নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ৭০০ বছর ক্রায়োজেনিক টিউবে থাকার পর অতীতে সময় পরিভ্রমণ করতে গিয়ে বিকল্প বাস্তবতায় চলে এসেছি। আমার ফেসবুকঃ https://www.facebook.com/rufiusmillennium

রুফিয়াস মিলেনিয়াম

আমি ভূত

রুফিয়াস মিলেনিয়াম › বিস্তারিত পোস্টঃ

শয়তানের হাসি - ১ : শিশু হত্যার একটি রোমহর্ষক কাহিনী

০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৪০



১৯৯৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের এক বিকেল বেলা। ইংল্যান্ডের লিভারপুলে এক ভদ্রমহিলা তার আড়াই বছর বয়সী বাচ্চা ছেলেটিকে নিয়ে শপিঙে বের হয়েছেন। শপিং মলের একটা মাংসের দোকানে গিয়ে ঢুকলেন এবং তিনি যখন মাংস কেনা নিয়ে ব্যস্ত তখন পিচ্চি ছেলেটা দোকানে এদিক ওদিক নিজের মনে ঘুরাঘুরি করছিল। কোণায় একটা সোডার ভেন্ডিং মেশিনের সামনে দাঁড়িয়ে সে তাকিয়ে দেখছিল।
তারপর, সে কি মনে করে দোকানের বাইরে চলে গেল।

ছেলেটার মার যখন খেয়াল হল ছেলে তার আশেপাশে নেই, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তিনি দোকানের বাইরে এসে এদিক ওদিক খুঁজলেন। কোথাও ছেলেকে দেখতে পেলেন না। কিছুক্ষণ পর দোকানের মহিলা বিক্রেতা দোকান রেখে বাচ্চাটাকে খুঁজতে যোগ দিলেন। সিকিউরিটি গার্ডদের জানালো হল। শপিং মলে ঘোষণা করা হল, ২ থেকে আড়াই বছর বয়সী একটা ছোট্ট ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার পরনে একটা জ্যাকেট...

সেদিন সেই ছেলেটাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।
পুলিশকে জানানোর পর সিসিটিভি ক্যামেরায় তোলা ছবি খুঁজে দেখা হল। সেখানে ঝাপসা ফুটেজে দেখা গেল জ্যাকেট গায়ে ২ বছর বয়সী জেমস বুলজার হেটে যাচ্ছে। কিন্ত সে একা না। তার সাথে দুইজন কিশোর। একজন তার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আর আরেকজন সামনে। কিশোর দুজনের বয়স ধরে নেয়া হল ১০ থেকে ১৪। এই বয়সী ছেলেদের পুলিশ খোঁজ করতে লাগলো। আর বুলজারের মা ও কিছুটা স্বস্তি পেলেন, ঐ ছেলে দুইটি হয়তো হারিয়ে যাওয়া বুলজারকে দেখে শুনে রাখছে।

দুই দিন পর। খুব ভোরে, শপিং মল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে এক রেললাইনের উপরে জেইমস বুলজারের দ্বিখণ্ডিত লাশ খুঁজে পায় পুলিশ।

ডিটেক্টিভ পুলিশদের মনে এরকম কিছু একটার আশংকা ছিল। রাস্তায় রাস্তায় জিজ্ঞেস করে জানা গিয়েছে দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা বেলায় অনেকেই নাকি রাস্তা দিয়ে দুটি ছেলেকে একটা পিচ্চি বাচ্চার সাথে হেঁটে যেতে দেখেছে। ছেলেটার মুখে নাকি অনেক মারের চিহ্ন ছিল আর সে জোরে জোরে কাঁদছিল। কেউ জিজ্ঞেস করলে কিশোরগুলির উত্তর ছিল, ও আমাদের ভাই। খেলতে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে। বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।

পিচ্চি বুলজারকে সেদিন বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়নি। তাকে কাঠের তক্তা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে কয়েকবার অজ্ঞান করা হয়েছিল। তার সারা শরীরে পেইন্টিং দিয়ে মারের চিহ্ন লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। তাকে উলঙ্গ করে গায়ে পাথর মারা হয়েছিল। চেহারার উপরে জুতা দিয়ে দাগ ফেলে দেয়া হয়েছিল। তার মলদ্বার দিয়ে অনেক কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিল। রেললাইনে নিয়ে গিয়ে তার শরীরের উপর কাঠের তক্তা দিয়ে আঘাত করতে করতে কেটে দুইভাগ করে ফেলেছিল। তারপর এমন ভাবে রেখে দেয়া হয়েছিল যেন মনে হয় সে ট্রেনে কাটা পড়েছে।
পুলিশ আরো বিশেষ কিছু বিবরণ পাবলিকের সামনে আনতে চায়নি।

ভেনাবলস আর থম্পসন নামের ১০ বছর বয়সী দুটি ছেলেকে চিহ্নিত করে পুলিশ। তাদের জুতার নিচের ছাপ, পেইন্ট ছিল পুলিশের মূল সূত্র।

