![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
০৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। আমি বেশ খুশী যে বর্তমান বিশ্ব নারীদের কিছুটা হলেও সম্মান প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। সত্যিই এই বিষয়টি বাহবা পাবার যোগ্য। সারা দুনিয়াতে যেভাবে নারীদের ব্যবহার করা হয়েছে তা শুধু জঘন্যই নয়, ঘৃণারও বিষয়। আজ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আমার খুদ্র জ্ঞান দিয়ে একটু আলোচনা করতে চাই। কোন ভুল হলে আমাকে ক্ষমা করবেন এবং ভুল গুলো শুধরে দেবেন দয়া করে।
যদি বিজ্ঞান মোতাবেক চিন্তা করি তবে প্রায় আধুনিক মানুষ সৃষ্টি হওয়া শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ২০০,০০০ বছর পূর্বে বর্তমান আফ্রিকায়। বিভিন্ন ফসিল এর প্রমান বহন করে। প্রাচীন মানবেরা প্রথম প্রথম একাই বসবাস করত। জৈবিক চাহিদার কারনে স্ত্রী খুঁজে নিয়ে বংশগতি রক্ষা করত। মানুষ বিভিন্ন সংগ্রামের ভেতর দিয়ে দলগত ভাবে বসবাস করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে পারে এবং কিছু মানুষ মিলে ছোট ছোট যাযাবর দল তৈরি করে বসবাস শুরু করে। আমাদের আধুনিক সমাজের গোড়াপত্তন সেখান থেকেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে সেই সব দলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই নেতার আসনে থাকতো নারী। আমার মনে হয় নারীর গোছানো স্বভাব এবং সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতাই তৎকালীন পুরুষদের নারীর বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করেছিলো। এরপর চলে গেছে লাখো বছর। ক্রমেই তৈরি হোল বিভিন্ন সভ্যতা। যেমন মায়ান, গ্রিক, মিশরীয় প্রভৃতি। বিভিন্ন সভ্যতাতেও নারী নেতৃত্বের বিভিন্ন ইতিহাস আমরা জানি। কিন্তু হঠাৎ করেই খ্রিস্ট পূর্ব ৭০০ থেকে ৫০০ এর মধ্যে নারী নেতৃত্বের ইতিহাস আমূল বদলে গেলো। পুরুষ নারীদের দমানোর মন্ত্র শিখে গেলো। এবং নারী অধ্যায়ের মোটামুটি পরিসমাপ্ত ঘটলো। এর মধ্যে বিচ্ছিন্ন কিছু নারীর কথা শোনা যায়, যারা কিনা মহীয়সী। তবে মানব কল্যাণের বিষয় টি আজীবনই চাপা পরে গেলো। থাকলো শুধু সৌন্দর্য, কদর্য এর উদাহরন। তাও এই সমস্ত বিশেষণগুলো পুরুষেরাই যোগ করেছেন।
প্রশ্ন হোল, কি করে এই আমূল পরিবর্তন ঘটলো?
