নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রোমেল রহমান এর ব্লগ

রোমেল রহমান

রোমেল রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্প্রতি অনুষ্টিত পৌরসভা সমূহের নির্বাচন প্রসঙ্গে

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:২৮

স্থানীয় সরকারের একটি ধাপ পৌরসভা। পৌর এলাকার নাগরিকদের ‘নাগরিক সুবিধা’ সমূহ নিশ্চিত করা এই সংস্থার দায়িত্ব। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ৫০ ধারা মতে পৌরসভার মূল দায়িত্ব হবে (ক) স্ব-স্ব এলাকাভুক্ত নাগরিকদের এই আইন ও অন্যান্য আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিধান অনুসারে সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা প্রদান করা; (খ) পৌর প্রশাসন ও সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং কার্যক্রম গ্রহণ করা ; (গ) পৌর এলাকার নাগরিকদের পৌরসেবা প্রদানের লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন , ইমারত নিয়ন্ত্রণসহ নগর উন্য়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা;এবং (ঘ) নাগরিক নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্ভলা রক্ষা করা। এই দায়িত্ব সমূহের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে পৌরসভার কার্যাবলী হবে (ক) আবাসিক,শিল্প ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ;(খ) পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন;(গ) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা;(ঘ)অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন; (ঙ) যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকল্পে রাস্তা,ফুটপাত,জনসাধারণের চলাচল,যাত্রী এবং মালামালের সুবিধার্থে টার্মিনাল নির্মাণ;(চ) জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন,২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এ প্রদত্ত কার্যবলী;(ছ) পরিবহন ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা, পথচারীদের সুবিধার্থে যাত্রী ছাউনী, সড়ক বাতি, যানবাহনের পার্কিং স্থান এবং বাস স্ট্যান্ড বা বাস স্টপের ব্যবস্থা করা;(জ) নাগরিক স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষণাবেক্ষণ , বৃক্ষরোপন ও রক্ষানাবেক্ষণ;(ঝ) বাজার ও কসাইখানা স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা;(ঞ) শিক্ষা, খেলাধূলা, চিত্তবিনোদন,আমোদ প্রমোদ এবং সাংস্কৃতিক সুযোগ সৃষ্টি ও প্রসারে সহায়তা, পৌর এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি;এবং (ট) আইন,বিধি,প্রবিধি,উপ-আইন বা সরকার প্রদত্ত আদেশ দ্বারা অর্পিত অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদন করা ।

