![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
‘পথের পাঁচালী’ চলচ্চিত্রটা দেখার পর দুর্গার জন্য মন খারাপ হয়নি; এমন মানুষ হয়তো নেই। ‘পথের পাঁচালী’ উপন্যাস হিসেবে যেমন মাস্টারপিস, চলচ্চিত্র হিসেবেও কম যায় না; এটা নিশ্চিত স্বীকৃত। অস্কারপ্রাপ্তি অন্তত তাই বলে। চলচ্চিত্রটা দেখার পর পরবর্তী সিরিজ ‘অপরাজিত’ আর ‘অপুর সংসার’ দেখা হয়নি। যদিও অপুর, তার মা-বাবার কী হয়েছিল, সেটা জানার আগ্রহ সবসময় ছিল।
এরমধ্যে একদিন হুট করে বসেই পড়লাম ‘অপরাজিত’ দেখতে। ‘পথের পাঁচালী’তে যেমন অপু-দুর্গার শিশুকাল দেখানো হয়েছে, ‘অপরাজিত’তে দেখানো হয়েছে তার কৈশোরের বেড়ে ওঠার ঘটনাবলি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারে টানাপোড়েন। মায়ের অসহায়ত্ব। মায়ের সাথে মায়ের জ্যাঠার বাসায় চলে আসা। সেখানে বাবার পেশা পুরুতগিরি করা যে কাউকেই মুগ্ধ করবে।
অপুর স্কুলে ভর্তি হওয়া এবং ভালো ফল করা সবাইকে খুশি করলেও মাকে একা রেখে কলকাতায় চলে যাওয়া ব্যথিত করেছে। তবে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য অন্য উপায় তো ছিল না। পুরুতগিরি করে তো জীবন পার করে দেওয়া যেত না। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আনুকুল্যে কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নিয়ে কাজ করে পড়ালেখা চালানো বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে অপু তার কাজ ভালো মতোই করেছে। যদিও তার মায়ের সাথে যোগাযোগ কমে গিয়েছিল। সে খুব কমই বাড়িতে আসতে পেরেছে।
অসহায় মা দিনের পর দিন তার আশায় থেকেছেন। শেষে বড়ো অসুখ হওয়া সত্ত্বেও অভিমানে ছেলেকে না জানানোটা মনে দাগ কেটেছে। আর তার মৃত্যুর পর অপু যখন বাড়ি এসে দেখে বাড়িটা পুরো বিরানভূমি, তখন এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
চলচ্চিত্রটা দেখে প্রচণ্ড মন খারাপ হয়। শুয়ে এটাসেটা ভাবছিলাম। রাত এগারোটা বাজছিল তখন। এরমধ্যে বাড়ি থেকে ফোন এলো। জানানো হলো আমার এক কাকা মারা গেছেন। মন খারাপের মাত্রাটা আরও বাড়ল। গতমাসের মাঝামাঝি একবার বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। এ মাসের ২ তারিখ একটা পরীক্ষা ছিল। ভাবছিলাম একবারেই যাই। টানাপোড়েনের মাঝে কিছু টাকা বাঁচুক। এমন ঘটনা যে ঘটে যাবে কে জানত? বিকেলেও যদি অবস্থা আঁচ করতে পারতাম, চলে যাওয়া যেত।
যাহোক, ভোরে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। সাড়ে ১০টা বাজল যেতে যেতে। গিয়ে দেখি বাড়িতে কান্নাকাটি করে সবাই অস্থির। মনটাকে স্থির করে কাকি আর কাকাত বোনকে সান্ত্বনা দিলাম। ফোনে প্রবাসী কাকাত ভাইকেও বললাম ধৈর্য ধারণ করতে। ২০-২২ বছরের একটা ছেলে, তার কি এত বুঝ আছে? বাবা সারা জীবন কষ্ট করেছেন। ছেলেটা চেয়েছিল বাবা-মার দুঃখ মোচন করতে। করেছেও অনেকটা। অনেক চিকিৎসাও করিয়েছে। এখন আর কিছু করার ছিল না। কিডনি দুটোই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শরীর ফুলে যেত। গলা দিয়ে রক্ত আসত। শুরু থেকে চিকিৎসা করার সুযোগ থাকলে হয়তো বেঁচে যেতেন, কিন্তু আমার বাবা-কাকারা বরাবরই গোয়ার্তমি করতেন। নিজেদের শরীরের ব্যাপারে বরাবরই তারা উদাসীন। বাবা-কাকারা সাত জন। এক কাকা (পঞ্চম) মারা গেলেন। বাকি রইলেন ছয় জন। আমার বাবাও মৃত্যুপথযাত্রী।
সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে কাকাকে অন্তিমশয্যায় শায়িত করে ভাবলাম কাকাত ভাইকে একটা ফোন দিই। দুই দিন ধরে সে ঘুমহীন, নাওয়া-খাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে। বললাম, “কিছু একটা খা। সবাই মরলে তো হবে না।” সে যখন আফসোসের স্বরে বলে, “বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে পেলাম না।” আমি বলি, “তুই তো সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিস ভালো করতে। দেশে থাকলে এত টাকা তো পেতি না চিকিৎসার। সান্ত্বনা এটাই যে, শেষ চেষ্টাটুকু করতে পেরেছিস। আর আমি তো...”
ঢাকায় ফেরার সময় মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখন বাবার কাছে গেলাম, বারবার মনে হচ্ছিল এ দেখাই শেষ দেখা নয়তো?
