নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কত রঙের মানুষ আর কত রঙের মন (রম্য)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১১


অনার্সে পড়ি তখন। একদিন বাড়ি যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এল। ধরতেই ওপাশ থেকে বলছে, 'আমি অমুখ থানার ওসি'।
'জ্বি বলুন'। আমি বললাম।
'আপনার নামে গুরুতর অভিযোগ আছে। আপনি নাকি মেয়েদের বিরক্ত করেন?'
থতমত খেয়ে গেলাম। ভাবতে লাগলাম আসলেই কোনো মেয়েকে বিরক্ত করি কি না। নাহ, একদম মনে পড়ল না। এক-দু'জনকে একটু-আধটু ভালো লাগে বটে, তবে বিরক্ত করেছি বলে মনে হয় না। এলাকায় তো মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকাতামই না।

যাহোক, বললাম, 'আপনি বোধহয় ভুল করেছেন। আমি কখনও কোনো মেয়েকে বিরক্ত করিনি।'
ওপাশ থেকে বললেন, 'ঠিক আছে।' তারপর বললেন, 'আমি ছোটন'।

চিনতে পারলাম তাকে। আমার স্কুল-কলেজ জীবনের সহপাঠী। কয়েক বছর যোগাযোগ না থাকায় তার কণ্ঠ ভুলে গেছি। কথা বলে জানলাম সে আসলেই পুলিশে চাকরি করে। সম্প্রতি যোগদান করেছে। শুনে ভালো লাগল। আসলে ওর ইচ্ছেই ছিল পুলিশে চাকরি করার। ইচ্ছে পূরণও হয়েছে।



অ্যালার্জিজনিত সমস্যায় বেশ ভুগছিলাম। আগে অল্প থাকলেও মাঝখানে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ডাক্তার দেখিয়েছি বটে, তবে অবস্থার অগ্রগতি তেমন হয়নি। যাহোক, এর মধ্যে দু-দু'বার মাথা ন্যাড়া করতে হলো।

সর্বশেষ কাজটা করতে হলো বাসার পাশের এক সেলুনে। নরসুন্দর সাহেব খুব যত্ন করে মাথা ন্যাড়া করে দিলেন, দাঁড়িও চেঁছে দিলেন। তারপর বললেন, 'এখন থেকে একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।' আমি হাঁ-হুঁ করলাম। এরপর উনি পরামর্শ দিলেন কুর্মিটোলা হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে। জানালাম, আগের ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে নিই। পরে অন্য জায়গায় যাব।

নরসুন্দর সাহেবের সাথে প্রতিদিন দেখা হয়। উনার সেলুনের সামনে দিয়ে আমার নিত্য যাতায়াত। সালাম দেন, কুশলাদি জিগ্যেস করেন। খেয়াল করি, উনি আমার দাঁড়ির দিকে তাকান। মাথায় টুপি থাকায় চুল দেখার সুযোগ নেই। উনি প্রতিদিন বলেন, 'চুল-দাঁড়ি পরিষ্কার রাখবেন।' আমি বলি, 'আচ্ছা।'

সেদিন নিজে নিজেই ক্ষৌরকর্ম করলাম। আমাকে দেখে উনি হতাশ হলেন। বললেন, 'নিজেই শেভ করেছেন?'
'হ্যাঁ।' আমি বললাম।
'ওহ' বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। মনে মনে বললাম, 'ভাগ্যিস নিজে নিজে করেছি। এটা একটু হলেও মানা যায়। যদি অন্য সেলুনে করতাম আর উনি সেটা জানতেন, তাহলে তো কান্না শুরু করতেন।'



কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে বাচ্চা কালেকশনের একটা প্রক্রিয়া চালু আছে। সরকারি স্কুলে এই ঝামেলাটা মনে হয় নেই। সরকার যেহেতু একটা শিক্ষার্থী থাকলেও বেতন দেয়, তাই অনেক শিক্ষকের গা ছাড়া ভাব থাকে। গ্রামের স্কুলগুলোতে এমনই ব্যাপার প্রায়ই দেখি। অনেকসময় শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারীতায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে।

