকাশকে দেখতে আসে না।যার আপন কেউ নেই তার আবার ডাক্তারের উপর রাগ বা অভিমান হওয়া বেমান।



আকাশের দুই বছরের প্রেমিকা লাবণ্য, সে অবশ্য কাছাকাছি থাকে কিন্তু সে এই খবর পায়নি।কারন লাবণ্য এখন তার ভার্সিটির ছুটি কাটাতে গ্রামের বাড়িতে আছে।আকাশ কোন উপায় না পেয়ে একটা কাগজে তার ঠিকানা আর লাবণ্যকে একটা চিঠি লিখা শুরু করলো।



লাবণ্য,

____একদম কাঁদবে না, মন দিয়ে পড় সোনা এটাই যে আমার শেষ বলা।তুমি হয়তো আমাকে খুব স্বার্থপর ভাবছো, ভাবতেই পারো।আসলে আমার উচিৎ হয়নি পচন ধরা মন নিয়ে তোমার ভালবাসাকে এভাবে হত্যা করা।আমি চাইও নি সত্যি আমি জানতাম না।ছয় মাস আগে শুনেছি আমার ক্যান্সার হয়েছে কিন্তু সেদিন ডাক্তার বলেছে আমি আরও দুই বছর বাচবো।আমি চেয়েছি এক বছরে তোমার ভার্সিটি শেষ হলে বলে দিবো কিন্তু এভাবে ধরা পরে যাবো ভাবিনী।তবুও ভালো যে ধরা পরে লজ্জিত হওয়া মুখটা তোমাকে দেখাতে হচ্ছে না।



আমার এই শেষ বেলায় আমি বলবো না, আমাকে ভুলে যাও বা নতুন কাউকে সাথী করে সংসারি হও।তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ আমার এই চলে যাওয়া মেনে নাও।আমার স্বপ্ন ছিল তুমি সুখি হবে, আমি চাই আমার অবর্তমানে সে স্বপ্ন তুমি পূরণ করবে।

দেখো তোমার আজ খুব কষ্টের দিন আর আজ আমার শেষ দিন তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার।



প্রত্যেকেই একদিন না একদিন চলে যেতেই হবে, যেমন আজ গেলাম আমি।এই চলে যাওয়া মেনে নিতে হবে সবাইকে, তুমিও নাও।তবুও কিছু কিছু মানুষের চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।মনে হয় না ফুটিতে ফুল ঝড়ে গেলো।কিন্তু আমাদের হাতে কিছুই করার নেই সোনা।আসলে আল্লাহ্‌ যা করেন তা আমাদের ভালোর জন্যই করেন, হয়তো ভালোর জন্যই ইহলোক ত্যাগ করলাম।



যাবার বেলায় তোমায় দেখে যেতে পারলাম না বলে মন পাখিটা খুব ছটপট করছে তাই তার কথা তোমায় জানালাম, সে তোমায় সত্যি খুব ভালোবাসে।জানি তুমিও তাতে খুব ভালোবাসো।তাই তোমার প্রতি তার এতো মায়া এত টান।



একটু আগে কত কথা লিখবো বলে খাতা নিয়ে বসলাম কিন্তু এখন আর পারছি না।প্রচণ্ড ব্যাথায় থেমে যাচ্ছে কলম।কিন্তু তোমাকে বলার যে আরও বাকী রয়ে গেলো।আর বুঝি সেগুলো বলাই হবে না।তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়ো।



ভালো থেকো সব সময়।

তোমার আকাশ______





লাবণ্য ডাক্তারের দেওয়া আকাশের চিঠি পড়ে কাঁদছে আর বলছে, আকাশ এটা হতে পারে না।তুমি না বলেছিলে, আমরা এক সাথে বাঁচবো এক সাথে মরবো তবে কেন আজ একা চলে গেলে?আমাকে এত বড় সাঁজা কেন দিলে?কেন বললে না তোমার সমস্যার কথা, তাহলে আমি বাড়ি যেতাম না।ভুল আমারই হয়েছে, তোমার এত বড় রোগটা এত কাছে থেকেও বুঝতে পারিনি।

আমি বুঝতে পারিনি তোমার কষ্টগুলোকে, কেন আমায় এত বড় ব্যার্থতা উপহার দিলে।এক বার বলে দেখতে।



লাবণ্যর আকুলতা তার মনের কথা আর আকাশের কান পর্যন্ত পৌছায় না।ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে গেছে আকাশ।আসলে যখন কেউ চলেই যায় তখন তাকে যতই বলার থাক না কেন, তা আর বলা হয় না।এই না বলা কথা গুলো মানুষকে কুড়ে কুড়ে নিঃশেষ করে দেয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

জে.এস. সাব্বির বলেছেন: ভুল আমারই হয়েছে, তোমার এত বড় রোগটা এত কাছে থেকেও বুঝতে পারিনি।

অসাধারণ প্রেমকাহিনী ।

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫০

নিশিথের নিশাকর বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.