নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মশিউর রহমান রুবেল

উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএফডি)

মশিউর রহমান রুবেল গণমাধ্যমকর্মী, সদস্য সচিবসম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলনচেয়ারম্যানউন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযানগণমাধ্যমকর্মীসদস্য সচিবসম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন ও চেয়ারম্যান, উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান

উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান (সিএফডি) › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিবেশ বিপর্যয় রোধ বড় চ্যালেঞ্জ

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:৩৩

পরিবেশ বিপর্যয় রোধ বড় চ্যালেঞ্জ



পরিবেশ বলতে আমাদের চারপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে বোঝায়। পরিবেশ দুই প্রকার- প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানবসৃষ্ট পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে বোঝয় মাটি, পানি, গাছপালা, পশুপাখি, জীবজন্তু, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত প্রভৃতি, যা প্রকৃত অর্থেই প্রাকৃতিক অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দান। অন্যদিকে মানবসৃষ্ট পরিবেশ বলতে আমরা বুঝি মানুষের তৈরি ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, উন্নত ধরনের কলকারখানা, যানবাহন প্রভৃতি যা বিজ্ঞানের দান। নানা কারণে দিনের পর দিন ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে যেমন খরা, বন্যা, দাবানল, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরি, মহামারী প্রভৃতির চেয়ে তুলনামূলকভবে সামাজিক উপায়ে যেমন গাছপালা কেটে বহুতল বাড়ি নির্মাণ, উন্নতমানের যন্ত্রপাতি, কলকারখানা, বিজ্ঞানের প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতির মাধ্যমে খুব বেশি পরিমাণে এ পরিবেশটা দূষিত হচ্ছে।



সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের প্রয়োজনের চাহিদা মেটাতে দেশের ভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কলকারকানা, ইটভাটা ইত্যাদি। এ কলকারখানায় উৎপন্ন সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বায়ুতে থাকা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে অম্লবৃষ্টি সৃষ্টি হচ্ছে। এ অম্লবৃষ্টির প্রভাবে সৌন্দর্য স্মৃতি একদিকে যেমন তাজমহল, বিভিন্ন স্থাপন নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ভূপৃষ্ঠের পানির সঙ্গে মিশে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।



কলকারখানা ও যানবাহনের উৎপন্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন প্রভৃতি গ্যাস সূর্যের আলোক রশ্মি শোষণ করে বায়ুম-লের উষ্ণতা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি করছে, ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলভাগ বৃদ্ধি পেয়ে ভবিষ্যতে সমুদ্রের উপকূলভূমি প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। তাছাড়া অতিবেগুনি উড়োজাহাজগুলো বায়ুম-লে নাইট্রোজেন অক্সাইড উৎপন্ন করায় ওজোনস্তরের অবক্ষয় হচ্ছে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি জীবজগতে এসে পড়তে পারে। এ রশ্মি মানুষের দেহের ত্বকে ক্যান্সারসদৃশ রোগ ঘটাতে পারে।



কলকারখানায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ধাতব অ্যাসিড, লবণ ক্যাডমিয়াম, আসেনিক, সিসা ও পারদ প্রভৃতি মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে মাটির গুণাগুণ নষ্ট করছে এবং নদীনালার পানির সঙ্গে মিশে পানি দূষিত করছে। কম পরিমাণে কৃষিভূমিতে ধিক উৎপাদন লাভের আশায় আধুনিক কৃষিকার্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক সার, যেমন ইউরিয়া, সুপার ফসফেট, মিউরিয়েট অব পটাশ প্রভৃতি ব্যবহারের ফলে ভূমিগত পানি দূষিত হচ্ছে। এ পানি জীবজন্তু পান করায় বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে জীবের ব্যবহারের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। শস্য অনিষ্টকারী কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার জন্য কীটনাশক দ্রব্য যেমন-ডিডিটি, ফিনাইল প্রভৃতি এবং অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদের বৃদ্ধিকে বাধা দেয়ার জন্য অপতৃণনাশক ডাইক্লোরোফিয়াস্কিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড ব্যবহারে পানি ও বায়ু দূষিত হওয়ার ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় উন্নতমানের কৃষি সরঞ্জামের ব্যবহার পানিসিঞ্চন ব্যবস্থা এবং জুমচাষ পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে কৃষি উপযোগী উর্বর মাটি ক্ষয় হয়ে নালানদীতে পতিত হয়ে বন্যার পরিমাণও বর্তমানে বৃদ্ধি পাচ্ছে।