ছবি: অন্তর্জাল
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৫০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কষ্ট হলেও বাস্তবতা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৮
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: যেতে হবে সবাইকে একদিন। আসলে আত্মীয় স্বজনদের সাথে মাঝে মাঝে দেখা করা উচিত্ অনেকেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন
দেখা হয়নি অনেকের সাথে
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিকই বলেছেন। অনেকের সাথেই দেখা হয়নি।
৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:০৬
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: আমি প্রায় চেষ্টা করি, বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের সাথে দেখা করার। এই করোনায় অনেক মানুষ মারা গেছেন। দেখতেও পারিনি। যা দেখার মোবাইলেই। জন্মিলেই মরিতে হইবে, এই নির্মম সত্যটা জেনেও আমাদের জীবন সামনের দিকে এগোতে থাকে...
আহা...
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: জন্মিলেই মরিতে হইবে, এই নির্মম সত্যটা জেনেও আমাদের জীবন সামনের দিকে এগোতে থাকে। ঠিক।
৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা পড়ে মনটা ভিষন্ন হয়ে গেলো।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেকদিন পর কোনো নিকটাত্মীয় মারা গেলেন। খুব ব্যথিত হলাম।
৫| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: আমার এক আত্নীয় অসুস্থ, তাকে দেখতে যেতে হবে।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সবার সাথে যোগাযোগ রাখা ভালো। কথা থাকলে শেষ করা উচিত। পরে যেন আফসোস না হয়।
৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:০০
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বাবা-মা'র প্রয়াণ ভীষণ বেদনাদায়ক। আপনার কাকা'র আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান রাব্বুল আলামিন তার ও তার পরিবারের প্রতি সদয় হোন এটাই প্রার্থনা করি। ধন্যবাদ।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কাকার মৃত্যু এত বেশি মর্মাহত করল যে, মা-বাবার মৃত্যুর কথা ভাবতেই পারি না।
৭| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ২:১৮
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: প্রথমে ভালোই পড়ছিলাম। কিন্তু শেষে এসে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। বাবাকে সময় দিয়েন।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৩২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এখন মাসে মাসে বাড়ি যাই। এর বেশি যাওয়ার সুযোগ হয় না।
৮| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৬
কামাল১৮ বলেছেন: এতোটাই মর্মাহত হয়েছি যে পড়ে কি লিখবো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
বিকেলে হসপিটালে গিয়েছিলাম মেয়ের শশুর কে দেখতে ।ব্রেন স্ট্রোক করে গত দশ দিন হসপিটালে বাঁদিক গেছে।যে কয়দিন বাচবে বড় কষ্টে বাচবে।বয়স আমারই মতো।দেখলাম লিখে রেখেছে আরো দেড় মাস থাকতে হবে।
আসতে আসতে ভাবছিলাম আমার যে কোন মুহুর্তে এমন হতে পারে।যদি এমন হয় তবে মরে যাওয়াই উত্তম।আপনার বাবা ভালো থাকুক এই কামনা করি।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কাকা বেশ কষ্ট করেছেন। বাবা তেমন কথা বলতে পারেন না। চঞ্চল একজন মানুষের নীরব হয়ে যাওয়া সহ্য করা খুব কঠিন।
আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
৯| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৩
মেঘবৃষ্টির গল্প বলেছেন: মৃত্যু বা চিরবিদায় অবধারিত কিন্তু বিচ্ছেদ বা বিচ্ছেদের বেদনা মনে হয় তার চাইতেও ভয়াবহ। এই যে অপুর মত কত ছেলেরা পরিবার ছেড়ে থাকছে দিনের পর দিন। এক সময় অভ্যস্থ হয়ে ওঠে বটে তবে প্রাথমিক অবস্থার অসহনীয় কষ্টের কথা বুক্তভুগীরাই কেবল জানে।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কয়েকজন অপুর সাথে আমার জীবনের তুলনা করেছে। অপুর সংসার দেখে হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছি।
১০| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:১০
ঢাবিয়ান বলেছেন: কার যে কখন ডাক আসে বলা যায় না!! তবে সবসময় মনে হয় মরতে যেহেতু হবেই তবে যেন হাতে রথেই মৃত্যূ হয়। কারো উপড় যেন বোঝা হতে না হয়।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১০:৫৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নিজে কখনও কারও বোঝা হতে চাই না। তবে মা-বাবা বেঁচে থাকুন; এটা সবসময় চাই।
১১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:১৬
সোনাগাজী বলেছেন:
চাচার বয়স কত হয়েছিলো আনুমানিক?
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ৫২-৫৩
১২| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:৩৮
আলামিন১০৪ বলেছেন: ”প্রত্যেক আত্মাকেই (নফস) মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে”....
ইতিমধ্যেই জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষদ্বয়কে হারিয়েছি...মা এবং বাবা.
আমি মাঝে মধ্যে ভাবি, কি দরকার ছিল এত যাতনার? দুনিযাতে আল্লাহ যদি না পাঠাতো মোরে!! ...
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:০৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: যদি জন্মগ্রহণ করা, না করার অনুমতি থাকত, আমি অবশ্যই 'না' এর পক্ষে থাকতাম। এত যাতনা, এত অপ্রাপ্তির কোনো দরকার ছিল না।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:১৮
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: একটা মৃত্যু আমাদের আশেপাশের কত শত সমীকরণ বদলে দেয়। এ পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হয়, মৃৎ ব্যক্তির কাছের মানুষগুলোকে স্বান্তনা দেয়া। এর চেয়ে কঠিন কাজ আর হয় না। কী বলা উচিত! আমি ভেবে পাই না।
আপনার পরিবারের সবার সুস্থতা কামনা করি। মৃত্যু অবধারিত তবু বেঁচে থাকার চেষ্টা তো নিরন্তর।