পৌরসভার নিজস্ব কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সামর্থ না থাকলে নাগরিক সুবিধার্থে এ সকল কার্যাবলী স্থগিত করা যাবে না। এ ছাড়াও তহবিলের সঙ্গতি বিবেচনা করে আইনানুগভাবে আরো নাগরিক কল্যাণ মূলককাজ করবে। এই সব কারণে পৌরসভার গুরুত্ব নাগরিক জীবনে অপরিসীম। বৃটিশ আমল থেকেই নিবাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। কোন কোন সময় সরকার বিশেষ প্রয়োজনে মনোনীত ব্যক্তিদের দিয়ে এই কাজ করিয়েছে। দলীয় পরিচয় উহ্য রেখেই এই নির্বাচন হয়ে আসছে। ‘বঙ্গবন্ধু’র শাসন আমলে একবার দলীয় ভিত্তিতে এই নির্বাচন হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার দলীয় পরিচয় উহ্য রেখেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নির্বাচনে প্রার্থীগণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হলেও নির্বাচনে তারা এই পরিচয় প্রচার করেন না; দলীয় প্রতীক ব্যবহার করেন না। উদ্দেশ্য একটাই যোগ্য প্রার্থীকে পৌরসভার দায়িত্ব প্রদান করা। এখানে যাতে দলীয় পরিচয় বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে নির্বাচিত হবার পর কেউ কেউ বলতে গেলে অনেকেই ‘শাসক দলে’ যোগ দিয়েছেন। ‘বঙ্গবন্ধু’র আমলে রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জনাব মজিবর রহমান। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ ) এর নেতাকর্মীগণের সমর্থন ও প্রচারণার ফলেই তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় প্রতীক ও পরিচয় ব্যবহার না করেও তিনি নিরপেক্ষ ব্যক্তি হিসেবেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাসদের নেতা কর্মীদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল অকৃত্রিম। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তাঁর নির্বাচন পরিচালনায় অগ্রণী ভ’মিকা পালন করেন জাসদ নেতা মাহফুর রহমান খান, সরকার আবদুল খালেক দুলাল, ময়েন উদ্দিন আহমেদ মানিক (জাসদের মনোনয়নে তিনি রাজশাহী থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বচিত হয়েছিলেন) প্রমুখ। পরবতীতে তিনি আবারও নির্বাচিত হন পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে। এরই মধ্যে প্রধান সেনাপতি হোসেইন মুহম্মদ এরশাদ ( বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মজিবর রহমান সাহেবকে ব্যবহার করতে চান। আত্মমর্যদাবোধ সম্পন্ন মজিবর রহমান পৌরসভার নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর হন। ফলে তাঁকে হারাতে হয় রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যানের পদ।
১৯৭৭ সালে পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বীরেশ মৈত্র। দলীয় পরিচয় প্রকাশ না করলেও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) তাঁকে নির্বাচিত করার পক্ষে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা মখলেছুর রহমান মুকুল, আনিছুর রহমান কামাল, মাহবুল কবীর তারেক, আহমেদ জামিল, আহমেদ করিম, মোজাম্মেল হক কবীর, সোলাইমান, বিদ্যুত, আবদুর রশিদ, ফিরোজ খান রঞ্জু, ফেরদৌস খান গ্যাদামনি, আল-মাহমুদ নিটু , সাইদুল ইসলাম খান মুন্নু প্রমুখ প্রকাশ্যে এই নির্বাচনে বীরেশ মৈত্রর পক্ষে নির্বচনী প্রচারণা ও পরিচালনায় অংশ গ্রহণ করেন। মুহম্মদ ইকবাল পরিস্থিতির কারণে প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন নি, তবে তাঁর পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল বীরেশ মৈত্রর প্রতি। এই নির্বাচনে বীরেশ মৈত্র বিজয়ী হন। সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে তার যোগাযোগ না থাকলেও পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর তাকে ‘শাসক দল’এ যোগদান করতে হয়। তা না হলে পৌরসভার কাজ তার পক্ষে পরিচালনা করা সম্ভব হতো না।

