![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানিক'দা আমাকে সাইকেলে চড়িয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়াতেন। সবুজ ধানক্ষেত থেকে বিকেল সূর্যের লালাভ আভা, নদীর তীর থেকে জলপাইতলার স্নিগ্ধ বাতাস; সব যায়গা চষে বেড়াতাম তার সাইকেলে পেছনে বসে। সাইকেল থামিয়ে এক চিলতে হাসি মুখে দাদা বলতেন 'কিরে বাবু? আইসক্রিম খাবি?' আমিও সায় দিয়ে রাজ্যের হাসি হাসতাম।
রঙের তুলিতে আঁকা শৈশবের সেই মানিক'দার আদর আজো অব্দি আমার বুকে বেহালা বাজায়।
যাই হোক, আজ ত্রিশ বছর পরে আবার আমার গ্রামে ফেরা। শহুরে হাওয়া লেগেছে গ্রামেও। লন্ঠনের আলোতে সন্ধ্যে মাতানো শৈশব আর নেই, এখন ঝলকানিতে সেজেছে সবই। নদীর তীর, সবুজ মাঠ সব থাকলেও এখন আর সেই মধুমাখা ছেলেবেলা নেই; নেই কোনো আদরের ঘ্রাণ।
পা চালিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলাম ব্রহ্মদৈত্যের শহর ছাপিয়ে শীতল করা গাঁয়ের বটগাছটির দিকে। তাকিয়ে আছে মাথা নীচু করে। যেন বলছে 'দূষিত এই পরিবেশে আত্মহনন করার ইচ্ছে জাগে প্রতিদিন। কোথায় গেলো সেই বোশেখ মাখানো স্নিগ্ধ দিনগুলি!'
ইশ্! আমাদের সেই ডানপিটে ডুবসাঁতারের দিনগুলিকে কিভাবে খুন করে এলাম, কিভাবে পা মাড়িয়ে ছুটে গেলাম প্রাইমারী ইশকুলের ছুটির ঘণ্টার আওয়াজটিকে, কোন আলোর নেশায় হারিয়ে ফেললাম সজীব হাসির মানিক'দা কে!
দুরন্ত শিশুদের দল খেলার উপকরণ বানিয়েছে এক জীর্ণ দেহের পাগলকে, ইট-পাথরের ঢিলের জবাব দেয়ার শক্তি অবশিষ্ট নেই তার। মলিন জুতো পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে রাস্তাধূলো মেখে, বিষাদের ছেঁড়া জামা পরনের চোখ দুটি'তে রাজ্যের ক্লান্তি। অদ্ভুদ অবয়বে জানান দিচ্ছে, এবার একটু ঘুমুতে দাও। অকস্মাৎ হলদে দাঁতের সেই চওড়া হাসিওয়ালা মানুষটা আমার সামনে এসে পরম মমতায় বললেন, 'কিরে বাবু? আইসক্রিম খাবি?'
©somewhere in net ltd.