নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৩ জুন ১৭৫৭, নবাব সিরাজের পতন ও বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত হওয়া

২৩ শে জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৭

১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সেনাপতি মানসিংহ বাংলার কররানী বংশের সর্বশেষ সুলতান দাউদ খান কররানীকে পরাজিত করে বাংলাকে মুঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন । তখন থেকে ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা মুঘল সুবাদার কর্তৃক শাসিত হতে থাকে । মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় মুর্শিদকুলী খাঁ বাংলার সুবাদার নিযুক্ত হন । তিনি শাসনকার্যের সুবিধার জন্য ঢাকা থেকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত করেন । ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুর্শিদকুলী খাঁ কার্যত স্বাধীন হয়ে যান এবং বাংলায় একটি নতুন নবাব বংশ প্রতিষ্ঠা করেন ।
অপুত্রক মুর্শিদকুলী খাঁর সাথে জামাতা সুজাউদ্দিনের সুসম্পর্ক না থাকায় তিনি তাঁর দৌহিত্র সরফরাজ খাঁকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান । ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদকুলী খাঁর মৃত্যুর পর সুজাউদ্দিন হাজী আহাম্মদ ও আলীবর্দী খাঁ নামক দুই ভ্রাতার পরামর্শে সসৈন্যে মুর্শিদাবাদ গমন করেন । পিতার আকস্মিক আগমনে সরফরাজ খাঁ হতভম্ব হয়ে তার অনুকূলে সিংহাসন ছেড়ে দেন । তার সময়ে বিহার প্রদেশ বাংলার অন্তর্ভুক্ত হয় ।
সম্রাট মুহাম্মদ শাহ সুজাউদ্দিনের ওপর বিহারের শাসন ভার অর্পণ করলে তিনি আলীবর্দীকে বিহারের সুবাদার নিযুক্ত করেন । ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুজাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র সরফরাজ খাঁ বাংলা, বিহার এবং উড়িষ্যার নবাবী লাভ করেন । কিন্তু সরফরাজ খাঁর দুর্বল শাসনামলে দেশে অশান্তি ও অরাজকতা দেখা দিলে বিহারের শাসনকর্তা আলীবর্দী খাঁ ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে ঘিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজ খাঁকে পরাজিত এবং নিহত করে মুর্শিদাবাদের সিংহাসন লাভ করেন ।
আলীবর্দী খাঁ একজন তুর্কি ভাগ্যাসন্ধানী ছিলেন । তিনি ১৭২৬ খ্রিস্টাব্দে নবাব সুজাউদ্দিনের শাসনামলে বিহারের নায়েব নিযুক্ত হয়ে স্বীয় যোগ্যতা ও ভাগ্যবলে মুর্শিদাবাদের সিংহাসন অধিকার করেন । তাঁর রাজত্বকালে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, তিনি মারাঠা আক্রমণ ও বর্গী হাঙ্গামা প্রতিহত করেছিলেন । তিনি উড়িষ্যার একাংশের রাজস্ব ও বার্ষিক বারো হাজার টাকা চৌথ হিসেবে প্রদান করে মারাঠাদের সাথে স্থায়ী চুক্তি সাক্ষরিত করেন । তিনি বঙ্গদেশে ইংরেজদের বাণিজ্যিক অধিকার দান করলেও দুর্গ নির্মাণের অনুমতি দেননি । তবে মারাঠাদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ইংরেজদের প্রাচীর নির্মাণের অনুমতি দিয়েছিলেন ।
আলীবর্দী খাঁর তিন কন্যা ভিন্ন কোন পুত্র সন্তান ছিল না । তিনি স্বীয় ভ্রাতা হাজী আহম্মদের তিন পুত্রের সাথে তাদের বিয়ে দেন । প্রথম কন্যা ঘসেটি বেগমের সাথে মুহম্মদ খান শালামত, দ্বিতীয় কন্যা ময়মুনার সাথে সাইদ আহম্মদ খান এবং তৃতীয় কন্যা আমেনা বেগমের সাথে জয়নুদ্দিনের বিয়ে দেন ।
আমেনা বেগমের গর্ভে একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিলে আলীবর্দী খাঁ স্নেহবশত নিজের নামে তার নাম রাখেন মীর্জা মুহম্মদ আলী । পরবর্তীতে এ মীর্জা মুহম্মদ আলী নবাব সিরাজ নামে পরিচিতি লাভ করেন । জীবিতকালে আলীবর্দী খাঁ সিরাজকে বাংলার সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান । ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে বৃদ্ধ নবাবের মৃত্যু হলে সিরাজ সিংহাসনে বসেন ।
তেইশ বছর বয়সী তরুণ সিরাজ সিংহাসনে বসেই চারিদেকে শত্রু দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েন । মাতামহের অত্যাদিক আদরে লালিত-পালিত হওয়ায় সিরাজের রাজনৈতিক জ্ঞান কিংবা কূটনৈতিক প্রজ্ঞা কোনোটিই ছিলনা । তবু দুঃসাহসে ভর করে সব চক্রান্ত নস্যাৎ করতে পেরেছিলেন তিনি ।