‘স্থানীয় সরকার’ এর উপর সরকারের এবং রাজনৈতিক দলের নির্বিচার নিয়ন্ত্রণ জনগণের নাগরিক সুবিধা পাবার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে। জনগণকে এরূপ ক্ষেত্রে হতে হয় ভোগান্তির একশেষ। রাজনৈতিক পরিচয়ে এখানে যারা ঠিকাদারী করে তাদের ভাগ্য খুলে যায়। শহর অঞ্চলে এদের পরিচয় সবাই জানে। অনেক বিতর্ক হলেও এবার পৌর নির্বাচন দলীয় পরিচয় ও প্রতীকে হয়েছে। ভোট দেবার সুযোগ এবং নির্বাচন পরিস্থিতি দেখার সুযোগ পেয়েছি। নিরুত্তাপ নির্বাচন। প্রার্থীগণ তাদের পোস্টার সাঁটিয়েছে দেওয়ালে, গাছে। দড়ির সাথে পোস্টার বেঁধে রাস্তার একপাশ থেকে আরেক পাশ পর্যন্ত টাঙিয়ে দিয়েছে। দলীয় প্রার্থী আছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীও আছে। প্রচারণায় কিন্তু একটি দল বিনাদ্বিধায় কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদের কার্যক্রম ও প্রচারণা চলছে সীমিত গতিতে। নির্বাচনের দিন দেখা গেলো একটি দলের নেতা কর্মীগণ মাথায় দলীয় প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক সম্বলিত টুপি আকারের ব্যান্ড বেধে প্রচারণা চালাচ্ছে। ভোটারদের সৌজন্যমূলক কুশল বিনিময় করছে। ভোটারদেরকে ভোটার তালিকার ক্রমিক নম্বর সরবরাহ করছে। রিক্সায় করে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসছে, রিক্সায় প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক সম্বলিত পোস্টার সামনে পিছনে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে কিন্তু এর কোনটাই নাই। তবে তারা নিজ নিজ দায়িত্বে যার যার মতো ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছে। এরা কেন্দ্রে বা আশে পাশে অবস্থান করছে না। কারো কারো আবার রিক্সা আছে কিন্তু তাতে পোস্টার লাগানো নাই। এটা করা হচ্ছে গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য। এসব কারণে ভোট কেন্দ্র থাকছে নিরুত্তাপ। বিশেষ প্রার্থীর নিজস্ব এলাকায় অবস্থিত ভোট কেন্দ্রের আশে পাশে যাত্রী বহনকারী রিক্সাগুলোকেও পোস্টার লাগিয়ে ভোটার বহন করতে কর্কশ ভাষায় নির্দেশ দিতে দেখা গেছে। রিক্সাচালক ‘যাত্রী আছে’ বললে একইরূপ ভাষায় বলা হয়েছে,‘যাত্রী নামিয়ে দাও’। এই উদ্ধত্তপূর্ণ আচরণ একটি বিশেষ দলের নির্বাচনী প্রতীক ধারণকারী কর্মী মধ্যে দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল যে প্রার্থীদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্বাচন নিয়ে প্রচার প্রচারনা করতে হবে সীমিতভাবে। এর ব্যতিক্রম হলে ফৌজদারী মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। তবে একটি বিশেষ দলের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিতে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাই তারা ব্যাপকভাবে প্রচার প্রচারনা চালাতে পেরেছে এবং বলতে গেলে একতরফা ভাবেই মাঠ দখল করে নিলেও তা আমলে নেবার মতো দৃশ্যমান হয়নি।

এবার বিবেচনা করা যাক ভোটারদের অনুভ’তির বিষয়। প্রার্থীদের সবার চরিত্রই ‘ফুলের মতো পবিত্র’। সকলের কর্মীগণ এ কথাই প্রচার করে থাকে। বাস্তবে জনগণ তো তা বলে না। প্রায় সকলের সম্পর্কেই ‘সন্ত্রাসী’ ‘চাঁদাবাজি’ সহ বিভিন্ন গণ-উপদ্রবমূলক কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ / জনশ্রুতি রয়েছে। কারো সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে যে বাজারে ট্রাকে করে যত পণ্য আসবে তা খালাস করার জন্য উক্ত প্রার্থীকে বস্তা প্রতি ১০/০০ (দশ) টাকা করে দিতে হবে। বাজারের দোকানগুলো থেকে মাসোহারা আদায় করে ঐ প্রার্থী। আবার বাহ্যত সে ধার্মিক বেশ ধারণ করে থাকে। একটি তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে মাঝে মাঝে তা বের করে তাতে চুমা দেয় তারপর তা দুই বুকে ছোঁয়ায়। কেউ আবার ধার্মিক বেশ ধারণ করে থাকলেও কখনো নামাজ পড়ে না। ইবাদত-বন্দেগী ব্যক্তিগত বিষয় , তা প্রকাশ্যে করার কোন বাধ্যবাধকতা নাই। কিন্তু ওয়াক্তিয়া নামাজ তো সাধারণত মসজিদেই পড়ার নিয়ম। জুম্মার নামাজ, ঈদের নামাজ, জানাজার নামাজ তো প্রকাশ্যেই পড়তে হয়, এখানেও যখন এসব প্রার্থীকে শামিল হতে দেখা যায় না তখন তার ধার্মিক বেশভুষা নিয়ে জনগণ তো সন্দিহান হবেই। নির্বাচনে প্রার্থী হলে তো এসব আচরণ ভোটারদের বিবেচনায় আসবেই। কারো সম্পর্কে মাদক ব্যবসায় লিপ্ত থাকার জনশ্রুতি রয়েছে। এসব দিক বিবেচনা ও আলোচনায় আসে নির্বাচনের আগে। ভোট কিন্তু এদের কাউকেই দিতে হয়। সাধারনত ভদ্র উচ্চ শিক্ষিত নীতিবান ব্যক্তিগণ নির্বাচনে বর্তমান কালে প্রার্থী হতে চান না।

