![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১.
গ্লামার্ জগতের মানুষের কমিটমেন্ট নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন । অনেকে অভিযোগ করেন,'' অমুক শিল্পী দেরী করে সেটে অাসায় অামি ফেঁসে গেছি । অার্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি ।''
দু'চারটি ঘটনা যে ঘটেনি বা ঘটে না তা নয় । এজন্য সব শিল্পী,কলাকুশলীকে ঢালাও দায়ী করা সমচীন হবে না।যারা অভিযোগ করেন তারা একবার ভেবে দেখুন , শ্যুটিং চলাকালে কোন শিল্পী তাঁর অসুস্থ মায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়েও তাকে কান্নাচেপে দৃশ্যটা শেষ করতে হয় । শুধুমাত্র প্রযোজকের অার্থিক ক্ষতি এবং পরিচালকের ফেঁসে যাবার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য । অথচ এই শিল্পীর প্রাপ্য সম্মানীটুকু দিতে পরিচালক বা প্রযোজক ভুলে যান । দিনের পর দিন দিচ্ছি ,দিবো করেন।
কি অদ্ভুত অামাদের মানসিকতা!
২.
আমার একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতার কথা বলি।
২০০৮ সাল । অাগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় ।
একজন বিখ্যাত নাট্যকার, অধ্যাপক বারডেম হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায়। ৪দিন যাবৎ ক্লিনিক্যাল ডেথ। কেন যেন তাঁর মৃত্যু সংবাদ ঘোষনা করতে দেরি হচ্ছে ! গণমাধ্যমে প্রতিদিন তার সর্বশেষ শাররীক অবস্থার বিবরন দিয়ে নিউজ হচ্ছে । তাঁর অানুস্টানিক মৃত্যুর দুইদিন আগে আমার স্টেশনের বস ডেকে বললেন,' রনি আপনি তার মরার ঘোষনার আগেই শ্রদ্ধাঞ্জলি নাম দিয়ে এক্ষুনি একটা প্রোগ্রাম বানান। যখন তাকে মৃত ডিক্লিয়ার করা হবে, সাথে সাথে মরার তারিখ বসিয়ে আমরা সব চ্যানেলের আগে তার উপর নির্মিত প্রোগ্রাম অন এয়ার করবো। "
একজন মানুষ তখনো মারা যায়নি , বাঁচবে কি না বলাও যায় না, অথচ কে কার আগে অনুস্টান দেখাবে তার প্রতিযোগিতাও আমরা করি !
হায় কি অদ্ভুত আমাদের মিডিয়ার মানসিকতা!
৩.
এবারের ঈদে সদরঘাটের একটি ঘটনা ।
বাড়িফেরা মানুষের ভীড়ে টার্মিনালে তিলধারনের ঠাঁই নেই।লন্চে উঠা নিয়ে প্রতিযোগীতায় কোন এক অসর্তক মুর্হুতে মায়ের হাত ফঁসকে এক শিশু বুড়িগঙ্গায় পড়ে যায়। ঠিক এইরকম সময় কোন এক চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান ও রিপোর্টার সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন । অামরা টেলিভিশনের পর্দায় দেখলাম , বাচ্চাটি কিভাবে পানিতে পড়লো এবং পানিতে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। শতশত মানুষ দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করছে! কারো মাঝে লক্ষ্য করা গেল না বাচ্চাটিকে উদ্ধারের কোন প্রচেস্টা !
কি অদ্ভুত অমানবিক দৃশ্য অামাদের টিভি কতৃর্কপক্ষ প্রচার করে টিঅারপির শীর্ষে অবস্থান নিতে চান!
শেষ পর্যন্ত বাচ্চাটিকে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সদরঘাটের কুলি ।
প্রশ্ন হচ্ছে , ক্যামেরাম্যান বা সংবাদকর্মীর কি সেই মুর্হুতে নিউজ সংগ্রহ করা দায়িত্ব ছিল ? নাকি মানবিক কারনে বাচ্চাটিকে উদ্ধার প্রক্রিয়া অংশ নেয়া বা সহায়তা করা?
৪.
২০০৯ সালের কোন একদিনের ঘটনা ।
দুপুর ১২টায় অামার লাইভ অনুস্টান 'একুশে দুপুর' মাত্রই শুরু হয়েছে ।অামি ও সুমনা অাপা পিসিঅারে বসা । স্টুডিওতে অামাদের সাথে সহকারী হিসেবে ছিল অমি ভাই এবং সুধীর দা । হঠাৎ এ সময় অমিভাইয়ের মোবাইলে ফোন অাসে, তাঁর মা স্ট্রোক করেছেন । মা অন্তপ্রান অমিভাইয়ের বাড়ি রাজবাড়ি সদরে। সেখানে তাঁর মা ও এক ছোটভাই থাকেন।এ খবর পেয়ে অমিভাই বুঝতে পারছিলেন না তিনি অনুস্টান রেখে স্টুডিও ছেড়ে যাবেন কিনা ! সুধীরদা'র কাছে শোনামাত্রই চেয়ার ছেড়ে অামি অমিভাইয়ের কাছে যাই । তাঁর দু'চোখ ছলছল করছে ,কথা বলতে পারছেন না ।সুমনা অাপা বললেন, রনিভাই অামি অাছি , অাপনি ওকে বাড়ি যাবার ব্যবস্থা করেন।
অামি অমিকে নিয়ে দ্রুত সাততলায় একাউন্টসের সিনহা সাহেবের কাছে যাই।রিকোয়েস্ট করি, অমির বেতন থেকে কিছু টাকা াগ্রীম যেন দেয় ।
মুখের উপর সিনহা সাহেব না করেন ,টাকা দেয়া যাবে না ।বেতন হলে পাবেন।
মেজাজটা যতদুর সম্ভব ঠান্ডা রেখে ঘৃনায় অামাদের ফ্লোরে চলে অাসি । দ্রুত অামার ড্রয়ার থেকে চেক বই বের করে দশহাজার টাকার একটা চেক কেটে অমির হাতে দিয়ে বলি, এই টাকা তুলে এক্ষুনি বাড়ি যান । যদি কিছু প্রয়োজন পড়ে অামাদের জানাবেন কিন্তু অফিসকে না।
এধরনের অারো বেশ ক'টি ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলাম বলেই প্রতিস্টানকে নয়, তাই নিজের কাজটাই ভালবাসি ।
যে অফিসের জন্য কর্মীরা জান দিয়ে কাজ করেন ,সেই অফিস যদি কর্মীবান্ধব না হয়, অফিস থেকে কর্মীর বিপদে সাহায্য বা সহযোগিতা পাওয়া না যায় , সেই প্রতিস্টানের প্রতি কর্মীর দরদ কতটুকু থাকবে ?
©somewhere in net ltd.