নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (তৃতীয়াংশ)

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:১২


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয়াংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের বাড়ি থেকে কয়েক বাড়ি পুবে সরকার বাড়ি। সে বাড়ির নাজমুল সরকারকে (যাকে কাকা বলে ডাকতাম) একদিন মা বললেন, আমার মেজো বোন শিউলি আর আমাকে যেন পড়ান। পরদিন থেকে উনি আমাদের পড়ানো শুরু করলেন। অনেকদিন পর্যন্ত পড়িয়েছেন। সম্ভবত উনিই আমাদের প্রথম গৃহশিক্ষক। আমাদের ওই দীনহীন অবস্থায় গৃহশিক্ষক রাখার মতো দুঃসাহস বিবেচনা করায় বোঝা যায় মা আমাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কতটা চিন্তিত ছিলেন।

নাজমুল কাকার পর লিটন নামে একজন কিছুদিন পড়িয়েছেন। তারপর পড়িয়েছেন খবির নামে একজন। তারও পর পড়িয়েছেন নজরুল নামে একজন। তিনিও সরকার বাড়ির। কাকা সম্বোধন করতাম। বলতে হয় প্রাথমিক আর মাধ্যমিক জীবনে তাঁরাই আমার শিক্ষার ভিত শক্ত করে দিয়েছিলেন। চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণিতে উঠার পর আমার তোতলানোর সমস্যা কিছুটা কমতে থাকল। একটু-আধটু সমস্যা থাকলেও পড়ালেখা নিয়ে আমার আগ্রহ আর প্রচেষ্টা দেখে শিক্ষকগণ ‘সম্ভাবনাময়’ বলতেন।

সেসময় পড়ালেখায় বেশ সিরিয়াস হয়ে পড়লাম আর পরীক্ষাগুলোয় মোটামুটি ভালো নম্বর পেতে শুরু করলাম। পড়ালেখায় এতই সিরিয়াস ছিলাম যে, ঝড়-বাদলও আমাকে দমিয়ে রাখতে পারল না। গ্রীষ্ম-বর্ষায় যেকোনো পরিস্থিতিতেই বুকে বই নিয়ে দৌড়ে স্কুলে হাজির হয়ে যেতাম। আর সামনের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম। পড়ালেখায় ভালো করলেও মাঝেমধ্যে হোমওয়ার্ক নিতে মিস হয়ে যেত। নির্ঘাত শাস্তি বেত্রাঘাত কিংবা নীলডাউন হওয়া।

অনেকের কাছে হয়তো মনে হতে পারে যে, শুধু পড়ালেখার টানেই স্কুল কামাই করতাম না। অনেকাংশে সত্যি হলেও এর বাইরে আরও কারণ লুকায়িত ছিল। বিশেষ করে টিফিন পিরিয়ডে ফুটবল খেলাটা কখনও মিস করতে চাইতাম না। বলতে হয় সহপাঠী আর বড়োদের সাথে খেলার লোভও আমাকে স্কুলে যেতে প্রলুব্ধ করত। যদিও কোনো অজুহাতে বাড়িতে থাকারও সুযোগ ছিল না। মা বেঁধে-ধরে হলেও স্কুলে পাঠাতেন।

যাহোক, স্কুল থেকে বাড়িতে ফিরে এসে ভাত খেয়ে দৌড়ে মাঠে চলে যেতাম ফুটবল খেলতে। স্কুলে ফুটবল থাকলেও বাড়িতে এসে আর সে সুযোগ ছিল না। তাই আমরা পাড়ার ছেলেরা পলিথিন দিয়ে খড় গোল করে বেঁধে বল বানিয়ে খেলতাম। কারও বাড়িতে জাম্বুরা থাকলে নিয়ে আসত; সেটাকেই বল বানানো হতো।

সবসময় যে ফুটবল খেলতাম, তা কিন্তু নয়। এক্কাদোক্কা, ডাংগুলি, কাবাডি, দাঁড়িয়াবান্ধা, কানামাছি ভোঁ ভোঁ, চোর-পুলিশ, লাটিম ঘোরানো, ঘুড়ি ওড়ানোসহ আরও কত যে লোকজ খেলা আমাদের শৈশব-কৈশোরকে রাঙিয়ে রেখেছিল, তার ইয়াত্তা নেই।