এসব নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে রাজনীতিবিদগণ , শিল্পপতি, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী মহলই সদা তৎপর থাকেন। এদের তৎপরতার কারণে সাধারনত ভদ্র উচ্চ শিক্ষিত নীতিবান ব্যক্তিগণ নির্বাচনে প্রার্থী হবার চিন্তা থেকে দূরে থাকেন, প্রস্তাব আসলে তা সবিনয়ে ফিরিয়ে দেন। প্রার্থীদের পরিচিতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের নাম যুক্ত হয় , বর্তমানে রাজনৈতিক পরিচয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান করায় এটা প্রচারে আইনগত বাধা নাই। তবে সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিতদের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ থাকায় তারা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তা প্রকাশ্য আচরণে মেনে চলেন। কিন্তু নেপথ্যে থেকে পরোক্ষভাবে প্রচারনায় অংশ গ্রহণ করেন। কোন প্রার্থীর বেলায় রটনা হয় তিনি কোন শিল্প গোষ্টির মালিকের আশীর্বাদপুষ্ট, কারো ক্ষেত্রে রটনা হয় তিনি কোন রিয়েল এষ্টেটের মালিক গোষ্টির সমর্থন ও সহায়তা পুষ্ট , কারো সম্পর্কে বলা হয় তিনি কোন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকের সাহায্য ধন্য। রটনাগুলো কিন্তু ভিত্তিহীন নয়। কেউ কেউ আবার দেখা যায় শিল্প গোষ্টির সাথে ব্যবসায়িকভাবেযুক্ত। শিল্প সহায়ক পণ্য তৈরীর ব্যবসা, শিল্প উপজাত মালামাল দিয়ে পণ্য তৈরীর ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকার কারণে এদের মধ্যে পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে গড়ে উঠে ‘শিল্প স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সংঘ’। এভাবে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের কারণে পৌরসভার কার্যক্রমে এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে। যার কারণে নির্বাচনের সময়ও এরা তৎপর হয় । অর্থ ও জনবল দিয়ে নিজ নিজ অনুগত বা মনোনীত প্রার্থীকে সহায়তা করে। নির্বাচনের ফলাফলের সূত্রে এই সব শিল্পপতি , ব্যবসায়ী, ঠিকারগণ স্ব স্ব ক্ষেত্রে লাভবান হয়। শ্রমজীবী , কর্মজীবী, পেশাজীবী জনগণ কিছুই পায় না।

নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হর-হামেশা। যথাযথভাবে নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে নির্বাচন হয়েছে কিনা এটাও নির্ণয় করার দরকার হয়। নির্বাচনের পর নিয়ম-কানুন অনুসরণে ত্রুটি গাফিলতি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এরূপ প্রশ্ন উঠলে প্রার্থীর কর্মী সমর্থকেরা তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিবিধান দাবী করে। প্রত্যেকেই নিজের যুক্তি ও দাবীতে থাকে অটল। তারা উত্তেজিত হয়ে পড়ে অনেক সময়। ‘রিটার্নিং অফিসার’ এর দফতর উত্তেজিত কর্মী-সমর্থকেরা ঘেরাও করে বসে। এবারও এরকম ঘটনা ঘটেছে। ঘেরাও করার পর মাইকে সকল কর্মী-সমর্থককে এই ঘেরাওয়ে অংশ নেবার আহ্বান জানানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে ডেপুটি কমিশনার ( ডি সি ) এবং পুলিশ তত্ত্বাবধায়ক ( এস পি ) পৌর নির্বাচনে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারে নাই। তারা কোন প্রার্থীর পক্ষে কৌশলে কাজ করেছে। এসব পরিস্থিতি কখনোই কাম্য নয়। এতে প্রশাসনে তিক্ততা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য ‘পর্যবেক্ষণ দল’ গঠন করা হয়। এজন্য ঢাকা কেন্দ্রীক কিছু প্রতিষ্ঠানকে তৎপর দেখা যায়। রটনা রয়েছে যে এরা নির্বাচনী এলাকায় এসে সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য সুবিধাটাই গ্রহণ করে।

