নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অদৃশ্যমান মাধ্যমে দৃশ্যমান প্রতিবিম্ব খুঁজে বেড়ায় যে ...

রৌদবালক মামুন

সাক্ষী বাতায়ন ধারের বটবৃক্ষের পাতা / হিশেব করে ফেরত চাহি, আজকে মনের হালখাতা...

রৌদবালক মামুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিনুর রোদচশমা

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৩:১৪



“চশমাটি এর আগে আরও একুশবার ফেরত দিয়েছিলো বিনু। কখনো মূল কারণ ছিলো ঘুম থেকে দেরিতে ওঠা, কখনো গোসল করতে আধঘণ্টারও বেশি সময় অতিবাহিত করা। কখনো কোচিং-এ ক্লাস নেবার ফলে বিনুর ফোন রিসিভ করতে না পারা আবার কখনো বিনুকে পরপর দুবার কল দেওয়া; ‘মা সামনে বসে আছে’- বিষয়টি কেন এত দিনেও বোধগম্য হলো না।

আবার কয়েকবার কারণ ছিলো বিনু চশমা ফেরত দিতে চাইলে কেন বারণ করার বদলে সাইকেল নিয়ে হুট করে বাসার নিচে গিয়ে তিনবার সাইকেলবেল বাজিয়ে সংকেত দেই যে- ‘এসে গেছি, বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে সরু শুভ্র হাতখানা বের করে চশমা ছেড়ে দাও, বুলেট মিস হতে পারে, ক্যাচ মিস হবে না’।

জানি দুদিন পর সে আবার চশমা নিয়ে হলের নিচে দাঁড়াতে বলবে। আর বলবে সাইকেল বের করতে হবে না। গাড়ি নিয়ে আসছি। ঘুরতে যাবো।
সন্ধ্যায় তাকে এক পলক দেখার জন্যই বলা মাত্র চশমা আনতে ছুটে যাওয়া। বিনু চশমা ফেরত দেবার মানে হচ্ছে- ‘তোমার সাথে আর চলা সম্ভব না। তোমার দেওয়া একমাত্র উপহারখানা দেখে বিন্দুমাত্রও মনে করতে চাই না। নিয়ে যাও’।

কখনো কারণ ছিলো খুব বেশি প্রশ্ন করি। গুগলেও নাকি দৈনিক এত প্রশ্ন জমা হয় না, যতোটা তার কানে হয়। যেমন বসায় ফিরতে কোন সমস্যা হয়েছে কি না, খেয়েছো কি না ইত্যাদি। আবার কখনো কারণ ছিলো তার কোনো খোঁজ খবর রাখি না, সারাদিন ব্যস্ত থাকি। হকারের মতো এদিক ওদিক ছুটে বেড়াই। জানতে চাই না সে ঠিকঠাক বাসায় পৌঁছে কি না, সময়মত খায় কি না ইত্যাদি।

একবার এ নিয়ে লাইন কয়েক কী জানি লিখেছিলো-
‘কাজে মগ্ন ওই মানুষটাকে ভালবাসি
শিশির ভেজা পায়ে যে আমায় খুঁজবে না
তবুও তাকে ভালবাসি....’

কবিতা খুব বেশি পড়া হয় না। মাত্রা, ছন্দ কিছুই বুঝি না। বোঝার চেষ্টাও করি না। লেখাটি বিনুর, তাই কাগজটি বুক পকেটে নিয়ে বেড়াই দিনের পর দিন। পুরনো হয়ে গেলে বিনুর হাতে লিখা চিঠি গুলোর সাথে ডায়েরির ভেতর যত্ন করে রেখে দেবো। ক্যাম্পাসে দেখা হওয়া সত্ত্বেও বিনু নিয়মিত চিঠি লিখে। অনেক নতুন নতুন কথা, অভিযোগ আটকে থাকে বিনুর বাম হাতে লেখা চিঠির লাইনগুলোতে। ও হ্যাঁ; যে কথাটি বলা হয়নি- বিনু বাম হাতে লিখে, ঢিল ছুঁড়ে, কিল দেয়।