কট বা নুই নামে এক ধরনের খেলা ছিল। হাঁড়ির ভাঙা অংশ ছুড়ে মেরে খেলতে হতো। ঠিকমতো খেলতে পারলে দেশলাইয়ের খোল পাওয়া যেত আর না পারলে খুয়াতে হতো। এটাই ছিল আমাদের বিনিময় মাধ্যম। টোনাপাতির (বাচ্চাদের ঘর-সংসার খেলা) পরবর্তী ধাপ বলা যায়। টোনাপাতিতে বিনিময় মাধ্যম থাকত গাছের পাতা আর কট বা নুই খেলায় দেশলাইয়ের খোল। আমি আর রতন বেশি একটা পারতাম না। তবে রুবেল নামে আমার এক বন্ধু খুব ভালো পারত।

‘রুবেল ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটা দারুণ গাইত। ওর খালি গলায় গাওয়া এ গানটা স্বয়ং এন্ডু কিশোরকে ছাড়িয়ে যেত বলে আমার ধারণা। রুবেলের কণ্ঠে বহু বছর গানটা শোনা হয় না। সে আমার প্রতিবেশী। বাড়িতে গেলে ওর সাথে দেখা-সাক্ষাৎও হয়। এটা-ওটা নিয়ে কথা হয়। কিন্তু কখনও বলা হয়নি যে তার কণ্ঠে এই গানটা আমার দারুণ লাগত। এখনও খুব শুনতে ইচ্ছে করে।

আমরা মার্বেলও খেলেছি। মার্বেল আর কট বা নুই খেলা ভয়াবহ রকমের আসক্তিতে চলে গিয়েছিল আমাদের। এরপর আসে ক্যারাম খেলা। এমন হয়েছে স্কুল বাদ দিয়ে সারাদিন স্থানীয় বাজারে ক্যারাম খেলেছি।

এরও পর একসময় ক্রিকেটের ঝোঁক চাপল আমাদের মাথায়। ছোটো ছোটো জাম্বুরাকে বল বানিয়ে আর তালের ডাগ্গা দিয়ে ব্যাট বানিয়ে খেলতাম। দশ টাকা করে এক ধরনের বল পাওয়া যেত তখন, সেটা দিয়ে খেলতাম মাঝেমধ্যে। বল ফেটে গেলে কিংবা হারিয়ে গেলে ছোটো জাম্বুরাই সই। অনেক সময় স্কচটেপ দিয়ে কাগজে মুড়িয়ে গোল করে বল বানিয়ে খেলতাম।

সে সময় মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার উত্থান হচ্ছিল। যখন টি-শার্টের কলার উঁচিয়ে বল নিয়ে জোরে দৌড় দিতেন, আমরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখতাম। অনেকের মতো আমিও টি-শার্টের কলার উঁচিয়ে তার অনুকরণে বল করার চেষ্টা করতাম। আর ব্যাটিংয়ে অনুসরণ করতাম মোহাম্মদ রফিককে। রফিক এমন একজন ব্যাটার ছিলেন, যিনি প্রতিটা বল মারতে চেষ্ট করতেন। যতক্ষণ ক্রিজে থাকতেন, রান হতোই। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারতেন না।

মোহাম্মদ রফিক বাঁহাতি ছিলেন। আমি ডানহাতি হলেও বামহাতে ব্যাট করতাম মাঝেমধ্যে। যেহেতু আমি তাকে অনুসরণ করতাম, আমিও প্রতিটা বল জোরে জোরে পেটাতে চাইতাম। পারতাম বটে, তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারতাম না। সোহেল নামে একজন ভালো পারত।

দেশীয় ক্রিকেটারের বাইরে পছন্দ করতাম পাকিস্তানি কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামকে। এছাড়া ছিলেন ভারতীয় সৌরভ গাঙুলী-শচীন টেন্ডুলকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা, দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক-জ্যাক ক্যালিস, নিউজিল্যান্ডের শেন বন্ড-ডেল স্টেইন, ইংল্যান্ডের ফ্লিনটপ-মাইকেল ভন, শ্রীলংকার মাহেলা জয়াবর্ধনে-কুমার সাঙ্গাকারা-জয়সুরিয়া প্রমুখ আমাদের চোখে আদর্শ ক্রিকেটার ছিলেন।

