![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালোবাসার পিছে ছুটতে ছুটতে কখন যে আমার ভালোবাসাকেই হারিয়ে ফেলেছি নিজেই বুঝিনি।
বাচ্চাদের একটা স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছে রাফাত । হঠাত্ একটা মেয়েটি কন্ঠ স্বরে পিছন ফিরে তাকায় সে ।
-মুসলিম ইনস্টিটিউট টা কোন দিকে বলতে পারেন??
রাফাত খুব লাজুক টাইপের ছেলে ।
অপরিচিত মেয়েদের সাথে কথা বললে ওর কপাল বেয়ে ঘাম বের হয় ।ভয়ে কিংবা লজ্জায় ওর ভ্রু জোড়া কাপে ।
তাই মেয়েদের সাথে খুব একটা মেশে না । দূরে দূরেই থাকে ।
তাই বরাবরের মতো আজো রাফাতের মুখটা লজ্জায় লাজুক লাল হয়ে গেছে । কপাল বেয়ে ঘাম পড়া শুরু করেছে ।
তারপরেও রাফাত সমস্ত লজ্জা ভয় গিলে খেয়ে আমতা আমতা করে বললো,
-একটু সামনে গিয়ে মেইন রোডটায় উঠবেন । তার কিছুটা এগিয়ে গেলেই মুসলিম ইনস্টিটিউট ।
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে বললো.
-ঠিক বুঝতে পারছি না, ভাইয়া?
এর চেয়ে আরও ভাল করে কিভাবে বুঝানো যায় তা রাফাতও বুঝতে পারছে না ।
তাই রাফাত লজ্জা ঢাকতে বিরক্তির স্বরে বললো,
-আপনি অন্য কাউকে জিজ্ঞাস করুন সেও হয়তো ভালো করে বুঝিয়ে বলতে পারবে ।
নয়তো রিকশা নিয়ে চলে যান ।
যদিও রাফাত জানে দুই মিনিটের পথের জন্য রিকশা যেতে চাইবে না ।
মেয়েটা এবার মুখটা কালো ধরে বললো,
-প্লিজ আপনি আমার সাথে একটু আসুন না । আমি তো এখনকার কিছুই চিনি না ।
দেখিয়ে দিয়েই চলে যাবেন ।
রাফাত আর কিছুই বললো না । শুধু একবার তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকাল । তার পর অনিহা থাকা স্বত্তেও মেয়েটির পাশাপাশি হাটতে শুরু করলো ।
রাফাত এবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ।তার পাশে অচেনা অজানা সুন্দরী একটা মেয়ে ।
লজ্জায় তার পা গুলো আর সামনের দিকে চলতে চায় না । রাফাত এলোমেলো ভাবেই হাটতে থাকে ।
মেইন রোড পার হওয়ার সময় মেয়েটি ভয় ভয় চোখে রাফাতের হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলে ।
আর বিড়বিড় করে বলে,
-জানেন, এই বাস গুলোকে আমার খুব ভয় করে ।
রাফাত একবারে চুপ । কপালের বেয়ে ঘামের পরিমান টা যেনো বেড়েই যাচ্ছে ।
এই প্রথম কোনো নারী রাফাতের হাত প্পর্শ করেছে । ভাবতেই তার সারা শরীর কাটা দিয়ে উঠে ।
মেয়েটি রাফাতের এমন ঘাবড়ে যাওয়া অবস্হা দেখে মুখ টিপে হাসছে ।
নীরবতা ভাঙ্গানোর মতো করে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি এতো ঘামছেন কেন?
রাফাত লাজুক মুখ নিয়ে বলে,
-গরমে আমি একটু বেশিই ঘামি ।
রাফাতের বিশ বছরের জীবনে এমনটি আর হয় নি ।ব্যস্ত এই নগরীর মধ্য দিয়ে তার হাতটাকে শক্ত করে ধরে রাখা কোনো রমনীর পাশাপাশি কয়েক কদম এভাবে হেটে যাবে তা সে কল্পনাও করতে পারে নি ।
তবে তার জীবনে আরও একটা ঘটনা আছে ।
রং নাম্বারে পারুল নামের একটা মেয়ের সাথে ফোনে পরিচয় হয় । পারুল রাফাতকে মিসকল দিতো । আর রাফাত খুব উত্সাহিত হয়ে পারুলকে কল দিতো । কিন্তু মেয়েদের সাথে কিভাবে গুছিয়ে কথা বলতে হয় তা সে জানতো না । তাই পারুল আস্তে আস্তে মিস কল দেওয়া বন্ধ করে দেয় ।
কিন্তু রাফাত ওকে ভূলে থাকতে পারে না ।
শেষে পারুল বিরক্ত হয়ে রাফাত কে মেসেজ দিলো,
"তোর মতো হাবলু ছেলের সাথে কথা বলে আমি পারুল মজা পাই না"
তারপর পারুল তার নাম্বার টা চিরতরে বন্ধ করে দেয় ।
তবে এখনো রাফাতের মাথায় একটা প্রশ্ন পোকার মতো ঘুরঘুর,
মেসেজটা তে পারুল মজা বলতে কি বুঝিয়েছিল?
