![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালোবাসার পিছে ছুটতে ছুটতে কখন যে আমার ভালোবাসাকেই হারিয়ে ফেলেছি নিজেই বুঝিনি।
-“আর কোন দিন আমাকে ফোন দিবি না ।”
কথাটা বলেই লাইনটা কেটে দিল নীলা । রকি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু নীলা ওকে সে সময়টুকুও দিল না । রকি আর নীলা ফ্রেন্ড । অবশ্য শুধুই ফ্রেন্ড নাকি গার্ল ফ্রেন্ড সেটা রকি নিজেও বুঝে না । কিছু দিন পর পরই ওদের ঝগড়া হয়, আবার ঠিকও হয়ে যায় । ওদের পরিচয়টা হয়েছিল একটু অন্যভাবে ।
এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ । রেজাল্টও বের হয়ে গেছে । কিন্তু, আশানুরুপ রেজাল্ট হয় নি রকির । ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল ও । কিন্তু, রেজাল্ট বের হওয়ার পর দেখে যে ওর যে জিপিএ তাতে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই ও করতে পারবে না । মনটাই ভেঙ্গে যায় ওর, পড়াশুনার প্রতি ওর আর বিন্দুমাত্র মনোযোগ থাকে না । সারা দিন তখন ওর একটাই কাজ, এফবিতে বসে থাকা । এমনই এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে এফবিতে চ্যাট করছিল ও । হঠাৎ একটা নাম চোখে পরে যায়- কল্পনার কঙ্কাবতী । অদ্ভুত একটা নাম । তবে নামটা রকির খুব ভাল লেগে যায় । প্রোফাইলটা চেক করে দেখে যে ওর কলেজেরই একটা মেয়ের আইডি । কোন কিছু না ভেবেই একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয় । রকি ভেবেছিল হয়তো রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করবে না, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে কল্পনার কঙ্কাবতী ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করে । একটু পরেই রকি ওকে নক করে ।
-হাই ।
-হ্যালো ।
-তোমার রিয়েল নাম কি ?
-কেন নাম দিয়ে কি দরকার ?
-না, এমনিই জানতে চাইলাম ।
-সরি । বলব না ।
-ওকে । না বললে নাই । বাই ।
-দেখ তুমি আমার নিউ ফ্রেন্ড, আমি চাই না তুমি আমার বিহেভে কষ্ট পাও । আসলে আমি কাউকে রিয়েল নামটা বলি না ।
-ও আচ্ছা ।
-নামটা কি না বললেই না ? বলতেই হবে ?
-হুম । বলতেই হবে ।
-আচ্ছা ঠিক আছে । আমার নাম নীলা ।
-সত্যিই কি তোমার নাম নীলা ? আমার বোনের নাম ও নীলা ।
এভাবে ঝগড়া দিয়েই ওদের পরিচয়টা হয় । দিনে দিনে অরা আরো ক্লোজ হতে থাকে । এমন কোন দিন ছিল না যে দিন নীলা সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এফবিতে ঢুকে রকির গুড মর্নিং আর গুড নাইট মেসেজ পায় নি । দুই জনই একই শহরের বলে রকির মাঝে মাঝেই নীলার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করত, কিন্তু ও নীলাকে কখনো বলে নি ।
২৫ সেপ্টেম্বর, হঠাত করেই রকি নীলা কে মেসেজ দেয়- “আমি কলেজে যাচ্ছি, দেখা করলে কলেজের সামনে আয় ।”
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে রকি, কিন্তু নীলার আসার নাম নাই । শেষে বিরক্ত হয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরল ও । আর ঠিক তখনি ওর ফোন বেজে উঠলো । একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন ।
-হ্যালো ।
-হ্যালো । তুই কই ?
-কে নীলা ? আমি তো বাসায় চলে যাচ্ছি । তুই এসেছিস ?
-হ্যাঁ । আমি আসছি তো ।
-কোথায় ?
