![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিতান্তই একজন সাধারন মানুষ। কোনোমতে খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। মোটামুটি টাইপের দু চার টি শিক্ষার সার্টিফিকেট ও আছে। নিজেকে শিক্ষিত ভেবে মাঝে মাঝে ভালই লাগে। আমি জন্মসূত্রে সংখ্যালঘু। তাই ছোটবেলা থেকেই পাড়ার বন্ধুবান্ধবদের সকৌতুক মন্তব্য শুনে শুনে বড় হয়ছি। উদাহরন স্বরুপ বলা যেতে পারে একটি কমন কবিতার (!!) কথা, “হিন্দু হিন্দু তুলসী পাতা, হিন্দুরা খায় কাউঠার (কচ্ছপ) মাথা”। যদিও আমার পরিবারের কোন সদস্যকে আমি কচ্ছপ খেতে দেখিনি। আরও কিছু বিশেষণের কথা বলা যেতে পারে, “আকাটা, মালাউন, বিধর্মী, ভারতের চামচা, ইত্যাদি।” সবাই মজা করে বলত, আমিও শুনতাম। শুধু আমিই নই, মোটামুটি সব সংখ্যালঘুই একই সমস্যা ফেস করত।
আবার বিভিন্ন পূজার সময় আমাকে দেখলেই পাড়ার ছেলেরা বলত “নমঃ নমঃ করতে যাবিনা?, হরি বোল, হরিবোল তোর, ...... এর মাথা গোল”। আবার কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে গরু খাওয়ানোর সে কি আপ্রান চেষ্টা!!! আরও ছোটবেলায় কারও বাসায় বেড়াতে গেলে কৌশলে কালেমা তাইয়েবা পরিয়ে হাসাহাসি করে বলা হতো, এইতো হিন্দুটা মুসলমান হয়ে গেছে। এবার মুসলমানি করাতে হবে। আমি ভীষণ লজ্জা পেতাম।
আমি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় একমাত্র হিন্দু ছিলাম। পরীক্ষার সময় আমাকে পোহাতে হতো অভাবনীয় যন্ত্রণা। কখনই ধর্ম পরীক্ষার প্রশ্ন সময় মত হাতে পেতাম না। এক-আধ ঘণ্টা দেরি হতই। প্রশ্ন আনতে দাড়িয়ে থাকতে হতো টিচারদের রুম এ। তাঁরা বিরক্ত হতেন। কারন পুরো স্কুলের সব সংখ্যালঘুদের প্রশ্নই হাতে লেখা হতো পরীক্ষার দিনে। প্রশ্ন লেখার সময় কিছু ঠাট্টা মস্করাও হতো। যেমন, “দেখেন আপা এইটা কি মানুষ না লেংটা পাগল (সম্ভবত বামা খ্যাপার ছবি দেখে)”। এমন অনেক বলা যায়। কষ্ট লাগত। মনে হতো কেন হিন্দু হয়ে জন্মেছি!!!
সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ যে আজ এই সব জঘন্যতার শিকার সরাসরি কাউকেই হতে হয়না। তবুও কিছু রেশ থেকেই যাবে। সময় লাগবে।
আমার এত প্যাঁচাল পাড়ার উদ্দেশ্য হল, কিছু বিষয় এর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আজকাল বাংলাদেশ এ আস্তিক নাস্তিক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। অনেক নামজাদা মানুষজন পক্ষে বিপক্ষে কথা বলছেন। কিন্তু কেউই আসল সমস্যাটার ধারের কাছেও যাচ্ছেনা। সেটা হল পারিবারিক সুশিক্ষা ও নীতিবোধ। আমার প্রশ্ন হল এই যে আমি (এবং অনেকেই)এত কথা, অপমান, হাসির খোরাক হয়ে বড় হলাম, এই জিনিসগুলো কি ধরমানুভুতিতে আঘাত নয়? কই আমি তো এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে কেউ আমার পাশে থাকেনি! কেন? এখন আমি যদি বিচার না পেয়ে কোন ধর্মকে, তার অনুশাসন কে গালি দেই, তবে আমাকে মেরে ফেলার লোকের অভাব হবেনা। আমি আজ ধর্মের (বেশিরভাগ) বেশ কিছু বিষয় ধরতে পেরেছি (মোটামুটি সব) জেগুলর সাথে আমার ভাবনার মিল নেই। যেগুলো সরাসরি বিভেদ তৈরি করে। তাই আমি ধর্মের প্রতি ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছি। কিন্তু আমি নিজের বুঝ নিজের কাছেই রাখতাম। হয়ত সারাজীবনই রাখতাম। যদিনা কিছু বিতর্ক না জন্মাত। আমি বিশ্বাস করিনা, কোন মুক্তমনা মানুষ ধর্মকে কতাক্ষ করতে পারে, যদিনা তাঁরা আক্রান্ত হন। আক্রান্ত মানে আমি বলতে চাইছি, তাদের মতামতের বিরুদ্ধে চরম আক্রোশ এবং যুক্তিহীন কথা বললে (কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত আক্রমন)।
আমার এক অতিপ্রিয় ছোটবেলার বান্ধবীও অভিজিৎ হত্যাকে পরোক্ষ ভাবে সাপোর্ট করেছে। যেনে কষ্ট পেয়েছিলাম, কারন আমি তাঁকে মুক্তমনাই জানতাম। তার অভিযোগ যে অভিজিৎ নবীজি কে অসম্মান করেছে। তাই এই মৃত্যু তার প্রাপ্যই ছিল। উদাহরন স্বরূপ আমাকে এই লিঙ্ক তা দিলো।
http://tazakhobor.org/bangla/exclusive/40201-2015-03-01-06-56?q=a5d5f36765a1c73dacee9a55f53fb76b142813123
অথচ সে নিজে কোনদিন মুক্ত-মনা ব্লগ পড়েনি।
আমাদের সন্তানেরা বড় হয় নিজেদের নির্দিষ্ট ধর্মের ছায়ায়। ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় এটাই শ্রেষ্ঠ। অন্যগুলো ফালতু এবং মিথ্যা। এতে করে কোমল হৃদয় এই বিশ্বাস টাকেই আঁকরে ধরে। কখনই তাদের প্রথমে মানবতা এবং নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়না। অনেকেই হয়ত বলবেন ধর্মের চেয়ে বড় নইতিক শিক্ষা কি হতে পারে! তাদের কথার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলি, যে জিনিস মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করতে পারে, সেটাকে মোটামুটি বুঝতে শেখার পরেই শেখানো উচিত। তাহলে হয়ত তাঁরা প্রথমে একজন পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠবে এবং সঠিক ভাবে ধর্ম পালন করতে পারবেন।
©somewhere in net ltd.