খেলাধুলার বাইরে গল্পের বই পড়া আর সিনেমা দেখাও আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। যখন আমাদের বাসায় টেলিভিশন ছিল না, শুক্রবার হলে রতনকে সাথে নিয়ে দূর-দূরান্তে যার বাড়ি টেলিভিশন ছিল, তার বাড়ি চলে যেতাম। তখন তো ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ছিল না, ব্যাটারি দিয়ে চালাতে হতো। দেখা গেছে টেলিভিশন আছে এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে আমি আর রতন যাইনি।

কারও বাড়িতে ভিসিআর বা পরবর্তীতে সিডি ভাড়া করে আনা হলে আমি আর রতন জানতে পারলে কখনও মিস করতাম না। তবে ছোটো হওয়ায় আমাদের বিড়ম্বনায় পড়তে হতো মাঝেমধ্যে। সব জায়গায় প্রবেশাধিকার ছিল না। অচেনা কারও বাড়িতে গেলে অনেকসময় ঘর থেকে বের করে দিত।

যত যাই করতাম না কেন, সন্ধ্যে হলে ঠিকই বাড়িতে ফিরে আসতে হতো। নাহলে মায়ের বকুনি শুনতে হতো। আর লাঠি-ঝাঁটার বাড়ি তো ফ্রি থাকতই। মেজো বোনের সাথে বসে স্কুল আর গৃহশিক্ষকের পড়া রেডি করতাম।

চলবে....

ছবি: প্রতীকি

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:২০

শায়মা বলেছেন: আহা ছোটবেলার মধুর যত খেলা!!!

দিয়াশলাইয়ের পাতা বিনিময় কি ভাইয়া?

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৮:৪০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন:
পাতার ম্যাচের এই অংশগুলো ছিঁড়ে অনেকগুলো করা হতো। তারপর এক পিস-দুই পিস করে বিনিময় করা হতো। অনেক সময় আরও বেশি। এগুলো অনেকটা বাজির মতো ছিল।

২| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:১৮

শায়মা বলেছেন: কেনো??? :(

এই সব দিয়ে কি করতে তোমরা!!!

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৪৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: টোনাপাতি খেলার সময় মালামাল কিনতে যেমন গাছের পাতা বিনিময় করতাম, সেটারই আপডেট ভার্সন এই কট বা নুই খেলা আর দিয়াশলাইয়ের খোল বিনিময় করা।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৪৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: কাঁটালতার স্মৃতিমালা ভালো লাগলো।

খেলাধুলার স্মৃতিগুলো অনেকটা ভুলে গিয়েছিলাম, আপনার লেখা পড়ে সেই স্মৃতিগুলো মনে পড়লো। পৃথিবীটা যে একটা বৃহৎ খেলাঘরও বটে, শৈশব-কৈশোরে প্রাণ ভরে আপনার মতই বিভিন্ন খেলা না খেললে সেটা হয়তো বড় হয়ে বুঝতে পারতাম না।

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: নানান রঙের দিনগুলি সোনার খাঁচায় বন্দি রইল না।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৫৩

শায়মা বলেছেন: হায় হায় টোনাপাতি, কট নুই ভাইয়া গেছি!!! :(


যাইহোক তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে তারার পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা আমায় ডাকলে ....... গানটা গাই তোমার এই লেখা যতবার পড়ি.....

০৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শব্দগুলো আঞ্চলিক। যথাযথ শুদ্ধ বাংলা জানি না।

৫| ০৭ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৮

বিষাদ সময় বলেছেন: বিষাদময় হলেও ভাল লাগছে জীবন সংগ্রামের গল্প। চলতে থাকুক, সাথে আছি।

০৭ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এ অংশে বিষাদ একটু কমই মনে হচ্ছে। কিছু কিছু এড়িয়ে গেছি।

৬| ০৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:৪৫

করুণাধারা বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ে আসবো পরে।

০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিক আছে। বুদ্ধি-পরামর্শ থাকলে বলবেন।

