![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘটনাঃ ১
রহিম সাহেবের দুই মেয়ে। মেয়েদের প্রতি তাঁর আদরের সীমা নাই। যা চায় তাই দেয় তাঁর সাধ্যের ভেতর থেকে। কোনদিন গায়ে হাত তোলেন নি। আশা ছিল মেয়েরা নিজের পায়ে দাঁড়াবে, ভালো মন্দ বুঝতে শিখবে। মা বাবার কষ্ট বুঝবে। অনেক কষ্ট করে তাই বড় মেয়েকে ডাক্তার বানালেন। নিজে সরকারী চাকুরে তারপরেও না খেয়ে দেয়ে বেসরকারি মেডিকেল থেকে ডাক্তার বানালেন। মেয়েরও মা বাবার প্রতি কৃতজ্ঞের শেষ নেই। সে খুবই মা বাবার প্রতি দায়িত্বশীল। বাবা মা চায়নি তাই কোনদিন রঙ্গিন স্বপ্ন দেখেনি। দিতে কষ্ট হবে ভেবে কোনদিন দামী জিনিস চায়নি বাবা মায়ের কাছে। বাবা মাও তাঁকে নিয়ে গর্ব করে। তাদের ছোট মেয়ে আবার একটু সৌখিন। মার্শাল আর্ট শিখেছে, আবার পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। সে স্বাধীনচেতা টাইপ মানুষ। পড়ালেখার ফাঁকে প্রেম করে বসলো। যা প্রকাশ পেল চাকুরী পাবার পর। বাবা মা খুবই হতাশ। তাঁরা অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে প্রেম করে বিয়ে করা ঠিক নয়। কিন্তু মেয়ে তো অবিচল। ছেলেটি পেশায় শিক্ষক, তাই আরও অপছন্দ। কয় টাকাই বা কামাই করবে!! ভবিষ্যৎ কি হবে ইত্যাদি চিন্তা!! শেষ মেশ না পেরে প্রেম মেনে নেওয়া হোল। কিন্তু সেটি নামে মাত্র। সিদ্ধান্ত হোল তাঁকে কোন অনুষ্ঠান করে বিয়ে দেওয়া হবেনা। কোন গয়না, শাড়ি দেওয়া হবেনা ইত্যাদি। মেয়ে তাতেই রাজি। বাবা মা মনে মনে ভাবলেন তাদের বড় মেয়েকে কোটিপতি ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে ছোট মেয়েকে বুঝিয়ে দেবেন যে বাবা মা ভালটাই দেন ছেলে মেয়েদের।
ঘটনাঃ ২
কামাল সাহেবের এক মেয়ে এবং এক ছেলে। মেয়ে বড়। মোটামুটি ভালো দেখতে। কিন্তু খুবই রক্ষণাত্মক পরিবার হবার কারনে কোন স্বাধীনতা পায়নি। ফলে লুকিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, এমনকি একাধিক প্রেমও করে ফেললো। যাকে সত্যিই ভালবাসল তাঁকে পরিবারের চাপে ধোঁকা দিতে বাধ্য হোল। ফলে মা বাবা বেজায় খুশী। দেদার বড়লোকের সাথে বিয়ে হোল। শুধু টাকা আর টাকা। ছেলের আবার একটু ওয়েস্টার্ন ধাঁচ! পার্টি, ডিযে, পান করার অভ্যাস। যা কোনোদিন মেয়েটি দেখেনি। মাঝে মাঝে যদি একান্ত সময় চায় তো টাকা দিয়ে একা একা যেতে বলে। কোন খবরই রাখেনা। না আছে দাম্পত্য, না আছে একটু আনন্দের উপলক্ষ। সবসময়েই সুখি থাকার অভিনয় করতে হয়। আর বিভিন্ন পার্টিতে গেলে তো কথাই নেই!! তাকে তো পারলে সবাই খুবলে খায়। আশ্চর্য হোল, তাতে তার স্বামীর কোনই বাধা থাকেনা। কিছু বললে বলে, এটাই আনন্দ এবং সে নিজেও অন্য মেয়ে নিয়ে লাফালাফি করে। এসব ঘটনা মা বাবা কে বললে তাঁরা বলেন মানিয়ে চলতে। দোষ নাকি মেয়েটারই, সে নাকি আগের প্রেমিক কে ভুলতে পারেনাই, তাই মিথ্যা কথা বলে। মেয়েটির দুঃখের সীমা থাকেনা।
ঘটনাঃ ৩
গ্রামের লোকেরা বলাবলি করে যে মেয়ে বড় হয়েছে। বিয়ে দাও। মেয়ের বয়স ১৫। এখনই তো সময়। মেয়েরে বেশী পড়ায় লাভ কি? সে তো স্বামীকেই দেবে। কুদ্দুস কিছুই ভেবে পায়না কি করবে। মেয়ে দুইবার বৃত্তি পেয়েছে। বিয়ে করতে রাজি না। এইবার এস এস সি দেবে। সে নাকি ডাক্তার হবে! স্কুল থেকে ফেরার পথে চেয়ারম্যান এর ছেলে প্রায়ই বিরক্ত করে। শেষে কোন উপায় না দেখে পাশের গ্রামের মনসুর এর সাথে জোর করে বিয়ে দিয়ে বাঁচে। ঘার থেকে বোঝা নামার আনন্দ হয়। মনসুর এইট পাশ। ব্যবসা করে। ব্যবসায় লস করে একবার এবং শ্বশুর বাড়িতে টাকার জন্য বলে। অন্যথায় তালাক। কুদ্দুসের আরও দুই ছেলে মেয়ে। সে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারন বিয়েতে নগদ ৫০০০০ টাকা দিয়েছিলো। শুরু হোল নির্যাতন। একপর্যায়ে মেয়ে বাপের বাড়ি চলে এলো থাকতে না পেরে। মাস খানেক পর বাপ ও আর রাখতে রাজি হলনা। আবারও স্বামীর বাড়ি পাঠাল এবং একই নির্যাতন চলতে থাকলো। শেষে একদিন সে আত্মহত্যা করলো। একটি অপার সম্ভবনার সফল পরিনতি ঘটলো!!