আলীবর্দি খাঁর দুই কন্যা সিংহাসনের দাবিদার ছিলেন । পিতার মৃত্যুর পর সিরাজের সিংহাসনারোহণকে কেন্দ্র করে ঢাকার নবাবের স্ত্রী ঘসেটি বেগম (সিরাজের খালা) এবং পূর্ণিয়ার শাসনকর্তা শওকত জঙ্গ সিংহাসন লাভের জন্য সিরাজের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন । এতে ইন্ধন জোগান ঘসেটি বেগমের দেওয়ান রাজা রাজবল্লভ । সিরাজ কৌশলে ঘসেটি বেগমের ধন-সম্পত্তি বলপূর্বক বাজেয়াপ্ত করে তাকে প্রাসাদে নজরবন্দী করেন । অতঃপর পূর্ণিয়ার শওকত জঙ্গের বিদ্রোহ দমনের পূর্বেই তিনি ইংরেজদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ।
নানা কারণেই ইংরেজদের সাথে সিরাজের বিরোধ তৈরি হয় । প্রথমত, নতুন নবাবের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে কোন প্রকার উপঢৌকন প্রেরণ না করায় ইংরেজরা প্রচলিত রীতিনীতি লঙ্ঘন করে । এ ছাড়া ইংরেজদের উদ্ধত ব্যবহারে নবাব অপমান বোধ করেন । দ্বিতীয়ত, আলিবর্দী খাঁর শাসনামলে বিদেশীদের নতুন দুর্গ স্থাপন করতে নিষেধ করেছিলেন । কিন্তু সিরাজের রাজত্বকালে দাক্ষিণাত্যে যুদ্ধের অজুহাতে ইংরেজ এবং ফরাসিরা নবাবের বিনা অনুমতিতে দুর্গ নির্মাণ শুরু করলে সিরাজ তাদের নিষেধ করেন । ফরাসিরা নির্দেশ মান্য করলেও ইংরেজরা মানেনি । ফলে নবাব উত্তেজিত হয়ে পড়েন । তৃতীয়ত, ঘসেটি বেগম এবং শওকত জঙ্গকে ইংরেজগণ তাঁর বিরুদ্ধে সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দিলে তিনি সঙ্গত কারণেই বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন । চতুর্থত, ইংরেজরা বাণিজ্য শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত বাণিজ্যে অবাধে ‘দস্তক’ ব্যবহার করলে দেশীয় বণিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হন । নবাব ‘দস্তক’ এর অপব্যবহার না করতে এবং মুর্শিদকুলী খাঁর সময়ের বাণিজ্য শর্ত মেনে চলার নির্দেশ করলেও ইংরেজরা অমান্য করে । পঞ্চমত, নবাব কাশিম বাজারের কুঠি পরিদর্শন করতে দূত প্রেরণ করলে ইংরেজরা নবাবের দূতকে অপমান করে । নবাব বিক্ষুব্ধ হন । ষষ্ঠত, সিরাজের বিরুদ্ধে কতিপয় উচ্চ-পদস্থ কর্মচারী ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হলে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যায় । দেওয়ান রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণদাস ঢাকার রাজকোষের প্রচুর ধনসম্পদ নিয়ে কলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয় নেয় । নবাব কৃষ্ণদাসকে ফেরত চাইলে ইংরেজরা প্রত্যাখ্যান করে । এরূপ অশোভন ও বৈরি মনোভাবে নবাবের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে ।
নবাব ইংরেজদের ধৃষ্টতায় অতিষ্ঠ হয়ে পূর্ণিয়ার শওকত জঙ্গের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা স্থগিত করে ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে কলকাতা যাত্রা করেন । পথিমধ্যে কাশিমবাজার কুঠি লুণ্ঠন করে কলিকাতা অবরোধ করেন । ইংরেজ গভর্নর নবাবের আক্রমণে ভীত হয়ে FORT WILLIAM ত্যাগ করে কলিকাতার দক্ষিণে ফলতায় আশ্রয় নেন । ১৭৫৭ সালের ২০ জুন FORT WILLIAM নবাবের হস্তগত হয় । কলিকাতা দখল করে নিজের মাতামহের নামানুসারে এর নাম রাখেন “আলিনগর” ।
কলিকাতা অভিযানের প্রাক্কালে হলওয়েলসহ কতিপয় ইংরেজ বন্দি হয়েছিলেন । হলওয়ের বর্ণনা মতে, নবাব ১৪৬ জন ইংরেজকে এক ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ করে রাখেন । জুনের প্রচণ্ড গরমে ১২৩ জন শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান । এই কাহিনী “অন্ধকূপ হত্যা” নামে পরিচিত । এই কাহিনিীর পশ্চাতে কোন সত্যতা পাওয়া যায়না ।
অন্ধকূপ হত্যা ও সিরাজের কলিকাতা দখলের খবর মাদ্রাজে পৌঁছলে ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসন এবং ক্লাইভ কলিকাতা পুনরুদ্ধারে অগ্রসর হন এবং কলিকাতা পুনরুদ্ধার করেন । নবাব তখন চারিদিকে ষড়যন্ত্র লক্ষ্য করে ইংরেজদের সাথে সন্ধি করেন । এটাই “আলীনগরের সন্ধি” নামে খ্যাত । শর্তমতে নবাব ইংরেজদেরকে বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা, যুদ্ধের ক্ষয়-ক্ষতি এবং দুর্গ নির্মাণের অনুমতি দেন । এতেও ক্লাইভ সন্তুষ্ট হলেন না । গোপনে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে লাগলেন ।
ইউরোপে সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধের সূত্র ধরে বাংলাতেও ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে ক্লাইভ ফরাসিদের চন্দননগর দখল করে নেন । ফরাসিগণ মুর্শিদাবাদে আশ্রয় নেন । সিরাজ শঙ্কিত হয়ে ইংরেজদের সমুচিত শাস্তি দিতে ফরাসি সেনাপতি বুসির সাথে পত্রালাপ করেন ।

