![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবে প্রথম সিনেমা দেখেছি এখনো অস্পস্ট না হলেও ঝাপসা মনে পড়ে ।গত শতকের মধ্য সত্তুরের দিকের ঘটনা । ফুপিদের হাত ধরে প্রথম সিনেমা দেখা ।প্রথম সিনেমা দেখেছিলাম চট্টগ্রামের বিখ্যাত সিনেমা হল 'আলমাসে' । কবরী,ফারুক অভিনীত সুজনসখী ।এরপর মা,চাচী ও ফুপিদের সাথে অসংখ্য সিনেমা দেখা হয়েছে । তারপরও প্রথম সিনেমার কথাই বেশী মনে পড়ে । প্রেক্ষাগৃহে পরিবারের সবার সাথে সর্বশেষ সিনেমা দেখা হয়েছে আশির দশকের মধ্যবর্তী সময়ে ,মধুমিতা হলে আমজাদ হোসেনের চলচ্চিত্র 'জন্ম থেকে জ্বলছি'। এরপর আর দলবেধে , পরিবারের সাথে কখনো হলে গিয়ে সিনেমা দেখা হয়নি । সে সময়টাতে মধ্যবিত্তের অন্যতম বিনোদন ছিলো হলে গিয়ে বড়পর্দায় সিনেমা দেখা ।পরিবারের সবার সাথে সিনেমা দেখার আনন্দই ছিলো আলাদা ।আজ সময় পাল্টেছে , বিনোদনের অনেক মাধ্যম এসেছে কিন্তু সেই সময়ের যে নির্মল বিনোদন তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না । এখন সিনেমা দেখা হয় একা একা বা ঘনিস্ট বন্ধুর সাথে ।সেই দিনগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেল ! ভাবতেই বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ।
আমরা তখন চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ডেভারপাড় থাকি । আমার দাদার বাড়ি । একান্নবর্তী বিরাট পরিবার। আমার বাবা,চাচা,ফুপি ও তাদের বেশ কজন চাচাতো ভাই বোন এবং ৩/৪জন কাজের লোক ছিলো এই বাড়ির বাসিন্দা ।মনে পড়ে সেই সময় চাচা ,ফুপিরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ স্টুডেন্ট ।আমার মেঝ ফুপিকে দেখতাম সকাল বেলা বাসার সামনে মসজিদের কাছে কলেজের হলুদ রঙের সুপিরিয়র কোচের জন্য অপেক্ষা করতে । চাচারা যে যার মতো সকাল সকাল বেরিয়ে যেতেন । আমি ছোটবেলা থেকে খুব দুস্টু প্রকৃতির ছিলাম বলে সবার যেমন আদরের ছিলাম , তেমনি প্রচুর কানমলা,বকা ঝকাও খেয়েছি ।পাড়ার সবার বাসার সদর দরজা থেকে অন্দর মহল সবর্ত্র্রই ছিলো আমার অবাধ বিচরণ । পাড়াতু চাচা,লুলু কাকাদের বাসা ছিলো আমার সকল দুস্টুমি ,বাদরামী সহ্য করার এবং অফুরান ভালোবাসা ও আদরের উৎসস্থল ।ঘুম থেকে উঠেই এই বাসায় যে ঢুকতাম আর বের হতাম সারাদিন শেষে সেই সন্ধ্যেবেলা ।গোসল,খাওয়া দাওয়া ,ঘুমানো সবই ছিলো আমার লুলুকাকাদের বাসায় ।আমার মায়ের কাছে এখনো শুনি ’ রনিতো মানুষ হয়েছে লুলুদের বাসায়।’ রক্তের না হয়েও আমার সেই দাদা,দাদী,মজনু কাকা,লুলু কাকা,কলি ফুপি, শিখা ফুপি,ডেইজি ফুপি, চঞ্চল কাকারা ছিলেন আমার অনেক আপনজন । এখনো আমার সেই পরম আত্মীয়দের অনেকের সাথে যোগাযোগটা রয়েছে মায়ের কারনেই ।মনে পড়ে পাড়ার সবার সাথে সবার ছিলো কি আন্তরিকতা , মধুর সম্পর্ক।একজনের বিপদ মানে সবার বিপদ ভাবতো। ভালো মন্দ রান্না হলে এ বাসা ও বাসায় পাঠানোর প্রচলন চিলো । শুধু তাই নয় কাঠালের ভর্তা, আচার কোন কিছুই বাদ যেত না। এখন নাগরিক জীবনে এইসব চল কোথায় যেন মিলিয়ে গেছে ! পাশের বাড়ির অসুস্থ মানুষটির খোজ পযর্ন্ত কেউ নেয় না ।সবাই কেমন যেন আত্মকেন্দ্রিক প্রবন হয়ে গেছে ।
আমার ফুপিরা যখন কলেজ থেকে ফিরতেন তখন আমাদের ভাইবোনদের জন্য মুঠো মুঠো করে টফি নিয়ে আসতেন ।কি যে মজার ছিলো সেই টফিগুলো ! সেই টফির স্বাদ বড় হয়ে কোথাও খুজে পাইনি। তাদের হাত ধরে বিকেলে পাড়ার বাসায় বাসায় ঘুরতে যাওয়া হতো । মেয়েদের চলাফেরা নিয়ে দেখিনি কাউকে চিন্তিত হতে ।এখনকার মতন ইভটিজিং ছিলো না। সবার মাঝে সম্মানবোধ, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ছিলো । পাড়ার পরিবেশ ছিলো শান্ত , মেয়েদের চলাফেরা নিয়ে কাউকে আতংকিত হতে হতো না।এখন সমাজ যতো এগিয়েছে, কেমন কলুষতাও যেন বৃদ্ধি পেয়েছে !
