নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খায়রুল বাসার

খায়রুল বাসার

মোঃ খায়রুল বাসার

ভালোবাসার পিছে ছুটতে ছুটতে কখন যে আমার ভালোবাসাকেই হারিয়ে ফেলেছি নিজেই বুঝিনি।

মোঃ খায়রুল বাসার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অসমাপ্ত গল্প

২২ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৬

-“আর কোন দিন আমাকে ফোন দিবি না ।”

কথাটা বলেই লাইনটা কেটে দিল নীলা । রকি কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু নীলা ওকে সে সময়টুকুও দিল না । রকি আর নীলা ফ্রেন্ড । অবশ্য শুধুই ফ্রেন্ড নাকি গার্ল ফ্রেন্ড সেটা রকি নিজেও বুঝে না । কিছু দিন পর পরই ওদের ঝগড়া হয়, আবার ঠিকও হয়ে যায় । ওদের পরিচয়টা হয়েছিল একটু অন্যভাবে ।



এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ । রেজাল্টও বের হয়ে গেছে । কিন্তু, আশানুরুপ রেজাল্ট হয় নি রকির । ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল ও । কিন্তু, রেজাল্ট বের হওয়ার পর দেখে যে ওর যে জিপিএ তাতে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে অ্যাপ্লাই ও করতে পারবে না । মনটাই ভেঙ্গে যায় ওর, পড়াশুনার প্রতি ওর আর বিন্দুমাত্র মনোযোগ থাকে না । সারা দিন তখন ওর একটাই কাজ, এফবিতে বসে থাকা । এমনই এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে এফবিতে চ্যাট করছিল ও । হঠাৎ একটা নাম চোখে পরে যায়- কল্পনার কঙ্কাবতী । অদ্ভুত একটা নাম । তবে নামটা রকির খুব ভাল লেগে যায় । প্রোফাইলটা চেক করে দেখে যে ওর কলেজেরই একটা মেয়ের আইডি । কোন কিছু না ভেবেই একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয় । রকি ভেবেছিল হয়তো রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করবে না, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে কল্পনার কঙ্কাবতী ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করে । একটু পরেই রকি ওকে নক করে ।

-হাই ।

-হ্যালো ।

-তোমার রিয়েল নাম কি ?

-কেন নাম দিয়ে কি দরকার ?

-না, এমনিই জানতে চাইলাম ।

-সরি । বলব না ।

-ওকে । না বললে নাই । বাই ।

-দেখ তুমি আমার নিউ ফ্রেন্ড, আমি চাই না তুমি আমার বিহেভে কষ্ট পাও । আসলে আমি কাউকে রিয়েল নামটা বলি না ।

-ও আচ্ছা ।

-নামটা কি না বললেই না ? বলতেই হবে ?

-হুম । বলতেই হবে ।

-আচ্ছা ঠিক আছে । আমার নাম নীলা ।

-সত্যিই কি তোমার নাম নীলা ? আমার বোনের নাম ও নীলা ।

এভাবে ঝগড়া দিয়েই ওদের পরিচয়টা হয় । দিনে দিনে অরা আরো ক্লোজ হতে থাকে । এমন কোন দিন ছিল না যে দিন নীলা সকালে ঘুম থেকে উঠে কিংবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এফবিতে ঢুকে রকির গুড মর্নিং আর গুড নাইট মেসেজ পায় নি । দুই জনই একই শহরের বলে রকির মাঝে মাঝেই নীলার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা করত, কিন্তু ও নীলাকে কখনো বলে নি ।

২৫ সেপ্টেম্বর, হঠাত করেই রকি নীলা কে মেসেজ দেয়- “আমি কলেজে যাচ্ছি, দেখা করলে কলেজের সামনে আয় ।”



অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে রকি, কিন্তু নীলার আসার নাম নাই । শেষে বিরক্ত হয়ে বাড়ির পথে হাঁটা ধরল ও । আর ঠিক তখনি ওর ফোন বেজে উঠলো । একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন ।

-হ্যালো ।

-হ্যালো । তুই কই ?