৭| ০৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:৪৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পিছনে মায়েদের অনেক অবদান থাকে। সাধারণত বাবাদের চেয়ে মায়েদের অবদান বেশী থাকে। বেশীর ভাগ বাবা সময় দিতে পারে না আয় রোজগারের কারণে।

আপনার ফুটবলের প্রতি অনুরাগ শুনে ভালো লাগলো। এছাড়া আরও অনেক খেলাধুলা করেছেন। বোঝা যাচ্ছে বৈচিত্র্যময় শৈশব ছিল আপনার। হাই স্কুলে আমরাও নিয়মিত বিকেলে ফুটবল খেলতাম। ফুটবল ছাড়াও অন্যান্য খেলাও খেলতাম (যেমন বাস্কেটবল, হকি, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট, টেবিল টেনিস, দাবা, ক্যারাম। অল্প কিছু সময় খেলেছি টেনিস, স্কোয়াশ, বিলিয়ার্ড) । বন্ধের দিনেও অনেক সময় প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে কাদায় মাখামাখি করে ফুটবল খেলতাম। কাদার মধ্যে ফুটবল খেলা আরও মজার ব্যাপার। আমাদের খেলার মাঠের পাশে ছিল পেয়ারা বাগান। ইচ্ছে করে ফুটবল ছুড়ে মারতাম পেয়ারা বাগানে। ফুটবল আনতে গিয়ে পেয়ারা নিয়ে আসতাম চুরি করে। এছাড়া আরও ছোটবেলায় খেলেছি টেনিস বল দিয়ে সাত চারা, বোম বাস্টিং, দাড়িয়াবান্ধা, হাডুডু, গোল্লা ছুট, ছি বুড়ি, এক্কা দোক্কা (কুতকূত), ড্যাঙগুলি, লাটিম, চারা খেলা (ফিলটার ছাড়া সিগারেটের প্যাকেট পাওয়া যেত জিতলে), ঘুড্ডি ওড়ানো, মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, ওপেনটি বাইস্কোপ, কানামাছি, একটা খেলা ছিল চোখ বন্ধ করা বাচ্চার কপালে টোকা দেয়ার এটার নাম ভুলে গেছি, আমার বোন পুতুল খেলতো, রুমাল পিঠের পিছনে লুকিয়ে রাখার একটা খেলা ছিল (নাম জানি না। কয়েকদিন আগে গ্রামে গিয়ে আমার এবং গ্রামের বাচ্চাদের শিখালাম)।), রান্নাবাটি খেলা, গুলতি খেলা, বাশের কঞ্চি দিয়ে বানানো তীর ধনুক দিয়ে খেলা, লুডু, মার্বেল খেলা, লুকোচুরি খেলা (টিলেসপ্রেস বলতাম), বরফ পানি খেলা, রস কষ শিঙ্গারা বুলবুলি মদ্দান খেলা, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা, চোর ডাকাত দারোগা পুলিশ খেলা, কলা গাছের ভেলা বানিয়ে খেলা, বারুদের রোল সহ খেলনা পিস্তল, কাঠের খেলনা বন্দুক, এয়ার গান, দেশী কুকুরের বাচ্চা পালা, ছিপ দিয়ে পুকুরে মাছ ধরা। বিদেশী খেলার মধ্যে খেলেছি মাইন সুইপিংয়ের খেলা খেলতাম খাতায় ঘর কেটে, মনোপলি, স্ক্রাবল গেম (ওয়ার্ড মেকিং গেম), ডমিনো গেম, মাস্টার মাইন্ড গেম, জিগ স পাজল গেম, রুবিক্স কিউব, একটা খেলা ছিল অনেকগুলি সরু কাঠি হাতে মুঠ করে ধরে ছেড়ে দিতে হয় তারপর একটা একটা করে কাঠি সরাতে হয় অন্য কাঠি না নড়িয়ে, স্ট্যাচু খেলা, বিল্ডিং সেট নিয়ে খেলা, সাবান দিয়ে বাবল বানানোর খেলা, আইস এবং রোলার স্কেটিং। উপরে আরও কিছু খেলা হয়তো বাদ পড়ে গেছে।

