নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রায় বাবু

রায় বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আস্তিকতা আর নাস্তিকতা!!! আমার ভাবনা।

০৫ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৩

আজ আমি খুব ই খুশী। কারন আমার একটি লেখার কিছু অংশ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাঁর কাছের মানুষদের সাথে শেয়ার করেছেন। মনে হচ্ছে আমি কিছু বাস্তবতা তুলে ধরতে পারছি আমার লেখার মাধ্যমে।

আজ যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো, সেটি খুব ই স্পর্শকাতর (ভয় পাচ্ছি)। তারপরেও বোধয় দরকার আছে।
হুমায়ূন আজাদ স্যার, রাজীব হায়দার এবং সবশেষে অভিজিৎ রায়। এই তিনজনের মৃত্যুই প্রায় একই কারনে। কারণটা হোল ধর্মানুভুতি। এদের মধ্যে রাজীব এর বিষয় টা আমি আগেই মেনে নিলাম, যে তিনি তাঁর কিছু লেখায় সত্যিই আপত্তিকর বিষয় (যা যুক্তির বাইরে) বলেছিলেন এবং তা সত্যিই কোন ধার্মিকের পক্ষে সহ্য করা কঠিন। বাকি দুইজন কে আমি যার পর নাই শ্রদ্ধা করি। হুমায়ূন আযাদ তাঁর লেখায় সকল ধর্মের কিছু নিষ্ঠুর বাস্তবতা তুলে ধরেছিলেন। আর বিজ্ঞান মনস্ক অভিজিৎ ছেয়েছিলেন বিজ্ঞান এর মাধ্যমে ধর্মান্ধতা রুখতে। অবশ্য তিনি বিজ্ঞানের প্রশ্নে ধর্মের সাথে কোনোরূপ আপস করেননি। এর বাইরেও কিছু নাম বলা যায়, সুব্রত শুভ, আসিফ মহিউদ্দিন, অনন্ত জয় সহ আরও কিছু মানুষ। যারা নিজেদের মুক্তমনা দাবি করেন। তাদের লেখাও খুব বেশী ভালো লাগেনি। এদের সবার সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয় নাই। তবে অভিজিৎ রায় এবং হুমায়ূন স্যার এর কথা আলাদা। তাদের লেখা পরেই কেমন যেন ভাবতে শিখে গেলাম।

আমি বিজ্ঞান খুব বেশী বুঝিনা যদিও এইচ এস সি পর্যন্ত বিজ্ঞান পরেছি। আমার দৌড় H2O= 2H2 + O2, e=mc2 মুখস্ত পর্যন্ত (তাইলেই বোঝেন ঠ্যালা!!)। অভিজিৎ এর লেখা গুলো খুব ই বিজ্ঞান সম্মত এবং তাঁর যুক্তি প্রায় সময়েই অকাট্য। হুমায়ূন আযাদ যা লিখেছেন তা বিশ্বাস না করা বোকামি। কারন তিনি বাস্তবতার এমন চিত্র দেখিয়েছেন যার আসলে কোন বিকল্প নাই। যেহেতু আমি বিজ্ঞান কম বুঝি তাই হুমায়ূন স্যার ই আমার ভরসা।

