![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের এক চরম পর্যায় মানুষকে একটা উত্তরহীন প্রশ্নের সামনে দাঁড়াতে হয়।আমার কষ্ট গুলো ঐ প্রশ্নের মধ্যে জড়িয়ে আছে।মরণশীল পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষগুলোকে বড় বেশি মনে পরে।যাকে ভোলা যায়না শত সুখে-দুঃখ।লিখালিখি করি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য। জীবনের থেকে বেশি ভালবাসি বাবা-মাকে।
লাবণ্য আর সূর্যের বিয়ে হয়েছে এক বছর হল।সুখি পরিবার গুলোর মধ্যে তাদের ছোট পরিবারটিও একটা।সূর্য এখনো লাবণ্যকে ততোটাই ভালোবাসে, যতটা ভালবাসায় মুগ্ধ করেছে কয়েক বছর আগে লাবণ্যকে।সূর্য এখন অফিসের কাজে একটু ব্যস্ত থাকে কিন্তু লাবণ্য তা মেনেও নিয়েছে কারন কাজ না করলে সংসার চলবে কি করে।এই ভেবে।
লাবণ্য ঘর গোছানোর সময় হটাত চোখে পড়লো তাদের বিয়ের দিনে তোলা ছবিটাতে।খুব যত্ন করে মুছে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ছবির দিকে।একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, ফাজিল একটা শুধু অফিসেই থাকে ঘরে যে আমি একলা, তার অপেক্ষায় প্রহর গুনি সে খবর নাই।আজ আসো বুঝবে মজা।কি জেনো ভেবে একটা হাসি দিয়ে ছবিটা রেখে দিলো।
ঈদ আসতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকী, বাড়িতে শ্বাশড়ি খুব ডেকেছে বয়স্ক মা হয়তো খুব মিস করে তাই।কেনা কাটাও করেছে সবার জন্য কিন্তু সূর্য বাড়ি যেতে চাচ্ছে না।এই নিয়ে বেশ ঝগড়া চলছে লাবণ্যের সাথে।
সূর্য আজও অফিসের কাজে আটকে আছে শীপমেন্ট গুলোও পরেছে ঈদের আগে।লাবণ্য বার বার কল দিচ্ছে কিন্তু সূর্যের কল রিসিভ করার সময় নেই।লাবণ্য না বুঝলেও সূর্য ঠিকি জানে সময়মত শীপমেন্ট করতে না পারলে, ঈদের আনন্দ বিলিন হয়ে যাবে।এত ব্যস্ততার মধ্যেও গাড়ির টিকিট ঠিকি কেটে রেখেছে সূর্য, লাবণ্যকে বলে নাই।সূর্য লাবণ্যকে একটু রাগাতে চাচ্ছে, খুব ভালোবাসে তাই মাঝে মাঝে এমন করে।লাবণ্যও বোকা, সে জানে আজ পর্যন্ত সূর্য তার একটা কথাও অপূর্ণ রাখেনি, তবুও বুঝে না।
সূর্য রাত ১২ টায় বাসায় এসে খুব ক্লান্তি নিয়ে বিছানায় বসলো, এ দেখে লাবণ্য একটু চিন্তায় পরে গেলো।সূর্য তো কোনদিন এসে তার সাথে কথা না বলে এমন করে না, তাহলে কি আজও টিকিট পায়নি।
—তোমার কি হয়েছে?
—সূর্য কিছু বলে না।
—কি হল।কি হয়েছে বল?টিকিট পাওনি?এত দেরি করলে যে?
—উফফ সারাদিন গাধার মত খেটে বাসায় আসলাম, এখানেও শান্তি নাই।কোথায় যাই......।
—শান্তি নাই মানে?তোমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না কে?
—তুমি।এসেই যেভাবে প্রশ্ন করতেছ তাতে নিজেকে আসামি মনে হচ্ছে।
—(লাবণ্য খুব কষ্ট পেলো সূর্যের কথায়) আমার ভুল হয়ে গেছে, আমাকে ক্ষমা কর।প্লীজ আসো খাবে।
টেবিলে খেতে বসে সূর্য বেশ খুশি, আজ তার সব প্রিয় খাবার-হাসের গোস্ত, ছোট মাছের ভাজি সাথে ডাল এসব দেখে খুব প্রশংসা করলো আর বউকে ধন্যবাদ দিলো।লাবণ্য তাতে একটুও খুশি হতে পারলো না কারন আজ সে খুব সেজেছে শুধু সূর্যের জন্য কিন্তু তাকে একবারও সূর্য দেখে না।লাবণ্যের চোখ বেয়ে অশ্রুর জল রাশি আর জেনো বাঁধা মানছে না, অবিরাম তা বয়েই চলেছে।সূর্য হটাত দেখে লাবণ্য খাচ্ছে না, তা বলতে ধরেই দেখে পরীর মত একটা মেয়ে তার পাশে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে।তার নিষ্পাপ দুটি চোখে শত যন্ত্রণার ছবি ভেসে বেড়াচ্ছে।তার মনে কত না বলা কথা।
সূর্য মনে মনে ভাবছে না অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি পাগলিটাকে।আজ সব বলতে হবে নইলে হয়তো খাওয়াই ছেড়ে দেবে।সূর্য খাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে বলছে।
—তুমি জানো আজ আমাদের অফিস ছুটি দিয়েছে?কাল আমরা বাড়ী যাচ্ছি, সকালে ব্যাগ গুছিয়ে রেখো।
—খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলল, কি সত্যি?আমরা কাল বাড়ী যাচ্ছি?তুমি না বললে টিকিট পাওনি?
