![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।
প্রান্তর অনেক দিনের আশা বাসার পাগলিটার জন্য একটা ওয়াশিং মেশিন নিবে কিন্তু যা বেতন, তাতে সংসার চালানোর পর যা থাকে তা দিয়ে মেশিনের ছবি কেনাও হয় না।তার উপর গ্রামের এক কোনায় পরে থাকা বৃদ্ধা মায়ের জন্য টাকা পাঠাতে হয়।সব দিক কিভাবে সামলে নেয় তা ঐ পাগলী লাবণ্য জানে, প্রান্ত শুধু বেতন নিয়ে বউয়ের হাতে তুলে দিয়ে দিব্যি খায় আর ঘুমায়।মেয়েটাও কিভাবে যে সব মেনেজ করে নেয়, এসব ভাবলে প্রান্তর মাথা ব্যাথা করে।কিন্তু প্রান্ত আজ খুব খুশী হয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় যাচ্ছে, হয়তো তার পাগলিটাকে কিছু বলতে।সে আবার তাকে না জানিয়ে কাউকে বকাও দেয় না।
লাবণ্য দরজা খুলে—কি ব্যাপার তুমি?এই অসময়ে কিছু হয়েছে?
প্রান্ত রুমে ঢুকে দেখে তার দামী টেবিলে গোল করে কয়েকটা বাচ্চা পড়ছে, বুঝতে বাকী রইলো না লাবণ্য কেন ফোনে বলে সে ব্যাস্ত।তাহলে মেয়েটা সারা দিন কাউকে না কাউকে পড়ায়?অথচ সে জানতেই পারল না।
—লাবণ্য এরা কে?
—আমার স্টুডেন্ট।(পরে লাবণ্য সবাইকে ছুটি দিয়ে দেয়।বাচ্চারা ছুটি পেয়ে খুশিতে বাসায় চলে যায়।)
প্রান্ত আবার বলল—তুমি বাচ্চাদের পড়াও?
—কেন, দোষের কি?আমি তো চুরি করছি না।তাছারা তুমি তো আমাকে বাধ্য করনি।আমার একা একা লাগে তাই সময়ও কাটা হয় সাথে কিছু টাকাও হয়।তুমি রাগ করলে?
—না রাগ করবো কেন।আমি জানি তুমি কোন অন্যায় করতে পারো না কিন্তু এটাতো অনেক ঝামেলার কাজ।আচ্ছা বাদ দাও, এই নাও এখানে কিছু টাকা আছে রেখে দাও।
—(লাবণ্য অবাক হয়ে বলছে।) টাকা পেলে কোথায়?তোমার বেতন তো পাঁচ তারিখ, আজ তো বিশ তারিখ?
—এটা বেতনের টাকা নয়।নাও রাখো।
—প্রান্ত তুমি ঘুষ খেয়েছো?ঘুষের টাকা দিতে বা বাসা নিয়ে আসতে লজ্জা করলো না?কেন এটা করলে তুমি?
—আরে এটা ঘুষের টাকা নয়, জি এম স্যারের একটা কাজ করেছি তাই তিনি খুশী হয়ে দিয়েছে।
—স্যার এতদিন খুশি হয়ে চাইনিজ খাওয়াত এখন এক লাখ টাকা দিলো।এত খুশির কারন কি প্রান্ত?
—বিশ্বাস কর প্লীজ।
—ঠিক আছে তোমায় বিশ্বাস করলাম কিন্তু আমি তোমার কাছে তোমার বেতনের বেশি টাকা চাইনা।কথাটা মনে রেখো।
প্রান্ত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে ভাবছে, যাক বাবা বাচা গেলো।এমন বউ জেনো আর কারও না হয়, আরে ঘুষ না খাইলে কেউ বড়লোক হয়।এই বউয়ের জন্য প্রাপ্য টাকা না নিয়ে গিফট নিতে হয়।কারন আমি আবার তাকে মিথ্যা বলতে পারি না।যদি মিথ্যা বলি তাহলে ধরা পরে যাই, আর ধরা পরলে তার কান্না থামানো খুব কঠিন হয়ে যায়।কথা বলা বন্ধ করে দিবে, তবে আর যাই করুক কখনো ছেড়ে যেতে চায় না।যদি সে রকম জেদি হত, তাহলে এতদিনে বিবাহিত ব্যাচেলর হতাম।ভাবা যায় কি হত সিনটা?না থাক।
আল্লাহ্ হয়তো ভালো মানুষ চেনার কোন উপায় আমার মধ্যে দিয়েছে তাই, পৃথিবীতে এত মেয়ে থাকতে লাবণ্যর প্রেমে পড়েছি।পরিবারের মানুষগুলোকেও ধন্যবাদ আমার পছন্দের মেয়েকে মেনে নেওয়ার জন্য।সত্যি নিজের বউ বলে বলছি না, এমন মেয়ে আমি আর একটিও দেখি নাই।আমার সব অস্থিরতা আর সমস্যার সমাধান এত দ্রুত করে দেয়, মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই।
—কি হল, তুমি এখনো বসে?বিড়বিড় করে কি বলছ?
