নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত আকাশ

এমএইচ রনি১৯৭১

আমি মার্কসীয় সমাজতান্ত্রিক আর্দশে বিশ্বাসী একজন মানুষ ।

এমএইচ রনি১৯৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রথম মৃত্যু ও দ্বিতীয় জীবন

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২১


১৯৯৬ সালের ১২ জুন।
এইদিন ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুস্টিত হয়।
এইদিন দুপুরেই প্রথম আমি মারা যাই !
১৩ই জুন বিকেল ৫টায় পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছিলাম। যা আমার দ্বিতীয় জীবনের শুরু !
সেই গল্পটাই বলছি।
আমি তখন নারায়ণগঞ্জ জেলা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের দল বাসদ অংশ নিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের সদর ও বন্দর, ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ এবংসোনারগা । এই তিন আসনে দলীয় প্রতীক তালা মার্কা নিয়ে আমাদের প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একমাস আগে হতে প্রতিদিন গণসংযোগ, পাড়া মহল্লায় মিছিল- সমাবেশ, রাত জেগে দেয়াল লিখন, পোস্টারিং করাসহ নানান কর্মসুচীতে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচনের দিন চরম ক্লান্তি নিয়ে ভোট শুরুর প্রথম প্রহরে সরকারী তোলারাম কলেজ সেন্টারে ভোট দিয়ে জেলা পার্টি অফিস আসি।
জেলা নেতৃবৃন্দ ও সদর আসনের প্রার্থী জি.এম. ফারুকভাইসহ বিভিন্ন সেন্টারে ভোটগ্রহন দেখতে বের হই। শহরের ভোট সেন্টারগুলিতে ঘুরে ঘুরে দেখি সকাল থেকে শান্তিপূর্নভাবে ভোট গ্রহন চলছে।
দুপুর ১২টায় ফারুকভাই ও নেতৃবৃন্দ বন্দরের ধামগড়, ঢাকেশ্বরী, কলাগাছিয়া, নবীগন্জসহ বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদশর্নে গেলে আমি, সিদ্ধার্থ, রিপন, ঝর্না, শিখা, নান্টু, সহ বেশ কজন পার্টি অফিসে নির্বাচন কোঅর্ডিনেশনের দায়িত্বে ছিলাম।
দুপুরে আমাদের জন্য খাবার, বিরিয়ানী আসে মন্ডলপাড়াস্থ বাদলভাইদের বাসা হতে। কাজের ফাকে ফাকে যে যার মতন খেয়ে নেয়। বেলা তিনটায় আমি আর সিদ্ধার্থ একসাথে খেয়ে প্রচন্ড গরমের মাঝে মগ্যার্ন গার্লস স্কুল সেন্টারে গিয়েছিলাম ভোটের কি অবস্থা দেখতে।ফেরার পথে সিদ্ধার্থ বললো, রনিভাই, বিরিয়ানি খাওয়ার পর ঠান্ডা না খেলে কি হয়?
হুম। চলো কোক খাই।
না ভাই জুস খাওয়ান।
ওকে।
দুইজনে রহমতউল্লাহ ইনস্টিটিউট মার্কেটের ফিরোজ কনফেকশনারি হতে প্রানের ম্যাংগো জুস খেয়ে অফিসে আসি। জুসটা অসম্ভব ঠান্ডা ও রসালো ছিলো।
অফিসে বসার পর হতে আমার শরীর প্রচন্ড খারাপ হতে থাকে। চেয়ারে ঠিক মতন বসতে পারছিলাম না। ফ্যানের তলে বসেও সারা শরীর ঘেমে নেয়ে উঠেছিলাম। হাত পা থর থর করে কাপছিলো। সিগারেট ধারাতে গিয়ে নিজের শার্টে নাকি জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠি ফেলেছিলাম। (যা আমি বেচে ঊঠার পর জাহাংগীর, সিদ্ধার্থ,মফিদুলদের কাছে শুনেছি।)
আমার এরকম বাজে অবস্থার সময় অফিসে কেউ ছিল না।সিদ্ধার্থ আর কে কে যেন বাইরে সিগারেট খেতে গিয়ে আড্ডায় জমে যায়। এদিকে ধীরে ধীরে আমার শরীরের শক্তি কমে আসতে থাকে।মুখে অনবরত ফেনা উঠছে। ছোখ নাকি রক্তশুন্য, পাংশু হয়ে গিয়েছিল। ঠিক এরকম বাজে অবস্থায় হঠাত মফিদুল, লিলুসহ কে কে আসে, তা এখন আর মনেও নেই।
ওরা আমার অবস্থা দেখে আতকে উঠে।আমার দু'আংগুলের ফাকে সিগারেট পুড়ে নাকি হাতে লেগে গিয়েছিল প্রায়! শুধু মনে আছে ওদের দেখে আমি কি যেন বলে হেসে গড়িয়ে পড়ার আগে কেউ একজন আমাকে ধরে বেঞ্চে শুইয়ে দিতে ঘুমিয়ে পড়ি।এরপরের ঘটনা অর্থাত ২৫/২৬ ঘন্টার কিছুই মনে নেই। আমার জীবনে এ ২৫/২৬ ঘন্টা শুধু ব্লাংক, ফাকা।

২.

