নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নের মাঝে আমার চরণ .........

আমি একজন বাঙ্গালি রমনী.......

রকি সপ্নচারী

.......সুন্দর সময় সবার জন্য অপেক্ষা করে ....কেউ তা ডেকে আনে আর কেউ আনে না........

রকি সপ্নচারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভাষা

০২ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৩০

 ভাষার সংজ্ঞা ঃ

ভাব প্রকাশের প্রবণতা মানুষের চিরন্তন আকাঙ্খা। অতি প্রাচীনকালে মানুষ তার ভাব প্রকাশের জন্য বিভিন্ন প্রকারের ইশারা-ইঙ্গিত ব্যবহার করতো। ক্রমে দেখা গেল এই ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে মানুষ অপরের কাছে তার মনের ভাব ঠিকঠাকমত প্রকাশ করবে পারত না, ফলে সাহায্য নিল বাগযন্ত্রের সৃষ্টি হলো সংকেতময় কÚধ্বনির, যা থেকেই জন্ম হয় ভাষার।

অর্থাৎ, মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কথা বলে, এই কথাই হলো মানুষের ভাষা। আবার বলা যায় মানুষ বাকযন্ত্রের সাহায্যে সে ধ্বনি উচ্চারণ করে তা যদি কোন অর্থ প্রকাশ করে তবে তা ভাষার মর্যাদা পায়।

ভাষাকে বিবিধ মনীষী ও পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ নানাভাবে সংজ্ঞা করেছেন-

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর মতে-

“কোঠাবাড়ির প্রধান মসলা ইট, তারপর চুনসুরিকর নানা বাঁধন। ধ্বনি দিয়ে আঁটবাঁধা শব্দই ভাষার ইট, বাংলার বলি কথা। নানারকম শব্দ, চিহ্নের গ্রন্থি দিয়ে এই কথাগুলোকে গেঁথে গেঁথে হয় ভাষা।”

ড. মুহাম্মদ শহীদুলাহ-

“মানবজাতি সে ধ্বনি বা ধ্বনিসমাধি দ্বারা মনের ভাব প্রকাশ করে তার নাম ভাষা।”

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন-

“মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে ধ্বনির দ্বারা নিষ্পন্ন, কোন বিশেষ জনসমাজে ব্যবহৃত, স্বতন্ত্রভাবে অবস্থিত তথা বাক্যে প্রযুক্ত শব্দসমষ্টিকে ভাষা বলে।”

ড. মুহম্মদ এনামুল হক বলেন-

“মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য বাগযন্ত্রের সাহায্যে অপরের বোধগম্য যে ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টি উচ্চারণ করে থাকে, সেই ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে ভাষা বলা হয়।





ড. রফিকুল ইসলাম এর মতে-

“ভাষা বলতে আমরা বুঝি ছোট বা বড় একটি জনগোষ্ঠীর ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যম বা মৌখিক যোগাযোগের বাহনকে।”

অশোক মুখোপাধ্যায়ের মতে-

“কণ্ঠনিঃসৃত অর্থবহ ধ্বনিসমষ্টির সাহায্যে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ ও আদান প্রদানের স্বাভাবিক মাধ্যমের নাম ভাষা।”

পন্ডিতগণের ভাষার বিষয়ক নানা সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে ভাষার কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সন্ধান পাওয়া যায়, তা হলো-

ক্স মনের ভাব প্রকাশ,

ক্স বাগযন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন ধ্বনির উচ্চারণ,

ক্স ধ্বনিসমূহের মধ্য দিয়ে অর্থ প্রকাশ,

ক্স বোধগম্যতা এবং

ক্স বিশেষ জনসমাজের ব্যবহৃত ও প্রচলিত।

অর্থাৎ পৃথিবীতে বসবাসরত প্রতিটি ক্ষুদ্র বা বৃহৎ জনগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব মনের ভাব প্রকাশের জন্য যে মাধ্যম ব্যবহার করে তাই ভাষা। এখানে ভাষাকে সেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে তার মাধ্যমে বোঝা যায়, মানবীয় যোগাযোগকে ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। ভাষা হলো মানবীয় যোগাযোগের এক বিস্ময়। এটা প্রতীক বা সংকেতের কাঠামোগত ও নিয়মবদ্ধ সিস্টেম যার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়।

 ভাষার উৎপত্তি ঃ

স্রষ্টা মানুষকে একটা সামাজিক জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এই সমাজ জীবনে বসবাস করার জন্য ভাষার প্রয়োজন। ভাষা হলো সমাজের এক বিরাট সাধনী ও অভিন্ন বন্ধন। তবে এই ভাষার সৃষ্টি নিয়ে রহস্য বিদ্যমান। সৃষ্টির সূচনালগ্নে কোন ভাষার অস্তিত্ব ছিলো না। কেউ কেউ মনে করেন, মানুষ যখন গুহায় বাস করতো তখন সম্ভবত ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত থাকতো। ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে যোগাযোগের এক পর্যায়ে ভাষার সৃষ্টি।

আবার অনেকে মনে করেন, ভাষা হলো প্রাকৃতিক শব্দের অনুকরণ। যেমন: বাক্যের ‘কা’ ‘কা’ ডাক থেকে প্রাণীটির নাম ‘কাক’। তবে কোন কোন মনস্তত্ত্ববিদ বলেন, প্রাকৃতিক শব্দের অনুকরণে নয়, মানুসের উচ্চারিত শব্দ থেকেই ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। প্রচন্ড আবেগে এক ধরনের শব্দকর মানুষের স্বভাব। আদিম মানুষের এসব শব্দ থেকেই ভাষার জন্ম।

আবার উনবিংশ শতাব্দীর পন্ডিত নইরে (হধড়র’ৎব) মনে করেন, মানুষ দলবদ্ধ হয়ে কাজ করার সময় এক ধরনের শব্দ করে যা থেকে ভাষার সৃষ্টি হয়েছে। ভাষা সৃষ্টির এই মতবাদের উপর বিশ্বাস করে, পরবর্তীকালে এ,এস,ডায়মন্ড (অ.ঝ. উধর সড়হফ) বলেন-