নবাব কর্তৃক ফরাসিদের আশ্রয় প্রদান ও বুসির সাথে পত্রালাপের গুরুত্ব অনুধাবন করে ক্লাইভ সিরাজকে সরাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন । তার সহযোগী হন বিশ্বাসঘাতক এ দেশীয় কতিপয় ব্যক্তি । এরা আলীবর্দী খাঁর ভগ্নীপতি মীরজাফরকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিলেন ।
ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে ছিলেন জগৎশেঠ, মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, এবং উমিচাঁদ । ক্লাইভ সন্ধি ভঙ্গ করেন এবং নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন । নবাবীর বিনিময়ে মীরজাফর পৌণে দুই কোটি টাকা দেওয়ার গোপন চুক্তি করেন ইংরেজদের সাথে । উমিচাঁদ চুক্তি প্রকাশের হুমকি দিলে তাকে প্রচুর অর্থ দিয়ে জাল চুক্তিপত্র তৈরি করেন ক্লাইভ । ওয়াটসন সাক্ষর করতে না চাইলে ক্লাইভ নিজেই সাক্ষর করেন ।
ক্লাইভ ষড়যন্ত্র করে নবাবের বিরুদ্ধে সন্ধিভঙ্গের অভিযোগ এনে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । সিরাজ আগেই সচেতন ছিলেন । তিনি ৫০ হাজার পদাতিক এবং ২৮ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের বিশাল বাহিনী মুর্শিদাবাদের ২৩ মাইল দক্ষিণে ভাগীরথী নদীর তীরে মোতায়েন করেন । ধুরন্ধর ক্লাইভ ৩ হাজার ইংরেজ ও দেশীয় সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে পলাশীর আম্রকাননে অবস্থান নেন । ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন এখানে এক খণ্ডযুদ্ধ সংগঠিত হয় । মীরজাফর চুক্তিমত বিশাল বাহিনী নিয়ে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেন । অন্যদিকে নবাবের একনিষ্ঠ ভক্ত ও দেশপ্রেমিক মোহনলাল, মীরমদন প্রাণপণ যুদ্ধ করে ইংরেজদের বিপর্যস্ত করে তোলেন । হঠাৎ মীরমদন গোলার আঘাতে নিহত হন । মোহনলাল ও ফরাসি বীর সিনফ্রে প্রাণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যান । মীরমদনের মৃত্যুতে নবাব বিচলিত হয়ে পড়েন । তৎক্ষণাৎ মীরজাফরকে ডেকে অনুনয়-বিনয় এমনকি পবিত্র কোরআন শপথের মধ্য দিয়ে মুকুট তথা স্বাধীনতা রক্ষার অনুরোধ জানান । মৌখিক আনুগত্য প্রকাশ করলেও মীরজাফর ক্ষতি করতে থাকে । মোহনলাল ও সিনফ্রে প্রাণপণ যুদ্ধ করে যখন নবাবের বিজয়কে সুনিশ্চিত করেন, ঠিক এমনি মুহূর্তে মীরজাফরের পরামর্শে নবাবের যুদ্ধ বিরতির ঘোষণা তাঁদের মর্মাহত করে ।
মীরজাফরের পরামর্শে যুদ্ধবিরতি করে নবাব অজান্তেই নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন । নবাবের সৈন্যগণ যখন রণে ভঙ্গ দিয়ে বিশ্রামে রত ঠিক তখনই ক্লাইভ পাল্টা আক্রমণ করে নবাবের সৈন্যদের ছত্রভঙ্গ করে দেন । পরাজিত হয়ে নবাব মুর্শিদাবাদ ফিরে গিয়ে সৈন্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন । সৈন্য সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে তিনি স্ত্রী লুৎফুননেছা ও কন্যার হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন । পরিশেষে নবাব রাজমহল প্রত্যাবর্তনের পথে ভগবান গোলার ঘাটে ধৃত হন । মীরজাফরের পুত্র মীরনের নির্দেশে মোহাম্মদী বেগের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব । পলাশীর প্রান্তরে অবশেষে বিশ্বাসঘাতকদেরই জয় হয় ।
নবাবের মৃত্যুর পর মীরন তার প্রিয় হাতি দিয়ে সিরাজের লাশ সমগ্র মুর্শিদাবাদ টেনে হিঁচড়ে প্রদক্ষিণ করায় । নবাবের মা আমেনা কান্নারত অবস্থায় উপস্থিত হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লে হাতিটি তৎক্ষণাৎ লাশ পিঠে তুলে বসে পড়ে । মীরনের নির্দেশে নবাবের আপন ভাই মির্জা মেহেদী ও মা আমেনাকেও হত্যা করা হয় । নবাবের পঞ্চম বংশধর পর্যন্ত সরকারি চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল ।
নবাবের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হয় । তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে অনেক বইপত্রও লেখায় ইংরেজরা । রাজনীতির কবির নামেও নানা অপবাদ দেয়া হয়েছিল তাঁকে হত্যা করার পর । সত্য কখনো চাপা থাকেনা । দিনের আলোর মত একদিন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় ।