ঘটনাঃ ৪
শুভ ও রানীর পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। তাদের আগে কোন প্রেম ছিলোনা। না শুভর না রানীর। তাঁরা প্রথম এক দু মাস খুব সুখেই কাঁটালো। কিন্তু তার পর থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হোল। কারন শুভ ও তার পরিবার চায়না রানী চাকরি করুক। আবার শুভ এটাও পছন্দ করেনা যে রানী সারাদিন বাপের বাড়ি নিয়ে মেতে থাকুক। কারন সপ্তাহে দুইবার সে বাপের বাড়ি যায়। সারাদিন ই ভাইবোন আত্মীয় দের সাথে কথা বলে। শুভর তেমন কোন খেয়াল রাখেনা। শুভ কিছুই বলতনা। কিন্তু বছর খানেক পর পরিস্থিতি চরমে উঠলো। ঝগড়া মারামারি সবকিছু। আদরের মেয়ে হওয়ায় বাবা মেয়েকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন। মেয়ে জব নিলো। শুভর সাথে ডিভোর্স হোল। খুব খুশী সে। কিন্তু বছর যেতে না যেতেই বাবা মা আবার চাপ দিলেন বিয়ের জন্য। রাজি না হলে বাবার আত্মহত্যার হুমকি। আবার বিয়ে হোল। দুই বাচ্চার বাবার সাথে। বয়সের ব্যবধান প্রায় ৮ বছর। রানী কিছুতেই বাচ্চাদের মেনে নিতনা। জোর করে বাচ্চাদের হোস্টেল এ দিলো। তাদের বয়স ছিল ৪ ও ৬ বছর!! ফলাফল বাচ্চারা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করলো। স্বামীও তাই। জীবন হয়ে গেলো ছন্নছাড়া। রানীর মা বাবাও আর আগের মত কাছে ডাকেনা, কারন বাসায় এখন ছেলের বউ। সে একা একা কাঁদে, আর ভাবে শুভই ভালো ছিল!!!
ঘটনাঃ ৫
শিউলি আর আনন্দ। একসাথে পরত। শিউলি মুসলিম আর আনন্দ হিন্দু। তাদের খুব মিল। কথা বার্তা, চাল চলন, চিন্তা ভাবনা সবকিছুতেই চরম মিল। কি করে যেন ভালবেসে ফেললো। শুরু হোল যুদ্ধ!! বাসায় যেনে গেলো দুই বছরের মধ্যে। শিউলির বাবা বিশাল ক্ষমতাধর সরকারী আমলা। আনন্দকে মেরে ফেলা থেকে শুরু করে গুষ্টি ধরে ইন্ডিয়া পাঠানো পর্যন্ত সব হুমকিই দেওয়া হোল। আনন্দর পরিবারও বিভিন্ন ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করলো। না পেরে ছল চাতুরী, তাবিজ কবচ সবই করলো। কিছুতেই কিছু হলনা। শেষ মেশ বিয়ে করলো সামাজিক বিবাহ আইন মোতাবেক। ওহ শিউলির বাবার খুশির জন্য আনন্দ নামও বদলেছিল ইসলাম গ্রহনপূর্বক। কিন্তু মন থেকে নয়। সে তার আগের নামই ব্যবহার করে। এতে শিউলির বাবা আরও ক্ষেপে যায় এবং মানুষিক যন্ত্রণা দেওয়া শুরু করে। এক পর্যায়ে শিউলি চলে আসতে বাধ্য হয়। তাঁরা সংসার শুরু করে। তাঁরা ভালো আছে। যে সব বন্ধুরা বিরোধিতা করেছিলো, তারাও যোগাযোগ করে। তবে বেশিরভাগই করে গড়িবি অবস্থাকে ব্যঙ্গ করার জন্যে। ওরা কিছু মনে করেনা। কারন ওরা জানে উন্নতি ওদের হবেই। মা বাবা ভাই বোন সবাই ভুল বোঝে। আনন্দের পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে কারন আনন্দ কোন টাকা পয়সা দিতে পারেনা। আনন্দের কষ্ট হতো। কিন্তু এক সময় সয়ে গেলো। শিউলির মা বাবা যোগাযোগ করে। উপর উপর ভাব দেখায়। শিউলিও কষ্ট পায়। তারও সয়ে গেলো। এখন তাঁরা জিবন গোছাতে ব্যস্ত। সুখিও ভালই।
পরিশেষঃ
আসলে কোনটা ভালো, বিয়ে করার নিজের ইচ্ছেতে নাকি পরিবারের ইচ্ছেতে? আসলেই কি মানুষ ধর্মের চেয়ে গুরুত্বহীন? কই মা বাবা তো নিজেরা সন্তানের পাশে থাকেন না যখন তাদের খুব প্রয়োজন? কেন বিয়ের কোপে সম্ভাবনার মৃত্যু হয়? পরিবারের কথা মানার পরেও কেন সুখ আসেনা?