“সে সব কাজে বেশি শারিরীক শব্দ প্রয়োজন হয় সে সব কাজে হয়তো কোন ব্যক্তি ‘রি’, ‘মার’, ‘কাট’ ইত্যাদি ধরনের শব্দ ব্যবহার করেছে আর এভাবেই ভাষায় গোড়াপত্তন ঘটে।”

ড্যানিশ ভাষাতাত্ত্বিক অটো ডেসেপারগন (ঙঐড় ঔবঢ়বৎংবহ) ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে নতুন কথা বলেন, “ভাষার উৎপত্তি সুর বা সংগীত থেকে হয়েছে” তিনি মনে করেন, মনের সুখে কোকিল যেমন গান করে আদি মানব-মানবী ও আবেগ-বশত এমনিভাবে গান করতো এই গানই কালক্রমে ভাষার অবয়ব গঠন করে।

মানোবিজ্ঞানী অধ্যাপক জি.রেভেজ (এ.জবাবংু) ভাষার সৃষ্টির একটি নতুন তত্ত্ব দিয়েচেন, যার নাম ‘সংস্পর্শ তত্ত্ব’ সেখানে বলা হয়, মানুষের অন্যের সংস্পর্শে যাওয়ার সহজাত প্রয়োজন থেকেই ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।

তবে প্রথম দিককার ভাষা ও বর্তমান সময়ের আধুনিক ভাষার মাঝে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। সূচনালগ্নের সেই ভাষার অনেকগুলো আজ বিলুপ্ত হয়েছে, আবার অনেক ভাষা কালপ্রবাহে পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয়েছে। ভাষা হলো নদীর মতো প্রবাহমান, নদী যেমন বাক ফিরে ফিরে চলে, তেমনি ভাষার চলার পথও মসৃণ নয়। ভাষাবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে বের করেছেন, বর্তমানে প্রচলিত ভাষাগুলোর মূল হলো কতগুলো ভাষাবংশ। যা থেকেই পরবর্তীতে কালক্রমে অনেক ভাষার জন্ম হয়েছে। ভাষাবিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা-পরিবার আবিস্কার করে এগুলোর বৈশিষ্ট্য সন্ধান করেছেন, আর এই ভাষা পরিবার ধারণার প্রথম আদিপুরুষ উইলিয়াম জোন্স।





নিম্নে চিত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর ভাষা পরিবার গুলোর পরিচয় তুলে ধরা হলো এবং পরবর্তীতে ছকের মাধ্যমে ঐ ভাষা পরিবার থেকে যে সব ভাষার উৎপত্তি ঘটেছে তার দেখানো হলো ঃ

পৃথিবীর ভাষা





বিভিন্ন ভাষা বংশ ভাষা

১. ইন্দো-ইউরোপীয় বাংলা, হিন্দি, ফরাসি, চেক, স্প্যানিশ, জার্মান, ইংরেজি, লাতিন, সংস্কৃতি।

২. ফিন্নো-ভগ্নির হাঙ্গেরীয়, ফিনিস, এস্তেনীয়ো

৩. সেমীর-হামীর উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ভাষা যা বর্তমানে মৃত।

৪. ভোট-চীনীর চীনা, মারমা, বম, গারো, তিব্বত ও মায়ানমার অঞ্চলের ভাষা।

৫. ভাষা-বংশ মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় প্রচলিত প্রায় ৯০০ উপ পরিাবারে বিভক্ত, যাদের মধ্যে বান্টু ও কেয়া উল্লেখযোগ্য।

৬. অষ্ট্রিক বাংলাদেশের খাসি অঞ্চলের ভাষা এছাড়া হাওয়াই দ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, মালয় এবং মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের কিছু অংশে এ পরিবারভূক্ত প্রায় ৯০০ ভাষা রয়েছে।

৭. এক্সিবো গ্রিনল্যান্ডে প্রচলিত ভাষা

৮. উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এশিয়া মহাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের ভাষা যেমন: চুকচিন ভাষা।

৯. ককেশীয় জর্জিয়ার ভাষা।

১০. দ্রাবিড় তামিল, কানাড়ি, সিংহলি এবং কুঁড়–খ।

১১. তুর্কি-মোঙ্গল-মাঞ্চু বর্তমান ইউরোপের তুর্কি বর্তমানে অপ্রচলিত)

১২. আদিম আমেরিকান বৃহত্তর আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানসহ আদি অধিবাসীদের ভাষা অধিকাংশই লুপ্ত।

পরিশেষে বলা যায়, মানুসের প্রয়োজন অতি প্রচাণকালে ভাষা সৃষ্টি হবার পর থেকে সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে ভাষার ব্যাপক উন্নতি হয়ে বর্তমান অবস্থায় এসে পৌছেছে।

 ভাষার উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ বা তত্ত্ব ঃ

ভাষা বিজ্ঞানীরা আজও যে বিষয়ে একমত হতে পারেন নি তা হলো বিভিন্ন ভাষার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছে অনেক অনেক বৎসর আগে মানুষ ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করতো। ক্রমে ক্রমে এই ইশারা-ইঙ্গিত ভাষায় পরিণত হতে থাকে। একটু একটু করে সভা হয়ে মানুষ অর্জন করে ভাষা যা তাকে অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে তোলে।



“সৃষ্টিকর্তা মানুষ ভাষা ছাড়া এমন কোন বৈশিষ্ট্য দেয় নি যা তাকে অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করে রাখবে।”

মানবজাতির এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উৎপত্তি সম্পর্কে ভাষা বিজ্ঞানীরা বেশ মজার মজার তথ্য দিয়েছেন। যেগুলোর মধ্যে কিছু তথ্য হলো প্রথাগত ও রহস্যময় আর বাকিগুলো প্রায় বৈজ্ঞানিক। নিম্নে তা ব্যাখ্যার মাধ্যমে তুলে ধরা হলো ঃ-