প্রকৃতির প্রতিশোধ
(১) ডাইনী ঘসেটি বেগমকে বুড়িগঙ্গায় ডুবিয়ে হত্যা করা হয় ।
(২) খাদ্যাভাবে পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় পবিত্র কোরআন মাথায় নিয়ে মিথ্যা শপথকারী মীরজাফর । পৃথিবীর তাবৎ বেঈমানকে আজ তার সাথে তুলনা করা হয়, অর্থাৎ মীরজাফর বলা হয় । নিজের দেশের সাথে বেঈমানি করে দেশকে বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়া এমন কুলাঙ্গার আর কেউ পৃথিবীতে জন্মায়নি ।
(৩) মোহাম্মদী বেগ পারিবারিক কলহের শিকার হয়ে কুয়োতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিল । এই অমানুষ নাকি সিরাজের সাথে মা আমেনার দুধ পান করতো ।
(৪) লর্ড ক্লাইভ দুর্নীতির অভিযোগে লন্ডনের আদালতে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয় । পরবর্তীতে বেঁচে গেলেও বিকারগ্রস্থ হয়ে বাথরুমে নিজের গলায় ছুরি বসিয়ে আত্মহত্যা করে ।
(৫) হিসাবরক্ষক জগৎশেঠ তৎকালীন সময়ে বাৎসরিক ৯০০ কোটি টাকার সমান আয় করত । এই বিশ্বাসঘাতককে গলায় বালির বস্তা বেঁধে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল ।
(৬) বৃটিশদের কাছে প্রতারিত হয়ে উমিচাঁদ পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরত । নবাবের সেই সময়ের সম্পত্তির ৪০ লাখ টাকার দাবিদার ছিল এই জানোয়ার ।
(৭) ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভ অপঘাতে মৃত্যু বরণ করে । তার সমুদয় সম্পত্তি বা কীর্তি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে কীর্তিনাশা নামটি ধারণ করে ।
(৮) ক্রাফটন বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ নিয়ে নিজ দেশে ফেরার প্রাক্কালে নৌকাডুবিতে মারা যায় । ওয়াটসনও ওয়াটস ওষুধে ফল না পেয়ে ভগ্ন শরীরে দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে ।
(৯) মদ্যপ মীরনের বজ্রাঘাতে অপমৃত্যু ঘটে । কেউ বলেন বৃটিশ শাসকরা তাকে তাঁবুতে পুড়িয়ে মারে । বীভৎস শরীর মীরজাফরকেও দেখতে দেয়া হয়নি ।