আমাদের সামনে দিয়ে ভিসিআর আসলো আবার চলে গেল। ১৯৮০ সালে ভিসিআরের নাম শুনেছি আর প্রথম ভিসিআর দেখেছি ১৯৮২ সালে। সম্ভবত নসিব সিনেমাটা প্রথম দেখেছিলাম। ১৯৯৭/ ৯৮ সালের পরে সম্ভবত আর ভিসিয়ার দেখা হয় নাই। তখন সিডি চলে এসেছে সম্ভবত।

প্রথম গল্পের বই হল ঠাকুরমার ঝুলি ক্লাস ওয়ানে যখন ছিলাম। কিছু নিজে পড়তে পারতাম আর কিছু আমার মা পড়ে শুনাতেন। বেগম পত্রিকা বাসায় আসতো। সেটাতে সম্ভবত কৌতুক থাকতো। বন্দে আলী মিয়ার একটা রূপকথার গল্প ঐ সময়ে পড়েছিলাম। ক্লাস টু তে ছোট ফুফু, বড় বোন আর ভাই পড়তো মাসুদ রানা। বাসায় প্রায় ২৫/৩০ টা সেবা প্রকাশনীর 'কুয়াশা' বই ছিল। আমার কাছে এখনও কুয়াশার কিছু পিডিএফ আছে। এখন অবশ্য খুঁজে পাবো কি না জানি না। আমার নায়ক হল কুয়াশা। আমি সব পড়েছিলাম ঐ সময় বহুবার করে। ঐ সময় বাসায় সাপ্তাহিক বিচিত্রা রাখতো। এটা পুরোটা পড়তাম। আমার চাচা এবং ফুফুদের পুরানো ট্রাঙ্কে কিছু রাশিয়ান রুপকথা/ উপকথার বই ছিল। খুব মজা পেতাম পড়ে। অনেকবার পড়েছি। এখন আর খুঁজে পাচ্ছি না বাসাতে। এগুলি ক্লাস থ্রির কথা বলছি। বড় রাম আর ছোট রামের গল্প পড়েছিলাম সেই সময়। কিন্তু এই বই আর পড়ে খুঁজে পাই নাই বড় হয়ে। এছাড়া ঐ সময় বেশ কিছু বিদেশী গল্প/ উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত বাঙলা অনুবাদ পড়েছিলাম। বাচ্চাদের জন্য লেখা হয়েছিল। যেমন নটরডেমের কুঁজো, রবিন হুড, আইভান হো, লা মিজারেবল, ফ্রাঙ্কেন্সটাইন, হোমারের অডিসি এবং ইলিয়াড, প্রিন্স এন্ড দা পপার, ডক্টর জেকিল মিস্টার হাইড, ইনভিসিবল ম্যান। মা রিডারস ডাইজসেসট রাখতেন। সেগুলি ইংরেজিতে তাই পড়ার চেষ্টা করলেও বুঝতাম না বললেই চলে। সেবার ওয়েস্টার্ন এবং অনুবাদ বই প্রচুর পড়েছি। একটু বড় হলে অন্য কিছু প্রকাশনীর কিছু এক্স রেটেড বই পড়তাম। ডিগ্রি লেভেলে যখন পড়ি নীলক্ষেতের সাহিত্য সম্পর্কে হাল্কা পাতলা জ্ঞান লাভ হয়। কলেজের লাইব্রেরীর একটা বই সবাই পড়েছে। সেটার নাম হ্ল টু সিটার গাড়ির রহস্য। যারা জীবনে কোন গল্পের বই পড়ে নাই তারাও পড়েছে। আমার পড়া সব চেয়ে মোটা উপন্যাস হল কাউনট অব মনটিক্রিসটো। প্রায় ১০০০ পাতার হবে। সেবার আত্ম উন্নয়নের বইও অনেকগুলি পড়েছি। ক্লাস টুয়েলভের পরে বই পড়া কমে গেছে বিভিন্ন কারণে। এখন বই পড়ি খুব বেছে বেছে।