 প্রথাগত ও রহস্যময় তত্ত্ব ঃ

অনেক বিশেষজ্ঞগণ মনে করে ভাষা হলে সৃষ্টিকর্তার উপহার। এমনকি ১৭ শতকের শেষের দিকেও একজন সুইডিশ দার্শনিক, মনে করতে স্বর্গরজ্যে সৃষ্টিকর্তা সুইডিশ ভাষায় কথা বলে। তাছাড়া অ্যাডাম ড্যানিশ ১৯৩৪ সালে তুর্কি ভাষা পৃথিবীর সব ভাষার মূলবলে এক চরম বিতর্কের সৃষ্টি করেছিলেন।

 প্রায় বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ঃ-

এই সূত্রের উদ্ভাবন করেছেন ডারউইন। তাঁর মতে ভাষার সৃষ্টি হয়েছে মূলত মূক অভিনয়ের দ্বারা যেখানে বাক-যন্ত্রগুলো অবচেতনভাবে ভাষার সৃষ্টি করে যখন শরীর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাধ্যমে ইশারা-ইঙ্গিত করার চেষ্টা করা হয়।

এই মূল বিষয়গুলোর আলোকে বর্তমানে অনেক থিয়োরী বা মতবাদ প্রচলন আছে। সবের কিছু কিছু প্রমাণিত আবার অনেকগুলো প্রমাণিত নয়। নিম্নে তা বর্ণিত হলো ঃ

 ক। ভৌ ভৌ মতবাদ ঃ

অনুকরণ বা অনুসরণ করার প্রবণতা সবার মাঝেই আছে। এই প্রবণতা থেকেই নাকি ভাষার সৃষ্টি। যেমন : কাকের কা কা শব্দ থেকে এসেছে ‘কাক’। আবার কোকিলের শব্দ শুনে বলে ঈঁপশড়ড়. কিন্তু এই মতবাদের কিছু দুর্বলতা আছে, তা হলো- প্রকৃতির এই শব্দগুলো একেকজনের কানে একেকভাবে শ্রবণ হয় ফলে ইংরেজরা বলে “ঈড়পশ ধ ফড়ড়ফষব-ফড়ড়” ফরাসিরা বলে ঈড়পড়ৎরপড় আর ইতালিয়ানরা বলে ঈযরপপযরৎরপযর.

 খ) ডিং-ডং মতবাদ:

ধ্বন্যাত্মক শব্দ ব্যবহার করা মানুষের অত্যন্ত স্বাভাবিক প্রবণতা। যেমন- “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর” এ হলো কবির কথা। কিন্তু বাতাসের শো শো শ্বদ, নদীল কুলু-কুলু ধ্বনি, খাঁ খাঁ রোদ, খক্ খকে কাশি এমন কথা আমরা প্রায়ই বলি যা আর কিছুই নয় বরং ধ্বনি বা শব্দের অনুকরণ। অনেক ভাষাবিদ মনে করেন এথেকেই ভাষার সৃষ্টি যা অত্যন্ত রহস্যময় একটি তথ্য ফলে এই মতবাদটি নির্ভরযোগ্য নয়।

 গ) ফুঃ ফুঃ মতবাদ ঃ

আমাদের মাঝে জমাট থাকা বিচিত্র আবেগ যেমন: দুখ, কষ্ট, ভয়, আনন্দ ইত্যদি মনে জাগলে আমরা বিচিত্র শব্দ ব্যবহার করে তা প্রকাশ করি এগুলোকে ঠিক ভাষা বলা যায় না। যেমন: ‘ছি: ছি:’, ওয়াও’, ‘ইস’ ‘আঃ”। মানুষের এই প্রবণতা থেকেই নাকি ভাষার সৃষ্টি। তবে এটি জেনে নেয়। যায় না কারণ পৃথিবীল সব জাতি তাদের আবেগ অনুভূতি একইভাবে প্রকাশ করেনা।

 ঘ) হেইয়ো হো মতবাদ ঃ

পরিশ্রমের সময় দৈহিক কষ্টলাঘবের জন্য অনেক সময় কৃষক শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ মুখে নানা শব্দ করে যেমন- ‘মারো জোরে হেইয়ো” “আরো জোড়ে হেঁইয়ো”- এতে তারা আনন্দ পায় এমনকি কষ্ট কিছুটা কমও হয় বলে তারা মনে করে। এই মত অনুসারে মানুষে স্বাভাবিক প্রবণতা উচ্চারিত এই শব্দ থেকে ভাষার সৃষ্টি, কিন্তু এ মতও সমর্থযোগ্য নয় কারণ অর্থহীন ধ্বনিসমূহ থেকে ভাষা সৃষ্টি অনেকটা অসম্ভব।





 ঙ) সিংগ-সংগ মতবাদঃ

অনেক ভাষা বিজ্ঞানীরা মনে করে প্রাচীন সম্পর্ক স্তবক থেকেই ভাষার সৃষ্টি যা এই মতবাদের মূল বিষয়।

 চ) টা-টা মতবাদঃ

এই টা-টা মতবাদ মূলত ডারউইনের মতবাদ থেকেই সৃষ্টি। শরীর বিচিত্র অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ব্যবহারে যখন কোন ইশারা-ইঙ্গিত করা হয় তখন বাকযন্ত্রের দ্বারা ভাষার সৃষ্টি হয়।

 ছ) গুম-গুম মতবাদ ঃ(

প্রকৃতি বিজ্ঞানী প্যারেটে মনে করেন, যে কোন উদ্দীপকতার প্রতি মানুষের ভঙ্গিমাগতভাবে সাড়া প্রদান করে থাকেন। আর এই সব সাড়ার আংশিক সৃষ্টিহয় সুখের দ্বারা। অর্থাৎ তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী মুখগহ্বরে জিহ্বার নানাবিধ অবস্থানের ফলস্বরূপ ধ্বনিসমূহ উৎপন্ন হয়। মুখগহ্বরের জিহবাঞ্চালনের দ্বারা এইভাবে ধ্বনিসৃষ্টির ব্যাপারটা হচ্ছে মানুষের সকল মৌলিক ভঙ্গিমার হ্রাসকৃত রূপ। তবে থর্ন ডাইকের মতে, স্বভাবে ভাষার উৎপত্তি হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