-এই তো কলেজের মেইন গেটের সামনে ।
-আচ্ছা থাম, আমি আসছি ।
কলেজের গেটের সামনে আসতেই রকি নীলাকে দেখতে পায় । এফবিতে আগেই ওর ছবি দেখেছিল, তাই চিনতে কোন অসুবিধা হয় না ।
-কিরে কেমন আছিস ?
-এই তো ভাল । তুই ?
-আমিও ভাল । এভাবে এখানেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি কোথাও গিয়ে বসবি ?
-চল কোথাও গিয়ে বসি ।
হাঁটতে হাঁটতে দুজনে একটা পার্কে গিয়ে বসে । রকি একটু আনইজি ফিল করতে থাকে, ও আগে কখন কোন মেয়ের সাথে এভাবে কোথাও বসে নি । কথা বলতে বলতে রকি নীলার বিএফ এর কথা জানতে চায় ।
-তোর বিএফ এর খবর কি ?
-হুম ভালই । সামনের ডিসেম্বরে আমাদের বিয়ে ।
-মানে ?
-কেন তুই জানিস না ? আমাদের তো এনগেজ্ডমেন্ট হয়ে গেছে ।
-কি ? বলিস নি তো কখনো ।
-না বলছি, তুই ভুলে গেছিস ।
-না তুই বলিস নি ।
-আচ্ছা ঠিক আছে, বলি নি ভাল করছি ।
-কবে এনগেজ্ডমেন্ট হয়েছে তোদের ?
-এই তো চার মাস হচ্ছে ।
কথা বলতে বলতে অনেক সময় পেরিয়ে যায় । নীলা হঠাত এক সময় বলে উঠে- “দোস্ত আজ উঠি, অনেক দেরি হয়ে গেছে । আম্মু বকবে ।”
তারপর রকি নীলাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে । বাসায় ঢুকতেই নীলার মেসেজ পায়- “দোস্ত চল কালকেও বের হই ।”
তারপর থেকে প্রায় প্রতি দিনই ওরা এক সাথে বের হতে শুরু করে । প্রতি দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুইজন এক সাথে ঘুরত । নীলা বাসায় এক এক দিন এক এক মিথ্যা কথা বলে বের হত । রকি হঠাত খেয়াল করে নীলার বিহেভ দিন দিন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে ।
-আমি আজ আর ঘুরতে যাব না ।
-কেন ? হঠাত কি হল ?
-কিছু না । বাসায় চলে যাব ।
-তাহলে বের হইলি কেন ?
-এমনি । তুই যাওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট কর তাইলে যাব ।
-মানে ? আমি কি তোর বিএফ নাকি ?
-হ্যাঁ । বিএফই তো ।
এর মধ্যে রকির পরিচয় হয় নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড বৃষ্টির সাথে । ওরা তিন জনই এক সাথে ঘুরত । তিন জনই খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায় ।
-কাল থেকে আর বের হব না ।
-কেন ?
-তিন দিন পর থেকে অ্যাডমিশন টেস্ট শুরু । এই সময়ে আম্মু বাসা থেকে বের হতে দিবে না ।
-ও আচ্ছা ।
প্রতিদিনের মতই পরের দিন আবারও বের হয় ওরা । এক দিন দেখা না হলে যেন সারাটা দিন আর ভাল লাগত না ।
৩ অক্টোবর,
-দোস্ত কালকে তো আমার পরীক্ষা । খুব টেনশন হচ্ছে । তুই কি কালকে আমার সাথে যাবি ?
-হুম যাব । আমি সকাল ৭টায় তোর বাসায় অটো নিয়ে চলে যাব, তুই রেডি থাকিস ।
-ওকে । আর কাল সাথে আম্মুও যাবে ।
রকি সকাল সকাল রেডি হয়ে বের হয়ে যায় । নীলার বাসার সামনে পৌঁছে ফোন দেয় ওকে ।
-আর কতক্ষন তোর ?
