নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাজী নজরুল ইসলামঃ কিংবদন্তির নাম

২৫ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১

গৌরচন্দ্রিকা

বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল ধূমকেতুর মত আবির্ভূত হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম । তাঁর আবির্ভাব এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে । লেখার মাধ্যমে তিনি সামাজিক অবিচার ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন; মানবতার জয়গান গেয়েছেন । রবীন্দ্রবলয় হতে যে কজন সাহিত্যিক নিজেদের বের করে আনতে পেরেছিলেন, নিজেদের সাফল্যমণ্ডিত করতে পেরেছিলেন; কবি নজরুল তাঁদেরই একজন ।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে লেখনীর মাধ্যমে সকল অন্যায়-অবিচার, সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় উগ্রতা, গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তাঁর আগে কেউ এমন জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেননি । পরবর্তীতে সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর পথেই হেঁটেছেন । অনাচার, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়েছেন । জনপ্রিয়তার বিচারে শরৎচন্দ্র এবং নজরুল একই কাতারে ।

জন্ম-পরিচয় ও জীবন বাস্তবতা

তাঁর জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৫ মে (১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিম বঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে । তাঁর পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মাতার নাম জাহেদা খাতুন ।
মাত্র ৮ বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে চরম দারিদ্র্যের মুখোমুখি হন নজরুল । ১৩১৬ বঙ্গাব্দে গ্রাম্য মক্তবে পড়াশোনা শেষে এক বছর শিক্ষকতা করেন । একসময় রুটির দোকানে কাজ করেন । বারো বছর বয়সে লেটো দলে যোগ দেন এবং পালাগান রচনা করেন । মূলত তখন থেকেই তাঁর সাহিত্য জীবনের সূচনা ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪) শুরু হলে ১৯১৭ সালে ৪৯ নং বাঙালি পল্টনে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন এবং করাচিতে যান । যুদ্ধ শেষে বাঙালি পল্টন ভেঙে দেয়া হলে তিনি কলকাতায় চলে আসেন এবং সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন ।

নজরুলের সাহিত্যজীবন

সাপ্তাহিক ‘বিজলী’র সংখ্যায় “বিদ্রোহী” কবিতাটি প্রকাশিত হলে তাঁর কবি খ্যাতি বিস্তার লাভ করে । তিনি “বিদ্রোহী” কবি হয়ে ওঠেন ।
কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধসহ সাহিত্যের প্রায় সকল শাখায় তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন । আরবি-ফারসি শব্দের অপূর্ব ব্যবহার তাঁর কবিতাকে অনন্য মহিমা দান করেছে । তিনি অনেক ইসলামী সংগীত, শ্যামা সংগীত, গজল, খেয়াল ও রাগপ্রধান সংগীতও রচনা করেছেন । তাঁকে বাংলা গানের সম্রাট বলা হয় ।
উল্লেখ্য, লাঙল ও ধূমকেতু নামে দুটো পত্রিকাও সম্পাদনা করেন কবি নজরুল ইসলাম ।

নজরুল রচিত গ্রন্থসমূহঃ

কাব্যগ্রন্থঃ ২১টি । অগ্নিবীণা (১৯২২), দোলনচাঁপা (১৯২৩), বিষের বাঁশি (১৯২৪), ভাঙার গান (১৯৩৪), ছায়ানট (১৯২৫), পূবের হাওয়া (১৯২৫), সাম্যবাদী (১৯২৫) চিত্তনামা (১৯২৫), সর্বহারা (১৯২৬), ফণিমনসা (১৯২৭), সিন্ধু হিন্দোল (১৯২৭), জিঞ্জীর (১৯২৮), সঞ্চিতা (১৯২৮), চক্রবাক (১৯২৯), সন্ধ্যা (১৯২৯), প্রলয়শিখা (১৯৩০), নির্ঝর (১৯৩৮), নতুন চাঁদ (১৯৪৫), মরুভাস্কর (১৯৫৭), শেষ সওগাত (১৯৫৮), ঝড় (১৯৬০) ।

কাব্যানুবাদঃ ৩ টি । রুবাইয়াৎ ই ওমর খৈয়াম (১৯৬০), রুবাইয়াৎ ই হাফিজ (১৯৩৩), কাব্যে আমপারা (১৯৩৩) ।

ছোটদের কবিতাঃ ঝিঙেফুল, সঞ্চয়ন, পিলে পটকা, পুতুলের বিয়ে, ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি ।
উপন্যাসঃ ৩টি । বাঁধনহারা (১৯২৭), মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০), কুহেলিকা (১৯৩১)

গল্পগ্রন্থঃ ব্যথার দান ১৯২২ (এই গ্রন্থে ছয়টি গল্পঃ ব্যথার দান, হেনা, বাদল বরিষণে, ঘুমের ঘোরে, অতৃপ্ত কামনা, রাজবন্দীর চিঠি) ।

