নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রায় বাবু

রায় বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসুন মানুষ পরিচয় বাদ দিয়ে রোবট হয়ে যাই।

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৮

ঘটনাঃ ১।

১৯৯৯ সাল। জানুয়ারী মাসের ১৯ তারিখ। কথিত ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলায় মহান কবি শামশুর রাহমান এর বাসায় সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। রাতে তাঁর বাসায় ছাত্র পরিচয়ে ঢুকে এলোপাথাড়ি কুড়াল দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়। মরতে মরতে বেঁচে যান। এই হামলার দায় পরিস্কার ভাবে কেউ স্বীকার করেনি। সন্দেহ করা হয় হরকাতুল জেহাদ কে। তড়িঘড়ি করে একগাদা লোক গ্রেফতার হোল কিন্তু বিচারের নামে প্রহসন হোল। যা কিনা সুস্থ হয়ে শামশুর রাহমান পর্যন্ত বলেছেন।



ঘটনাঃ ২।

২০০৪ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি। হুমায়ূন আযাদের উপর হামলা। শুধু হামলা নয়, রক্তাত্ব হামলা। প্রায় মারাই গিয়েছিলেন। কপালগুনে সে যাত্রা বেঁচে যান এবং নিজের কাজ চালিয়ে নেবার ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য যে তিনি আধুনিক মুক্ত চিন্তার পথিকৃৎ ছিলেন। তাঁর উপর হামলার দায় স্বীকার করে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ। তাও প্রায় ৮-১০ বছর পরে!!!



ঘটনাঃ ৩।

বাংলাদেশের অনলাইন লেখালেখির পথিকৃৎ আসিফ মহিউদ্দিন সন্ত্রাসী হামলার স্বীকার হন উত্তরায়। দিনটি ছিল ১৩ই জানুয়ারি, ২০১৩। তাঁর উপরেও ইসলাম অবমাননার অভিযোগ! সে কি করেছিলো বা লিখেছিল অনেকেই জানে না। কিন্তু তাঁকে প্রায় মরতে হয়েছিলো। তাঁর উপর হামলার বিচার তো হয়ই নাই, বরঞ্চ ইসলামীদের চাপে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এখন দেশের অতিথি।



ঘটনাঃ ৪।

পেশায় প্রকৌশলী রাজীব হায়দার। বিজ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন ধর্মের সমালোচনা করে ব্লগ লিখতেন। অবশ্য তিনি কিছুটা আক্রমণাত্মক ছিলেন। এবং দৃষ্টিকটু ভাবেই লিখতেন। তাঁকে মেরে ফেলা হয় ১৫ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ তারিখে। কয়েকজন ধরা পরলেও, হেফাজতিদের নাটকীয় আন্দোলনের ধাক্কায় সে বিচার ধুয়ে যায়। বলে রাখা ভালো, রাজীব মারাত্মক ধরনের মেধাবী ছিলেন এবং দেশের জন্য অনেক অবদান রাখতে চেয়েছিলেন।



ঘটনাঃ ৫।

অভিজিৎ রায়। যাকে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নাই। বাবা মুক্তিযোদ্ধা। নিজে অসামান্য মেধাবী। আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম একটি নাম। তাঁর লেখায় যাবতীয় অসঙ্গতি উঠে আসতো অবলীলায়। সেই ব্যক্তি ইসলামীদের রোষানলে পরে নির্মম ভাবে প্রান হারালেন ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫। কথিত আন্সারুল্লাহ বাংলা টিম নাকি দায় স্বীকার করেছে। ফারাবি নামের একজন নাকি গ্রেফতারও হয়েছে। এফ বি আই এলো। তদন্ত চলছে। কিন্তু কোন অগ্রগতি নাই। ধরে নেওয়া যায়, এই হত্যার বিচারও হবেনা এই দেশে। লজ্জাজনক।



পুলিশ আইন মোতাবেক চলে। দেশের নীতিনির্ধারক গন সংবিধান মোতাবেক চলেন। দেশের মানুষ পেট বাঁচাতে চলেন। শুধু মেধাবীরা হারিয়ে যায়। আমাদের দেশ থেকে আজকাল ছেলে মেয়েরা মাইক্রোসফট গুগল এ কাজ করতে যায়। তারাই যদি দু একটা বেফাঁস মন্তব্য করেন বিজ্ঞান মোতাবেক, তারাও মরবে। চোখ বন্ধ করেই বলা যায়। ক্রমেই আমরাও বাংলাদেশী পরিচয় থেকে বাংলাস্তানি পরিচয়ের দিকেই বোধয় ছুটছি!



সম্প্রতি বাঁশের কেল্লার সম্পাদক কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি সামরিক বাহিনীকে উস্কানি দিয়েছেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিকৃত এবং ব্যঙ্গাত্মক চিত্র প্রকাশ করেছেন আরও নাকি অনেক কিছু।



এর আগে প্রধানমন্ত্রী কে নিয়ে কটূক্তি করায় একজন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। প্রত্যন্ত এলাকার কিছু লোক কেও বিভিন্ন সময়ে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবার তথাকথিত ইসলাম অবমাননার জন্য অনেক ব্লগার, কার্টুনিস্ট দের পত্রপাঠ আইনের আওতায় নেওয়া হয়ছে। এই সব অপরাধীদের ধরতে পুলিশের জুরি মেলা ভার!!! শুধু অভিজিৎ, হুমায়ূন আযাদ দের খুনিদের তারা খুঁজে পায়না। হায়রে দেশ। এত স্বপ্ন নিয়ে রাজাকারের বিচারের আশায় এই সরকারকে ভোট দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম মোটামুটি নিরাপদ জীবন জিবিকা পাবো। পাবো বাঁচার নুন্যতম মান। পেলাম কি! এখন তো বলতে ইচ্ছে হয় স্বার্থের কাছে আওমলীগ, বি এন পি সবই সমান। আমাদের শিক্ষা দিক্ষা, মেধা মনন সব জলাঞ্জলি দিয়ে চলুন রোবট হয়ে যাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.