আষাঢ় শ্রাবন মাসে যখন মুষল বৃস্টি হতো ,তখন আমাদের বাড়ির উঠোন জুড়ে বান ডেকে যেত । ছোট ফুপি আমাদের কাগজের নৌকা বানিয়ে দিতেই ছুটে যেতাম উঠোনে নৌকা ভাসাতে । ভাইবোনেরা অনেক হৈ হুল্লোড় করে নৌকা ভাসাতাম, বৃস্টি ভিজতাম। ঠান্ডা,সর্দি লাগা নিয়ে চাচী,মাদের এতো টেনশান করতে কখনো দেখিনি । বরং বলতে শুনেছি, একটু আধটু ঠান্ডা সর্দি না হলে শক্তপোক্ত হবে কি করে ? আমাদের বেড়ে উঠাটা কি মধুরই না ছিলো ! এসময়ের মায়েদের দেখি সন্তান একটু ভিজলেই ডাক্তারে ,ঔষুধ নিয়ে কি দেৌড়াদেৌড়ি শুরু করে দেন ! এখন বৃস্টি এলে সেই ছেলেবেলার বৃস্টির কথা মনে করে বুকটা মোচড়ে উঠে । আহা ! কতদিন বৃস্টি ভিজি না !
আমাদের বাসার সামনে ছিলো ফুলের বাগান । বাড়ির পিছনের অংশে ছিলো কলাবাগান ।এই অংশে ছিলো বিশাল জামগাছ ।প্রায প্রতিদিন ফুপিদের দেখতাম কাচা মরিচ, লবন মেখে বড় গামলায় জাম ঝাকিয়ে ভর্তা বানাতে ।আর সেই ভর্তা খেতে আসতেন তাদের সমবয়েসী বন্ধুরা ।মনে আছে আমরা ছোটরা কে কত বেশী মুখ ,জিভ লাল করতে পারি তার একটা অঘোষিত যুদ্ধ করতাম ।হায় ফল খাবার সেই উতসবের আমেজ
এখন কই ?
আমাদের পরিবারের সবাই ছিলেন অনেক উদারমনা ও সংস্কৃতি সজ্জন ।সেই সময়টাতে কেন, পাকিস্তান আমল থেকে আমাদের বাসায় টেলিফোন, রেডিও ,সাদা কালো টিভির চল ছিলো ।ধর্মীয় গোড়ামী ছিলো না । যা আজো নেই । বাসায় ঢাকার ইত্তেফাক,ইংরেজী দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার , চট্টলার দৈনিক আজাদী , সাপ্তাহিক বেগম, সিনে পত্রিকা চিত্রালী ও পুর্বানী এবং সাপ্তাহিক বিচিত্রা ছিলো নিয়মিত ।দাদা,বাবা,চাচা,ফুপিদের দেখে দেখে পত্রিকা পড়ায় হাতেখড়ি হয় শৈশবে । বাবা ,চাচারা নাটক, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন । আমার মেঝ চাচী ছিলেন চট্টগ্রাম বেতারের সিনিয়র উপস্থাপক । খোকন কাকাও ছিলেন বেতারের ঘোষক । মেঝচাচীর তার হাত ধরেই প্রতি সাপ্তাহে রবিবারের ছোটদের আসরে যেতাম ছড়া আবৃত্তি করতে ।আমার সেই চাচীর আদর,ভালোবাসা পেতে না পেতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে । চাচীর মৃত্যুদিনই আমার জন্মদিন। চাচীর মৃত্যুর পর আমাদের বাসায় কখনোই আমার জন্মদিনটি আর ঘটা করে পালিত হয় না, যা হয় আমার বন্ধু ও অফিস কলিগদের আয়োজনে । এইদিন টি আমাদের পরিবারের একান্তই শোকের দিন।আমাদের বাসায় বাবা, মা,বড়ভাই সবার জন্মদিন এখনো ঘটা করে পালিত হয় ।এতে আমার ব্যক্তিগত কোন দু:খ নেই,কারন এই চাচীকে আমিও অনেক বেশী ভালোবাসি ।তাছাড়া প্রতিবছর ৯ই মে সকালে আমার বালিশের নীচে মায়ের লেখা একটি চিরকুট পাই ’রনি,অনেক আদর ও ভালোবাসা।মানুষের মতন মানুষ হও । দীর্ঘজীবি হও ।তোমার আম্মু । ’
মায়ের এই চিরকুট আমার সব দু:খ ভুলেই দেয় ।
২| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৪৬
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
ফুপিদের সাথে
ফুপি বলে বাংলাভাষায় কোন শব্দ নেই, কথাটি হবেঃ ফুপু
স্ত্রী- ফুপু। পুং- ফুপা।
আশা করি প্রবন্ধে শব্দটি সংশোধন করে দিবেন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৫৮
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
ফুপিদের সাথে
ফুপি বলে বাংলাভাষায় কোন শব্দ নেই, কথাটি হবেঃ ফুপু
স্ত্রী- ফুপু। পুং- ফুপা।
আশা করি প্রবন্ধে শব্দটি সংশোধন করে দিবেন।