-কে নীলা ? আমি তো বাসায় চলে যাচ্ছি । তুই এসেছিস ?

-হ্যাঁ । আমি আসছি তো ।

-কোথায় ?

-এই তো কলেজের মেইন গেটের সামনে ।

-আচ্ছা থাম, আমি আসছি ।

কলেজের গেটের সামনে আসতেই রকি নীলাকে দেখতে পায় । এফবিতে আগেই ওর ছবি দেখেছিল, তাই চিনতে কোন অসুবিধা হয় না ।

-কিরে কেমন আছিস ?

-এই তো ভাল । তুই ?

-আমিও ভাল । এভাবে এখানেই দাড়িয়ে থাকবি নাকি কোথাও গিয়ে বসবি ?

-চল কোথাও গিয়ে বসি ।

হাঁটতে হাঁটতে দুজনে একটা পার্কে গিয়ে বসে । রকি একটু আনইজি ফিল করতে থাকে, ও আগে কখন কোন মেয়ের সাথে এভাবে কোথাও বসে নি । কথা বলতে বলতে রকি নীলার বিএফ এর কথা জানতে চায় ।

-তোর বিএফ এর খবর কি ?

-হুম ভালই । সামনের ডিসেম্বরে আমাদের বিয়ে ।

-মানে ?

-কেন তুই জানিস না ? আমাদের তো এনগেজ্ডমেন্ট হয়ে গেছে ।

-কি ? বলিস নি তো কখনো ।

-না বলছি, তুই ভুলে গেছিস ।

-না তুই বলিস নি ।

-আচ্ছা ঠিক আছে, বলি নি ভাল করছি ।

-কবে এনগেজ্ডমেন্ট হয়েছে তোদের ?

-এই তো চার মাস হচ্ছে ।

কথা বলতে বলতে অনেক সময় পেরিয়ে যায় । নীলা হঠাত এক সময় বলে উঠে- “দোস্ত আজ উঠি, অনেক দেরি হয়ে গেছে । আম্মু বকবে ।”

তারপর রকি নীলাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে । বাসায় ঢুকতেই নীলার মেসেজ পায়- “দোস্ত চল কালকেও বের হই ।”

তারপর থেকে প্রায় প্রতি দিনই ওরা এক সাথে বের হতে শুরু করে । প্রতি দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুইজন এক সাথে ঘুরত । নীলা বাসায় এক এক দিন এক এক মিথ্যা কথা বলে বের হত । রকি হঠাত খেয়াল করে নীলার বিহেভ দিন দিন চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে ।

-আমি আজ আর ঘুরতে যাব না ।

-কেন ? হঠাত কি হল ?

-কিছু না । বাসায় চলে যাব ।

-তাহলে বের হইলি কেন ?

-এমনি । তুই যাওয়ার জন্য রিকোয়েস্ট কর তাইলে যাব ।

-মানে ? আমি কি তোর বিএফ নাকি ?

-হ্যাঁ । বিএফই তো ।

এর মধ্যে রকির পরিচয় হয় নীলার বেস্ট ফ্রেন্ড বৃষ্টির সাথে । ওরা তিন জনই এক সাথে ঘুরত । তিন জনই খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায় ।

-কাল থেকে আর বের হব না ।

-কেন ?

-তিন দিন পর থেকে অ্যাডমিশন টেস্ট শুরু । এই সময়ে আম্মু বাসা থেকে বের হতে দিবে না ।

-ও আচ্ছা ।

প্রতিদিনের মতই পরের দিন আবারও বের হয় ওরা । এক দিন দেখা না হলে যেন সারাটা দিন আর ভাল লাগত না ।

৩ অক্টোবর,

-দোস্ত কালকে তো আমার পরীক্ষা । খুব টেনশন হচ্ছে । তুই কি কালকে আমার সাথে যাবি ?

