নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৌরভ আত্মহত্যা করেছিল

২৬ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৪:২৯


২০১৬ সালের কোনো একদিন সৌরভের সঙ্গে ত্রিশালে দেখা হয়েছিল আমার। কবি কাজী নজরুলের জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে এসেছিল সে। আমি তখন ময়মনসিংহ সদরে থাকতাম।

ছোটোখাটো গড়নের ছেলেটা। শ্যামলা চেহারা। তামিল নায়কদের মতো গোঁফ। মুখে সবসময় আঠার মতো হাসি লেগে থাকত। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরল। তারপর তার জমিয়ে থাকা যত কথা, সব আমাকে বলল। একসঙ্গে চা খেলাম আর খোশগল্প করলাম। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যেটা একসঙ্গে উপভোগ করলাম।

আমার এক সহপাঠিনীর ছোটোভাই ছিল সে। টুকটাক লেখালেখি করত। কীভাবে যেন আমার ফেসবুক আইডি পেয়েছিল সে। তারপর একদিন নক দেয় ইনবক্সে। চিনতে না পারলে তার বোনের পরিচয় দেয়। তখন আমি চিনতে পারি।

তার বোন আমাকে বোধকরি খুব একটা পছন্দ করত না। পড়ালেখার বাইরে সাহিত্য সংগঠনগুলোর দিকে বেশি ঝুঁকে গিয়েছিলাম। সৌরভের সঙ্গে আড্ডার এক পর্যায়ে সে সৌরভকে তাড়া দিচ্ছিল যেন তাড়াতাড়ি চলে আসি। সে হয়তো চাচ্ছিল না তার ভাইও আমার মতো উচ্ছন্নে যাক।

সেটাই সৌরভের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। তাকে একবার বইমেলায় একটা স্টলে বই বিক্রি করতে দেখেছিলাম। ততদিনে সে বামরাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। তার একাধিক অনুবাদের বইও বেরিয়েছে।

তারও আগে একবার ময়মনসিংহে ছাত্রফ্রন্টের একটা অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বামরাজনীতির প্রতি তার অসীম মুগ্ধতা ছিল। ফেসবুকে মাঝেমধ্যে এটা-সেটা নিয়ে কথা বলত। আমি তার চিন্তা-ভাবনার গভীরতায় মুগ্ধ হতাম।

ফেসবুকে আমার কী একটা লেখা পড়ে সে মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিল। সম্ভবত লিখেছিলাম, ঢাকা শহরে কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি। আমি নিজেও তো কবিতা লিখি, কথাটা অপমানসূচক হলে তো আমার উপরও অপমানটা বর্তায়। তাহলে সে কেন মন খারাপ করবে, বুঝতে পারিনি। এরপর আর কখনও সে আমাকে নক দেয়নি। বইমেলায় স্টলে যখন দেখলাম, একবার ভাবলাম দেখা করে আসি। ব্যস্ত মনে হওয়ায় আর এগোইনি।

একদিন কেউ একজন ফেসবুকে পোস্ট করল সৌরভ মাহমুদ আত্মহত্যা করেছে। অন্য কোনো সৌরভ ভেবেছিলাম। ছবি দেখে বুঝতে পারলাম আমি যে সৌরভকে চিনতাম, আসলে সে-ই আত্মহত্যা করেছে। সৌরভের বন্ধু শান্ত আমার ফ্রেণ্ডলিস্টে ছিল, আমি তাকে জিগ্যেস করতে পারতাম। তাছাড়া তার বোনও ফ্রেণ্ডলিস্টে ছিল, তাকেও জিগ্যেস করা যেত। অথচ জিগ্যেস করা হয়নি।

আসলে আমি সৌরভকে জীবিত ভাবতেই পছন্দ করতাম। এত কম বয়সী একটা প্রাণোচ্ছল ছেলে আত্মহত্যা করবে; কী এমন দুঃখ ছিল তার এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল। আসলে আমি চাচ্ছিলাম সে আমার কল্পনায় বেঁচে থাকুক।