ভাষা সম্বন্ধীয় এই সব জাতের কোনটাই অধিকমাত্রায় সম্ভাবনাপূর্ণ নয়। তবে মতগুলো আগ্রহোদ্দীপক এই কারণে যে, প্রতিটি মতই কিছু না কিছু অঙ্গীকার করেছে, আর এই অঙ্গীকারগুলোর সম্মিলিত রূপ হলো ঃ-

১। মানুষ ধ্বনিসমূহের সৃষ্টি করেছেন নিজের জন্য কিছু অর্থ করার উদ্দেশ্যে,

২। এসব ধ্বনি মানুষ এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন, যেন আগে থেকে বিদ্যমান তাঁর অর্থের সঙ্গে তা সম্বন্ধযুক্ত হয়।

৩। ভাষার সৃস্টি মানবের দ্বারা হয়েছে। তবে ভাষার সৃষ্টি সংক্রান্ত থর্নডাইক এর “অস্ফুটভাষা ভাগ্য”- তত্ত্ব অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত এবং অন্যান্য সকল মত এর অন্তর্ভূক্ত।







নিম্নে এ তত্ত্বটির ব্যাখ্যা করা হলো ঃ-

 ‘অস্ফুটভাষা ভাগ্য’- তত্ত্ব

এই তত্ত্বে বলা হয়েছে সকল শিশু ধ্বনি কবে, অস্ফুট ভাষার ধ্বনি করে। শিশু ধ্বনি করলো মা-বাবা আনন্দিত হন, ক্রমে ক্রমে সে শিশু ভাষা শেখে। থর্নডাইক মনে করেন, শিশুর অস্ফুটভাষিকতার ধ্বনিসৃষ্টি- সে উন্নতি, তা হলো মানুষের ইতিহাসে খোদ ভাষার উন্নতির সদৃশ দৃষ্টান্ত।

তাঁর মতে, প্রকাভাষার মানুষ পুনঃ পুনঃ অস্ফুটভাষিকতার আশ্রয় নিতেন। তিনি তাঁর অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত প্রয়োগবস্তু নিয়ে কাজ করার সময় এইভাবে মুখ দিয়ে অস্ফুট ধ্বনি নির্গত করতেন। একটা সময় পর্যন্ত এই অবস্থা চলতে থাকার পর এক সময় ভাগ্যক্রমে নির্দিষ্ট একটি ধ্বনি প্রকাশ পায, যা কোন নির্দিষ্ট বস্তু নির্দেশে ব্যবহার হতে থাকে। এভাবে ঐ ধ্বনি অনেক লোক ঐ নির্দিষ্ট প্রয়োজ বস্তু নির্দেশে কাজে লাগাতে থাকেন। এভাবে একটি একটি ধ্বনি দীর্ঘকাল পর আপেক্ষিকভাবে স্থায়ী ও নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ধীরে ধীরে মানুসের প্রয়োজনেই জন্ম হয় ভাষার।

যোগাযোগ সংজ্ঞা ঃ

মানব সমাজে যোগাযোগ একটি অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় যোজনা। মানুসের সখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা প্রেম-প্রীতি, মায়া-মমতা, ভালবাসা, চাহিদা, কামনা-বাসনা এমনকি খাদ্য পানীয় সর্বত্রই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যোগাযোগ প্রয়োজন।

সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে-

“একটি সাধারণ প্রতীকের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে বাক্য বা সংকেতের আদান-প্রদানই হলো যোগাযোগ।”

প্লেটো-এর মতে-

“যোগাযোগ হলো কথার মাধ্যমে মানুসের হৃদয় জয় করা।”



উইলবার শ্যামের মতে-

“যোগাযোগের মূল কথা হরো কোন একটি নির্দিষ্ট বার্তার জন্য প্রেরক ও প্রাপকের এক সূত্রে গাঁথা বা তাদের মধ্যে ঐকতান সৃস্টি করা।

মূলত যোগাযোগ হলো এমন একটি বিষয় যার মধ্যে আমরা সবাই সবসময় ডুবে রয়েছি। ‘যোগাযোগ’ শব্দটির অর্থ হলো সাধারণ ও অভিন্ন বা আদান-প্রদান। ঙীভড়ৎফ অভিধান অনুযায়ী যোগাযোগ হলো- কথা, প্রতীক বা লেখার মাধ্যমে জ্ঞান, ধারণা বা চিন্তার স্থাপন ও আদান প্রদান।

যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভাষা ঃ

জন্ম নেয়ার পর প্রথম সে মানবশিশু কেঁদে উঠেছিল সেই হলো যোগাযোগের স্রষ্টা। এই মানব সমাজে যোগাযোগের উদ্ভব তাই ঘটেছিল মানব সভ্যতার উন্মেষ ঘটার পাশাপাশি সময়কাল থেকেই। তাই যোগাগের ইতিহাস মানুষের ইতিহাসের মতই পুরানো, মানব সভ্যতার সূচনারগ্নে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গুহার দেয়ালে আঁকা বা পশুর হাড়ে খোদাই করা চিত্র এসবের প্রচলন ছিলো, ভাষার জন্ম তখনো হয়নি। আরো পরে মানুষ চিহ্ন প্রতীক বা বিভিন্ন প্রকার অবয়ব প্রকাশ করে ভাষার প্রয়োজনে নিবারণ করতো। মানব সভ্যতা ক্রমান্বয়ে অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষ নিজেদের আবশ্যকীয় প্রয়োজনকে সনাক্ত ও আলাদা করতে শিখল এবং এই প্রয়োজনীয়তাকে সাধ্যমত কণ্ঠের সহায়তায় প্রকাশের প্রয়াস চালানোর চেষ্টা করতে থাকলো কারণ এসব চিহ্ন, প্রতীক বা চিত্র তাদের মনের ভাবকে সম্পূর্ণ প্রকাশে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছিল। এভাবেই তার মনের ভাব, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, অনুভূতিকে কণ্ঠের দ্বারা প্রকাশের যোগ্যতা অর্জন করে জন্ম দিল ভাষার। মানবীয় যোগাযোগের ইতিহাসে, এমনকি সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবজনক বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন ছিলো ভাষার ব্যবহার।



