নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প‌্যারিসের ডায়েরি : চোখ ভিজে যায় জলে

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৫

পশ্চিমা বিশ্বে পরিবারের বন্ধন, স্বামী - স্ত্রী সম্পর্ক অনেকটাই ঢিলে ঢালা, বিচ্ছেদ ও ভাংগনে সন্তানের বেড়ে উঠার উপর নানান রকম বিরুপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। এই খবর দেশে বসেই জানতাম। অনেকবার ইউরোপ, আমেরিকায় বিভিন্ন পরিবারকে খুব কাছ থেকে দেখেছি , শুনেছি ব্রোকেন ফ্যামেলির সন্তানদের বেড়ে উঠা নিয়ে বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের কথা। আমাদের দেশেও এধরনের ঘটনা এখন বেড়ে চলেছে । এই সব দেখে, শুনে মন খারাপ হতো।
কিন্ত আজ দুপুরে ফ্রান্সের তুলুজ শহরের গার্দ দো তুলুজ রেল স্টেশনের একটি ব্রোকেন ফ্যামেলির বাচ্চাটার জন্য মন ভীষন খারাপ হয়ে গেল। ট্রেনের টিকেট না পেয়ে স্টেশনের বাইরে কুইক ফাস্টফুডে বসে লাঞ্চ করছিলাম। এসময় আমাদের থেকে হাত দশেক দুরে পরপর দুইটা গাড়ি এসে থামে। প্রথম গাড়ি থেকে একজন ইয়াং ফ্রেঞ্চ নামে, তার সাথে ৩/৪ বছরের ফুটফুটে বাচ্চা । ঠিক পিছনের গাড়ি থেকে নামে এক তরুনী।
বাচ্চাটা তরুনীকে দেখে মম মম বলে দৌড়ে কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। তরুনীটি গভীর মমতায় বাচ্চাটিকে চুমু খেয়ে পাগলের মতন আদর করতে থাকে। আমি ও মনির ভাই দুর থেকে লক্ষ্য করছিলাম পুরো ঘটনাটি। তরুন টি গাড়ি থেকে বাচ্চাটির ব্যাগ ও খেলনা নামিয়ে তরুনীটির গাড়িতে তুলে রেখে তার গাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকে। এদিকে তরুনীটি একবারের জন্যও তরুনটির দিকে তাকায় না। লক্ষ্য করি মা ও মেয়ের দুই চোখে মিলনের অশ্রু ।
সামান্য দুর থেকে ফ্রেঞ্চ তরুনটি তার মেয়েকে কিছু একটা বলেন। বাচ্চাটিও তার পাপাকে কিছু বলে। মিনিট পাচেক সময়ের মধ্যে তরুনী তার বাচ্চাকে পাশের সিটে বসিয়ে চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যেতেই বাচ্চাটি চিতকার করে ডাকে, পাপা পাপা করে।
তরুনটি একহাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে অন্য হাতে চোখ মুছতে মুছতে গাড়িটির চলে যাওয়া দেখে। বাচ্চাটি তখনো চিতকার করে পাপা পাপা ডাকছে।
পুরো ঘটনাটি চোখের সামনে মুহুর্তের মধ্যে ঘটলেও আমাকে প্রচন্ড নাড়া দিয়ে গেল একজন পিতার সাথে কন্যার সাময়িক বিচ্ছেদ ও কন্যার সাথে মায়ের মিলন ।
এই দেশের নিয়ম অনুযায়ী ব্রোকেন ফ্যামেলির সন্তান বাবা - মা দুই জনের কাছে থাকতে পারে। সাপ্তাহে ছুটির দিন সন্তান কে বাবা অথবা মায়ের সাথে দেখা করতে দিতে হয়। আঠারো বছরের নীচে সন্তানের ইচ্ছে অনুযায়ী সে কখনো মায়ের সাথে থাকে, কখনো বাবার সাথে থাকে। কিন্তু সাপ্তাহে একদিন তাকে বাবা বা মায়ের সাথে দেখা করতে দিতে হবে। আজ ছুটির দিন ছিল এই বাচ্চাটির বাবার কাছ থেকে মায়ের কাছে যাবার দিন।
একটা সময় তরুনটি চোখ মুছতে মুছতে চলেও যায়। হয়তো আগামী এক সাপ্তাহ তার প্রিয় কন্যাকে সে দেখতে পাবে না!
বাচ্চাটির পাপা বলে করুন চিতকার আর তরুনটির কান্না আমাকেও ভিজিয়ে দেয় । ভিজে যাওয়া চোখ দুটি গোপনেই মুছি। দুপুর থেকে সারা বিকেল মন ভার হয়ে আছে।
---- -- -- -- ---
২৩.০৫.২০১৫
তুলুজ, ফ্রান্স

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮

মুনাজির বলেছেন: আচ্ছা ব্রোকেন ফ্যামিলির সংখ্যা আমাদের দেশে কেন বাড়ছে, ভেবে দেখেছেন কি?
ফ্যামিলি যেন না ভাঙ্গে কিংবা কদাচিৎ ভাঙ্গলেও বাচ্চাদের যেন মম মম বলে কিংবা পাপা বলে চিৎকার করতে না হয় সে জন্য আমরা কি করতে পারি?
মডেল হিসেবে কোন আদর্শ কিংবা নমুনা পেশ করতে পারি কি?

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪

ক্লে ডল বলেছেন: করুণ!! উন্নত জীবন ব্যবস্থা থেকেও লাভ কি!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.