আমার ধারণা সে হয়তো হতাশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। লেখালেখি নিয়ে তার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষা; সেটা হয়তো বাস্তবায়িত হচ্ছিল না। অথবা এমনও হতে পারে সে যে রাজনৈতিক ভাবাদর্শে বিশ্বাসী; সেসব বাস্তবায়ন হওয়া অসম্ভব হওয়ায় হীনমন্যতায় ভুগত। পারিবারিক অথবা প্রেমঘটিত কোনো ব্যাপারও হতে পারে। আমি বেশি ঘাঁটতে যাইনি।

ছবি: ইন্টারনেট

মৃত্যু সংশ্লিষ্ট আরও লেখা: ১) কৈশোরে যে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন "মরণ রে তুহুঁ মম শ্যাম সমান", বার্ধক্যে সেই তিনিই আবার বলেছিলেন, " মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে"
২) আমি কারও মরামুখ দেখতে পারি না
৩) গোরস্তান (একটি কবরের আত্মকাহিনী)
৪) আত্মহত্যার আগে
৫) শ্মশানঘাট

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: কবিরা অনেক আবেগপ্রবণ হয়।

২৬ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিকই।

২| ২৬ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১০

ইসিয়াক বলেছেন: দুঃখজনক।
আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। একবার আমিও আত্মহত্যা করবার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু শেষ মুহুর্তে আমি নিজেকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিলাম।

২৬ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি নিজেও একাধিকবার আত্মহত্যা করতে মনস্থির করেছিলাম। প্রথমবার তো রেললাইনে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলামও। পরে কীভাবে যেন সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেছিলাম। আসলে মানুষের ওই সময়টায় মানুষ একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। ভালোমন্দ বোঝার জ্ঞান থাকে না। আগে থেকেই সতর্ক থাকা দরকার। পরিবারের সহযোগিতা দরকার। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, এসব আত্মহত্যা ঘটার জন্য পরিবার-সমাজও অনেকাংশে দায়ী।

৩| ২৬ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: ধীরে ধীরে আত্মহত্যা বাড়বেই !

এর কারণ আমাদের জানা নেই । হয়তো কয়েকটি কারণকে আমরা বলতে পারি তবে সেটা সব ক্ষেত্রে নয় !!

আসলে হতাশারা রহস্যময়!

২৬ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ইদানীং আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যা। লোকজনের সহমর্মিতাও কমছে দিনদিন।

৪| ২৬ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩৬

রানার ব্লগ বলেছেন: আত্মহত্যা কোন সমাধান না। তারপরেও একটা প্রান ঝড়ে গেলো আফসোস ।

২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:০১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভাবতে খারাপ লাগে। এত হাসিখুশি ছেলেটা।

৫| ২৬ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪১

শেরজা তপন বলেছেন: ফেসবুকে তাঁর আত্মহত্যার খর দেখে চরম কষ্ট পেয়েছিলাম- যদিও সে আমার পরিচিত কেউ নয় তবুও একজন সম্ভবনাময় মানুষকে অকালে হারালাম বলে।।
আপনার কবি আর কাকের গল্পে বোঝা যায় বেশী সেন্টিমেন্টাল ছিল।

২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:০২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনি চিনতেন তাকে?

৬| ২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ৯:১২

কাছের-মানুষ বলেছেন: যারা খুব সিরিয়াসলি কবিতা চর্চা করেন তারা বোধ হয় বেশী অভিমানি হয়! কয়েকদিন আগে দেখলাম কয়েকজন ছাত্র আত্নহত্যা করেছে, ব্যাপারগুলো দুঃখজনক।

২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:০৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি এই সাহিত্যচর্চা নিয়ে অনেক অপদস্থ হয়েছি। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট ইংলিশ পড়ানো সত্ত্বেও স্কুলগুলোতে ম্যাগাজিন বা দেয়ালিকা করতে গেলে অনেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক অবহেলার নজরে তাকাত। খারাপ লাগত তখন। এখন স্বাভাবিকভাবে নিই। গোপনে চর্চা করি।