-হুম যাব । আমি সকাল ৭টায় তোর বাসায় অটো নিয়ে চলে যাব, তুই রেডি থাকিস ।

-ওকে । আর কাল সাথে আম্মুও যাবে ।

রকি সকাল সকাল রেডি হয়ে বের হয়ে যায় । নীলার বাসার সামনে পৌঁছে ফোন দেয় ওকে ।

-আর কতক্ষন তোর ?

-এই তো হয়ে গেছে । ২ মিনিট ওয়েট কর ।

একটু পরেই নীলা বের হয় । অনেক নার্ভাস লাগছে ওকে । রকি মনে মনে ভাবে- “মেয়েটাকে আজ বরং সুন্দরীই লাগছে ।” রাস্তায় জ্যামের জন্য ভার্সিটিতে পৌঁছাতে দেরিই হয়ে যায় । অনেক কষ্টে রকি নীলার রুম খুঁজে পায় ।

-ভাল করে এক্সাম দিস । বেস্ট অফ লাক ।

-হুম । আচ্ছা আমি রুমে যাই ।

-এক্সাম শেষ হলে আমি এখানেই রুমের সামনে থাকবো, একটু ওয়েট করিস ।

-আচ্ছা ।

এক ঘণ্টা পর নীলা রুম থেকে বের হয় ।

-কিরে এক্সাম কেমন হল ?

-হল তো ভালই । কি যে হবে বুঝতেসি না ।

-নেক্সট এক্সাম কবে ?

-কাল ।

-আচ্ছা এখন বাসায় চল । টেনশন করিস না ।

প্রতিটা পরীক্ষার দিনেই রকি নীলার সাথে হলে যেত । প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে নীলা যখন ওর হাত ধরে রাখত, রকির তখন মনে মনে শুধু একটা কথাই বলত- “এভাবেই সারা জীবন হাতটা ধরে রাখিস ।”

৯ অক্টোবর, আজ রকি আর নীলার শেষ পরীক্ষা । সকালে রকির একটা পরীক্ষা ছিল, কিন্তু ও পরীক্ষা দিতে যায় নি । পরীক্ষা বাদ দিয়ে সারাটা সকাল ও নীলার সাথে কাটিয়েছে । তাতে অবশ্য ওর মনে কোন দুঃখ নেই । কারণ, পরীক্ষার যে প্রিপারেশন তাতে ওর চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম । তাই এই প্রিপারেশন নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার চেয়ে নীলার সাথে সময় কাটানোটাই ওর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ।

-চল উঠি । বিকালে আবার এক্সাম আছে ।

-আর একটু বস । এখন বাসায় গিয়ে কি করবি ?

-না, শরীরটা কেন যেন ভাল লাগছে না ।

-কি হচ্ছে ?

-খারাপ লাগছে ।

-আচ্ছা ঠিক আছে চল । বিকালে কিন্তু সময় মত বের হবি, দেরি করবি না ।

-আচ্ছা ।

রকি বিকালে এক্সাম শেষ করে বের হয়েই ছুটল নীলার রুমের দিকে । মেয়েটা যে কতক্ষন ধরে দাড়িয়ে আছে আল্লাহ্‌ই জানে ।

-রকি ।

-ও তুই এখানে ।

-এত সময় লাগে এইতুকু রাস্তা আসতে ? আমি কতক্ষন ধরে একা একা দাড়িয়ে আছি ।

-আচ্ছা সরি । ভয় পাইছিস ?

-না, টেনশন হচ্ছিল । আম্মু কোথায় ?

