নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বন্ধু সুমন

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪৮


অনেকদিন পরে আবারো দেখা হল সুমনের সাথে ।
আমারা একসময় একই মহল্লায় থাকতাম । সেই সুত্রে আমাদের জানাশোনার সুত্রপাত আরো জোরালো হয়েছিল ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকার কারনে । ১৯৮৭ সাল থেকে দুইজনেই স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম ।রাজপথের সংগ্রাম,আন্দোলনে আমাদের অসংখ্য স্মৃতি । আমাদের কত ঘটনা, কত গল্প জমে আছে ,যা বলে শেষ করা যাবে না ।
রাজনীতি করতে গিয়ে আমাদের দুজনের বয়সের ব্যবধান ঘুচে গিয়ে ভাল বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরী হয় । যা আজো অটুট ,বিদ্যমান । এমনিতে সুমন কারো সাথে নিজ থেকে যোগাযোগ রাখে না । কিন্তু ফোন ,ফেসবুক কিংবা মেইলে আমাদের যোগাযোগ হয় না। তারপরেও আমাদের অদেখা, যোগাযোগহীনতা কখনোই দূরত্ব তৈরী করতে পারেনি । ৫ / ৭ বছর পর হঠাত দেখা হলেও মনে হয়নি যে ,আমরা পরস্পর দীর্ঘ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলাম ।
১৯৯৪ সাল থেকে সেই সুমন এখন আমেরিকা প্রবাসী । মাঝে বেশ কয় বছর একটানা দেশে কাটিয়ে গেছে । আমার এই বন্ধুটি অসম্ভব ভাল মনের একজন মানুষ । খুব জেদী , সৎ ও পরিশ্রমী । নানান কারনে আমি সুমনের একরোখা জীদ , হঠাৎ রেগে যাওয়াকে এড়িয়ে চলি !
সুমনও বিষয়টা জানে ,বুঝে বলে চুপ করে থাকে ।
দীর্ঘ দিন পর সুমনের সাথে আমেরিকায় দেখা এবং নিউ ইয়র্কে তার বাসা ছিল আমার দ্বিতীয় নিবাস ।আমার নিউ ইয়র্ক ট্যুরের শেষ ১১দিন ছিলাম ওর বাসায় । খুব ভোরে ও অফিসে চলে যেত ,ফিরত সন্ধ্যা ৬টায় । সামান্য রেস্ট নিয়ে আমাকে সহ বেড়িয়ে যেত নানান জায়গায় । আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিল আমাকে নিয়ে যাবে ওয়াশিংটন ডিসি, ফিলাডেলফিয়া । সেই অনুযায়ী আমরা গিয়েছিলামও একদিন । সাথে ওর কাজিন আবীরও ছিল ।
প্রায় রাতে ঘুমানোর আগে আমরা নানা গল্প করতাম। বেশীরভাগই ছিল সিনেমা বানানোর সপ্নর কথা । একদা করে আসা রাজনীতির কথা, বিপ্লবের কথা । ওর ইচ্ছে খুব শীগ্রি দেশে এসে সিনেমা বানবে । আমিও ওর স্বপ্নের সাথে মিশে যাই,বলি , "আসো দেশে ,সিনেমা বানাও ।তারপর আমিও বানাব ।"
সুমন হয়ত শীঘ্রি দেশে আসবে শুধু সিনেমা বানাতে ।
সেই অপেক্ষায় আমিও থাকি । যে স্বপ্ন আমিও লালন করি বুকের গভীরে ।
দেখতে দেখতে সময় ঘনিয়ে আসে আমার দেশে ফেরার ।
নিউইয়র্ক থেকে আসার আগের দিন ১৫ অক্টোবর রাতে ,সুমন জানায়, আমাকে সি-অফ করতে যাবে ।
আমি কিছু বলি না । বুকটা ভারী হয়ে আসে। আবার কবে দেখা হবে, ঠিক জানি না !
১৬ অক্টোবর সারাদিন রনি ভাই, শিপন ভাই'র সাথে নানান জায়গায় ঘুরে-ফিরে বাসায় আসি বিকেল ৫টায় । আমার ফ্লাইট রাত ১১ টায় জেএফকে থেকে । এর মধ্যে আমেরিকা প্রবাসী চিত্রশিল্পী আনোয়ার ভাই এলেন বিদায় জানাতে । কথা বলতে বলতে সুমন চলে আসে।
বাসায় এসে সুমন খাবারের অ্ডার দেয় ।আমি কোঁথাও যাবার আগে খেতে পারি না, সুমন আমার কথা শুনতে চায় না । অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে না করি, খাব না ।
ও মন খারাপ করে ।
সন্ধ্যা ৭টা বাজতে সুমন তাড়া দেয় । চলেন আপনাকে দিয়ে আসি ।
আমি সুমনকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলি , তুমি আমার সাথে যেও না ।
সুমন জানতে চায় ,কেন ?
তুমি এয়ারপোর্ট গেলে আমি নিজেকে সামলাতে পারব না। আমি খুব ইমোশনাল ।তুমিও খুব সেন্টিমেন্টাল ।দুজনে মিলে হয়ত
সিঅফটা ভাল হবে না ।
বলতে বলতে আমার গলা আবেগে ধরে আসে ।
সুমন কথা বলে না , চুপ করে থাকে।
আমি কোন কথা না বলে নিরবেই রনি ভাইর সাথে শিপন ভাইর গাড়িতে উঠে বসি ।
পিছনে দাঁড়িয়ে থাকে সুমন ।
পিছনে পড়ে থাকে আমার অনেক স্মৃতি ।

# নিউ ইয়র্কে আমার পরিচিত বন্ধু স্বজন সবার সাথে অসংখ্য ছবি আছে কিন্তু একমাত্র সুমনের ছবি তোলায় ছিল চরম আপত্তি। তারপরেও অনেকটা জোর করে ১টা ছবি তুলেছিলাম বাসায় প্রথম দিন রাতে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.