অর্থাৎ , ভাষার উদ্ভাবনের ধারাই যোগাযোগ কোনো একটি নব-মাত্রার সংযোজন ঘটেছে, কারণ ভাষাই একমাত্র উপায়, যার দ্বারা মনের ভাব অন্যের নিকট সম্পূর্ণভাবে পকাশ করা সম্ভবপর হয়।

প্রাচীনকালে চোঙ্গা, ঢোল, কবিগন, পথ নাটক, ঘন্টা, জীবজন্তুর ডাক, ফরমান, কবুতরের ডাক-এসব মাধ্যমের সহায়তায় যোগাযোগ সম্পন্ন করার চেষ্টা চলত, কিন্তু ভাষাই একমাত্র মাধ্যম যা যোগাযোগকে সফল করতে পারে। কারণ-

ভাষার সাহায্যের মনের ভাব সহজে প্রকাশ করা যায়,

 ভাষা সকলের নিকট বোধগম্য,

 ভাষার একটা নির্দিষ্ট অর্থ থাকে,

 ভাষার সাহায্যে অন্যকে সহজে প্রভাবিত করা যায়,

 ভাষার সাহায্যে তথ্য আদান-প্রদানের কাজ সহজতর হয়।

 ভাষা মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে হিসেবে কাজ করে।

এসব বিবিধ কারণে যোগাযোগের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ভাষার ব্যবহার করা হয়। যোগাযোগের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হিসেবে ভাষার গ্রহণযোগ্যতা নিম্নের উদাহরণ দ্বারা বোঝা যায়-

একটি শিশু জন্মের পর থেকে প্রতিমুহুর্তে মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। একেবারে শিশু অবস্থায় কান্নাকাটি করে মানে কথা বলতে চায়, যার অর্থ অনেক সময় তার আশেপাশের মানুষ বুঝতে পারে না, কিছু যখণ সে কথা বলতে শিখে যায় অর্থাৎ ভাষার ব্যবহার জেনে যায় তখন তার মনে কথা প্রকাশ করতে বা যোগাযোগ করতে কোন সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না।

তাই যোগাযোগের প্রত্যেক ভাগেই অর্থাৎ বাচনিক, অবাচনিক, অন্তর্ব্যক্তিক, আন্ত:ব্যক্তিক, গণযোগাযোগ, জনযোগাযোগ, দলীয় যোগাযোগে ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সংক্ষেপে বলা যায় মানবীয় যোগাযোগে ভাষা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে কারণ খুব সাদামাঠাভাবে বললে বলা যায় ভাষার মূলত তিনটি কাজ আছে যা একে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত করেছে এগুলো হলো ঃ

১। সনাক্ত করা ঃ

ভাষাই মূলত কোন ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়কে একটি নামে সনাক্ত করে। যেমন: রহিম, করিম, ঢাকা, কলা, কলা, কমলা, কাগজ, বাংলাদেশ, কুয়াকাটা, শত্র“তা ইত্যাদি। এই নামের দ্বারা একজন নিরক্ষর ব্যক্তিও ঐ বস্তুকে চিনতে পারে, কারণ নামটি ঐ বস্তুর প্রতিনিধিত্ব করে, তাই এই সনাক্তকরণ নাম মানবীয় যোগাযোগ জন্য অপরিহার্য।

২। মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যম ঃ

ভাষা মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কোন ধারণা, অভিজ্ঞতা ও আবেগ আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ভাষা ব্যবহৃত হয়।

৩। তথ্যের আদান-প্রদান ঃ

এছাড়া যোগাযোগের অন্যতম কাজ তথ্যের আদান-প্রদানেও ভাষা ভূমিকা রাখে। ভাষা মুখের কথা, বই, রেডিও, টিভি, সাংবাদপত্র ইত্যাদি মাধ্যমের সহায়তার তথ্যের আদান প্রদান করে থাকে।

এখানে দেখা যায়, ভাষা অনেকটা আধার বা কনটেইনারের মত যা অর্থ বহন করে এবং যোগাযোগে সাহায্য করে। সুতরাং ভাষা তার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

বাচনিক যোগাযোগে ভাষা ঃ

লেখা কিংবা কথার মাধ্যমে যে যোগাযোগ হয় তাই হলো বাচনিক যোগাযোগ। আর এই লেখা আর কথা মানেই ভাষা। তবে বাচনিক যোগাযোগ মূল বিবেদ্য বিষয় ভাষা নয় বরং এর অন্তর্নিহিত অর্থ। ভাষার সাহায্যে বাচনিক যোগাযোগে ব্যাপৃত হবার সময় আমরা অলিখিত এরকম একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হই সে আমরা এমন ভাষা ব্যবহার করবো যাতে ব্যবহৃত শব্দগুলো উভয়ের কাছে অন্ততপক্ষে কিছুটা হলেও একই মানে বহন করবে। অর্থাৎ অর্থবোধক ভাষার সাহায্যে সে যোগাযোগ সংগঠিত হয় তাই বাচনিক যোগাযোগ। যেমন : যখন এক বা একাধিক ব্যক্তি ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে যোগাযোগে অংশগ্রহণ করে তখন সেই যোগাযোগই হলো বাচনিক যোগাযোগ।

বাচনিক যোগাযোগের ভাষা আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক হতে পারে, এটি নির্ভর করে স্থান, পরিবেশের এবং ব্যক্তি বিশেষের উপর। অর্থাৎ অপরিচিত কারো সাথে বাচনিক যোগাযোগে লিপ্ত থাকবে ভাষা হবে আনুষ্ঠানিক। আবার পরিচিত বা আপনজন বা ঘনিষ্ঠজনের সাথে বাচনিক যোগাযোগ সংগঠিত হলে ভাষা প্রকাশই হবে অনানুষ্ঠানিক।