আমি জানি অনেকেই বলবেন বাবা মা সন্তানের ভালই চান। আমিও একবাক্যে মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমাকে বলবেন, মেয়ে যদি স্বামীর সাথে টিকতে না পেরে বাবার কাছে ফিরে আসে, তবে বাবা তাকে কতদিন টানবে? স্বামী মরলে পরিবার কতদিন ভরণপোষণ দেবে? সৎ উত্তর দিতে পারবেন? হ্যাঁ, আজকাল প্রেমের বিয়েও ভালনা। ছেলে মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করে জিবন নাকি বরবাদ করে। কথা সত্য। কিন্তু কারা করে দেখেন তো? অপ্রিয় হলেও সত্য যে প্রেমের বিয়ে ভাঙ্গার গুরু দায়িত্ব পরিবার ই নেয় ছলে বলে কৌশলে। সব ক্ষেত্রে হয়তো নয়, তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই। বলতে পারেন সন্তানেরা কোথায় যাবে? আজকাল ছেলেদের টাকা থাকাই বিয়ের পূর্বসর্ত। তারপরে অন্যকিছু। মানুষ হিসেবে ছেলে কেমন, কোন বাবা মাই দেখেন না। ছেলে হাজার ভালো, কিন্তু টাকা নেই, বুঝতে হবে সেই ছেলের প্রেমের হোক আর পারিবারিক, বিয়ের সম্ভবনা নীচের দিকে।
কিছু হলেই বাবা মা বলেন মানিয়ে নাও। প্রেমের বিয়ে হলে বলেন কোন দায়িত্ব নেবেন না। কোন উপহার তো দূর, ভালো করে কথাও বলবেন না। আরও বেশী কিছু হলে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। সংসার না করতে চাইলে বলেন, আমরা সংসার করলাম না! তোর এত কি সমস্যা? আবার প্রেম ভুলতে বলেন। বলেন যে প্রেম করলেই বিয়ে করতে হয়না। অথচ তারাই নীতি শিখান!!! কথা দিয়ে কথা রাখতে শেখান। সেই শিক্ষা কি শুধুই শিক্ষা? ধারন করলেই দোষ? আবার ভিন্ন জাতের ছেলে মেয়ে হলে তো কথাই নেই!!! কত অপমান, কত অত্যাচার যে করা হয় তার ঠিক নেই।
সমস্যা হোল সময়। আজ সময় বদলেছে। সবাই লেখাপড়া শিখেছে। ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছে। জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে শিখেছে। হাজার ভাবে যাচাই করতে শিখেছে। বাবা মা কি পারেননা সেই সিদ্ধান্তের মূল্য দিতে? অন্তত সঠিক ভাবে যাচাই করতে? নাকি জেদ করে মেনে নিয়ে নিজেদের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত করাটাই মুখ্য। তবে এত শিক্ষার কি প্রয়োজন ছিল? শিক্ষা মানুষ হতে শেখায়। আর মানুষ হলেই বিপদ! মা বাবা বিপক্ষ হয়ে যায়। মা বাবা চান শিক্ষিত রোবট হওয়াতে। কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়েরা আর তা হয়? হ্যাঁ অনেকেই হয়। নিজের ইচ্ছাকে হত্যা করে বাবা মা কে খুশী করে। কিন্তু জীবনভর যে কষ্টটা বুকে থাকে, তার খবর তাঁরা নেন না। কারন সেটা তাদের কাছে ফালতু মনে হয়।
যে কথা আর ঘটনা গুলো বললাম, সবই সত্য। একটি বাক্যও ভুল নয়।ভালো মন্দের বিচার আপনাদের কাছে। সবাই সুখী থাকুক, আমার চাওয়া এটুকুই।
২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১
অামি অামার কে বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ভাইয়া্। ধন্যবাদ
৩| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬
বিলোয় বলেছেন: তাইলে ডিসিশন কি দাঁড়াইল? প্রেম কি করব নাকি করব না?
৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮
রায় বাবু বলেছেন: ভাই, বাঁশ তো আপনার। যেভাবে খুশী নেন। ভাবার কি আছে? # বিলোয়
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:২৬
অামি অামার কে বলেছেন: চরম অপ্রিয় সত্য কথা