যাহোক, আমি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছি। এবার যে প্রতিষ্ঠানটার কথা বলছি, এটা গাজীপুরের বারবৈকা এলাকায় অবস্থিত। স্কুলটার বয়স মোটামুটি বিশ বছর। এখানে এসে অনেকের সাথে আমাকেও বাচ্চা কালেকশনে বের হতে হয়।

একদিন পাঁচ-ছ'জন শিক্ষক মিলে বাচ্চা কালেকশনে বের হলাম, স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাও সাথে। এক বাড়ি, দু'বাড়ি ঘোরার পর এমন এক বাড়ি গেলাম, সেখানে কোনো বাচ্চা দেখা গেল না। জিগ্যেস করলাম, 'এ বাড়িতে তো বাচ্চা নেই। এখানে কেন?'
প্রতিষ্ঠাতা বললেন, 'এ বাড়িতে একজন গর্ভবতী মহিলা আছেন। বাচ্চা হলে উনি যেন আমাদের স্কুলে দেন; এটা বোঝাতে এসেছি।'
আমি হা করে রইলাম। আমার অবাক হওয়া দেখে একসময় একজন বললেন, 'উনি (প্রতিষ্ঠাতা) অপেক্ষায় থাকেন, মহিলাদের পেটের দিকে তাকিয়ে থাকেন কবে বাচ্চা হবে আর স্কুলে ভর্তি করাতে পারবেন।'

ছবিঃ অন্তর্জাল

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শেষটাতে হাসি থামাতেই পারলাম না!

প্রতিষ্ঠাতা বটে B-) B-)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আসলেই। আমার মনে পড়লেই হাসি আসে।

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এক নাম্বার আর তিন নাম্বার ঘটনা বেশী মজার।

কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চা এই ভাবে খোঁজে এটা জানা ছিল না।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:২৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শহরে অলিতে-গলিতে কিন্ডারগার্টেন। চলে তীব্র প্রতিযোগিতা। বাচ্চা সংগ্রহে নানান পদক্ষেপ নিতে হয়।

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১১

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: কিন্ডারগার্টেন এর কাহিনী পড়ে হাসতে হাসতে শেষ হয়ে গেলাম।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কত ঘটনা যে ঘটে!

৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১১

নূর আলম হিরণ বলেছেন: আমাদের পাশের ওয়ার্ডের সরকারি প্রাইমারি স্কুলটির প্রধান শিক্ষক বাচ্চা কালেকশনে বের হন। তবে উনার স্কুলের জন্য না, উনার একটি কিন্ডারগার্ডেনের শেয়ার আছে সেই কিন্ডারগার্ডেনের জন্য বাচ্চা কালেকশন করেন। এমনকি নিজের সরকারি স্কুলে কেউ বাচ্চা ভর্তি করাতে আসলে আগে ওইখানে করানোর জন্য বলেন, তারপরে অনেকে সেখানে না করালে উনি বিরক্ত মুখ নিয়ে নিজের স্কুলে ভর্তি করেন।
গত বছর উনি অবসরে গেছেন।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:১৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: খুবই প্রচলিত ঘটনা এখন। সরকার সরকারি স্কুলে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে, শিক্ষকদের বেতনও বাড়িয়েছে। তবুও শিক্ষকদের মধ্যে সততার লেশমাত্র নেই।

৫| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৭

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: সব মিলিয়ে ক্লাসিক একটা পোস্ট। নরসুন্দরের ঘটনায় আসলে লোকটার প্রতি একটু মায়াই হলো। তার খদ্দেরের সংখ্যা মনে হয় খুব কম। শত হলেও দিন শেষে তাকে চাল-ডালের পয়সা নিয়ে দোকান বন্ধ করতে হবে তো!

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এবারই প্রথম ওখানে গিয়েছি। সেবা ভালো। লোকজন ভালোই আসে। মনে হয় উনি খদ্দের ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:০৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার রম্য। বিশেষ করে তৃতীয়টা।

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৩২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ :)

৭| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: বিয়ের জন্য মেয়ে পেয়েছেন?

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.