তবুও আজকের বিষয়টি একটু অন্যরকম। গত কয়েকদিন যাবত বিনু খুব বেশি একটা কথা বলে না। চুপচাপ থাকে। চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। পরীক্ষা এলে এ দাগ আগেও পড়েছে। কিন্তু এখনতো এমনটি হওয়ার কথা না। বিকেলে বিনু ফোন দিয়ে বলেছে বাসার নিচে যেতে। আজ ক্যাম্পাসেও আসেনি।
কার্জন হল থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত এক রিকশায় এসে, নেমে রাস্তা পার হয়ে আরেকটি রিকশা নিলাম। সাইকেলটাও আজ চলতে চাচ্ছে না। হলেই রেখে এসেছি।

হলে ফিরতে ফিরতে রাত হলো। মাকসুদ আর বিপুল মনযোগ সহকারে ল্যাপটপে ফিফা খেলছে। দুজনই স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে, কিন্তু যে কেউই দেখে বুঝবে তাদের মনযোগ স্ক্রিনে নেই। অসীমে। হাত চলছে না তাদের কারোরই। মইনুল আধশোয়া হয়ে মাঝারি আকারের কী এক বই পড়ছে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকায়, চশমা কপালে তুলে রাখায় নামটি স্পষ্ট ধরা যাচ্ছে না । পায়ের শব্দে তারা বুঝতে পেরেছে রেজা ফিরেছে।

মইনুল উঠে দাঁড়িয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে। তাদেরতো কিছু হয়নি, কিছু বলিওনি। তবু সবাই এরকম স্ট্যাচু অব লিবার্টি হয়ে গেল কেন বুঝেতে একটু সময় লাগছে। এ সময়ের মাঝেই মইনুল বইয়ের ভেতর থেকে একটি বিয়ের কার্ড বের করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুমের বাইরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকার, আকাশে চাঁদ-তারা কিছুই নেই। তবুও সে আকাশ দেখছে।

বিয়ের কার্ড আর হালখাতার কার্ডের পার্থক্য খুব বেশি চোখে পড়ার মতো না। দুটোর গায়েই ডাক-ঢোল, আল্পনা আঁকা থাকে। শুধু হালখাতার কার্ডের খামে বর কনের কার্টুন আঁকা থাকে না। আর পার্থক্য থাকে ভেতরের নিমন্ত্রণের কথায়। গায়ে প্রাপক বা প্রেরক কারো নাম লেখা নেই। উড়ো চিঠির খামের মতোই। খুলে দেখি কনের জায়গায় লেখা সানজিদা রহমান বিনতি, বরের জায়গায় লেখা ডা. ওয়াকিল আহমেদ। ডাকতে ডাকতে কখন যে বিনতির নাম বন্ধু মহলে বিনু হয়ে গেছে খেয়ালই নেই।

দিন তারিখ আর পড়া হয়নি। হাত ফসকে মেঝেতে পড়ে গেছে। সাথে নিয়ে পড়েছে সেই রোদচশমা যেটি বিনুকে বছর খানেক আগে দুপুর বেলার তপ্ত রোদে বই কিনতে এসে নীলক্ষেত থেকে কিনে দিয়েছিলাম। বিনু রোদে তাকাতেই পারছিলো না। কতই বা দাম? দেড়শ টাকা বা তারচে সামান্য বেশি!