-এই তো হয়ে গেছে । ২ মিনিট ওয়েট কর ।
একটু পরেই নীলা বের হয় । অনেক নার্ভাস লাগছে ওকে । রকি মনে মনে ভাবে- “মেয়েটাকে আজ বরং সুন্দরীই লাগছে ।” রাস্তায় জ্যামের জন্য ভার্সিটিতে পৌঁছাতে দেরিই হয়ে যায় । অনেক কষ্টে রকি নীলার রুম খুঁজে পায় ।
-ভাল করে এক্সাম দিস । বেস্ট অফ লাক ।
-হুম । আচ্ছা আমি রুমে যাই ।
-এক্সাম শেষ হলে আমি এখানেই রুমের সামনে থাকবো, একটু ওয়েট করিস ।
-আচ্ছা ।
এক ঘণ্টা পর নীলা রুম থেকে বের হয় ।
-কিরে এক্সাম কেমন হল ?
-হল তো ভালই । কি যে হবে বুঝতেসি না ।
-নেক্সট এক্সাম কবে ?
-কাল ।
-আচ্ছা এখন বাসায় চল । টেনশন করিস না ।
প্রতিটা পরীক্ষার দিনেই রকি নীলার সাথে হলে যেত । প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে নীলা যখন ওর হাত ধরে রাখত, রকির তখন মনে মনে শুধু একটা কথাই বলত- “এভাবেই সারা জীবন হাতটা ধরে রাখিস ।”
৯ অক্টোবর, আজ রকি আর নীলার শেষ পরীক্ষা । সকালে রকির একটা পরীক্ষা ছিল, কিন্তু ও পরীক্ষা দিতে যায় নি । পরীক্ষা বাদ দিয়ে সারাটা সকাল ও নীলার সাথে কাটিয়েছে । তাতে অবশ্য ওর মনে কোন দুঃখ নেই । কারণ, পরীক্ষার যে প্রিপারেশন তাতে ওর চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম । তাই এই প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার চেয়ে নীলার সাথে সময় কাটানোটাই ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।
-চল উঠি । বিকালে আবার এক্সাম আছে ।
-আর একটু বস । এখন বাসায় গিয়ে কি করবি ?
-না, শরীরটা কেন যেন ভাল লাগছে না ।
-কি হচ্ছে ?
-খারাপ লাগছে ।
-আচ্ছা ঠিক আছে চল । বিকালে কিন্তু সময় মত বের হবি, দেরি করবি না ।
-আচ্ছা ।
রকি বিকালে এক্সাম শেষ করে বের হয়েই ছুটল নীলার রুমের দিকে । মেয়েটা যে কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে আল্লাহ্ই জানে ।
-রকি ।
-ও তুই এখানে ।
-এত সময় লাগে এইতুকু রাস্তা আসতে ? আমি কতক্ষন ধরে একা একা দাড়িয়ে আছি ।
-আচ্ছা সরি । ভয় পাইছিস ?
-না, টেনশন হচ্ছিল । আম্মু কোথায় ?
