![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিথুয়া পাথারে নেমেছি বন্ধু রে
ধরো বন্ধু আমার কেউ নাই...."
প্রেমে পড়তে চাইলেও কেউ পড়তে পারে না । আবার অনেক সময় প্রেম নিজেই কখন এসে ভর করে , বোঝা মুশকিল ! এই জীবনে অনেকবার প্রেমের চেস্টা হয়েছে , কিন্তু ভাগ্যের শিকে ছিড়েনি কখনো ! ছাত্রাবস্থায় কৈশোর উর্ত্তীন বালিকার প্রেমে পড়তে চেয়েও সফলকাম হতে পারিনি । ছাত্র রাজনীতির সময়ও একজনকে বলতে চেয়েও কিছুই বলা হয়নি। কারন তখন চোখে মুখে স্বপ্ন ছিলো বিপ্লবের, মজে ছিলাম মার্কসীয় দর্শনের প্রেমে। কর্মজীবনের শুরুতে কোন এক সুন্দরীর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছি । নব্বই দশকে ক্রস কানেকশানে পরিচিত একজনকে না দেখে শুধু কন্ঠ শুনেই বিভোর হয়েছিলাম বেশ কিছুকাল । দু'জনের বাস ছিলো দু'শহরে ।প্রায় রাত জেগে কথা হতো । দেখার আগ্রহ থেকেই একরাতে ছুটে গিয়েছিলাম চারশ মাইল দুরের সেই শহরে । পরেরদিন সকালে অধীর আগ্রহে অপেক্ষার যখন অবসান ঘটতে যাচ্ছে তখন দুর থেকে তাকে দেখে বিষম খেতে হয়েছিল । লতা মুঙ্গেশকরীয় কন্ঠের প্রিয়ভাষিনী ছিলো দুদার্ন্ত এক স্থুলকায় ! না দেখা দিয়েই সেইদিন একবন্ধুসহ পড়িমরি পালিয়ে এসেছিলাম অচেনা শহর থেকে।
তারপর মনে মনে কান ধরেছি । ধুর প্রেম আমার জন্য নয় ।
তারপর কেটেছে অনেক বছর । প্রেম কিন্তু থেমে থাকেনি। সাক্ষাত মানবীয় প্রেম ছাড়াও অনেক প্রেম ছিল অশৈশব । শৈশবে প্রেমে পড়েছি ফুটবলের । আবাহনী ক্রিড়াচক্র বলতে ছিলাম অন্ধ । কিংবদন্তী ফুটবলার সালাহউদ্দীনের জাদুকরী খেলার টানেই ছুটে যেতাম ঢাকা স্টেডিয়াম। ক্রিকেট খুব একটা না বুঝলেও আবাহনীর খেলা দেখার জন্য মাঠে যেতাম । সেই সময়টাতে মুগ্ধ করেছিলো গাজী আশরাফ হোসেন লিপু'র ব্যাটিং । সিনেমার প্রেমে পড়েছিলাম না বুঝেই ফুপুদের হাত ধরে। ববিতা ছিলো গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের প্রথম প্রেম , যিনি শৈশবেই মুগ্ধতায় প্রেমের পরশ ছুঁয়ে দিয়েছেন মনে । ছোটপর্দায় আশির দশকে দেখা 'পারলে না রুমকী'র সুর্বনা মুস্তাফা , এখনো মুগ্ধতার আবেশ ছড়িয়ে রেখেছেন প্রথমদিনের মতনই ।
একদম ছোটবেলায় দাদার নিউজ পেপার পড়া দেখে দেখে পত্রিকা পড়ার প্রেমে পড়েছি , আমৃত্যুই বুঝি থেকে যাবে এই প্রেম ! মনে পরে পাঠ্যবইয়ের পাশে লুকিয়ে লুকিয়ে গল্প, উপন্যাস সহ নানান রকমের বই পড়ার নিষিদ্ধ প্রেম ছিলো টানটান উত্তেজনায় ভরপুর।রবীন্দ্রনাথের সাথে তখন থেকেই প্রেমর শুরু , এই প্রেম মিশে গেছে এখন প্রাত্যহিক জীবনের সাথে । প্রেম শুরু হয়েছিলো সত্যজিৎ এর ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কুর সাথে ।প্রেমে পড়েছিলাম সাপ্তাহিক বিচিত্রা, বিচিন্তা'র । নব্বই শুরুতে ইত্তেফাকের সাথে দীর্ঘ দিনের প্রেম ছুটে যায়, প্রেমে পড়ি আধুনিক পত্রিকা আজকের কাগজের। তারপর ভোরের কাগজ । সবশেষে প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গার পর প্রথম যাকে দেখি এখন সেতো 'প্রথম আলো' ।জানি না কতদিন ধরে রাখতে পারবে নগন্য এ পাঠকের প্রেম -ভালোবাসা !