বর্তমানে মানুষের মাঝে একটা কমন কথা প্রচলিত। সেটা হোল ধর্ম মেনে কি মুক্ত মনা হওয়া যায় কি না!! আমার উত্তর বা ভাবনা টা একটু পরে বলছি। আগে কিছু আলোচনা করে নিই। কিছু মানুষের কথা বলি, যারা সারাটা জীবন মানুষের উন্নতি এবং কল্যাণে নিজেদের জীবন ব্যয় করেছেন। যেমন ষ্টিফেন হকিং, অ্যারিস্টটল, কোপার্নিকাস, ইবনে সিনা, গ্যালিলিও, আর্কিমিডিস, সক্রেটিস, পিথাগোরাস আরও কত নাম!!! সমস্যা হোল ব্যক্তিগত জীবনে কেউ এঁরা ঈশ্বর এর অস্তিত্ব বিশ্বাস করতেন না। আর ধর্ম মানার তো প্রশ্নই ওঠেনা। তার মানে এই নয় যে তাঁরা ধর্মের অবমাননা করতেন। সেটা অটোম্যাটিক ভাবেই হয়ে যেতো। যার ফলে তাঁদের অনেককেই মরতে হয়েছে যুগে যুগে। তাই বলে কি তাঁদের উদঘাঁটিত সত্যি মিথ্যা হয়ে গেছে? আরও নাম বলা যায়, হালের মার্ক জুকারবারগ, ওয়ারেন বাফেত, বিল গেটস আরও অনেক। সালমান রুশদি, কালিদাশ, রাজা রামমোহন রায় এদের কথাও ফেলনা নয়। মানুষ কে উন্নত জীবন দিতে, আলোর পথ দেখাতে এঁদের অবদান কি ছেলেখেলা? চোখ বন্ধ করে বলা যায় এঁরা যদি ধার্মিক হতেন তাহলে তাঁদের অনন্য কীর্তি কখনই সৃষ্টি হতোনা।

আবার খাজা মইনুদ্দিন চিশতী, ইবনে সিরিন, ইবনে তফাইল, আব্দুস সালাম, গৌতম বুদ্ধ, বিবেকানন্দ, লোকনাথ আরও অনেক নাম। এঁরাও মানুষের মঙ্গলের জন্যই কাজ করে গেছেন। আমার জানা মতে এঁরা সকলেই ধার্মিক ছিলেন।

তাহলে দেখা যাচ্ছে আস্তিক নাস্তিক উভয়েরই পৃথিবী গঠনে অনেক অবদান রেখেছেন। তাহলে বলা যায় পৃথিবীতে আস্তিক এবং নাস্তিক উভয়েরই সমান অধিকার রয়েছে।

এবার আমার ভাবনায় আসি। ধর্ম এমন একটি শৃঙ্খল যার ভিত্তি হোল বিশ্বাস। যেটা দেহমন জুড়ে থাকে। যারা ধর্ম মানেন তাঁরা ধার্মিক। তাঁরা “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু” তে বিশ্বাসী। এবং তাঁরা এটা নিয়ে খুশী। যারা নাস্তিক তাঁরা “তর্কে মিলায় বস্তু” তে বিশ্বাসী। তাঁরা শৃঙ্খল মুক্ত এবং যৌক্তিক ভাবনায় নিমজ্জিত। মূলত নাস্তিকরাই মুক্তমনার চর্চা করেন (ধার্মিকেরা ব্যথিত হবেন না দয়া করে)। কারন তাঁরা যেকোনো শৃঙ্খল থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পেরেছেন।

মুক্ত মনা মানেই হোল নিজের বিবেক কে উন্মুক্ত করে প্রচলিত নিয়মের বাইরে চিন্তা করা। মুক্তমনা মানেই যে ধর্মের তুলোধোনা করা বা গালি দেওয়া, এটা নয়। হওয়া সম্ভব নয়। ওহ, আরও একটি বিষয় ধরমহিনতাও কিন্তু নাস্তিকতা নয়। কারন এমন অনেকেই আছেন যারা ধর্ম মানতে পারেন না। কিন্তু নিজের মত ঈশ্বর কে মনে ধারন করেন। ধর্ম ছাড়া যে ঈশ্বর কে বিশ্বাস করা যাবেনা, এ কথা আমি অন্তত মানিনা। আর ধর্ম কে গালি দিলেই যে মুক্তমনা হওয়া যায়, সেটাও হাস্যকর। মুক্তমনা কোন ফ্যাশন নয়, যে ঘোষণা দিলাম আর হয়ে গেলাম।