—কই কিছু না, ভাবছি একটা ওয়াশিং মেশিন আনবো।
—কেন, আমি কাপড় পরিস্কার করতে পারি না?টাকা দেখলেই খরচের জন্য পাগল হওয়া ছাড়তে পারো না।
—লাবণ্য আমি কিন্তু এটা মেশিন নেওয়ার জন্য ভাবছি।কাপড় কাঁচা খুব কষ্টের কাজ।
—আমি কি বলেছি আমার কষ্ট হয়?দেখ ওটা ছাড়াও অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস আমাদের নেই আগে সেগুলো কর, পরে মেশিন নিয়ো।
—যা ভালো মনে কর, আমি কিছু বলবো না।
—আজ মাকে কল দিয়েছ?উনি অসুস্থ তোমার মনে আছে?কই একবারও তো বললে না, চল মাকে দেখে আসি?
—ইসস একটুও মনে নেই।তুমি বলেছ?
—হা বলেছি।মা তোমাকে ডেকেছে সাথে আমাকেও।যেতে পারবে?
—দেখি বসকে বলে?
—ফ্রেশ হয়ে আসো বাহিরে যাবো।
—এখন, কেন?
—মায়ের জন্য কিছু নিতে হবে আর ডিনার বাহিরে করতে হবে।
—আচ্ছা আসছি।
মার্কেটে গিয়ে লাবণ্য খুঁজে প্রান্তর আর তার মায়ের কাপড়, প্রান্ত খুঁজে বউয়ের জন্য একটা ড্রেস।কিন্তু সেখানেও ঝগড়া লেগে গেলো প্রান্তর সাথে লাবণ্যর কারন প্রান্ত অনেক দামী একটা ড্রেস লাবণ্যকে নিতে বলেছে রীতিমত বাধ্য করেছে।আর লাবণ্য চেয়েছে মায়ের জন্য একটু দামী কাপড় নিবে আর প্রান্ত যেহেতু অফিসে অনেক বড়লোকের সাথে উঠা বসা করে তাই তার ড্রেসটাও ভালো হওয়া উচিৎ।কিন্তু নিজের জন্য কিছু নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না।তাই মার্কেটের বাহিরে এসে প্রান্তের সাথে ঝগড়া।
—আমারই ভুল হয়েছে।তোমাকে না এনে একটা বাচ্চা কে আনলেই হত।
—কি বাচ্চা?আমি কি করলাম?
—তুমি ড্রেসটার জন্য এত পাগল হলে কেন?এই তোমার জন্য পাঁচশত টাকা গচ্চা গেলো।চল বাসায় বুজবা মজা।
প্রান্ত শপিং ব্যাগ হাতে মাথা নিচু করে বাচ্চাদের মত লাবণ্যর পিছু পিছু হাটছে আর ভাবছে আজ আর ঘুম হবে না।এই পাঁচশত টাকা ঘুম হারাম করে দেবে।কি কিপটুস, মনে হয় ড্রেসটা আমি পরবো।এই জন্য আসতে চাই না।এক জিনিস হাজার বার দেখবে।আর দামের বেলায় অর্ধেক।
সোজা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে প্রান্তকে সামনে বসিয়ে লাবণ্য বলছে,
—তোমার মাথায় কিছু নাই, তুমি এমন করলে জেনো ড্রেসটা না পেলে তুমি শেষ।
—তুমি ড্রেসের কথা ভাবছ, আমি তো খাওয়ার কথা ভাবছি।রাগের মাথায় ভুলে গেছো আজ বাহিরে খাওয়ার কথা ছিল।
—ভুলি নাই, ঐ পাঁচশত টাকা তোলার আর কোন পথ নাই তাই আজ তুমি রান্না করে খাওয়াবে।তাহলে আর এরকম ভুল হবে না।
—কি, এখন রান্না করতে হবে?
—মনে হচ্ছে আকাশ থেকে প্যারাসুট ছাড়াই পরলে।আমি হেল্প করতেছি যাও শুরু কর।
লাবণ্য আজ না আমার খেতে ইচ্ছে করছে না চলনা একটু ছাঁদে হেটে আসি।আজ খেতে হবে না।লাবণ্য বুঝতে পাচ্ছে রান্না করার ভয়ে প্রান্ত এই কথা বলল তাই, কিন্তু জানু আমার যে ক্ষুধায় পেট জ্বলে যাচ্ছে?প্লীজ তাড়াতাড়ি কিছু কর।
ও তোমার খেতে হবে, আচ্ছা করতেছি।
প্রান্ত রান্না ঘরে গিয়েই লাবণ্যকে ডাকছে, লাবণ্য পাতিল কই, চাউল কই, পানি কই?
লাবণ্য রেগে বলল—পারবা না বললেই হয় এখন কি দেখিয়ে দেবো পানি কোথায় থাকে?যাও তুমি আমি করছি।
পরে দুজনে রান্না শেরে এক সাথে খেয়ে।সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়লো।লাবণ্য যাই করুক তা ওদের দুজনের ভালোর জন্যই করে।প্রান্ত এটা জানে তাই লাবণ্যর কোন কাজে প্রান্ত কখনো না করে না।এভাবে চলতে থাকে তাদের সুখের পরিবারটি।
বিঃ দ্রঃ একটা পরিবার তখনই সুখের হবে যখন একটা মেয়ে সেটাকে নিজের করে নিবে।মেয়েটি যাই করুক নিজের ভেবে করবে, তাহলে সে পরিবারে অশান্তি শব্দটা আসবে না।আর ছেলেটিকেও মেয়েটির উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।তাকে সাহায্য করতে হবে, তবেই সংসার সুখের হবে।
লিখাঃ নিশীথের নিশাকর
©somewhere in net ltd.