১৩ জুন। বিকেল সাড়ে পাচটা।
আমার ঘুম ভাংগে।
পেটে প্রচন্ড খিদা।বিছানায় শুয়ে মা মা বলে ডাকি। গলা দিয়ে শব্দ বের হতে চায় না। গলায় অনেক ব্যাথা। মনে হয় কি যেন ছিড়ে গেছে। আমার ডাকে কারো কোন সাড়া নেই।ঘর অন্ধকার। টলতে টলতে গিয়ে বাতি জ্বালাই। ফ্রেশ হয়ে এসে হাতঘড়ির পাশে রাখা হাসপাতালের ডিসচার্জ লেটারে আমার নাম দেখে চমকে উঠি।
আমার নাম কেন? আমি কবে ভর্তি হয়েছিলাম?
ভাল করে বার কয়েক দেখি।সত্যি আমার নাম মাসুদুল হাসান রনি লেখা। তারিখ লেখা ১৩ জুন ছাড়পত্র ইস্যু করা। এডমিশন ডেট লেখা ১২ জুন ১৯৯৬.
ফুড পয়েজনিং লেখা।
স্টমাক ওয়াশ।
কমপ্লিট রেস্ট।
কিছু হাবিজাবি অশুধের নামও লেখা।
আমার মাথা ভো ভো করে।
আমি কিছুই মনে করতে পারি না। কেমন এলোমেলো লাগে সব।

৩,

১৪,, ১৫ জুন আমি বাসায়।
শুধুই ঘুমে কাটে। ক্ষুধা লাগলে সারদিনে একবার খেয়ে ঘুমিয়েছি।
১৬ জুন, সন্ধ্যায় পার্টির কোন এক কমরেডের সাথে অফিসে যাই।দেখা হয় বাদল ভাই,অসিতদা ও জাহাংগিরের সাথে।সবাই দেখি অদ্ভুদ চোখে দেখে।আমি অসস্তিবোধ করি।
বাদলভাইর কাছে শুনি আমার মরে যাবার গল্প।
১২ জুন সন্ধ্যায় ফারুকভাই, বাদল ভাই আমাকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যান। ডিউটিরত ডাক্তার নাকি আমার অবস্থা দেখে বলেছিলেন, এ রোগি আর ঘন্টাখানেক পর আনলে বাচানো যেত না!
কি সাংঘাতিক কথা!
আমাকে তাতক্ষনিক গলায় পাইপ দিয়ে স্টমাক ওয়াশ করানো হয়।ওয়াশের পর জানা যায় প্রানের জুসটা ছিল মেয়াদউত্তীর্ন। এইটা ফুড পয়জনিং হয়েছে।দ্রুত প্রেশার কমে
শরীর নীলবর্ন হয়ে গিয়েছিল।চার টা ইনজেকশান,স্যালাইন দিয়ে সারারাত ইমার্জেন্সির অবজারভেশনে রাখা হয়েছিল। পরদিন সকাল ১১টায় আধোঘুম, আধোজাগরনে বাদল ভাই আর কে যেন বাসায় দিয়ে আসে।
এসবই আমার পার্টির কমরেডদের কাছে শোনা গল্প। জাহাংগিরের কাছে আরো ভয়াবহ গল্প শুনি।সেই রাতে আমাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ফারুকভাইয়ের স্ত্রী চন্দনাভাবি। আমি নাকি ফারুকভাই ও ভাবির কাছে বাল্যপ্রেমে পড়ার কি সব হাবিজাবি বলেছি!
ছি : কি লজ্জা! লজ্জা!
এগুলি মনে হয় জাহাংগিরের বানানো গল্প।
মৃত মানুষ কি কথা বলে?
আমিতো তখন মৃতই ছিলাম !
প্রথম মৃত্যুটাইতো ভাল ছিল!
দ্বিতীয় জীবনতো বিতিকিচ্ছি দেখছি!
হা হা হা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:



এখন থেকে ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.