অন্তর্ব্যক্তিক যোগাযোগের ভাষা ঃ

সব ধরনের যোগাযোগের মধ্যে অন্তর্ব্যক্তিক যোগাযোগই হলো মৌলিক বা সরল ধরনের যোগাযোগ। নিজের সাথে নিজের সে যোগাযোগ তাই অন্তর্ব্যক্তিক যোগাযোগ। অর্থাৎ এটি হলো কোন ব্যক্তির মধ্যকার যোগাযোগ ক্রিয়া। এই ধরনের যোগাযোগে মূলত অনানুষ্ঠানিক ভাষা বা ওহভড়ৎসধষ ষধহমঁধমব ব্যবহৃত হয়। মূলত যখন কোন ব্যক্তিক মনে মনে মনে কথা বলে তখনই এই ধরনের যোগাযোগ সংগঠিত হয়। এই ধরনের যোগাযোগে ভাষা ব্যবহারে কোন বাধ্যবাধকতা নাই। কারণ, যখন আমরা কোন বিষয় নিয়ে মনে মনে চিন্তা ভাবনা করি তখন ভাষার ব্যবহার নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করি না। আবার ভাষার সাহায্য ছাড়াও এ ধরনের যোগাযোগ সম্পন্ন হয়না।

আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের ভাষা ঃ

দুইজন ব্যক্তিক মধ্যে মুখোমুখি যে যোগাযোগ সংগঠিত হয় তাই আন্ত:ব্যক্তিক যোগাযোগ। এই ধরনের যোগাযোগ ভাষায় ব্যবহার হয় সর্বাধিক। তবে এই ধরনের যোগাযোগে ভাষার ব্যবহার কেমন হবে তা অনেক স্থান, কাল ও ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভরশীল।

যেমন: ঘনিষ্ঠ দু’জন বন্ধু যখন অন্তরঙ্গ আলাপ-আলোচনায় মত্ত থাকে তখন তারা অনানুষ্ঠানিক ভাষা ব্যবহার করে পাশাপাশি তাদের ভাবের গভীরতা প্রকাশের জন্য শারিরীক বা সাংকেতিক ভাষাও ব্যবহার করে।

আবার, যখন কোন সাক্ষাৎকারে অপরিচিত বা কোন সম্মানী ব্যক্তির সাথে কেউ আলোচনা করে তখন সেই যোগাযোগের ভাষা হবে আনুষ্ঠানিক, পরিমার্জিত, রুচিশীল ও স্পর্শ এবং শুদ্ধ।

পাশাপাশি পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজনের সাথে আমরা সহজবোধ্য এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষায় কথা বলি।

আবার যখন আমরা এমন কারো সাথে আলোচনা করতে চাই যার সাথে আমার মুখের ভাষার সাদৃশ্য নেই তখন আমরা সাংকেতিক ভাষারও ব্যবহার করি।

এভাবে ক্ষেত্রবিশেষে আন্ত: ব্যক্তিক যোগাযোগে ভাষা ব্যবহারে দেখা যায়।





দলীয় যোগাযোগ ভাষা ঃ

দলীয় যোগাযোগ হলো এমন কিছু ব্যক্তির মধ্যে যোগাযোগ যারা কোন দলের সাথে যুক্ত থাকে। এসব দলের সাধারণত কোন মূল্যবোধ বা প্রত্যাশা। তাই এসব দলের সদস্যদের যোগাযোগের ভাষা মূলত আনুষ্ঠানিক কারণ তারা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য একতাবদ্ধ হয়। যেমন: ডায়েবেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীর অনেক সময় একতাবদ্ধ হয়ে নিজেদের রোগ উপশম, অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য দলে যোগ দেয় তখন তাদের যোগাযোগের ভাষা হবে আনুষ্ঠানিক।

কিন্তু, আবার যখন একদল বন্ধু ভাল রেজাল্ট করবার জন্য একত্রে দল গঠন করে তখন এর ভাষা সর্বদাই আনুষ্ঠানিক হয় না।

প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের ভাষা ঃ

কোন প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে যে মানবীয় যোগাযোগ ঘটে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগ বলে। এই ধরনের যোগাযোগের ভাষা হলো আনুষ্ঠানিক, কারণ কোন প্রতিষ্ঠানে এই রকম প্রানিতষ্ঠানিক যোগাযোগের সাথে যুক্ত থাকেন মূলত ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ আর তাদের মাঝে বিরাজ করে একটি কাঠামোগত সম্পর্ক বিরাজমান। তাই প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের মধ্যকার ভাষা অনেকটা আনুষ্ঠানিক, স্পষ্ট, সহজবোধ্য, এক্ষেত্রে সাংকেতিক বা শারিরীক ভাষার ব্যবহার হয় না।

জনযোগাযোগের ভাষা ঃ

জনসভা, উন্মুক্ত সেমিনার ইত্যাদিকে গনযোযোগ বলে চিহ্নিত করা যায়, এগুলো মূলত ঘোষিত সামাজিক অনুষ্ঠান। এই ধরনের যোগাযোগ নির্ধারিত আলোচ্যসূচি এবং আলোচক বা বক্তা থাকেন। শ্রোতারাও আলোচনায় অংশ নিতে পারেন তবে একটা নিয়মের মধ্যে তা করতে হয়, যেমন- বক্তার আলোচনার পরে কিছু বলা কিংবা প্রশ্ন করা, ফলে এই জনযোগাযোগ একটি নিয়মবদ্ধ যোগাযোগ এবং এর ভাষাও আনুষ্ঠানিক এই ধরনের যোগাযোগ অংশগ্রহণকারীরা রুচিশীল, মার্জিত, সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য ভাষার ব্যবহার করে থাকেন, তা না হলে যোগাযোগ ফলপ্রসু হবে না।