-জানি না । ফোন দে ।
বাসায় ফেরার সময় নীলা হঠাত করেই অসুস্থ হয়ে পরে । মাথা ঘুরে পরে যায় ও । অ্যাজমার সমস্যা আছে ওর । রকি আর নীলার মা তারাতারি করে ওকে মেডিকেলে নিয়ে যায় । রকি কখনো নীলাকে এভাবে দেখেনি । নীলার যখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ও তখন খুব ভয় পায়া যায় । কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না । নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় ওর । তারপর নীলাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে । সারাটা রাস্তা নীলা ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে । এর পর প্রতি দিনই সকাল-বিকাল নীলার বাসায় গিয়ে ওকে দেখে আসাটা রকির রুটিন হয়ে যায় । এর মধ্যেই ঢাবির পরীক্ষার সময় হয়ে আসে । নীলা পরীক্ষা দিতে যেতে পারবে না, কিন্তু রকিকে তো যেতে হবে । ১২ অক্টোবর রাতে রকি পরীক্ষা দিতে চলে যায় । চার দিন পর ফিরে দেখে নীলা অনেকটাই সুস্থ । ওকে সুস্থ হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রকি । আবার শুরু হয় ওদের আগের মত পথ চলা । নীলা মাঝে মাঝেই রকিকে বলত যার সাথে ওর এনগেজ্ডমেন্ট তাকে ওর এখন আর ভাল লাগে না । রকি ঠিক বুঝে না, ভাল যদি নাই লাগে তাহলে নীলা বাসায় কেন জানিয়ে দেয় না । দেখতে দেখতে ঈদ এগিয়ে আসতে থাকে । রকি মনে মনে অনেক প্ল্যান করে ঈদের দিন ওরা কি কি করবে ।
-তুই ঈদ কোথায় করবি ?
-ঈদ তো এইবার এখানেই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন মনে হয় বাড়ি যেতে হবে ।
-ও । আচ্ছা যা ।
-আমি ঈদের এক দিন পরেই চলে আসব । তখন অনেক মজা করব ।
ঈদের ঠিক আগের দিন বাড়ি যায় রকি । কিন্তু, বাড়ি গিয়েও ওর ভাল লাগে না । ওর মন পরে থাকে নীলার কাছে । ঈদের এক দিন পরেই ও আবার ফিরে আসে । ঠিক করে পরের দিন ওরা সবাই; নীলা, রকি আর বৃষ্টি ঘুরতে বের হবে । পরের দিন অনেক মজা করে ওরা । সারাটা দিন এক সাথে ঘুরে ।
-শাড়ি পরে আজ তোকে অনেক সুন্দর লাগছিল ।
-তাই ?
-হুম ।
-কেন অন্য দিন সুন্দর লাগে না ?
-অন্য দিনও সুন্দর লাগে, তবে আজ অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি সুন্দর লাগছিল ।
-ও । আচ্ছা কাল কি করবি ?
-কিছু না । কেন ?
-না এমনি ।
৫ নভেম্বর, সারা দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে । তিন দিন ধরে এভাবেই চলছে, বৃষ্টি থামার নাম নেই ।
-কিরে আজ বের হবি ?
-জানি না রে । বৃষ্টি তো থামছেই না । বৃষ্টি না থামলে কিভাবে বের হব ?
-হুম । কিন্তু আজ তো বৃষ্টি অনেক কম । চল বের হই, বৃষ্টি থেমে যাবে ।
-আচ্ছা থাম । আম্মুকে বলে দেখি বের হতে দেয় কিনা ।
-ওকে ।
এক ঘণ্টার মধ্যে রকি চলে এলো নীলাদের বাসার সামনে । তারপর সেখান থেকে গেল নদীর ধারে । দুজন অনেকক্ষণ ঘুরল নদীর ধারে । রকি একবার নীলার হাত ধরতে চাইতেই আজ কেন যেন ও নিষেধ করল । কিন্তু ও নীলার নিষেধ শুনল না, জোর করেই ও নীলার হাতটা ধরল । দু জনে পাশা-পাশি, হাত ধরে হাঁটছে । রকি সময়গুলো খুব উপভোগ করছিল । ওর কাছে এটা ছিল জীবনের সব চেয়ে সুন্দর সময় । অবশ্য নীলার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই ওর কাছে জীবনের সেরা সময় ।
-উফ !!! আর হাঁটতে পারব না । পা ব্যাথা হয়ে গেছে ।
-বসবি ? চল সামনে গিয়ে বেঞ্চে বসি ।
-না অইগুলো তো ভেজা ।
-আমি মুছে দিচ্ছি । নে এখন বস ।
-আচ্ছা অই ছেলেটা আর মেয়েটা কি ভাই-বোন নাকি রে ?