-জানি না । ফোন দে ।

বাসায় ফেরার সময় নীলা হঠাত করেই অসুস্থ হয়ে পরে । মাথা ঘুরে পরে যায় ও । অ্যাজমার সমস্যা আছে ওর । রকি আর নীলার মা তারাতারি করে ওকে মেডিকেলে নিয়ে যায় । রকি কখনো নীলাকে এভাবে দেখেনি । নীলার যখন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ও তখন খুব ভয় পায়া যায় । কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না । নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় ওর । তারপর নীলাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসে । সারাটা রাস্তা নীলা ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে । এর পর প্রতি দিনই সকাল-বিকাল নীলার বাসায় গিয়ে ওকে দেখে আসাটা রকির রুটিন হয়ে যায় । এর মধ্যেই ঢাবির পরীক্ষার সময় হয়ে আসে । নীলা পরীক্ষা দিতে যেতে পারবে না, কিন্তু রকিকে তো যেতে হবে । ১২ অক্টোবর রাতে রকি পরীক্ষা দিতে চলে যায় । চার দিন পর ফিরে দেখে নীলা অনেকটাই সুস্থ । ওকে সুস্থ হতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রকি । আবার শুরু হয় ওদের আগের মত পথ চলা । নীলা মাঝে মাঝেই রকিকে বলত যার সাথে ওর এনগেজ্ডমেন্ট তাকে ওর এখন আর ভাল লাগে না । রকি ঠিক বুঝে না, ভাল যদি নাই লাগে তাহলে নীলা বাসায় কেন জানিয়ে দেয় না । দেখতে দেখতে ঈদ এগিয়ে আসতে থাকে । রকি মনে মনে অনেক প্ল্যান করে ঈদের দিন ওরা কি কি করবে ।

-তুই ঈদ কোথায় করবি ?

-ঈদ তো এইবার এখানেই করতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন মনে হয় বাড়ি যেতে হবে ।

-ও । আচ্ছা যা ।

-আমি ঈদের এক দিন পরেই চলে আসব । তখন অনেক মজা করব ।

ঈদের ঠিক আগের দিন বাড়ি যায় রকি । কিন্তু, বাড়ি গিয়েও ওর ভাল লাগে না । ওর মন পরে থাকে নীলার কাছে । ঈদের এক দিন পরেই ও আবার ফিরে আসে । ঠিক করে পরের দিন ওরা সবাই; নীলা, রকি আর বৃষ্টি ঘুরতে বের হবে । পরের দিন অনেক মজা করে ওরা । সারাটা দিন এক সাথে ঘুরে ।

-শাড়ি পরে আজ তোকে অনেক সুন্দর লাগছিল ।

-তাই ?

-হুম ।

-কেন অন্য দিন সুন্দর লাগে না ?

-অন্য দিনও সুন্দর লাগে, তবে আজ অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি সুন্দর লাগছিল ।

-ও । আচ্ছা কাল কি করবি ?

-কিছু না । কেন ?

-না এমনি ।



৫ নভেম্বর, সারা দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে । তিন দিন ধরে এভাবেই চলছে, বৃষ্টি থামার নাম নেই ।

-কিরে আজ বের হবি ?

-জানি না রে । বৃষ্টি তো থামছেই না । বৃষ্টি না থামলে কিভাবে বের হব ?

-হুম । কিন্তু আজ তো বৃষ্টি অনেক কম । চল বের হই, বৃষ্টি থেমে যাবে ।

-আচ্ছা থাম । আম্মুকে বলে দেখি বের হতে দেয় কিনা ।

-ওকে ।

এক ঘণ্টার মধ্যে রকি চলে এলো নীলাদের বাসার সামনে । তারপর সেখান থেকে গেল নদীর ধারে । দুজন অনেকক্ষণ ঘুরল নদীর ধারে । রকি একবার নীলার হাত ধরতে চাইতেই আজ কেন যেন ও নিষেধ করল । কিন্তু ও নীলার নিষেধ শুনল না, জোর করেই ও নীলার হাতটা ধরল । দু জনে পাশা-পাশি, হাত ধরে হাঁটছে । রকি সময়গুলো খুব উপভোগ করছিল । ওর কাছে এটা ছিল জীবনের সব চেয়ে সুন্দর সময় । অবশ্য নীলার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই ওর কাছে জীবনের সেরা সময় ।

-উফ !!! আর হাঁটতে পারব না । পা ব্যাথা হয়ে গেছে ।

-বসবি ? চল সামনে গিয়ে বেঞ্চে বসি ।

-না অইগুলো তো ভেজা ।

-আমি মুছে দিচ্ছি । নে এখন বস ।

-আচ্ছা অই ছেলেটা আর মেয়েটা কি ভাই-বোন নাকি রে ?