ভেনাবলস আর থম্পসনের চেহারা, নাম, পুলিশের সাথে ইন্টারভিউ এগুলো সব এখন পাব্লিক ডোমেইন। ইন্টারনেটে একটু সার্চ দিলেই পেয়ে যাবেন, তাই সেগুলো নিয়ে আর কিছু বলতে যাচ্ছি না। কিন্তু এটুকু বলতেই হয়, তাদের নিষ্পাপপ্রায় চেহারা দেখে অবাক হতে হয়। তাদের অত্যাধুনিক সমাজে আপার মিডেল ক্লাস পরিবারের দিকে তাকিয়ে অবাক হতে হয়। আর অবাক হতে হয়, যখন কেন তারা এসব করেছে এই প্রশ্নের উত্তরে তাদের মুখ থেকে শোনা যায়, "শুধু তো ছেলেটাকে ধরেছি, মাকে তো ধরিনি।"

স্প্রিং এর হাফ টার্ম। এক সপ্তাহ ছুটি। স্কুল থেকে সেদিন বের হয়েই তারা ঠিক করে তারা একটা বাচ্চা ছেলেকে কিডন্যাপ করবে। তারপর তারা অপরিচিত সেই ছোট্ট বুলজারের ওপর ঠান্ডা মাথায় চালায় সেই পাশবিক বর্বরতা।

শুধু ইংল্যান্ডই না, সারা বিশ্বে এই খবরে হইচই পড়ে যায়। বুলজারের খুনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। দশ বছর বয়সী হয়েছে বলে কি তাদের বিচার হবে না?
প্রি-ইন্টারনেট যুগেও তখন এ নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। মানুষের মাঝে মতের বিবাদ এক সময় মারামারিতে পৌঁছায়। আদালতের সামনে মিছিল হয়। পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়।

শেষমেষ ছেলেদুটির বিচার ঘোষণা করা হল। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছেলে দুটি মায়াকান্না কাঁদে, কিন্তু একবারও তাদের কর্মের জন্য নয়, ছোট্ট সেই ছেলেটিকে মারার জন্য কোনোরকম দুঃখ প্রকাশ করে না।
তাদের শাস্তি ঘোষণা করা হয়। ১৫ বছরের কারাদন্ড। কিন্তু যেহেতু তারা প্রাপ্ত বয়স্ক নয়, তাই তাদেরকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত একটা সিক্রেট লোকেশনে স্পেশাল স্কুলে রাখা হবে। রিহ্যাব।



১৯৯৭ সালে যখন ভ্যানেবলস আর থম্পসন ১৬ বছরে পা দেয় তখন ইউরোপিয়ান ক্রিমিনাল জুরিসডিকশন ব্রিটেইনের সেই রায়ে হস্তক্ষেপ করে। ইউরোপিয়ান সেই জাজ বলে, তাদের উপর ন্যায়বিচার করা হয় নি। ঐ জাজের নতুন রায় মোতাবেক তারা ১৮ বছর বয়সেই রিহ্যাব থেকে মুক্তি পেয়ে যায়, তাদের প্রিজনে থাকতে হল না। তারা তাদের আইডেন্টিটি বদলে, কস্মেটিক সার্জারি করে চেহারা বদলে ইংল্যান্ডের কোনো এক যায়গায় সাধারণ মানুষের সাথে বসবাস শুরু করে।

২০০১ এবং ২০১০ সালে তাদেরকে পুলিশ দুইবার আটক করে তাদের কম্পিউটারে চাইল্ড অ্যাবিউজ ম্যাটারিয়েল রাখার দায়ে। প্রত্যেকবার তারা বের হয়ে আসে, আইডেন্টিটি কাউকে জানানো হয় না। তবে একজন আইন কর্মকর্তা ফাঁস করে দেন ভেনাবলস নামের ছেলেটির নতুন আইডেন্টিটি। কিন্তু ২০১৩ সালে সে আবার আইডেন্টিটি বদলে ফেলে। এই ফেব্রুয়ারিতে ভেনাবলসকে আবার আটক করা হয়েছে। তিন বছরের কারাদন্ড পেয়েছে চাইল্ড পর্নো রাখার দায়ে। তার নতুন চেহারা এবং নাম কোথাও প্রকাশিত হয় নি।

বলা হয়ে থাকে জেইমস বুলজার হত্যাকান্ডের পর থেকে মিডিয়াতে শিশু চরিত্রদেরকে আর আগের মত ইনোসেন্ট হিসেবে কম দেখা গেছে। মানুষের মনে গেঁথে গিয়েছিল খবরটা। মিলেনিয়ার শেষের দিকে সবাই হয়তো বুঝতে পেরেছিল শৈশব বিলীন হতে শুরু করেছে। ধাক্কা খেয়েছিল এই ভেবে, নিষ্পাপ চেহারার ওপাশেও থাকতে পারে শয়তানের হাসি।




(গত বছরের লেখা। শেষে জাস্ট অল্পেকটু আপডেট যোগ করেছি।
লেখাটা আরো অনেক বড় ছিল, কেটে কুটে ডাইজেস্টিবল করার চেষ্টা করেছি। হত্যার বিবরণ যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত আকারে লিখেছি।
সোর্সঃ বিবিসি, বেশ কয়েকটা ডকুমেন্টারি, আর রেকর্ডেড ইন্টারভিউ।)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:২৪

আবু তালেব শেখ বলেছেন: এরকম শয়তান আমাদের দেশে বিচরণ করছে বর্তমানে। তবে তারা পুর্ণ বয়স্ক

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: অবিশ্বাস্য নিষ্ঠুরতা। অথর্ব রাষ্ট্র আর বিচার ব্যবস্থা। তাদেরকে ক্ষেত্রে করে দিয়েছে নতুন অপরাধের। দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো আমি এগুলো নিয়ে এখন গুগলিং করবো, এবং আরো ট্রমাটাইজড হবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.