-নাহ । আমাদের মত বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড কিন্তু এখনও প্রপোজ করেনি ।
-তো তুই প্রপোজ কর ।
-আমি প্রপোজ করতে পারি না ।
-আচ্ছ চল উঠি । এখানে আর ভাল লাগছে না । আবার বৃষ্টি আসবে মনে হয় ।
-হুম । আচ্ছা চল ।
-জায়গাটা খুব সুন্দর, আরেক দিন আসবো বৃষ্টিকে নিয়ে ।
-আচ্ছা ।
আজকের দিনটা রকির কাছে একটু বেশিই ভাল লাগছে । কিন্তু কেন সেটা ও নিজেও বুঝতে পারছে না, হয়তো নীলার জন্যই ।
৭ নভেম্বর, আজ ওদের আবার নদীর ধারে দেখা করার কথা । রকি সকাল সকাল বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় নীলার ফোন ।
-অই তুই কই রে ?
-এই তো মেসে, বের হব এখনই । কেন ?
-আচ্ছা তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় ।
-আচ্ছা ।
নদীর ধারে আসলেই নীলা এমন পাগলামি শুরু করে যে রকির কাছে ওকে একদমই ছোট বাচ্চা মনে হয় । কিন্তু ওর এই সব ছেলেমানুষি রকির খুবই ভাল লাগে ।
-চল না একটু পানিতে নামি ।
-পানিতে নেমে কি করবি ?
-কিছু না । এমনিতেই নামব ।
-আচ্ছা চল ।
নীলার কথায় রকিও পানিতে নামে । নদীতে পানি বেশি নেই, হাঁটু পানি । কিন্তু পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটতে খুব ভাল লাগে ।
-আমাকে একটু কোলে নে তো ।
-কেন ?
-এমনি ।
-সত্যি ?
-হুম ।
-আচ্ছা থাম নিচ্ছি ।
একটু পরেই নীলার যাওয়ার সময় হয়ে যায় । তাড়াতাড়ি বাসায় না গেলে আবার বকা খাবে ।
-চল যাই এখন ।
-এখনই যাবি ?
-হুম । কয়টা বাজে দেখছিস ?
-ও । তাই তো অনেক বেজে গেছে । আচ্ছা চল ।
রকি একটা রিকশা ডাকে । দুইজনই উঠে পরে । রিকশায় উঠেই রকি একটু অন্যমনস্ক হয়ে নীলার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকে ।
-কিরে কি দেখিস ?
-তোকে দেখি । তোকে একটু আদর করি ?
-হুম । কর ।
-চোখ বন্ধ কর ।
-আচ্ছা ।
নীলা চোখ বন্ধ করলেও রকি আর আগাতে পারে না । ও কেমন যেন সম্মোহিত হয়ে যায় । অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে থাকে ।
এভাবেই হাসি-আনন্দে ওদের সময়গুলো কেটে যাচ্ছিল । কিন্তু সমস্যা হল যখন রেজাল্ট বের হল । রকি কোথাও চান্স পায়নি । নীলাও তাই । রকির বাসা থেকে জানিয়ে দিল যে এবার কোথাও চান্স না পেলে ওকে বাসায় চলে যেতে হবে । কিন্তু ও তখন নীলাকে একটা দিনের জন্যও চোখের আড়াল করতে চায় না । ও বাসায় জানিয়ে দিল বাসায় গিয়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয় । এদিকে রকির বাবাও জানিয়ে দিল বাসায় না গেলে ওর হাতখরচ দেওয়া বন্ধ করে দিবে । কিন্তু তাও রকি বাসায় যেতে চায় না । দেখতে দেখতে জানুয়ারি মাস চলে আসে । প্রায় সব ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা শেষ । আর মাত্র একটা ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা বাকি আছে । এখানে চান্স না পেলে এবার আর কোথাও