-নাহ । আমাদের মত বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড কিন্তু এখনও প্রপোজ করেনি ।

-তো তুই প্রপোজ কর ।

-আমি প্রপোজ করতে পারি না ।

-আচ্ছ চল উঠি । এখানে আর ভাল লাগছে না । আবার বৃষ্টি আসবে মনে হয় ।

-হুম । আচ্ছা চল ।

-জায়গাটা খুব সুন্দর, আরেক দিন আসবো বৃষ্টিকে নিয়ে ।

-আচ্ছা ।

আজকের দিনটা রকির কাছে একটু বেশিই ভাল লাগছে । কিন্তু কেন সেটা ও নিজেও বুঝতে পারছে না, হয়তো নীলার জন্যই ।

৭ নভেম্বর, আজ ওদের আবার নদীর ধারে দেখা করার কথা । রকি সকাল সকাল বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় নীলার ফোন ।

-অই তুই কই রে ?

-এই তো মেসে, বের হব এখনই । কেন ?

-আচ্ছা তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় ।

-আচ্ছা ।

নদীর ধারে আসলেই নীলা এমন পাগলামি শুরু করে যে রকির কাছে ওকে একদমই ছোট বাচ্চা মনে হয় । কিন্তু ওর এই সব ছেলেমানুষি রকির খুবই ভাল লাগে ।

-চল না একটু পানিতে নামি ।

-পানিতে নেমে কি করবি ?

-কিছু না । এমনিতেই নামব ।

-আচ্ছা চল ।

নীলার কথায় রকিও পানিতে নামে । নদীতে পানি বেশি নেই, হাঁটু পানি । কিন্তু পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটতে খুব ভাল লাগে ।

-আমাকে একটু কোলে নে তো ।

-কেন ?

-এমনি ।

-সত্যি ?

-হুম ।

-আচ্ছা থাম নিচ্ছি ।

একটু পরেই নীলার যাওয়ার সময় হয়ে যায় । তাড়াতাড়ি বাসায় না গেলে আবার বকা খাবে ।

-চল যাই এখন ।

-এখনই যাবি ?

-হুম । কয়টা বাজে দেখছিস ?

-ও । তাই তো অনেক বেজে গেছে । আচ্ছা চল ।

রকি একটা রিকশা ডাকে । দুইজনই উঠে পরে । রিকশায় উঠেই রকি একটু অন্যমনস্ক হয়ে নীলার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থাকে ।

-কিরে কি দেখিস ?

-তোকে দেখি । তোকে একটু আদর করি ?

-হুম । কর ।

-চোখ বন্ধ কর ।

-আচ্ছা ।

নীলা চোখ বন্ধ করলেও রকি আর আগাতে পারে না । ও কেমন যেন সম্মোহিত হয়ে যায় । অবাক হয়ে নীলার দিকে তাকিয়ে থাকে ।

এভাবেই হাসি-আনন্দে ওদের সময়গুলো কেটে যাচ্ছিল । কিন্তু সমস্যা হল যখন রেজাল্ট বের হল । রকি কোথাও চান্স পায়নি । নীলাও তাই । রকির বাসা থেকে জানিয়ে দিল যে এবার কোথাও চান্স না পেলে ওকে বাসায় চলে যেতে হবে । কিন্তু ও তখন নীলাকে একটা দিনের জন্যও চোখের আড়াল করতে চায় না । ও বাসায় জানিয়ে দিল বাসায় গিয়ে থাকা ওর পক্ষে সম্ভব নয় । এদিকে রকির বাবাও জানিয়ে দিল বাসায় না গেলে ওর হাতখরচ দেওয়া বন্ধ করে দিবে । কিন্তু তাও রকি বাসায় যেতে চায় না । দেখতে দেখতে জানুয়ারি মাস চলে আসে । প্রায় সব ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা শেষ । আর মাত্র একটা ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষা বাকি আছে । এখানে চান্স না পেলে এবার আর কোথাও ভর্তি হওয়া হবে না রকির । কিন্তু রকির এই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কোন ইচ্ছাই নেই । কারণ এখানে ভর্তি হলে নীলার কাছ থেকে ওকে অনেক দুরে চলে যেতে হবে । তারপরও রকি পরীক্ষাটা দিল । পরীক্ষা দিলেও ও মনে মনে চাচ্ছিল এখানে যেন ও চান্স না পায় । পরীক্ষার রেজাল্ট বের হলেও রকি দেখতে গেল না । মনে মনে ভাবল- চান্স তো পাব না রেজাল্ট দেখে কি হবে । পরের দিন কি মনে করে নেটে বসে রেজাল্ট দেখতে গিয়ে সে তো অবাক । ও চান্স পেয়ে গিয়েছে, তাও আবার ওর সব চেয়ে প্রিয় সাবজেক্টে । যে সাবজেক্টে ওর পড়ার ইচ্ছা অনেক আগে থেকেই । ও খুব অবাক হল এইটা ভেবে যে ও তো খুব একটা ভাল পরীক্ষা দেয় নি, তাহলে চান্স কিভাবে পেল । বাসায় জানাবে নাকি জানাবে না, ভাবতে ভাবতে রকি ওর বাবাকে ফোন দেয় ।

