নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইকেলে সারা বাংলাদেশ ভ্রমন -২

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

১৯৯১ সাল ।
সম্ভবত : অক্টোবর মাস ।
আমাদের অসমবয়েসী পাঁচবন্ধু আমি, জেসিন,স্ট্যালিন ,বকুল ভাই ও আঞ্জু ভাইকে নিয়ে
দৈনিক বাংলা বাজার পত্রিকায় ছোট একটা ফিচার লিখেন সাংবাদিক ফজলুল বারী ভাই ।

এই ফিচারটির জন্য ছোট শহর নারায়াণগঞ্জে পরিচিত মহলে আমরা রীতিমতন বিখ্যাত ।
পথেঘাটে কারো সাথে দেখা হলেই প্রথম প্রশ্ন ছিল, কবে যাচ্ছ সাইকেল ট্যুরে ?
আমি বা আমরা ভাব নিয়ে বলতাম, যাব যাব ... প্র্যাকটিস চলছে । শেষ হলেই যাব ।
কিন্তু আসল ঘটনা হল আমাদের মধ্যে একমাত্র আঞ্জু ভাইর সাইকেল ছিল । বাকী চারজনের কারো সাইকেল ছিল না ।
তাহলে সাইকেল ট্যুর হবে কিভাবে ?
সাইকেলের দুঃশ্চিন্তায় মাথার চুল পড়ে যাবার যোগাড় !
কি করে যে একটা সাইকেল ম্যানেজ করি ! অনেক সাহস করে একদিন মা কে বলি । বাবাও শুনেন। কিন্তু কিছু বলেন না । আমি বুঝতে পারি একটা সামান্য সাইকেলের চাওয়াটা আমার চাকুরীজীবি বাবার পক্ষে মেটানো সম্ভব ছিল না । মধ্যবিত্তের সন্তানের অনেক চাওয়া পাওয়াই যেমন অপূর্ণ থেকে যায় , তেমনি আমারও থাকে।
সারাদিন মন খারাপ করে এর সাথে ওর সাথে কথা বলি ।
কিন্তু সাইকেল ছাড়াই মনের ভেতর স্বপ্নটা বড় হতে থাকে । যেভাবে হোক আমি ট্যুরে বের হবোই ।
আমার সাথে সাইকেল ট্যুরে যাবার জন্য আরো অনেকে আগ্রহ দেখায় । প্রতিদিন কত রিকোয়েস্ট,’ আমাকে তোমাদের সাথে নাও ।‘ আমার অনেক বন্ধু আছে যাদের নিজের রেসিং সাইকেল আছে । তারাও যেতে আগ্রহ দেখায় । দিন দিন সংখ্যাটা বাড়তে থাকে ।
প্রতিদিন বিকেলে আমরা তোলারাম কলেজের শহীদ মিনারে বসে নানান পরিকল্পনা করি । ট্যুরের জন্য আমাদের প্রস্তুতি কি হবে ,টাকা পয়সা কত কি লাগবে তারও হিসেব নিকেশ চুড়ান্ত করি ।
একদিন জেসিন , আঞ্জু ভাই মিলে আমরা দিনক্ষন ঠিক করি ১৫ ডিসেম্বর সকালে বাংলাদেশ দেখার জন্য বের হয়ে যাব ।
দিনক্ষন যত ঘনিয়ে আসতে থাকল ততই আমাদের দলের সদস্য সংখ্যা কমতে থাকে ।নানান ছুতোয় সবাই কেটে পড়ে । শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলাম আমরা সেই পুরানো পাঁচজনই ।
জেসিন , স্ট্যালিন , বকুল ভাই সাইকেল জোগাড় করে ফেলেছে । আঞ্জু ভাইরতো আগেই ছিল ।
জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় গাউসের সাইকেলটা স্ট্যালিনের জন্য ব্যবস্থা করে দিয়ে আমি পড়ে যাই বিপদে ।
এখন আমি সাইকেল কোথায় পাই ।
হাতে মাত্র ৪দিন সময় আছে । ভাবতে ভাবতে খোঁজ পেয়ে যাই আমার এক বন্ধু শাহিনের ছোট ভাই শামিমের লাল রঙের একটা ইন্ডিয়ান এভন সাইকেল আছে ।
একদিন শাহীনকে পটিয়ে পটিয়ে রাজি করে ফেলি সাইকেলটা ধার দেয়ার জন্য । ৪/৫ দিন পর আবার ফেরত দিয়ে যাব । শাহীন আমাদের পুরো বিষয়টা জানত বলে একটু গাইগুই করে । কন্ডিশন একটাই সাইকেল যেরকম নিবো , ঠিক সেরকম অবস্থায় ফেরত দিতে হবে । আমি রাজী হয়ে ওদের বাসা থেকে সাইকেল নিয়ে আসি । টায়ার, টিউব চেঞ্জ করতে হবে । একটা নতুন রিং বেল লাগাতে হবে । সব মিলে ৪/৫শত টাকার মামলা ।
আমার হাতে তেমন একটা টাকা পয়সা নেই । মায়ের অগোচরে বাসায় জমে থাকা পুরানো খবরের কাগজ জড়ো করে ফেরিওলার কাছে বিক্রয় বাবদ প্রায় দেড়শ টাকা পাই । পকেটের কিছু টাকা মিলিয়ে মিশনপাড়ায় তাহেরের রিক্সার গ্যারেজে সাইকেল মেরামত করে ফেলি । সাইকেল এখন বাংলাদেশ চষে বেড়ানোর জন্য প্রস্তুত ।