নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রক্তমাখা বিপ্লবি

রক্তমাখা বিপ্লবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবর

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:১৯

কবর, হ্যাঁ কবরের ভেতর থেকে বলছি আমি। কি করে এখানে এলাম? নিজের হাতে নিজের জন্যে কবর নিজেই খুড়েছি, নিজেই নিজেকে কবর দিয়েছি। শুধু নিজেকে না, নিজের পরিবারের সবাইকে, এইত পাশের কবরে শুয়ে আছে আমার বউ-বাচ্চারা, আমার নিজের জন্যে একটা আলাদা কবর খুড়েছি। যাতে একজন পেলেই সবাইকে না পাওয়া যায়। বাচ্চাদের জন্যেও খুঁড়তে চেয়েছিলাম আলাদা করে, কিন্তু বাচ্চারা গোঁ ধরল, তারা তাদের মাকে ছাড়া থাকবেনা। আমার বাচ্চাগুলো সে ছোটবেলা থেকেই বড় বেয়ারা, সব ওদের মায়ের দোষ, মায়ের লাই পেয়ে পেয়ে আজকে এই অবস্থা। একদম মাথায় উঠেছে! ইচ্ছা হচ্ছিল পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলি। কিন্তু না এখন শাসন করবার সময় নয়। যেখানে জান বাঁচানোই এখন দায় সেখানে এমন একটু আধটু বেয়াড়ামি সহ্য করা যায়।

ইশরে আমার কবরের মাঝখানে ছিদ্রটা বোধহয় ছোট হয়ে গেছে বেশি। অক্সিজেনের স্বল্পতা। অক্সিজেন হল এক প্রকার গ্যাস যা দিয়ে আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নেই। কোন বিজ্ঞানী যেন অক্সিজেন আবিষ্কার করেছিল, ইশরে মনে পড়ছেনা। রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে আমার অবশ্যই মনে রাখা উচিত ছিল ব্যপারটা। অবশ্য পরিবেশটাই এখানে এমন নিজের নাম পর্যন্ত ভুলে যাচ্ছি, আর অক্সিজেন কে আবিষ্কার করল সেটাতো অনেক দূরের কথা। আচ্ছা আমার একজনেরই এই অবস্থা পাশের কবরে ওরা তিনজন আছে, অক্সিজেনে হবেতো ওদের? বের হয়ে যেয়ে দেখব? দেখা ঠিক হবে? নাহ! কখনই না, সামনে সামনেও মিলিটারিদের বুটের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মাটিতে কৈশিক পানির বদলে মনে হয় কৈশিক রক্ত থাকে এখন। শুনেচ্ছি শিক্ষক কোয়ার্টার থেকে মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা ভাইকে ধরে এনেছে, শুনেই তো পালিয়ে আসলাম এখানে। এরপরের ফ্ল্যাটটাই তো ছিল আমার। ভাগ্য ভাল বউ বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছি।

আচ্ছা কার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে এটা, উর্দুতে বলছে। কোন পাকিস্তানি কুত্তার কণ্ঠ মনে হয়।

-ওহা এক ছেদ দেখ যা র্যাআহে হ্যায়, দেখোতো উহা কৈ হ্যায় কি নেহি। এরপর আমার বউ বাচ্চার কিছু আর্তনাদের মত শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রথম বাচ্চাদের মৃত্যুভয়ে আর্তচিৎকার, তারপর বুলেটের কিছু শব্দ, এরপর মনে হয় হায়েনাগুলো আমার স্ত্রীর উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল, শুনতে পেলাম, সম্ভ্রমের ভয়ে আমার স্ত্রীর আর্তচিৎকার। কয়েক মিনিট হুড়োহুড়ি, এক নারী কণ্ঠের আর্তনাদ, তারপর সব চুপ, একেবারে কবরের মত চুপ।

মনে হয় অক্সিজেনের অভাবে আমার স্ত্রী-সন্তানরা তাদের কবরের ছিদ্রটা একটু বড় করে দিয়েছিল, ঐ কুত্তার বাচ্চারা মনে হয় টর্চ ফেলে যাবার সময় কোন ছিদ্র দেখেছিল, তাই হয়ত পরে খুঁজে বের করেছে। আচ্ছা যেই কবরগুলো আমি খুঁড়েছিলাম সেগুলোতেই কি আবার ওদের ফেলে দিল ওরা? নাকি মাটিতেই ফেলে রেখেছে, ঢাকার আকাশ এখন শকুনদের প্রিয় জায়গা, আর ঢাকার মাটি এখন ওদের ভাগাড়। না আমি বের হয়ে যাইনি, আমার স্ত্রী সন্তানদের বাঁচাতে। নাহ! আপনারা যা ভাবছেন আমি তা নই, আমি কাপুরূষ নই।

শুনেছি সব বুদ্ধিজীবিদের ওরা আজ মেরে ফেলছে। শিক্ষক, সাংবাদিক, ডাক্তার আরও অনেককে। আমার মত দুই একজনও যদি কোনভাবে বেঁচে যাই দেশের হয়ত কোন উপকারে আসতে পারব।

লেখাটা কল্পনাপ্রসূত। তাদের মত বুদ্ধিজীবিদের কেউই বাঁচেননি।

কিন্তু, ইশ! তাদের মত কয়েকজন যদি কোনভাবে বেঁচে যেতেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশ আরও ৫০ বছর এগিয়ে থাকত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.