গনযোগাযোগের ভাষা ঃ

সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা ইত্যাদিকে এক কথায় বলা হয় গণমাধ্যম। গণমাধ্যমগুলোর সহায়তায় যে সব যোগাযোগ সংগঠিত হয় তাই গণযোগাযোগ। এই গণযোগাযোগের সাথে প্রযুক্তি নামক বিষয়টি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। আর এই প্রযুক্তি নির্ভরতার জন্য গণযোগাযোগকে একটি সংগঠনের অধীনে কাজ করতে, তাই এখানে বিভিন্ন দক্ষতার অনেক লোকের প্রয়োজন হয়। আর এই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান এমনভাবে ভাষার ব্যবহার করে বার্তা তৈরি করে সাথে এটি সবার জন্য প্রযোজ্য হয়। সবার জন্য বলতে বুঝানো হয়েছে গণমাধ্যমের সকল শ্রোতা ও দর্শকের জন্য যারা সংখ্যায় বিশাল, বিভিন্ন রকম এবং তারা যোগাযোগের উৎসের কাছেও অপরিচিত। তাই গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ভাষার একটি নিয়মবদ্দ কাঠামো থাকে এবং এটি হয় আনুষ্ঠানিক বা ঋড়ৎসধষ। বার্তার এই বৈশিষ্ট্যটি গণযোগাযোগকে অন্যান্য সকল ধরনের যোগাযোগ থেকে অনেকটা পৃথক করে রেখেছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠানের ভাষা হবে আনুষ্ঠানিক, রুচিশীল, পরিমার্জিত এবং সকলের নিকট বোধগম্য। তাই আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল, রেডিও এবং সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি ব্যবহৃত হয় কারণ তা সকলের নিকট বোধগম্য। তেমনি আমাদের দেশের জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলোকে এবং সংবাদপত্র গুলোকে বাংলা ভাষা শুদ্ধ রূপটিই ব্যবহৃত হয় আঞ্চলিক রূপ নয়।

আবার অনেক সময় গণমাধ্যমের শ্রোতা-দর্শকরা গণমাধ্যমের নিকট চিঠি লেখেন, সংবাদপত্রকে চিঠি ছাপার আবার সভা-সমাবেশ করেও তাদের প্রতিক্রিয়া জানান, এক্ষেত্রেও আনুষ্ঠানিক ভাষার ব্যবহার করা হয়।

গণমাধ্যমগুলোতে আনুষ্ঠানিক ভাষার প্রয়োগ না হলে তা জনগণের রোষানলে বাড়তে পারে। ঠিক যেমনটি পড়েছিলো। দৈনিক ‘প্রথম আলো’ যার দরুণ “আলপিন” প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

অর্থাৎ আনুষ্ঠানিক ভাষা মানে শুধু কথা নয় প্রকাশিত ও প্রচারিত সকল ছবি, চলমান চিত্র সবকিছু ভাষাই হবে আনুষ্ঠানিক ও রুচিশীল এবং দ্ব্যর্থহীন।

অবাচনিক যোগাযোগের ভাষা ঃ

অবাচনিক যোগাযোগ বলতে এমন এক যোগাযোগ প্রক্রিয়াকে বোঝায় যেখানে চিহ্নের প্রেরণ ও গ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা হয়, আর এই চিহ্নগুলো এমন যা স্বাভাবিক ভাষা ব্যবস্থার অন্তর্গত নয়।

তবে অবাচনিক যোগাযোগে এই স্বাভাবিক কভাষা ব্যবহৃত না হলেও সেখানে ব্যবহৃত হয় শরীরের ভাষা ও সাংকেতিক ভাষা। অর্থাৎ অবাচনিক যোগাযোগে মাধ্যম হিসেবে কাজ করে কিছু অবাচনিক ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা; যেমন: অঙ্গভঙ্গি, চোখের ইশারা, মুখভঙ্গি, কণ্ঠস্বরের উঠানামা, হারও স্থানের ব্যবহার। অবাচনিক যোগাযোগের উপর গবেষণা করে মনস্তত্ত্ববিদ জারগেন রুয়েশ ও সিনেমা প্রযোজক ওয়েলডন কীস তিন দরনের অবাচনিক ভাষাকে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো :-

প্রতীক

ক্রিয়া

বস্তু

উদাহরণের মাধ্যমে অবাচনিক যোগাযোগের ভাষাকে বিস্তারিত ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

প্রতিবন্ধীরা যকন যোগাযোগ করে তখন তারা মুখের ভাষা ব্যবহার করতে পারে না, বিভিন্ন ইশারা ইঙ্গিত, চোখের চাহনি, মুখের অভিব্যক্তি এসব কিছু অবাচনিক ভাষা বা সাংকেতিক ভাষা।

আবার, শিশুরা কান্নাকাটি করে বা ইশারা করেও তাদের যোগাযোগের কাজটি সম্পন্ন করে থাকে।

এছাড়াও আমাদের দেশের কোন লোক যদি আফ্রিকার কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে তবে তার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হবে সাংকেতিক ভাষা।

টেলিভিশনের ভাষা ঃ

টেলিভিশন হলো বর্তমান সময়ের সর্বাধিক জনপ্রি গণমাধ্যম। পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের মানুসের সাথে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত এই মাধ্যমটির ভাষাকে অবশ্যই আনুষআনিক হওয়া প্রয়োজন। বাষায় রুচিশীলতা ও আনুষ্ঠানিকতার অভাব থাকার কারণেই মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীর তৈরি টেলিফিল্ম ও সিনেমাগুলো আজ বিতর্কিত।

বর্তমানে আমাদের দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান মালার এমন এক নতুন ধরনের ভাষার ব্যবহার শুরু করেছে, তার দরুণ বর্তমানে অনেকে শুদ্ধ বাংলা কভাষার অস্তিত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাই ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য, টেলিভিশন নামক বহুল জনপ্রিয় এই গণমাধ্যমের ভাষাকে হওয়া উচিৎ রুচিশীল, শুদ্ধ ও সজবোধ্য। তা না হলে এই টেলিভিশনের ভাষাই, প্রকৃত ভাষার অস্তিত্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।