পুরুষেরা যখন আবিস্কার করলো যে নারী শারীরিক ভাবে তাঁদের চেয়ে দুর্বল, তখন তারা এই বিষয়টির সুযোগ নিয়ে নারীদের দমিয়ে দিলো। একটা সূক্ষ্ম ভয়ও ছিল, কারন পুরুষের চেয়ে নারীর যৌনাকাঙ্ক্ষা সর্বদাই বেশী। যার ফলে নারীরা বেশীরভাগ সময়েই ছিল বহুগামি এবং তাঁদের ক্ষমতার প্রভাবে পুরুষদের প্রতি কদর্য আচরণও করত। যার ফলে হয়তো পুরুষেরা শক্তি খাটিয়ে নারীদের দমানোর কার্যক্রম শুরু করে।
প্রাচীন জামানায় ধর্ম ছিলোনা। কিন্তু ধর্মের উৎপত্তির পর থেকে নারীরা আরও পদদলিত হতে শুরু করে। বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে নারীর অবস্থা বর্ণনা এমন ভাবে করা হয়েছে যেন তারা জন্মেছেই পুরুষদের সেবা করতে। তাদের মনোরঞ্জন করতে। নারীদের কে মানুষ ভাবাই যেন খারাপ। বিভিন্ন ধর্মে মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তাতে পুরুষ বরাবরই সুবিধা পেয়েছে। আর নারীদের যেতে হয়েছে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে। যা আমার বোধগম্য নয়। ধর্মীয় চরিত্র অ্যাডাম ইভ, মনু শতরূপা, আদম হাওয়া সবগুলোই কিন্তু পুরুষ নির্ভর। যেখানে নারীর অবদান উহ্য রয়েছে। ধর্মে প্রায় সবসময়েই মেয়েদের যৌন সিম্বল দেখানো হয়েছে। তাদের কোন কাজের স্বীকৃতির চেয়ে যৌন স্বীকৃতিই বেশী প্রকাশ পেয়েছে। আবার একজন নারী কে একাধিক স্বামী অধিকার দেওয়া হয়নি। যেখানে পুরুষেরা ইচ্ছানুযায়ী স্ত্রী পুষতে পারার লাইসেন্স পেয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো নারীদের চাষের খেত এর সাথেও তুলনা করা হয়েছে। যৌনতায় নারীর কোন ইচ্ছাকেই দাম দেওয়া হয়নি। নারী “না” করতে পারবেনা যদিনা সে অসুস্থ হয়। নারীরা ঘর ছেড়ে বেরুতে পারবেনা, অন্য পুরুষের সামনে যেতে পারবেনা ইত্যাদি তো আছেই। নারীদের অধিকারের বিষয় তো অবান্তর! হিন্দু শাস্ত্রে নারীর সম্পত্তির অধিকার নেই। পুত্র সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ হলে একাধিক বিবাহ তো রয়েছেই। খ্রিস্টান শাস্ত্রেও মোটামুটি নারিকে পুরুষের অধীন হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মে নারীর অবস্থান আবার রহস্যময়! ইসলামে তো একটি নারীর সাক্ষী বা পরামর্শ গ্রহণযোগ্যই নয়। এমন হাজারো বিধিনিষেধ। আশ্চর্য হোল এত কিছুর পরেও মেয়েরাই বেশী ধর্মভীরু হয়!!!! আবার আছে বাল্য বিবাহ। শুধু যে অভাব এর জন্য এই ঘটনা ঘটে, তা নয়। ধর্মও কিছু ক্ষেত্রে ভালো মাত্রায় দায়ী। যেমন ধরুন, শিবের সতী (বয়স নয়ের বেশী নয়), বুদ্ধের জশধা (কথিত আছে ষোল), হজরত মুহাম্মাদের আয়েশা (আট বছর) বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। আবার ধর্ষণ বলে কোন শব্দ কোন ধর্ম গ্রন্থেই নেই। নারীদের মতামত বলেও কিছু থাকতে পারে তাও অস্বীকার করা হয়েছে। যাই হোক আমি হয়তো বিতর্কের দিকে চলে যাচ্ছিলাম। তবে এই বিষয়গুলোকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