এসব ভাবতে ভাবতে রাফাত মুসলিম ইনস্টিটিউট এর সামনে এসে থামল ।
ইনস্টিটিউট এর সামনের অংশটায় দাড়ানো কিছু মেয়ে রাফাতের দিকে চেয়ে অদ্ভূত ভঙ্গিতে হাসছে ।
কিন্তু রাফাতের মোটা বুদ্ধির মস্তিষ্ক এর কারণটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না ।
তবে রাফাত এটা বুঝতে পারলো যে,
মেয়েগুলো তার পাশে থাকা মেয়েটার বান্ধবীই হবে । রাফাত ধাধায় পড়ে গেল এতো গুলো বান্ধবী থাকতে মেয়েটা তার সাহায্য চাইলো কেনো!!!
অচেনা একটা মেয়ে ওর হাতটা ছুয়ে দিলো,
অথচ সে মেয়েটার নাম টাই জানে না । তাই ওর কৌতুহলী কোষ গুলো মস্তিষ্কে বার বার সংকেত পাঠাচ্ছে মেয়েটির নাম জানার জন্য ।
কিন্তু আগ বাড়িয়ে মেয়েটির নাম জিজ্ঞাস করবে সেটা টেও পারছে না ।
শেষে অনেক টা সাহস সঞ্চয় করে বলেই ফেললো,
-আপনার নামটা কি বলা যাবে?
মেয়েটি মুচকি হেসে বললো,
-মিলি । তবে বান্ধবীরা ঝিলিমিলি বলে ডাকে ।
এটা শুনে ওর বান্ধবী গুলো খিঁল খিঁল করে হেঁসে উঠলো । যে হাসিতে অনেকটা বিদ্রুপ আর অনেকটা উপহাস মিশে থাকে ।
চিকনি চামলি টাইপ মেয়েটা মোটা গলায় বললো,
-নাম জানালেন । এখন মোবাইল নাম্বার জানতে চাইবেন,
তাই তো??
ফোন নাম্বারের কথা শুনে রাফাত কিছুটা ভয় পেল ।
পারুলের কাছ থেকে "মজা পাই না" মেসেজ টা পাওয়ার পর থেকে সে আজ অবধি কোনো মেয়েকে ফোন দেওয়ার সাহসই দেখায় নি ।
-ধন্যবাদ আসি । আর ফোন নাম্বার নেওয়ার আমার কোনো ইচ্ছে বা আগ্রহ কোনটাই নেই ।
এই বলে রাফাত যাওয়ার জন্য সামনের দিকে পা বাড়ায় ।
রাফাত এগিয়ে যেতে যেতে নিজের হাত টার দিকে তাকিয়ে থাকে ।
মনে হচ্ছে এখনো যেনো মিলি ওর হাতটা খুব শক্ত করে ধরে আছে ।
এমন অসহ্য এলোমেলো অনুভূতি রাফাতের জীবনে আর হয় নি ।
সে শেষ বারের মতো পিছন ফিরে তাকায় ।
স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে
মিলি তার হাতটা নাড়াচ্ছে ।আর তার হাতে থাকা একটা পাঁচশত টাকার নোট উড়চ্ছে ।
রাফাত এই নোটের রহস্য জানে না ।
তবে মিলি আর তার বান্ধবীরা খুব ভালো করেই এই টাকার রহস্য টা জানে।
কারণ স্কুলে থাকতে রাফাতের সাথে পড়ুয়া একটা মেয়ে মিলির সাথে পাঁচশ টাকার একটা অলিখিত চুক্তি করেছে,
রাফাত কে বোকা মানিয়ে মিলি এখানটায় আনবে,
মাঝ রাস্তায় গভীর মমতায় রাফাতের হাতটা ধরবে যাতে রাফাতের প্রেমে পড়ে যাওয়া অবস্হা হয় ।
রাফাত প্রেমে পড়ছে কিনা মিলি সেটা জানে না । তবে ওর বুকটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে ।
মিলিরা বাজির টাকাতে বিরিনারি খাওয়ার জন্য টাউন হলের মোড় হয়ে হিমু ক্যাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
তবে মিলির ইচ্ছে করছে চিত্কার করে ডাক দিয়ে রাফাত কে সবকিছু বলে দিতে ।
কিন্তু মিলি চিত্কার করতে পারছে না ।
ওর প্রতিটা চিত্কার গলার মাঝখানে এসে আটকে যাচ্ছে।
আর ধাধাময় জীবন নিয়ে আস্তে আস্তে রাফাতও অদৃশ্য হচ্ছে!
©somewhere in net ltd.