নির্বাচনের নিরপেক্ষতা এবং সুষ্ঠুভাবে তা হচ্ছে কি না সেটা পর্যবেক্ষণ করার যোগ্যতা দক্ষতা জনসম্পৃক্ততা কতটুকু এদের আছে ; ‘নির্বাচন কমিশন’ তা যাচাই-বাছাই করে কতটুকু দেখে তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে। স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে বহু যোগতা সম্পন্ন এবং সর্বগ্রহণযোগ্য ব্যক্তি রয়েছেন তাদেরকে এরূপ দায়িত্ব কদাচিৎ দেওয়া হয়। তাই সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তার সুষ্ঠু সমাধান করা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছিল যে তিনি একটি প্রতিষ্ঠানকে এরূপ দায়িত্ব দিয়েছিলেন , অথর্ ব্যয় হয়েছিল মোটা অংকের । এই দায়িত্ব দেবার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। সারা দেশের কোথায়ও উক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম নাই। নির্বাচন বা কোন বিশেষ প্রয়োজনীয় সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা ‘ভাড়া করা’ কিছু লোক দিয়ে মানববন্ধন বা কিছু কার্যক্রম করে এবং ছবি তুলে। এই ছবি দেশে ও বিদেশে দেখিয়ে প্রচার করতে চায় তারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। আসলে তারা এভাবে মোটা অংকের অর্থ আয় করে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ শেষে এ প্রশ্ন উঠে, তারপর তিনি খামোশ হয়ে যান। তিনি সরকারকে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য পরামর্শ দেবার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রচার মাধ্যমে কথাবার্তা বলছিলেন। এই সময় উক্তরূপ অভিযোগ উঠলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার দলবল সবাই ডুব দেন। এ পরিস্থিতির সমাধান অত্যন্ত নাজুক স্পর্শকাতর ও দুরূহ কাজ। এবারও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে একটি দল সন্দেহ পোষণ করে এবং এই সব প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব না দেবার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানায়। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ যাতে কারো নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য ‘ভ্রমণ’ বা ‘বাড়তি’ আয়ের সূত্র বা মাধ্যম না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি প্রয়োজন। সেই সাথে এই খাতে ব্যয়িত অর্থ খরচ নিয়ে প্রাগুক্ত ধোঁয়াশাযুক্ত প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব দেবার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়েও সংশ্লিষ্ট সকলকে এবং জনগণকে সজাগ সতর্ক থাকা আর সেই সাথে প্রতিবাদ মুখর হওয়া উচিত।

এবারের পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও নানারূপ প্রশ্ন উঠেছে। সমাধান হবার সহজ পথ নাই। প্রার্থীদের নির্বাচনে বিজয়ী করে নিজেদের রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থ আরো সুসংহত করার সুযোগ যতদিন থাকবে ততদিন রাজনীতিবিদ, শিল্প মালিক , ব্যবসায়ী মহল এভাবে তাদের প্রভাব বিস্তারে তৎপর থাকবেই। এই প্রবণতা যতদিন থাকবে ততদিন পৌর নির্বাচন থেকে জনসাধারণ ব্যাপক অর্থে কোন নাগরিক সুবিধা পাবে না। এ থেকে মুক্তির জন্য স্থানীয় সরকারকে স্ব-শাসিত করতে হবে, সিদ্ধান্তসমূহ হতে হবে গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্বশীলতার ভিত্তিতে। পৌরসভায় থাকবে সকল শ্রেনী পেশার প্রতিনিধি, তাদের থাকবে মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করার এবং ভোট দেবার সম-অধিকার। সরকারের নিয়ন্ত্রণ যুক্তিসংগত মাত্রায় কমিয়ে আনতে হবে। সাম্প্রতিককালে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচন থেকে এটাই আমরা অনুভব করতে পেরেছি।

লেখক:সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.