শেষ কথা
পলাশীর যুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে প্রকৃত দেশপ্রেমিকের কখনো মৃত্যু নেই, তাঁরা বেঁচে থাকেন মানুষের অন্তরে । সিরাজ যেমন অবাঙালি হয়েও এ দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবেসেছিলেন, এদেশের মানুষও তাঁকে ভুলেনি । বিশ্বাসঘাতকরা যুগে যুগে নিন্দিত ও ঘৃণিত । যেমনটা ঘটেছে মীরজাফরদের ক্ষেত্রে । মীরজাফরের বংশধররা ভারতে এখনো বেশ গলা উঁচিয়ে বেঁচে আছে, কিছু বাংলাদেশেও আছে ।
খুশির খবর এই, নবাব সিরাজের প্রজন্মও আজ বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরাধিকারী । অষ্টম ও নবম প্রজন্মের বংশধরগণ ঢাকার খিলক্ষেতে কনকর্ড সিটির ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন । নবাবের মতই তাঁরা বিনয়ী এবং প্রচার-বিমুখ । অষ্টম প্রজন্মের গোলাম মোস্তফা অবসরপ্রাপ্ত বিদ্যুৎবিভাগের প্রকৌশলী ছিলেন । নবম প্রজন্মের সৈয়দ গোলাম আব্বাস ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতা করছেন ।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৫ রাত ৯:২৪

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ পোষ্টের জন্য।

২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও ।

২| ২৪ শে জুন, ২০১৫ রাত ২:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:

নতুন প্রজন্মের কথা জানতাম না; শুনে ভালো লাগলো।

৩| ২৪ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৪:১১

আমি মিন্টু বলেছেন: ভালো লাগলো জেনে । :)

২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৪| ২৪ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৫:১৪

জাহাজ ব্যাপারী বলেছেন: সুন্দর এই লেখা উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আফসোস, স্বাধীন বাংলাদেশের নেতা-নেত্রীরা আজ আগ্রাসী অপশক্তির পদসেবার প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত। এই অপরিণামদর্শী দালালীর
ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী।

শহীদ নবাবের উত্তরাধিকারীদের জন্য রইল দোয়া ও শুভকামনা।

২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.