ইদানীং আত্মহত্যার ঘটনা অনেক ঘটছে। ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় অনেক চাপ নিতে পারে না। পারিবারিক ঝামেলা তো আছেই।

৭| ২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:৫৫

:) :) :) :) :) বলেছেন:

২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন:

৮| ২৭ শে মে, ২০২৩ ভোর ৫:৫১

সোহানী বলেছেন: এরকম মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দু:খ, হতাশা, রাগ, অভিমান থাকবেই। সেই সাথে আশা, ভরসা, ভালোবাসা সবকিছু ভুলিয়ে বাঁচতে সাহায্য করবে।

কিন্তু আত্মহত্যা কেন? আত্মহত্যা কি কোন সমাধান আনতে পারে????

না পারে না, কখনই পারে না।

তাহলে কেন তরুনরা সেদিকে ঝুঁকছে?

হাঁ, উত্তরটা আমি আপনি সবাই জানি বুঝি। কিন্তু তার সমাধানের দিকে কেউই এগিয়ে আসে না।

তারপরও বলবো তরুনদের, সামনে অনেক অনেক পথ খোলা আছে। একটা বন্ধ হলে আরেকটা বের করো। হতাশ কেন হবে???

২৭ শে মে, ২০২৩ ভোর ৬:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আত্মহত্যার হার কমবে না। আমার ধারণা, এ হার বাড়তেই থাকবে। এর অন্যতম কারণ পারিপার্শ্বিকতা। কিছু কিছু মানুষের কারণে অথবা অনেক সময় নিজেদের কারণেই এমন গুমোট পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেসব থেকে সহজে অনেকেই বের হতে পারে না। ঘনিষ্ঠজনরা তখন সহযোগিতা না করে বরং উস্কে দেয়। একটা ঘটনা বলি- মেডিকেলে চান্স পায়নি বলে এক মেয়ের বাপ ৩ মাস তার সঙ্গে কথা বলেনি। মাও কথা কমিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় মেয়েটার কী করার ছিল? যা হওয়ার তা হয়েছে। মেয়েটা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমার পরিচিত একজনকে তার মা-বাবা এক কড়ি সয়সম্পত্তি দেয়নি। সব দিয়েছে ৩ বোনকে। ভদ্রলোক এমনই দুর্ভাগা তার স্ত্রী সন্তানও তাকে পরিত্যাগ করেছে। ভদ্রলোক যে বেঁচে আছেন, এটাই বেশি। আমার সমাজ-সংসার বিষাক্ত হয়ে গেছে। কেউ কারও পাশে নেই।

৯| ২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:৩১

দারাশিকো বলেছেন: প্রিয় সাধু, আপনি নিজেও কি অনেক হতাশাগ্রস্থ বা বিষন্ন? হতাশা-বিষন্নতা এগুলা সংক্রামক, এমনকি যারা অনেক উদ্দীপনা নিয়ে হতাশাগ্রস্ত কাউকে টেনে তুলতে যায় তারাও আক্রান্ত হয়ে যায় অনেক সময়।

২৭ শে মে, ২০২৩ সকাল ১০:৫০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যারা আত্মহত্যা করেছে, বা করে তাদের মর্মবেদনা আমি বিলক্ষণ বুঝতে পারি। কষ্ট হয়, তবে তাদের কাজকে কখনোই সমর্থন করি না। হতাশাগ্রস্ত হলেও জীবনে আনন্দ খুঁজে নিতে হবে, জীবনের অর্থ বুঝতে হবে।

১০| ২৭ শে মে, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৩

শাওন আহমাদ বলেছেন: একেকে টা মানুষ বুকের ভিতরে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ঘুরে বেড়ায় কেউ জানেনা।

২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:১৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ মর্মবেদনা বুঝবে না।

১১| ২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ৮:১০

রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিটা আত্মহত্যাই আসলে হত্যা।

২৭ শে মে, ২০২৩ রাত ১০:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ১০০%।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.