আসুন দেখি পশ্চিমা বিশ্বে নারীর কি অবস্থা। পশ্চিমে এখন আর কোন কাজকে লিঙ্গবৈষম্যের ভিত্তিতে দেখা হয় না। এই পরিবর্তন আসতে কয়েক দশক লেগেছে। মাত্র চল্লিশ বছরের মধ্যেই আমেরিকার কর্মশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ এক-তৃতীয়াংশ থেকে ২০১০ সালের হিসেব অনুযায়ী অর্ধেকেরও বেশি হয়ে গেছে। নারীরা এখন অর্ধেকের বেশি ব্যবস্থাপক এবং পেশাজীবি পদে কাজ করছেন। তবে উল্লেখ করার মতো সবচেয়ে দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে মহিলা মালিকানাধীন ব্যবসা-বাণিজ্য। আমেরিকায় এখন মহিলাদের তৈরি করা স্ব-কর্মসংস্থান শতকরা ৩৫ভাগ। বাইরের জগতে নারীর এই অংশগ্রহণ সনাতনী পারিবারিক প্রতিচ্ছবিকেও বদলে দিচ্ছে। টাইম ম্যাগাজিন এক সমীক্ষায় দেখিয়েছে ৩৩ লাখ বিবাহিত মহিলা এককভাবে পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব পালন করছে। ১৯৭০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৯ লাখ। একই পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে শতকরা ৪০ ভাগ মহিলা পরিবারের প্রধান অর্থোপার্জনকারী। শতকরা ৮০ ভাগ নারী এবং পুরুষ এই সংখ্যাকে খুব ভালোভাবে দেখছে। অর্থাৎ পুরুষেরা এখন আর সনাতনী ধারণার খোলসে বন্দী নেই। খেলাধূলা এবং মিডিয়াতেও নারীরা তাদের দক্ষতা এবং প্রতিভার বিকীরণ ছড়াচ্ছে। ২০০৯ সালে ম্যাডোনা এবং সান্ড্রা বুলক ছিল যথাক্রমে সবচেয়ে বেশি অর্থোপর্জনকারী সংগীতশিল্পী এবং অভিনয়শিল্পী। ২০১০ সালে ক্যাথেরিন বাইগলো পরিচালনায় প্রথম অস্কার পান। আর রাজনীতিতে সেক্রেটারী অব স্টেট হিলারী ক্লিনটন, আলাস্কার প্রাক্তন গভর্ণর সারাহ পলিন এবং হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পোলসি তো নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছেন। আরও বলা যায় এঞ্জেলা মারকেল, হিলারি ক্লিনটন, ক্রিস্টিনা ফারনান্দেয আরও অনেক নাম। বাংলাদেশে আমরা পাই ঠিক এর বিপরীত চিত্র। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশে এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন নারী কিন্তু সমাজে আসলে গুনগত কোন পরিবর্তন আসেনি। আজও মেয়েদের ধর্ষিত হতে হয় পথে ঘাটে। আছে ইভ টিজিং, সহিংসতা আরও কত কি!!! তাহলে আমরা নারীদের সম্মান দিচ্ছি, নাকি অপমান করছি। আজও বাংলাদেশে মেয়ে শিশুরা পরিবারে পায় অবহেলা।
আমরা পুরুষেরা জানি আমাদের সীমাবদ্ধতা কোথায়। আমরা তো ভাদ্র মাসের কুকুর নই!!! আবার অবুঝও নই। তবে নারীদের প্রাপ্য সম্মান, অবস্থান স্বীকার করতে অসুবিধা কোথায়। আমরা কি বুঝবনা যে পৃথিবীর সৃষ্টি থেকে নারীর অবদান পুরুষের চেয়ে অনেক অনেক বেশী। আমি বশ্যতার কথা বলছিনা, আমি বলছি আসুন কিছু সামাজিক ব্যধি নির্মূল করি। প্রতিবাদ করি ইভ টিজিং এর, শিশ্মদণ্ড ভেঙ্গে দিই কুকুরগুলোর যারা কিনা বাসে, রাস্তায়, বাসায় নারীদের যৌন হয়রানী করে। তাদের জ্ঞান, তাদের প্রজ্ঞা কে সম্মান করি। সর্বোপরি তাদের পথচলার সঙ্গি হই। প্রভু হবার চেষ্টা না করি। সত্যিকার পরিপূরক হয়ে উঠি। সেই সাথে আধুনিক ও স্বচ্ছল বাংলাদেশ গড়ি। আমাদের প্রয়োজন মানুষিকতার এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন। নারী কে দুর্বল/অমানুষ না ভেবে আসুন মানুষ ভাবতে শিখি।
©somewhere in net ltd.