—আরে বোকা তুমি প্রথম যেদিন বলেছ সেদিনেই টিকিট কেটে রেখেছি, আর টিকিট অফিসে রেখেছি দেখো আজ নিয়ে আসছি।এবার খুশি তো?
—তুমি আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছো?
—সরি জান আমি তোমার সাথে মজা করেছিলাম।প্লীজ ক্ষমা করে দাও।
—ফাজিল দাড়াও দেখাচ্ছি মজা।(ধুম ধাম করে বালিশ দিয়ে মাইর দিলো সূর্যকে)
পরের দিন সন্ধ্যায় সূর্য যতই লাবণ্যকে দেখছে ততোই আশ্চার্য হচ্ছে কারন চার দিনের জন্য বাড়িতে যাচ্ছে।কিন্তু লাবণ্যর ব্যাগ দেখে মনে হচ্ছে কয়েক মাসেও আসবে না।
—আচ্ছা লাবণ্য তুমি কি আর আসবে না?
—কি বললে?আসবো না মানে?তুমি আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?তোমার তো আমাকে ছাড়া ঘুমেই আসে না।
—তাহলে এত কাপড় নিচ্ছ যে?
—ও তুমি বুঝবে না।চুপ করে দেখে যাও।
—আমরা কিন্তু পিকাপ ভাড়া করতে পারতাম?
—কি বললে?পিকাপ কেন?যাও ব্যাগেই নিবো না।হেপি
—আচ্ছা যাও সব নিয়ে যাবো।এখন তাড়াতাড়ি করে রেডি হও নইলে গাড়ি পাবো না।
—একটু হেল্প কর, এগুলো ব্যাগে ঢুকাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
দুজনেই খুব ব্যস্ত আর মনে মনে দুজনেই খুব খুশি কত দিন পর বাড়িতে যাচ্ছে।গাড়িতে উঠে দুজনে দুজনের মাথা একখানে জোড়া দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।মাঝ রাতে হটাত ভূমিকম্পের মত বিকট এক ধাক্কায় দুজনের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।দেখে গাড়ি রাস্তার পাশে অনেক নিচে পরে গেছে।গাড়ির অনেকেই আহত এবং কয়েকজন মারাও গেছে কিন্তু আল্লাহ্র রহমতে সূর্য আর লাবণ্যের কিছুই হয়নি।দুজনে গাড়ি থেকে নেমে দেখছে এক্সিডেন্ট হওয়া যায়গার পাশাপাশি থাকা মানুষগুলোকে।মানুষ কত স্বার্থপর আহত ব্যক্তিকে না টেনে তাদের ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করছে, মনে হচ্ছে সবার জীবন ব্যাগের মধ্যে।এমন অবস্থা দেখে লাবণ্য বেশ ভয় পেল।সূর্য তাকে সাহস দিয়ে বলল সে তার সাথে আছে কিছুই হবে না।
ঈদে সবাই কিছু না কিছু নিয়েই বাড়ী ফিরছে।যে যতটুকু পেরেছে সেটুকু টাকা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে, আজ রাতের অন্ধকারে যারা সাহায্যের পরিবর্তে নিঃস্ব করে দিচ্ছে, নিঃস্বদের কি হবে?সকাল হলে তো তাড়া এমনিতেই হার্ড স্টক করবে।এটা কোন জাতির স্বভাব?বিপদে পরা মানুষকে সাহায্যের পরিবর্তে কি সব করছে।হায় রে বাঙ্গালি।
বিঃ দ্রঃ জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও ঈদ আসছে ক্লান্তির অবসান ঘটিয়ে জীবনে সুখের বাতাস দিতে।বাবা-মা, ভাই বোন সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন।আগাম ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।__ঈদ মোবারক।
লিখাঃ নিশীথের নিশাকর
©somewhere in net ltd.