রিক্তের বেদন ১৯২৪ (এই গ্রন্থে গল্প সংখ্যা আটটিঃ রিক্তের বেদন, বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী, মেহের নেগার, সাঁঝের তারা, রাক্ষুসী, স্বামীহারা, সালেক, দুরন্ত পথিক) ।

শিউলিমালা ১৯৩১ (এই গ্রন্থে চারটি গল্প আছেঃ শিউলিমালা, পদ্মগোখরো, জিনের বাদশা, অগ্নিগিরি) ।

নাটকঃ ঝিলিমিলি (১৯৩০), আলেয়া (১৯৩১), মধুমালা (১৩৬৫), পুতুলের বিয়ে (১৯৩৩) ।

প্রবন্ধ গ্রন্থঃ যুগবাণী ১৯২২ (এই গ্রন্থে মোট ২১টি প্রবন্ধঃ নবযুগ, গেছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ, ডায়ারের স্মৃতিস্তম্ভ, কালা আদমিকে গুলি করা, মহাজিরিন হত্যার জন্য দায়ী কে?, লোকমন্য তিলকের মৃত্যুতে বেদনাতুর কোলকাতার দৃশ্য, শ্যাম রাখি না কুল রাখি, লাটপ্রেমিক আলী ইমাম, বাংলা সাহিত্যে মুসলমান, বাঙালীর ব্যবসাদারী , রোজ কেয়ামত বা প্রলয়দিন, আমাদের শক্তি স্থায়ী হয়না কেন?, ভাব ও কাজ, ছুৎমার্গ, উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন, সত্যশিক্ষা, জাতীয় শিক্ষা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাগরণী) ।
দুর্দিনের যাত্রী, রাজবন্দীর জবানবন্দী ।

শেষ দিনগুলো

কবি মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন । লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য । কিন্তু কোন সুফল পাওয়া যায়নি । চিরদিনের মত স্তব্ধ হয়ে যান জননন্দিত প্রেমের এই কবি । থেমে যায় তাঁর বাঁশরীর সুর । ১৯৬০ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ উপাধিতে ভূষিত করে । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জগত্তারিণী পদক প্রদান করে ।
১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে বঙ্গবন্ধু সরকার তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসে এবং ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে । তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি ঘোষণা করা হয় । সাহিত্যে অবদান রাখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট ডিগ্রি প্রদান করে । ১৯৭৬ সালে কবিকে একুশে পদকও দেয়া হয় । দীর্ঘদিন রোগ ভোগের পর ২৯ আগস্ট ১৯৭৬ (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) সালে ৭৭ বছর বয়সে চিরযৌবনের কবি নজরুল ইহলোক ত্যাগ করেন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদসংলগ্ন প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয় ।


সাম্যবাদী
কাজী নজরুল ইসলাম

গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বোদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান ।
গাহি সাম্যের গান!
কে তুমি?-পার্সী? জৈন? ইহুদী? সাঁওতাল, ভীল, গারো?
কনফুসিয়াস? চার্বআখ চেলা? ব’লে যাও, বলো আরো!
বন্ধু, যা-খুশি হও,
পেটে পিঠে কাঁধে মগজে যা-খুশি পুঁথি ও কেতাব বও ।
কোরান-পুরাণ-বেদ-বেদান্ত-বাইবেল-ত্রিপিটক
জেন্দাবেস্তা-গ্রন্থসাহেব প’ড়ে যাও, যত সখ-
কিন্তু, কেন এ পণ্ডশ্রম, মগজে হানিছ শূল?
দোকানে কেন এ দর কষাকষি?-পথে ফুটে তাজা ফুল!
তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ!
তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার,
তোমার হৃদয় বিশ্ব-দেউল সকল দেবতার ।
কেন খুঁজে ফের দেবতা ঠাকুর মৃত পুঁথি-কঙ্কালে?
হাসিছেন তিনি অমৃত-হিয়ার নিভৃত অন্তরালে!
বন্ধু, বলিনি ঝুট,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট ।
এই হৃদ্যই সে নীলাচল, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন,
বুদ্ধ-গয়া এ, জেরুজালেম এ, মদিনা, কাবা-ভবন,
মসজিদ এই, মন্দির এই, গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে ব’সে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয় ।
এই রণ-ভূমে বাঁশীর কিশোর গাহিলেন মহা-গীতা,
এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবীরা খোদার মিতা ।
এই হৃদয়ের ধ্যান-গুহা-মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি,
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা-বেদনার ডাক শুনি ।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিতেন আহবান,
এইখানে বসি গাহিলেন তিনি কোরানের সাম-গান ।
মিথ্যা শুনিনি ভাই,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

ভালো

২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:৪২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:

কবির জীবনের মহা ভুল ছিল নার্গিসকে বিয়ে করে ফেলে চলে যাওয়া।

২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:৪১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বেচারিকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখার কোন মানে ছিলোনা! আমি মনে করি নজরুল নার্গিসের প্রতি অবিচার করেছিলেন!বেচারিকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখার কোন মানে ছিলোনা! আমি মনে করি নজরুল নার্গিসের প্রতি অবিচার করেছিলেন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.