০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:২৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার মন্তব্যটা তাৎপর্য পূর্ণ। এখানে অনেক খেলার উল্লেখ করেছেন যেগুলো আমিও খেলেছি, কিন্তু লিখতে ভুলে গেছি। যোগ করে দেব। আপনি বই পড়ার যে বিবরণ দিলেন, তা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। আমার আমার এতটা সুযোগ ছিল না। পাঠ্যবইয়ের বাইরে খুব কম বই পড়া হয়েছে। মেজোবোন কিছু কিছু উপন্যাস পড়ত, লুকিয়ে সেসব পড়তাম। এর বাইরে উপরের ক্লাশের বই থেকে গল্প-কবিতা পড়তাম। সাহিত্য নিয়ে ভালোভাবে পড়া শুরু করেছিলাম অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর।

৮| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:১৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনার সিরিজটা ভালো লাগছে! আপনার মায়ের দূরদর্শিতার প্রশংসা করতেই হয়। আপনার শৈশবের বৈচিত্র্যময় খেলাধুলার গল্প ও ভালো লাগলো। চমৎকার।


@চুয়াত্তর একটা খেলা ছিল চোখ বন্ধ করা বাচ্চার কপালে টোকা দেয়ার এটার নাম ভুলে গেছি,
এইটা ফুলটোকান্তি খেলা বলতাম আমরা.
রুমাল পিঠের পিছনে লুকিয়ে রাখার একটা খেলা ছিল
এই খেলার নাম রুমালচুরি

০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: মামারা বেশিরভাগ প্রবাসী ছিলেন। তাদের ইচ্ছে ছিল এসএসসির পর যেন বিদেশ চলে যাই। মা তখনও চেয়েছেন যেন পড়ালেখা্ করি।

৯| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৩০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: মনিরা আপুকে অনেক ধন্যবাদ খেলাগুলির নাম মনে করিয়ে দেয়ার জন্য। :)

একদম ছোটবেলায় আমরা বাচ্চারা যখন এই খেলাগুলি খেলতাম তখন একটা বড় আপু খেলার শেষে আমাদের বিভিন্ন রকম উপহার দিতেন বিভিন্ন রকমের হাতে তৈরি জিনিস। ওনার কথা এখনও মনে পড়ে।

০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৩৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার গ্রামের বাড়ি কোথায় ছিল?

১০| ০৮ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৫০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি জেলাতে। ঝালকাঠি সদর থানাতে। গ্রামের নামটা বললাম না। :) তবে আমি ৬ বছর বরিশালে ছিলাম। ৪ বছর যশোর ছিলাম (একটানা না) , ৩ বছর টাঙ্গাইল ছিলাম, ৬ মাস সাভারে ছিলাম। গত প্রায় ৩ বছর হল চট্টগ্রামে আছি। বাকি সময় ঢাকাতে ছিলাম। জন্ম এবং শৈশবের উল্লেখযোগ্য অংশ ঢাকাতে। তবে আমি ঢাকাকে পছন্দ করি না বাসের জন্য। তবে ১৯৭০ শেষের বছরগুলিতে এবং ১৯৮০ র দশকের ঢাকা শহর কিন্তু ভালোই ছিল। বাবা মায়ের কাছে শুনেছি যে ১৯৬০ দশকে ঢাকা বেশ সুন্দর ছিল। তারও আগে ঢাকা সত্যিই সুন্দর ছিল। বিভিন্ন গাছ গাছালি, উদ্যান আর জলাশয়ে ভরা সুন্দর ঢাকা শহর ছিল। চোখের সামনে ধীরে ধীরে ঢাকাকে নষ্ট হতে দেখেছি ১৯৭০ এর দশক থেকে।

০৮ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৮:৩৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সম্ভবত আপনারা বাবা সরকারি চাকরি করতেন; নানান জায়গায় পোস্টিং হওয়ায় এত এত জায়গায় থাকার সুযোগ হয়েছে। দারুণ ছেলেবেলা পেয়েছেন আপনি। আমার জীবনের প্রথম ১৭ বছর ময়মনসিংহের একটা উপজেলাতেই কেটেছে। এরপর দু'বছর আরেকটা উপজেলায়; এরও পর কয়েকবছর ময়মনসিংহ সদরে। এরপর আবার জন্ম উপজেলায় দেড়-দু'বছর। এরও পর গাজীপুর। এখন ঢাকা। ঢাকার জীবন খারাপ না, তবে এত হাউকাউ আর জীবনযাত্রার ব্যয়ে হাঁপি ওঠেছি্।