প্রায় সব ধর্মেই জ্ঞান কে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে সিমাবদ্ধ করা হয়েছে। যার ভেতর তৈরি হয় অনেক প্রশ্ন। সমসাময়িক সময়ের সাথে বিষয় গুলো ঠিকঠাক যায় কিনা সেটাও ভাবনার বিষয়। এই মুক্ত-মনা লোকজন এই চিন্তাগুলো করতে পারেন এবং যুক্তিযুক্ত ভাবে উপস্থাপন করেন। যা প্রায়ই ধর্মের সাথে সংঘর্ষ তৈরি করে। আমি ধর্ম ভালো বুঝিনা, আর যুক্তিও দিতে পারিনা। আমি শুধু বুঝি যারা ধার্মিকের বিশ্বাসে আঘাত (যুক্তিহীন ভাবে/ কটাক্ষ করে/ গালি দিয়ে) করেন, তাঁরা মুক্তমনা নন। হতে পারেন না। কারন মুক্তমনা লোক কখনই মানবিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেন না। যুক্তিকে যুক্তি দিয়েই মোকাবেলা করতে হয়। এটা আসলে সময়ের দাবি।

আবার ধর্ম মানুষ কে নানাবিধ শিক্ষা দেয়। আমি জানি যে সব ধর্মেই সহিষ্ণুতা নামক একটি শব্দ আছে। যারা সত্যিকার ধার্মিক, তাঁরা অবশ্যই সহিষ্ণু এবং জ্ঞানী। তাঁরা সঠিক ভাবে এইসব নাস্তিকদের তাঁদের কথা, ধর্মের কথা বোঝানোর চেষ্টা করেন। না মানলে তাঁকে তার পথে ছেড়ে দেন। সেটাই স্বাভাবিক। জোর করে কোন সিদ্ধান্ত কাউকেও চাপানো অন্যায় (আস্তিকতা এবং নাস্তিকতা)।

কালে কালে আস্তিকতা নাস্তিকতা দ্বন্দ্ব ছিল এবং থাকবেই। কিন্তু সহিংসতা ছিলোনা। এটা নতুন। আবার ধর্মকে গালি দেবার কালচারও ছিলোনা, এতাও নতুন।

এবার বলি, মুক্তমনা বা যুক্তি চিন্তার জন্য অবশ্যই আপনাকে ব্যতিক্রম হতে হবে কিন্তু উদ্ধত হওয়া চলবেনা। আক্রমণাত্মক হওয়া চলবেনা। ঠিক একই ভাবে ধার্মিক গনকেও বুঝতে হবে, যুক্তি আছে বলেই আজ আমরা এত উন্নত জীবন পেয়েছি এবং পাচ্ছি। যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে ঠেকাতে হবে, রক্ত দিয়ে নয়। আপনাকে জানুন, আপনার ধর্মকে জানুন বুঝুন। যুক্তি উদ্ধার করুন।

পরিশেষে বলব, ধর্ম মেনে সহিষ্ণু হওয়া যায়, মুক্তমনা হওয়া যায়না। মুক্তমনা হয়ে মানবিক হওয়া যায়, পশু নয়। সত্যি না যেনে জাহির করা মুক্ত মনের কাজ না। আর ধর্মকে না যেনে খুন করাও শোভা পায়না। এ পৃথিবী যেমন ধার্মিকের ঠিক তেমনি নাস্তিকেরও। কারও জীবন নেবার অধিকার কারও নেই। আর কারও বিশ্বাসে যুক্তিহীন ভাবে আঘাত করাই মুক্তমনা মানুষের কাজ না। তাঁরা পশু। ঠিক ধর্মের নামে খুনিরা পশুর চেয়েও খারাপ। তাঁরা আরও বেশী খারাপ যারা বলেন তাঁরা মুক্তমনা এবং সেই দোহাই দিয়ে অনৈতিক সব কাজ করেন।

আসুন আগে নিজের অবস্থান ঠিক করি। ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ধর্ম বা মুক্তচিন্তা কনতাই নয়। দুটোই মানব কল্যাণের জন্য। আপনাকেই ঠিক করতে হবে আপনি কার পথে যাবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.