ভর্তি হওয়া হবে না রকির । কিন্তু রকির এই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কোন ইচ্ছাই নেই । কারণ এখানে ভর্তি হলে নীলার কাছ থেকে ওকে অনেক দুরে চলে যেতে হবে । তারপরও রকি পরীক্ষাটা দিল । পরীক্ষা দিলেও ও মনে মনে চাচ্ছিল এখানে যেন ও চান্স না পায় । পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলেও রকি দেখতে গেল না । মনে মনে ভাবল- চান্স তো পাব না রেজাল্ট দেখে কি হবে । পরের দিন কি মনে করে নেটে বসে রেজাল্ট দেখতে গিয়ে সে তো অবাক । ও চান্স পেয়ে গিয়েছে, তাও আবার ওর সব চেয়ে প্রিয় সাবজেক্টে । যে সাবজেক্টে ওর পড়ার ইচ্ছা অনেক আগে থেকেই । ও খুব অবাক হল এইটা ভেবে যে ও তো খুব একটা ভাল পরীক্ষা দেয় নি, তাহলে চান্স কিভাবে পেল । বাসায় জানাবে নাকি জানাবে না, ভাবতে ভাবতে রকি ওর বাবাকে ফোন দেয় ।
-হ্যালো ।
-হ্যালো আব্বু, রেজাল্ট দিয়েছে ।
-কি চান্স পাও নি ?
-না পেয়েছি ।
-কি ? চান্স পেয়েছ ?
-হুম । সি.এস.ই. তে ।
-সত্যি ?
-হুম ।
-উফ !!! সকাল সকাল একটা দারুণ খবর দিলা ।
রকি বুঝতে পারে ওর আব্বু আজকে খুব খুশি । ওর নিজেরও ভাল লাগছে, আবার খারাপও লাগছে । কারণ, নীলাকে ছেড়ে অনেক দূরে যেতে হবে ওকে । ওর যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই । ও একে একে সবাইকে জানায় ওর চান্স পাওয়ার খবর । নীলাকে জানাতেই বুঝতে পারে নীলাও খুব খুশি হয়েছে । নীলা বিকালে রকিকে ওদের বাসায় যেতে বলে ।
১০ জানুয়ারি, রকি কাল চলে যাবে ভর্তি হতে । নীলার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে । আজ সারা দিন ওরা অনেক মজা করেছে, কিন্তু তাও দিন শেষে ওর মনটা খারাপ হয়ে থাকে ।পর দিন বাসায় চলে যায়, সেখান থেকে ওর ইউনিভার্সিটিতে । ভর্তির কয়েক দিন পর থেকেই ক্লাস শুরু । শুরু হয় রকির নতুন জীবন । কিন্তু রকির এখানে কিছুই ভাল লাগে না । প্রতিটা মুহূর্ত ও নীলাকে মিস করে । দূরে চলে গেলেও রকি প্রতি মাসেই নীলার সাথে দেখে করতে যেত । এমনকি কখনো কখনো বাসায় না গিয়েও ও নীলার সাথে দেখা করতে যেত । কিন্তু তারপরও দিন দিন নীলা কেমন যেন বদলে যেতে থাকে । ও বুঝতে পারে নীলা ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে । ওদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে । ও কিছুই বলে না, শুধু চুপ করে থাকে । মনের কষ্টটা মনেই চেপে রাখে ।
২৩ এপ্রিল,
-কিরে এতবার ফোন দিচ্ছি, ফোন ধরিস না কেন ?
-তোকে না বললাম আর ফোন দিবি না ।
-আচ্ছা সরি । ভুল হইসে ।
-সরি বলে লাভ নাই । আর ফোন দিবি না ।
-সরি সরি সরি সরি সরি । আর কতবার সরি বলব ?
-হইসে । থাক আর বলতে হবে না । আর যেন এই রকম ভুল না হয় ।
-আচ্ছা । আর এই রকম হবে না ।
-আর এখন থেকে জাস্ট ফ্রেন্ডের মত বিহেভ করবি । মনে থাকবে ?
-হুম । মনে থাকবে ।
©somewhere in net ltd.