১১| ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ২:৩০

ফিনিক্স পাখির জীবন বলেছেন: আপনার লেখাগুলো পড়ে নস্টালজিক হয়ে যাই। যদিও শহরেই জন্ম, শহরেই বেড়ে ওঠা, তবু প্রতি বার্ষিক পরীক্ষার পর কিংবা মাঝে মাঝে ঈদে-চাদে, গরমের ছুটিতে বেশ গ্রামে যাওয়া হত। দাদাবাড়ি আর নানাবাড়ি। টোনাটুনি খেলা, বনভোজন, পাতার বাশি বাজিয়ে ঝা ঝা রোদে গ্রামের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো আর ফুটবল খেলা। নানাবাড়িতে মিলন ভাই নামে একজন থাকতেন, ঘরে বাইরে কাজে সাহায্য করতেন। তিনিই আমাকে দরজার মাঝে দেবার পুরোনো হয়ে যাওয়া থান (তক্তা) কেটে একটা ব্যাট বানিয়ে দিয়েছিলেন। জীবনের প্রথম ক্রিকেট ব্যাট আমার। এখনো যেন চোখে ভাসে। কলাগাছের খোল আর রাবার ব্যান্ড দিয়ে বানিয়ে দিতেন স্টীমার, পুকুরে ছেড়ে দিয়ে মজা করতাম আমরা, খালাত ভাই বোনেরা।
মাছ ধরার জন্য পুকুর সেচার সময় পানির মধ্যে খেলতাম, মাছ ধরতাম। আধ সেচা পুকুর আবার রাতে পুকুর পাড়ে শুয়ে-বসে পাহারা দিতে হত। মজাই লাগত।
ক্ষেত থেকে তুলে কত ক্ষীরা-টমেটো খেয়েছি, হিসেব নেই। ধান মাড়াইয়ের সময় খড়ের স্তুপের পিছে লুকোচুরি খেলা, খড়ের মধ্যে গড়াগড়ি করা। একবার আমার এক ভাগ্নে এক খড়ের স্তুপে এক্সপেরিমেন্ট করে আগুন লাগিয়ে দিল! সে কি হুড়োহুড়ি। আগুনে পুরো স্তুপ্টাই জ্বলে গেল। ভোর বেলা দুলাভাইয়ের হাতে ভাগ্নের দফারফা!
এরকম হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ স্মৃতি।
আপনার উছিলায় মনে পড়ে গেল। ভাল লাগল অনেক।
ধন্যবাদ।

১৫ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:২৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কী সব দিন ছিল ভাবতেই রোমাঞ্চিত হতে হয়। কলাগাছের খোল আর রাবার ব্যান্ড দিয়ে বানিয়ে দিতেন স্টীমার, পুকুরে ছেড়ে দিয়ে মজা করতাম আমরা, খালাত ভাইবোনেরা। আমাদের পুকুরে মাঝেমাঝে সারাদিন ভাসতাম। মায়ের বকুনিও পুকুর থেকে তুলতে পারত না।

১২| ১৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪১

মিরোরডডল বলেছেন:





কট বা নুই নামে এক ধরনের খেলা ছিল।

নাম শুনিনি কখনও।

কিন্তু কখনও বলা হয়নি যে তার কণ্ঠে এই গানটা আমার দারুণ লাগত

সময় সুযোগ হলে না বলা কথাটা বলবে।
নইলে পরে একসময় আফসোস হবে।

আমার ভাইকে আমার আরও অনেক কিছু বলার ছিলো।
তার অনেক কিছু যা আমার ভালো লাগতো।
ওর মাঝে অসাধারণ কিছু বিষয় ছিলো।
বলবো বলবো করে বলা হয়ে উঠেনি।
তখন বুঝিনি এভাবে চলে যাবে, না বলা কথাগুলো আর বলা হবে না।




১৭ ই জুন, ২০২৪ রাত ১:০৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সময় সুযোগ হলে না বলা কথাটা বলবে। নইলে পরে একসময় আফসোস হবে। এবার বাড়ি গেলে অবশ্যই বলব। সম্ভব হলে গানটা আবার তার কণ্ঠে শুনব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.