আজ আমাদের চারপাশে শব্দ আর শব্দ। যানবাহনে মোটর গাড়ির হর্ন, কলকারখানার অবিরাম আওয়াজ, হোটেল রেস্তোরাঁয় ও সিডি ক্যাসেটের দোকানে উচ্চস্বরে গান-বাজনা, মেলা বা হাটবাজারে ক্রেতাদের আকর্ষণে মাইকের আওয়াজ- এসব শব্দদূষণ গ্রামাঞ্চলে কিছুটা সহ্য হলেও শহরাঞ্চলের মানুষ কিন্তু অতিষ্ঠ। আমরা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনে বেশি কথা বলি। সময়ের মূল্য সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান কম থাকায় অনর্থক তর্ক জুড়ে দেই। এক মিনিটের কথা ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দশ মিনিটে বলে থাকি। অল্পেই উত্তেজিত হয়ে যাই, অযথা চিৎকার করি। অন্যের অসুবিধার কথা চিন্তা না করে অনেক মা-বাবা সন্ধ্যার লেখাপড়ার সময় উচ্চ শব্দে টিভি ছেড়ে বসে থাকেন। এতে ক্ষতি হয় নিজের সন্তানদের এবং পাশের বাড়ির সন্তানদেরও। শব্দদূষণ সম্পর্কে অনেকে অবগত না থাকায় প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ইত্যাদি স্থানে যেখানে জনসমাগম বেশি হয়, সেখানে শব্দদূষণ ঘটছে। মানব শরীরে শব্দের ধারণ ক্ষমতা মাত্র ৭০ ডেসিবল, তার চেয়ে বেশি হলে চিকিৎসকের মতে, হৃদরোগ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ। হর্নের শব্দ ধমনিকে সংকুচিত করে হৃৎপি-ের রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দেয়। মাথাধরা, বিরক্তি, মেজাজ নষ্ট, ঘুমের ব্যাঘাত, কানে কম শোনা ও মনোসংযোগের অভাব অতিমাত্রায় শব্দদূষণের ফলে হয়ে থাকে।



পৃথিবীতে যখন মানুষ প্রথম এসেছিল একটি নির্মল বিশুদ্ধ পরিবেসে বাস করেছিল, তারপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে যন্ত্র ও সভ্যতার দ্রুত উন্নতির ফলে পরিবেশ দূষণ একটি বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সৃষ্টিকর্তা একটি অম্লান সুন্দর পৃথিবীতেই আমাদের প্রেরণ করেছিলেন; কিন্তু আমরা অশেষ সুখের আশায় তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্য ধ্বংস করে চলেছি। আমরা যদি পরিবেশ দূষণের প্রতিকারে প্রয়াসী না হই, তবে আল্লাহর সৃষ্ট এ নিষ্কলঙ্ক পৃথিবীকে কলঙ্কিত করার দায়ভার আমাদের বহন করে যেতে হবে। আমরা যদি সকলেই পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হই তবে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ দূষণের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারি।



* পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার প্রথম পদক্ষেপ হলো গাছপালা অযথা কাটা বন্ধ করে বছরে প্রত্যেকের অন্তত একটি করে বৃক্ষ রোপণ আবশ্যিক হওয়া এখন দরকার। কারণ এতে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ ও শব্দদূষণের মাত্রা অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। * জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমিয়ে এটাকে স্থিতিশীল করে রাখতে হবে। *মানুষের চাহিদা মেটাতে যে বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠেছে তা কমিয়ে ক্ষুদ্রশিল্প বা কুটিরশিল্পের প্রতি জোর দিতে হবে। * কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীতে না ফেলে এর পুনর্ব্যবহার করা অতীব প্রয়োজনীয়। কলকারখানায় উৎপন্ন ধোঁয়া, ময়লা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব শিল্প আইন আছে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। * আধুনিক কৃষি ব্যবস্থায় ব্যবহৃত রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক, বননাশক প্রভৃতি ব্যবহারে পরিবর্তে জৈবিক সার ও ওষুধ ব্যবহার করা দরকার। * পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা আবশ্যক। * পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনবসতি তৈরি করা এবং গ্রাম ও বস্তি উন্নয়নের প্রতি প্রচেষ্টা চালানো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করতে হবে।



গৃহপরিবেশ, সৌন্দর্য, সুষমা আনন্দের বেশিরভাগ নারীর পর নির্ভরশীল। সামাজিক, সাংসারিক, প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় নারীরা সাধারণত পুরুষদের তুলনায় বেশি সময় ব্যস্ত থাকে। প্রাগৈতিহসিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত নারী পরিবেশের মধ্যমণি। কারণ তারা জন্মদাত্রী, তারা লালন-পালন করে, শিক্ষা দেয় ও বড় করে। এটা প্রকৃতির বিধান। এ বিধান ভঙ্গ করলে আমাদের অনেক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য ফিরে পেতে অনেক সময় লাগে। এটা একা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হলো- * জন্মের হর প্রচ- বৃদ্ধির ফলে ঘটছে জনবিস্ফোরণ। * উন্নত দেশের মূল্যবোধ অনুকরণ করে আমাদের পার্থিব ভোগবিলাসের চেষ্টা এবং তর ফলস্বরূপ দূরদৃষ্টিহীন শিল্পোদ্যোগ।



বর্তমান প্রজন্মে নারীরা তার বলিষ্ঠ মন, সুচিন্তিত মতামত এবং পুরনো ও নতুন ভাবধারা মিলিয়ে তার কার্যকরী প্রভাব ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিতে এখন সক্ষম। পুরনো দিনের সঙ্গে তুলনা করলে সামাজিক পরিকাঠামেয় আধুনিককালে গ্রামীণ নারীদের মধ্যে উৎসাহবোধ জাগিয়ে তোলা আরো বেশি প্রয়োজন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:১১

কবিেহপী বলেছেন: পরিবেশ সংক্রান্ত যেকোন সংবাদ, ফিচার, আর্টিকেল, ফটো, ভিডিও সহ তথ্য পেতে যুক্ত থাকুন

http://www.bdenvironment.com/ সাথে।

বিজ্ঞাপন করার জন্য মনে কিছু নিবেন। ইহা একটি অলাভজনক পোর্টাল। ধন্যবাদ।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.