![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চীনের গোয়াংজোতে বেড়াতে গিয়েছিলাম । একদিন বিকেল বেলা শহরের রাস্তায় ঘুরছি একটি ঠিকানা নিয়ে । ওখানে চাইনিজ ভাষা জানা না থাকলে ঠিকানা খুজে বের করা খুর মুশকিল । আমি ঠিকানা খুজছি আর একজন বিদেশীকে খুজছি যার কাছ থেকে ঠিকানা খুজে পাওয়ার ব্যপারে সাহায্য পেতে পারি । অবশেষে একজন পাকিস্তানীর দেখা পেলাম । তার কাছে গিয়ে আমি ঠিকানা খুজে পেতে সাহায্য চাইলাম (উর্দুতে) । পাকিস্তানী লোকটি আমার কথা শুনে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে পাকিস্তনী কোন এক প্রদেশের ভাষায় বিকট শব্দে কিছু বলে অন্য দিকে চলে গেল । ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি হতবম্ভ হয়ে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে চিন্তা করতে লাগলাম যে, কি এমন ভ’ল করলাম যার জন্য লোকটি এমন রেগে গেল ।
রাতের বেলায় হোটেলে ফিরলাম । হোটেলে ফিরে দেখি সেই পাকিস্তানী লোকটি হোটেলের লবিতে বসে আছে । আমি আস্তে আস্তে লোকটির পাশে গিয়ে বসলাম । জিজ্ঞেস করলাম ভাই আমি কি কিছু ভ’ল করেছি যার জন্য আপনি আমার উপর এত রেগে গেলেন । লোকটি সমান বিরক্তি নিয়ে বলে তুমি ইংরেজি বলতে পার, আমি তাও পারি না । তিন ঘন্টা খোজাখোজির পর হোটেল খুজে পেয়েছি । অবশেষে লোকটির দু:খ বুঝলাম ।
এভাবে অনেক কথার পর দেশ নিয়ে কথা উঠল । লোকটি বলল, ৭১ এর যুদ্ধের সময় তার মামা বাংলাদেশে যুদ্ধ করেছিল । যুদ্ধ শেষে বন্দি হয়ে ডিটেনশন সেন্টারে ছিল । তার মামাকে ডিটেনশন সেন্টারে অনেক মারা হয়েছে । তার মামা এখনও কানে শুনতে পায় না । আমি তাকে বললাম, পাকিস্তানী আর্মিরা ৩০ লাখ বাংলাদেশীকে মেরেছে, তোর মামা যে বেচে ফিরে এসেছে এর জন্যই তোর শুকর করা উচিৎ । ও বলল না, এটা মিথ্যা কথা । আমি তাকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যের কথা বললাম । তৎকালে বিভিনø পণ্য বাংলাদেশে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে বেশী দামে বিক্রি হত আর পশ্চিম পাকিস্তানে কম দামে বিক্রি হত, পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যার চেয়ে বেশী হওয়া সত্বেও সকল সরকারী চাকুরীর গুরুত্বপুর্ণ পদ এবং আর্মির অফিসারে বাংলাদেশীদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকজন । সে আমার কথা বিশ^াস করতে নারাজ । আমি ৬৯ এর নির্বাচনের কথা বললাম । ৩০০ আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের দল পেয়েছিল ১৬০ আসন আর তার নিকটতম প্রতিদন্দি জুলফিকার আলী ভূট্টোর দল পেয়েছিল ৮০ আসন । কিন্ত সেই সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের হাতে দেশের ক্ষমতা না দিয়ে, ক্ষমতা দিয়েছিল আর্মির হাতে । সে আমার কোন কথাই বিশ^াস করতে নারাজ ।
তাকে আমি বলতে বাধ্য হলাম, তোমাদের মাথা মোটা বু্িদ্ধর কারনে আজকে অর্থনীতির সকল সূচকে বাংলাদেশের পায়ের নীচে তোমাদের অবস্থান । লোকটি রেগে গিয়ে বলল, ( আপনি আওকাত মে রহো) ।
পশ্চিম পাকিস্তানীরা কখনো পূর্ব পাকিস্তানের লোকদেরকে সমপর্যায়ের লোক বলে ভাবত না, তারা আমাদেরকে ভাবত নীচু জাতের মুসলীম হিসেবে । আমি তার সাথে কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম, পিছন থেকে আরেকজন পাকিস্তানী উচ্চস্বরে বলল, (ইন্ডিয়া আভি বাংলাদেশকো কব্জা কর লিয়া) ।
রুমে চলে এলাম ঠিকই কিন্তু পাকিস্তানী লোকের শেষের কথাটি আমার মাথায় প্রতিদ্ধনিত হতে লাগল । এক সময় উপনিবেশিকের যুগ ছিল, এখন উননিবেশিক যুগের অবসান হয়েছে কিন্তু সা¤্রাজ্যবাদী দেশ গুলো ঠিকই তাদের উপনিবেশিকতা চালিয়ে যাচ্ছে অন্য কায়দায় । বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশ কি ভারতের উপনিবেশিকতায় ঢুকে গেছে ?