রেডিওর ভাষা ঃ

রেডিও হলো এমন একটি জনপ্রিয় গণমাধ্যম যার ব্যয়ভার সকল শ্রেণীর মানুষের নিকট বহনযোগ্য। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে এই রেডিও-ই সাধারণ জনগণকে সতর্ক করে দেবার জন্য সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়। আর এই রেডিও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য বর্তমানে অঞ্চলভেদে কমিউনিটি রেডিও-র প্রচলন ঘটানো চেষ্টা করা হচ্ছে। এই কমিউনিটি রেডিওর প্রচলন ঘটলে দেশের সকল জনসাধারণকে তাদের বোধগম্য ভাষায় বার্তা বা তথ্য প্রেরণ করা সম্ভবপর হবে।

তবে বর্তমানে আমাদের দেশের বেসরকারি রেডিওগুলো বাংলা, ইংরেজি এবং হিন্দিকে মিলিয়ে এমন এক জগাখিচুরি ভাষার ব্যাপক প্রসার ঘটাচ্ছে, যার শুরুই হয়- হাই লিসেনার্স শব্দটি দিয়ে। বাংলা ভাষার এই নতুন রূপটি তাই অনেকের জন্য বেদনার কারণ।

সেদিন বিবেচনায় “বাংলাদেশ বেতার” এখনো শুদ্ধ বাংলার ব্যবহার করে থাকে, তবে এদের ভাষায় যে গুরুগম্ভীরতা বিদ্যমান তা “বাংলাদেশ বেতার” কে কিশোর-কিশোরীদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার পথে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।

তাই রেডিওর ভাষা হওয়া প্রয়োজন সহজবোধ্য স্পষ্ট, রুচিশীল কিন্তু শুদ্ধ।

সংবাদপত্রের ভাষা ঃ

সংবাদপত্রের লেখার সময়ে ভাষার ব্যবহার অধিকতর সতর্কতা প্রত্যাশিত কারণ এর উদ্দেশ্য হলো সাধারণ পাঠকের কাছে খবর বা মন্তব্য পৌঁছে দেয়া। তাই এর ভাষা হওয়া উচিত শুদ্ধ ও স্পষ্ট, প্রত্যক্ষ ও বাহুল্যবর্জিত। সংবাদপত্রের ভাষা সেহেতু এর পাঠকের ভাষাকে প্রভাবান্বিত করে তাই সংবাদপত্রের ভাষারীতি ও বানান সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

কিন্তু বর্তমানে সংবাদপত্রে যত্রতত্র ভুল ভাষার প্রয়োজন একটা বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। যেমন; দৈনিক জনকণ্ঠে গতবছর পহেলা বৈশাখের সংবাদটি অসতর্কতার সাথে এভাবে প্রকাশিত হয়েছে যে,

“বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা কও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে নতুন বাংলা সনের সূচনা হয়েছে।”

এখানে ব্যবহৃত হয়েছে উৎসব মুখরতা বরং শব্দটি হবে উৎসব মূখর পরিবেশে।

তাছাড়া সংবাদপত্রের ভাষা হবে আনুষ্ঠানিক (ভড়ৎসধষ) কিন্তু কিছুদিন আগে “দৈনিক যুগান্তরে” পতিতালয় সংক্রান্ত ধারাবাহিক পতিবেদনের অশ্লীল ভাষার প্রয়োগ এমনকি ভুল ও খাপছাড়া বাক্যগঠন প্রতিবেদনটি গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে।

সংবাদপত্র যেহেতু সাধারণ জনসাধারণের জন্য তথ্যে আঁধার তাই সংবাদপত্রের ভাষা হওয়া উচিৎ স্পষ্ট, বাহুল্য বর্জিত, নির্ভূল সহজবোধ্য, বৈচিত্রপূর্ণ, সংক্ষিপ্ত, পরিমার্জিত, দ্যর্থহীন, তাহলেই কেবল সংবাদপত্রটি তার প্রত্যাশিত পাঠকশ্রেণীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।

ভাষার সীমাবদ্ধতা ঃ

যোগাযোগের বাহন হিসেবে বেশীর ভাগ সময়ই ভাষার ব্যবহার করা হয়। দৈনন্দিন জীবনেও দৃশ্যগত উপস্থাপনায়, নির্দেশক প্রভৃতির চেয়েও ভাষা অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়। তবে ভাষার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

১। বাস্তবের প্রতিনিধিত্ব করতে ভাষার ব্যর্থতা।

২। সাধারণীকরণ

৩। অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা।

১। বাস্তবের প্রতিনিধিত্ব করতে ভাষার ব্যর্থতা ঃ

ভাষা দিয়ে সবসময় বাস্তবকে সম্পূর্ণরূপে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় টেলিভিশন, সংবাদপত্রে এমন খবর প্রচারিত হয় যে, আইলা দুর্গত এলাকার মানুসের দুর্দশার অন্ত নেই এমন খবরের মাধ্যমে সেই এলাকার সার্বিক পরিস্থিতিকে তুলে ধরা সম্ভব হয় না। তেমনি কোকো-৪ লঞ্চটি ডুবে যাবার ঘটনাটি এবং এর পরবর্তী ঘটনাচক্র গণমাধ্যমে সেভাবে সম্প্রচারিত হয়েছে তাতে বাস্তবতা সম্পূর্ণ প্রতিফলিত নয়।

২। অভিজ্ঞতার সীমাবদ্দতা ঃ

মানুষের চিন্তার পদ্ধতি, তার বিশ্বাস, দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি তাকে নতুন অভিজ্ঞতা দান করে। অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতাও ভাষার জন্য একটি বড় বাঁধা। যেমন: আমি আফ্রিকান উপজাতি বা গারোদের ভাষা বুঝবো না, তাদের সাথে বাচনিক যোগাযোগে অংশ নিতে পারবো না মূলত তাদের ভাষা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতার অভাবে কারণে।



৩। সাধারণ বীমাকরণ ঃ

সাধারণীকরণ ভাষার আরেকটি বড় প্রতিবন্ধকতা। আমরা অনেক সময় একই শব্দ দিয়ে একাধিক বিষয়কে নির্দেশ করি, যেমন: এড়ধষ শব্

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.