নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

রনী মুরাদ

একজন লঘু কবি

রনী মুরাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোনেলারা বড় হয়ে কি হতে চায়?

১৫ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৫:০৮

ঘটনা-১: গত বছর চ্যানেল আই'র খুদে গানরাজ দেখার সময় যে অনুভূতি হয়েছিল গত সপ্তাহে ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র দেখার সময় একই অনুভূতি হয়েছে। অনুভূতিটা একটু পরে ব্যাখ্যা করছি তার আগে আরেকটি ঘটনা বলে নেই

ঘটনা-২: বেশ কয়েক বছর আগের কথা, তখন ডিইউডিএস এর যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকার অদূরে কালিগঞ্জে গিয়েছিলাম একটা বিতর্কের বিচারক হিসেবে। বাচ্চাদের অনুষ্ঠান, ভালই লাগছিলো। আয়োজকরা একসময় অনুরোধ করলেন আসলে এটি তাদের সপ্তাহব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, তাদের জন্য খুব উপকার হয় যদি আমাদের প্যানেল তাদের আবৃত্তি প্রতিযোগিতার বিচারকার্য করে দেই। আমার এবং আমার এক বন্ধুর আবৃত্তির কোর্স করা এবং কম বেশি আবৃত্তি করার অভিজ্ঞতা থাকায় রাজি হয়েছিলাম। আগেই বলেছি বাচ্চাদের অনুষ্ঠান, সব খুদে আবৃত্তিকার মঞ্চে এসে ধারালো শব্দের শাণিত উচ্চারণে আমাদের ঘায়েল করবে এমন প্রত্যাশা আমার বা আমার বন্ধুর কারোরই ছিলো না। যাইহোক কোন এক পর্যায়ে এক খুদে আবৃত্তিকার এসে বলছিলো " আমার নাম...(নামটা এই মুহূর্তে মনে পরছেনা!) আমি একটি কবিতা বলবো- কবিতার নাম 'কাজী নজরুল ইসলাম', লিখেছেন 'আমি হবো সকাল বেলার পাখি!' বয়সের কারনে হোক আর অতি অনুশিলনের কারনে হোক তার বিচ্যুতি জনিত ভুল বোঝার ক্ষমতা তার ছিল না। অতটুকু শিশু, কবিতার ১০ লাইন মুখস্ত বলতে পারে এটাই কি বড় কথা নয়?

মূল্যয়ন: উপরের তিনটি ঘটনার একটু বিশ্লষণ করা যাক- আমরা আমদের শিশুদের বিজয়ী দেখতে ভালবাসি। পড়া লেখার ক্ষেত্রে হোক আর অন্যকোন প্রতিযোগিতায় হোক। আমরা অনেক সময় লক্ষ্যও করিনা আমাদের এই সহজ সরল চাওয়া তাদের শিশু মনের উপর কেমন চাপ ফেলে। ভালো লাগুক বা না লাগুক আমরা ধরে নেই আমাদের সন্তান হয় ডাক্তার না হয় ইনঞ্জিনিয়ার হবে দু'একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। এই ডাক্তার ইনঞ্জিনিয়ার হবার ইঁদুর দৌড়ে আমাদের কতশত জনের শিশুবেলা অবেলায় শেষ হয়ে গিয়েছে তার কোন হিসেব আমাদের জানা নেই। যেই বয়সে সুকুমার রায় বা ঠাকুরমার রূপকথার রাজকন্যা- রাজপু্ত্রের সাথে বন্ধুত্ব হবার কথা সেই বয়সে আমাদের শিশুরা অক্সফোর্ড লারনার্স বা গ্রাহামের হিস্ট্রি বইয়ের পাতা ওল্টায়! রঙ পেন্সিল দিয়ে যেমন ইচ্ছে ছবি আঁকার বয়সে এরা জিওমেট্রির দূরুহ কোণের সরল পরিমাপ শেখে!! এই কি আমাদের কাঙ্ক্ষিত শৈশব?