৭১ সালে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল পাকিস্তানীদের বিমাতা সূলভ আচরনের জন্য । বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ ছিল বিক্ষুব্দ পাকিস্তানী শাষনের বিরুদ্ধে । তখনকার উত্ত¦পÍ পরিস্থিতিতে বাঙ্গালী জাতীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান । আর আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সাহায্য করেছিল ভারত সরকার । কিন্তু কেন বাংলাদেশকে সাহায্য করেছিল ভারত ? তা কি বাংলাদেশের মানুষকে পাকিস্তানের পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে, নাকি বাংলাদেশকে শোষন করতে ?
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে শুরু হল অনিয়ম, অত্যাচার এবং লুটতরাজ । বঙ্গবন্ধুও তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, সাত কোটি বাঙ্গালীর জন্য সাত কোটি কম্বল এসেছে কিন্তু আমার কম্বলটি কোথায় । এই বক্তব্যে কি তার অসহায়ত্ব ফুটে উঠে নি ? তিনি অসহায়ত্ব দেখিয়েছেন ঠিকই কিন্তু ক্ষমতা ছাড়েন নি । সত্যিই যদি তিনি ক্ষমতাকে না ভালবেসে দেশকে ভালবাসতেন, তাহলে তিনি গান্ধীজির মত ক্ষমতার পিছনে থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারতেন ।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী । তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রাইট আছে । কারন তার পিতা ক্ষমতার জন্য প্রান দিয়েছেন । বাংলাদেশ তার উত্তরাধিকারী সম্পত্তি । সেটা জনগণের মেন্ডেট নিয়ে হোক বা অন্য কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে । আর সেই প্রক্রিয়াটার নাম হল ভারত । কিছ’ পেতে হলে কিছু দিতে হয় ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাক সফরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মোট ২২টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে । দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষনায় আন্ত:যাগাযোগের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলের জনগনের জন্য বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নিয়ে সহযোগিতার সম্পর্ক মহকাশ পর্যন্ত দাবি করা হল্ওে প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ কী পেল তা স্পষ্ট নয় । চুক্তিতে ভারতকে কানেকটিভিটির নামে করিডোর প্রদান, মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের সুযোগ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য জায়গা দেয়া, বিদ্যুৎ উৎপাদনে চুক্তিসহ ভারতের চাওয়া সব সুবিধাই বাংলাদেশ দিয়েছে । এর বিপরীতে বাংলাদেশ কী সুবিধা পেল তা পরিস্কার নয় । চুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, মোদির সফরে ভারত বাংলাদেশকে শুভঙ্করের ফাকি দিয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রাপ্তি শূন্য । বাংলাদেশ সফরে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে সম্পাদিত ২২ টি চুক্তি, প্রটোকল ও সমঝোত স্মারক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবয়নের বিষয়টি বাংলাদেশের আরও ৪১ বছর আগে পাওয়ার কথা ছিল । বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা বিষয়ে শুধুই অপেক্ষার বুলি পাওয়া গেছে, কোনো