মাকসুদ আর বিপুল দুজনের কেউ একজন আগের মতোই স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলছে গতকাল ক্যাম্পাসে বিনু এটি দিয়ে বলেছিলো আজ রাতের আগে যেন তোকে না দেই। চেনা কণ্ঠও মনে হয় অচেনা।

বিনুর কথাই সঠিক। টি এস সি থেকে পলাশী, পলাশী থেকে শাহবাগ রিকশায় চড়ে যখন ঘুরে বেড়াতাম তখন প্রায়ই বলতো- বাবা মায়ের কথার বাইরে গিয়ে কিছুই করতে পারবে না। সে পারেনি।”

************

সহজ সরল হাতে লেখা। মনে সাহিত্যের ঝড় না থাকলেও স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রেমের ব্যাকুলতা ছিলো বোঝা যায়। কিন্তু আর পড়া যাচ্ছে না লেখা।

‘-- এই যে মিস্টার ওয়াকিল আহমেদ, আজকাল দেখি সকালেও উদাসীন হয়ে যাও। আগে তো হতে শুধু রাতে। এই নাও তোমার চা’- এই বলে মাথা নিচু করে চায়ের কাপ রেখে কাঁধ বেয়ে সামনে গড়িয়ে পড়া হালকা ভেজা চুল এক ঘূর্ণনে পিঠে চালান করে রন্না ঘরের দিকে পা বাড়িয়ে দিলো বিনু।

কাগজের প্যাকেটটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখছি আর কোন লাইন পড়া যায় কিনা। না আর পড়া যাচ্ছে না। ডায়েরির দুটি পাতা জোড়া লাগানো। অনেক পুরনো হয়ে গেছে। গতকাল চেম্বার থেকে ফেরার পথে বিনু ফোন করেছিলো চিনি নিয়ে আসার জন্য। পান্থপথ সিগনালের কাছে এক দোকানের সামনে গাড়ি থামিয়ে চিনি দিতে বলে এক রোগীর কথা মনে ওঠায় মনে মনে হাসছি। হঠাৎ দোকানির হাতে কাগজের প্যাকেটটির দিকে চোখ পড়ায় চেয়ে নিলাম। ছোট ছোট অক্ষরে যথেষ্ট সুন্দর হাতের লেখা কাগজের গায়ে। বললাম- ‘আপনি আরেকটি প্যাকেট নিন, এটি আমায় দিয়ে দিন’।

দোকানি যতটুকু সম্ভব গাল প্রসারিত করে দাঁত দেখিয়ে হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটি দিয়ে বললেন- ‘আরেকটি দেবো স্যার?’

‘না আর লাগবে না। হাতের লিখাটা বাসায় গিয়ে প্র্যাক্টিস করতে হবে’। এই বলে ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিলাম। হাতের লিখা সুন্দর এমন মানুষদের রুচি ও পছন্দ অন্য আট দশ জনের থেকে একটু আলাদা। এ লেখকের পছন্দ যে ভাল ছিলো তার প্রমাণ এখন আমার ঘরেই আছে। একটু আগেই চা দিয়ে গেলো।

আজ দুজনেরই সপ্তাহিক ছুটির দিন। বিনু আজ পুরোদমে সাংসারিক বউ হয়ে যাবে। কাপড় চোপড় ধোয়ার জন্য আলাদা করে রাখছে সব। পকেটের কাগজপত্র সরিয়ে খাটের কোণায় রাখতে রাখতে বলল- ‘বাচ্চা ছেলেদের মতো রাস্তায় ছাইপাশ যা পাও তাই পকেটে ঢুকাও’- এই বলে বাঁ হাত দিয়ে কাগজের প্যাকেটটি বল বানিয়ে এদিকে ছুঁড়ে মারলো। যেন স্ট্যাম্পে বল ছুঁড়ছে কোনো প্রমীলা ক্রিকেটার।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:৫৩

সুমন কর বলেছেন: সাবলীল বর্ণনা। গল্প ভালো হয়েছে।

+।

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০

রৌদবালক মামুন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ :)

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৪৯

লিসানুল হাঁসান বলেছেন: ভালো লেগেছে

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ২:৩৪

রৌদবালক মামুন বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.