পড়া লেখার বাইরে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন সহ শিশুর যেকোন সুকুমার বৃত্তি আজ আর কোমল শিশুতোষ অনুশিলনে আবদ্ধ নেই, এটি এখন বহুজাতিক উৎসাহের কেন্দ্র। কর্পোরেট সমাজে আমাদের শিশুরা যতটা না শিশু তারও বেশি সক্রিয় পণ্য যার ভোক্তা আবার তার পরিবার! তাই চ্যানেল আই খুদে গানরাজ কিংবা সীমানা পেড়িয়ে ইন্ডিয়ান আইডল জুনিয়র প্রতিযোগিতাগুলো আমাকে অবাক করে না। যে বিষয়টি ভীষণভাবে ভাবিত করছে তা হলো এইসব প্রতিযোগিতার নামে আমরা আমাদের শিশুর শিশুবেলা অবেলায় কেড়ে নিচ্ছি। প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য শিশুটি "বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান...." এই গান গাইবার পরিবর্তে আমাদের কোমলমতি শিশুরা গাইছে " বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর পায়ে দিয়ে সোনার নুপুর..."আমি বলছিনা এইসব অগ্রবর্তী শিশুরা বড়দের এই গান গাইতে পারছে না, পারছে তবে যে বয়সে 'বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর পায়ে দিয়ে সোনার নুপুর' গাইছে তা সে আরও দশ বছর পরে গাইলেও সমস্যা নেই কিন্তু দশ বছর পরে 'বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান' এই গানের যে আবেদন থাকার কথা ছিল তা আর আমাদের শিশুর কাছে থাকবে না। এভাবে নিজের অজান্তেই আমরা আমাদের শিশুকে ছোট আকারের বুড়োতে পরিনত করি, তাদের ভালোলাগাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের ভালোলাগা বা আমরা যা করতে পারিনি তা করতে বাধ্য করে পরিতৃপ্তির হাসি হাসছি অথচ এই হাসির পেছনে যে নিষ্ঠুরতা রয়েছে তা নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই।

বোধদয়: আজ আমার একমাত্র ভাগ্নি'র প্রথম জন্মদিন। উপহার হিসেবে কি দেবো তা নিয়ে ভাবছিলাম। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো সোনেলা (আমার ভাগ্নি'র নাম) গান শিখুক, পিয়ানো বাজাক। তাই গতকাল মিউজিক ইন্সট্রুমেন্টের দোকানে একটা গ্রান্ড পিয়ানোর সামনে দাঁড়িয়ে উপরের কথাগুলো মনে আসতেই ভাবলাম সোনেলার তো পিয়ানো ভালো নাও লাগতে পারে! তার হয়তো গান ভালো লাগবে না, সে হয়তো খেলাধুলায় আকর্ষণ বোধ করবে বা হতে চাইবে অদম্য অভিযাত্রী। পৃথিবীর সকল পর্বতশৃঙ্গে পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে বেড়াবে অথবা সাগর সেচে মুক্তা আনবে। কিংবা একজন বড় বিজ্ঞানী হতেই তার সমস্ত আনন্দ। আমি কী ভাবে আমার শখের বশে তার আনন্দ আর দশটা শিশুর মতই নষ্ট করি! তাই যখন খালি হাতে মিউজিক ইন্সট্রুমেন্টের দোকান থেকে বেড়িয়ে এলাম তখন আমার আনন্দ লাগছিলো এইভেবে যে আমি আজ একজন শিশুকে তার নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার পথ করে দিলাম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৩ ভোর ৫:২৭

ম্যাভেরিক বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তবে ভাগ্নির তো পর্বতাভিযান নাও ভালো লাগতে পারে, বিজ্ঞানী সে নাও হতে চাইতে পারে। কাজেই যেকোনো সুন্দর খেলনায় সমস্যা নেই, কোনোকিছু লক্ষ্য হিসেবে চাপিয়ে না দিলেই হলো।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৩২

রনী মুরাদ বলেছেন: @ ম্যাভেরিক,
অবশেষে তাই করেছি, ভাগ্নিকে একটা খেলনা কিনে দিয়েছি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.