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে বিজয় মেলা অনুস্টানের অনেক দায়িত্বও আমার কাঁধে । সাইকেল ট্যুর আর বিজয় মেলার কাজ মিলে আমার তখন নাভিশ্বাস । একাত্তুরের ঘাতক-দালাল নির্মূল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন জাতীয় সমন্বয় কমিটির জেলা শাখার সদস্য ছিলাম। প্রেস রিলিজ থেকে শুরু করে নানাবিধ সাংগঠনিক কাজে আমি বাসদের কর্মী হিসেবে সক্রিয় । সমন্বয় কমিটির অফিস ছিল আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা বাসদ কার্যালয় । ১৪ই ডিসেম্বর শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মর্গ্যান স্কুলে বিজয়মেলা উদ্বোধন করেছিলেন । মেলা শুরু হয়ে যাবার পর কিছু কাজ আমি অসিত দা’র উপর ছেড়ে দিয়ে গভীর রাতে বাসায় ফিরে যাই । পরের দিন খুব সকালে আমরা যাত্রা শুরু করব হাজীগঞ্জ থেকে ।
আগেই আমাদের কথা হয়েছিল সবাই চাষাড়া বালুর মাঠ জমায়েত হবে সকাল ৮টায় । যথারীতি আমি সবার আগে শানুভাইর টঙ্গয়ের চায়ের দোকানে হাজির । আমার পকেটে মাত্র ১২টাকা । অন্যদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে চা- সিগারেট খেয়ে ১০টাকা শেষ করে ফেলি । পকেটে থেকে যাওয়া এই ২টাকা সম্বল করে বেড়িয়ে পড়ি সাইকেলে সারা বাংলাদেশ ভ্রমনে ।
সেইদিন খুব সকালেই শীত উপেক্ষা করে আমাদের অনেক বন্ধু এসেছিলেন বিদায় জানাতে । সুমিত, পাপ্পু,ফেরদৌস , রাজিব,আসাদ ,মুকুল,অন্তু ,ফয়সাল,ফারুক সহ অনেকেই । বন্ধুরা জানত কিন্তু আমাদের কারো বাসায় জানত না যে ,আমরা সাইকেলে বাংলাদেশ ভ্রমনে যাচ্ছি । আমি ৪/৫দিনের জন্য বরিশাল ঘুরতে যাচ্ছি বলে এসেছি । সত্যি বললে পুরা প্ল্যানই ভেস্তে যেত । অন্যরা যে যার মতন যা পেরেছে তাই বলে এসেছে ।
আমাদের প্রথম যাত্রা ছিল কুমিল্লা । তারপর একের পর এক জেলা সদর ।এইভাবে পুরো চট্রগ্রাম ও পার্বত্য বিভাগ ঘুরে দেখা হয়েছে।
সাড়ে তিনমাসে আমরা প্রথমে চট্রগ্রাম ও পার্বত্য বিভাগের সব জেলা , দ্বিতীয় সিলেট বিভাগ শেষে নরসিংদী দিয়ে ঢাকা বিভাগের শুরু করে কিশোরগঞ্জ দিয়ে পূরা ঢাকা বিভাগের সব জেলা শেষ করেছিলাম । ফরিদপুর থেকে আমরা গোপালগঞ্জ হয়ে ঢুকে পড়েছিলাম খুলনা বিভাগে । খুলনা বিভাগের সব জেলা শেষে আমরা বাগেরহাট থেকে পিরোজপুরের মধ্য দিয়ে বরিশাল বিভাগে ঢুকে পড়েছিলাম । বরিশাল বিভাগ শেষ করে আমরা বিপদেই পরে গেলাম । কারন আমরা চাইছিলাম না এক জেলার উপর দিয়ে দ্বিতীয়বার সাইকেল চালিয়ে যেতে ।
বরিশাল সদরে সার্কিটহাউজে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমরা খুলনা থেকে ট্রেনে আবার চুয়াডাংগা যাব । এর আগে আমরা রাজবাড়ি থেকে এইখানে এসেছিলাম । খুলনা বিভাগের মেহেরপুর , কুস্টিয়া আমাদের বাকী ছিল । চুয়াডাংগা থেকে আমরা মেহেরপুর , কুস্টিয়া ঘুরে খুলনা বিভাগ শেষ করি । এরপর আমাদের যাত্রা শুরু হয় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ ।
টানা সাড়ে তিন মাসে আমরা চারজন সাইকেলযোগে সারা বাংলাদেশ ঘুরে শেষ করি । আমাদের খুলনা বিভাগ শেষ হবার আগেই বকুল ভাই বাগেরহাট থেকে নারায়াণগঞ্জ ফিরে যান ব্যাকপেইনের জন্য ।
মাত্র ২টাকা সম্বল করে কিভাবে ৬৪টি জেলা সদর ঘুরে এলাম এই কথা না হয় আরো একদিন বলা যাবে ।
তবে শুধু বলতে চাই ,এদেশের সাধারন মানুষের অফুরান ভালবাসার ঋণ কখনোই শোধ হবার নয় ।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণের জন্য
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ রণি ভাই

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২১

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিচারণ

৩| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:০৭

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: বাহ, ভালো লাগলো স্মৃতিচারণা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.