ভালোবাসার অনেক রকম ফের , অনেক হ্যাপা !
তারপরও মানুষ ভালোবাসতে চায় । বেঁচে থাকার জন্য প্রেম,ভালোবাসা খুব জরুরী ।
২
"...যে ছিলো আমার স্বপ্নচারিনী
তারে বুঝিতে পারিনি ...."
একটা বয়স থাকে যখন মানুষ যা দেখে তাই সুন্দর । সেই সুন্দরকে নিজের কাছে পাবার জন্য তীব্র আকাঙ্খায় ছটফট করে । অনেক সময় সেই গোপন আকাঙ্খা প্রকাশ করতেও পারে না । বিশেষত: কৈশোর উর্ত্তীন সময়টাতে প্রেমের আকুপাকু মনে হয় একটু বেশী থাকে। কৈশোরে ভাললাগা বা প্রেম শুধু সহপাঠিদের জন্য যতটা তীব্র হয়,তার চেয়ে বেশী থাকে তার নিজের চেয়ে বয়সে বড়দের প্রতি ! কেন এমন হয় ,এর কোন বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখা আমার জানা নেই ।
যখন ক্লাস এইটে বা নাইনে পড়ি তখন শুধু গল্পের বইয়ের প্রতি প্রেম ছিলো না।এখনো মনে পরে সেইসব গল্পের নায়িকারা দ্বিগুন বয়েসী হলেও তাদের প্রতি টান, ভালোলাগা ছিলো । বলা যায় একধরনের নিষিদ্ধ প্রেম। বাস্তবেও আমার মতন অনেক বন্ধুদের দেখেছি পাড়াতু আপাদের প্রতি গোপন দূর্বলতা । যা কখনোই প্রকাশিত না হলেও কোন না কোন ছুঁতো দিয়ে তাদের কাছাকাছি যাবার দূর্নিবার আকর্ষনের কমতি ছিলো না। তাদের একটু মিস্টি হাসি, আড়চোখে তাকানোতে হৃদয়ে ঝড় বইয়ে যেত । ভার্সিটি পড়ুয়া পাড়াতু আপার কাছাকাছি যেতে পারলেই আমার মতন স্কুল পড়ুয়া বালকের দিনটি হয়ে উঠতো ঝলমলে রঙ্গিন !
সেই সময়টাতে মোবাইল ফোনের যুগ ছিলো না , ছিলো এনালগ ফোনের যুগ। উচ্চ মধ্যবিত্ত ছাড়া সাধারন মানুষের বাসায় ল্যান্ড ফোন ছিলো কল্পনাতীত । ফলে ভালোবাসা- প্রেমের আদান প্রদানে মূখ্য ভূমিকা রাখতো গোপন চিরকুট। এক্ষেত্রে চিরকুট আদান প্রদানে বড়রা মুলত: ছোটদের ব্যবহার করতো চকলেট,মিমি'র প্রলোভনে ফেলে । কখনো সেই চিরকুট র্দূভাগ্যবশত: যদি কোন অভিভাবকের হাতে পড়লেই বাড়ির অন্দরমহলে বেঁধে যেত লংকাকান্ড । এই রকম বেশ কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলাম পাড়াতু বড়ভাইয়ের চাপে পড়ে । তারচেয়ে বড়কথা যে আপাটির কাছে প্রায় প্রতিদিন বড়ভাইয়ের চিরকুট পৌঁছাতাম ।একসময় সেই আপাকেই আমার ভালো লেগে যায় । কি অদ্ভুত ! নিজের অজান্তেই আপা আর আপা থাকেননি হয়ে উঠেছিলেন আমারই গোপন ভালোলাগার মানুষ !
একসময় চিঠি আদান-প্রদানে আমার অনীহা বাড়তে থাকে । নানান তাল বাহানায় চিঠি না পৌঁছে দিয়ে আপার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করে , চা-বিস্কিট খেয়ে আসতাম । দু'চারদিনের মধ্যে পাড়াতু বড়ভাই বিষয়টি বুঝতে পেরে শুধু অবাকই হলেন না, তিনি সাথে সাথে আমাকে পাড়ার গলিতে এবং সেই প্রেমিকার বাড়ির চেৌহদ্দীতে যেতে বারন করলেন। একই সাথে শাসিয়ে দিলেন যদি কখনো ঐ বাড়িতে গেছি জানতে পারলে আমার ঠ্যাং ভেঙ্গে দিবেন ।
জানের মায়া বড় মায়া । ঠাংয়ের মায়াই বা কম কি? তাই ভালোলাগার মৃত্যু ঘটে আতুড় ঘরেই । ভুলেও আর কখনো সেই বাড়িমুখো হইনি ।
পুনশ্চ : ভালোবাসার অনেক হ্যাপা ।তবুও মানুষ ভালোবাসে, বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে । সত্যি জীবন অনেক সুন্দর।
©somewhere in net ltd.