চুক্তি হয়নি । বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন করা হয়েছে, নৌপথে ট্রানজিট ও বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে । কিন্তু এগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়িিন । ভারতের রিনের বিষয়ে সমঝোতা, বাংলাদেশের মংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে সমঝোতা, ভেড়ামারায় ভারতকে অর্থনৈতিক অঞ্চল দেয়ার বিষয়ে সমঝোতা স্বারক সাক্ষর করেছে দুই দেশ । কিনÍু এই সমঝোতা স্মরকের বিস্তারিত এখনো দুই দেশের কেউই প্রকাশ করেনি । নরেন্দ্র মোদির সফরে বাংলাদেশ থেকে ভারতের পাওয়া অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো পরিস্কার হল্ওে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে কী অর্থনৈতিক সুবিধা পেল তা পরিস্কার নয় । ভারত বাংলাদেশকে যে রিন দেবে তা ভারতের ব্যবহারের জন্য ট্রানজিট বিষয়ক অবকাঠামো খাতের উন্নয়নেই ব্যয় হবে । ভারতের সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে এ রিন দেয়া হয়েছে । আবার রিনের শর্তে এর ৭৫ ভাগ অর্থ ভারতেই খরচ করতে হবে ।
ভারত খাল খননের মাধ্যমে তাদের পানি অন্য দিকে সরিয়ে নিচ্ছে । তাতে বাংলাদেশের কোন আপত্তিই তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরানো যাচ্ছে না । অথচ চীন তাদের সীমান্তে বাধ নির্মানের পরিকল্পনায় ভারতের নাকি কান্না শুরু হয়ে গেছে ।
স্বপ্নের গঙ্গা ব্যারেজ নির্মানে চীন আশাজাগানিয়া প্রস্তাব দিয়েছে । তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারতের আপত্তি আছে । চীনের এই প্রস্তাবনা সরকার কতটুকু গ্রহন করবে তা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপর । ব্যারেজটি নির্মিত হলে গঙ্গা অববাহিকায় ১৬টি নদী নাব্যতা ফিরে পাবে । এছাড়াও সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন করা যাবে । ২০১৪ সালের মার্চেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই প্রকল্পের কাজ উদ্ভোধন করার কথা ছিল ।
এই প্রকল্পটি নিয়ে ভারতের হাস্যকর আপত্তিটি হচ্ছে- গঙ্গা ব্যারেজ বাস্তবায়ন হলে এর অভ্যন্তরে থাকা পানি উল্টো ¯্রােতে ভারতীয় অংশে আঘাত হানবে । ফলে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে- এমন আশঙ্কার কথা লিখিত ভাবে বাংলাদেশকে জানিয়েছে দিল্লী । অথচ প্রায় ২শ, কিলোমিটার দুরে ঢেউ গিয়ে ভারতীয় অংশে ভাঙ্গন ধরানোর প্রশ্নই আসে না ।
১৮৮ টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট দিয়েছে । সব কিছু দিয়ে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে । শেখ হাসিনার কাছে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী আছে, জনগণ না থাকলেও চলবে ।
২| ০১ লা জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২০
সৈয়দ হাসানুজ্জামান (নয়ন) বলেছেন: আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে কি ভারতের কথায় উঠ বস করার জন্য ? পাকিস্তান অন্যায় করেছিল ভারতের সহায়তায় স্বাধীনতা পেয়েছি । ভারত অন্যায় করলে কার সহায়তা চাইব ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
ভারতের সাহায্য নিয়ে শেখ হাসিনা টিকে আছে; না হয়, উনাকে বাবার মতই মেরে ফেলতো বাংলাদেশের মিলিটারী।