-হ্যালো ।

-হ্যালো আব্বু, রেজাল্ট দিয়েছে ।

-কি চান্স পাও নি ?

-না পেয়েছি ।

-কি ? চান্স পেয়েছ ?

-হুম । সি.এস.ই. তে ।

-সত্যি ?

-হুম ।

-উফ !!! সকাল সকাল একটা দারুণ খবর দিলা ।

রকি বুঝতে পারে ওর আব্বু আজকে খুব খুশি । ওর নিজেরও ভাল লাগছে, আবার খারাপও লাগছে । কারণ, নীলাকে ছেড়ে অনেক দূরে যেতে হবে ওকে । ওর যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই । ও একে একে সবাইকে জানায় ওর চান্স পাওয়ার খবর । নীলাকে জানাতেই বুঝতে পারে নীলাও খুব খুশি হয়েছে । নীলা বিকালে রকিকে ওদের বাসায় যেতে বলে ।

১০ জানুয়ারি, রকি কাল চলে যাবে ভর্তি হতে । নীলার থেকে অনেক দূরে চলে যাবে । আজ সারা দিন ওরা অনেক মজা করেছে, কিন্তু তাও দিন শেষে ওর মনটা খারাপ হয়ে থাকে ।পর দিন বাসায় চলে যায়, সেখান থেকে ওর ইউনিভার্সিটিতে । ভর্তির কয়েক দিন পর থেকেই ক্লাস শুরু । শুরু হয় রকির নতুন জীবন । কিন্তু রকির এখানে কিছুই ভাল লাগে না । প্রতিটা মুহূর্ত ও নীলাকে মিস করে । দূরে চলে গেলেও রকি প্রতি মাসেই নীলার সাথে দেখে করতে যেত । এমনকি কখনো কখনো বাসায় না গিয়েও ও নীলার সাথে দেখা করতে যেত । কিন্তু তারপরও দিন দিন নীলা কেমন যেন বদলে যেতে থাকে । ও বুঝতে পারে নীলা ওর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে । ওদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে । ও কিছুই বলে না, শুধু চুপ করে থাকে । মনের কষ্টটা মনেই চেপে রাখে ।

২৩ এপ্রিল,

-কিরে এতবার ফোন দিচ্ছি, ফোন ধরিস না কেন ?

-তোকে না বললাম আর ফোন দিবি না ।

-আচ্ছা সরি । ভুল হইসে ।

-সরি বলে লাভ নাই । আর ফোন দিবি না ।

-সরি সরি সরি সরি সরি । আর কতবার সরি বলব ?

-হইসে । থাক আর বলতে হবে না । আর যেন এই রকম ভুল না হয় ।

-আচ্ছা । আর এই রকম হবে না ।

-আর এখন থেকে জাস্ট ফ্রেন্ডের মত বিহেভ করবি । মনে থাকবে ?

-হুম । মনে থাকবে ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.