নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (চতুর্থাংশ)

১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:২৭


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (তৃতীয়াংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয়াংশ)
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমার ছয় কাকার কোনো কাকা আমাদের কখনও একটা লজেন্স বা একটা বিস্কুট কিনে দিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। আমাদের দুর্দিনে তারা কখনও এগিয়ে আসেননি। আমরা কী খেয়ে আছি, আদৌ খেয়েছি কি না; সে ব্যাপারেও কখনও জানতে চাননি। কেন চাননি কে জানে! মাকে এ ব্যাপারে জিগ্যেস করে কখনও কোনো সদুত্তর পাইনি। মা একা হাতে পুরো সংসার সামলেছেন। ঝড়-ঝঞ্চায় বাড়ির চারপাশের বেড়া ভেঙে গেলে মা আমাদের নিয়ে ঠিক করতেন।

মায়ের কাছ থেকে এটা-ওটা আবদার করে আমাদের সবসময়ই হতাশ হতে হতো। কারণ, মায়ের হাতে খুব কম সময়ই টাকা-পয়সা থাকত। বাবা তেমন টাকা পাঠাতে পারতেন না। মা আমাদের এটা-ওটা বলে বুঝ দিতেন। আর বলতেন, “তোদের বাবা দেশে এলে সব হবে।”

ছোটো আমি মাঝেমধ্যে কাউকে না বলে ঘর থেকে চাল চুরি করে নিয়ে যেতাম। তারপর স্থানীয় নারাঙ্গী বাজারে সেটা বিক্রি করে ‘মজা’ খেতাম। বৃহস্পতিবার ছিল এখানকার হাটবার। বড়ো পরিসরে বাজার বসত। সেদিন আমাদের আনন্দের সীমা থাকত না। আমার সাথে আমার ছোটো কাকাতো ভাইবোনেরাও যেত। অনেকসময় এমন হয়েছে যে, ওদের কিছু খাওয়াতে গিয়ে আমি নিজে কিছুই খেতে পারিনি।
আমাদের ঘরের পেছনে একটা পেয়ারা গাছ ছিল। সে গাছে অনেক পেয়ারা ধরত। অনেকদিন পেয়ারা পেড়ে বড়ো বুলে করে হাটে নিয়ে যেতাম। দুই টাকা হালি বিক্রি করতাম। আর আসার সময় পাঁচ টাকা ভাগা গুড়া মাছ নিয়ে আসতাম, সাথে কচু। মা মজা করে রান্না করতেন।

কয়েকটা হাঁস ছিল আমাদের। ডিম পাড়লে সেগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতাম। এছাড়া মায়ের লাগানো গাছ থেকে কলা, লাউ তুলে বিক্রি করে দৈনন্দিন খরচ মেটাতাম।

শৈশবের ইদের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে আমার। বোনেরা ইদের সময় নতুন জামা-কাপড়ের বায়না ধরত। এক ইদে না পেলে অন্য ইদে ঠিকই পেত। আমি কখনও কোনো ইদে জামা-কাপড় পাইনি। বোনদের দেওয়ার পর আমার জন্য বরাদ্দ থাকত না। দেখা যেত স্কুলে পরার যে জামা ছিল, সেটা পরে ইদ কাটত।

মায়ের অসহায়ত্ব আমি বুঝতাম। তাই একটু বড়ো হওয়ার পর দাবি-দাওয়া কমতে থাকে আমার। মা গর্ব করে বলতেন, “আমার ছেলেটা সংসারের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে শিখে গেছে।”

কোনো কোনো ইদে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো আমাদের। তখন না বুঝলেও এখন বুঝি কেন পাঠিয়ে দেওয়া হতো। মায়ের সাধ্য ছিল না নতুন জামাকাপড় কিনে দেওয়ার। মামারা যদি তাদের ছেলেমেয়েদের সাথে আমাদেরও জামা কিনে দেন, মা সে ইচ্ছে পোষণ করতেন।

মামারা আমাদের যথেষ্ট আদর-যত্ন করতেন। তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য যেসব জামা-কাপড় কিনতেন, আমাদের জন্যও একই রকম জামা কিনতেন। শৈশবে যেসব জিন্স বা গেঞ্জি পরতাম, সবই মামাদের কিনে দেওয়া। আমার ছয় মামা আরব দেশে থাকতেন। সেখান থেকে জিনিসপত্র পাঠাতেন।

যখন একটু বড়ো হলাম, তখন কিছু কিছু বৈষম্য চোখে পড়ত। যেমন ইদের সময় মামাত ভাইবোনেরা ২০০-৩০০ টাকা করে সালামি পেলেও আমি পেতাম ৫-১০ টাকা। মনে মনে জেদ চাপত; ভাবতাম, আমার বাবা বিদেশ থেকে এলে আমিও নিশ্চয়ই বেশি করে টাকা পাব।

মামাত ভাইয়েরা সেসময়ই নতুন মোবাইল ফোন পেয়েছিল। আমি ওদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে সেসময়কার হিন্দি গানের ভিডিও দেখতাম। ওরা মাঝেমধ্যে বিরক্ত হয়ে যেত। যদিও কিছু বলত না।

আমি প্রথম মোবাইল পেয়েছিলাম কলেজে উঠার পর, তাও সেটায় ছবি তোলা যেত না, গান শোনা যেত না।

এক ইদে মামার বাড়ি গেলাম। মামাত ভাইদের সাথে ঘোরাঘুরি করতে করতে হঠাৎ মায়ের কথা মনে পড়ল। আমি প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করলাম কেন মা আমাকে মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমার মা ইদের দিন ভালো কিছু খেতে পারবেন না, পরতে পারবেন না আর আমি মামার বাড়ি থেকে ভালো খাব, ভালো পরব- এসব ভেবে জন্মের কান্না পেল। আমি দৌড়ে গিয়ে আমার জামা-কাপড় গোছাতে লাগলাম। এক মামি জিগ্যেস করলেন, “কী হয়েছে?” আমি কাঁদতে কাঁদতে শুধু একটা কথাই বললাম, “মায়ের কাছে যাব।”

এর পর বাড়ি চলে আসি। আর কখনও কোনো ইদে মামার বাড়ি যাইনি।

চলবে...

ছবি: প্রতীকী

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ৯:৪৮

শায়মা বলেছেন: অনেক ভালো লাগা লেখায়। ছোট্ট তোমাকে দেখতে পাচ্ছি ভাইয়া। :)

১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:০৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: চিরদিনের সেই আমি!

২| ১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ১০:২৮

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর। আমি ও এবার ঈদে মায়ের কাছে যাবো।

১৪ ই জুন, ২০২৪ রাত ১১:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার যাওয়া হবে না।

৩| ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ১:৪০

শ্রাবণধারা বলেছেন: সুন্দর, মন ছুঁয়ে যাওয়া একটা লেখা। বিশেষ করে শেষের দিকে মায়ের কথা মনে পড়ে মামার বাড়ি থেকে চলে আসার ঘটনাটি অভিভূত করলো।

বৈষম্য সত্ত্বেও ছোটবেলায় মামা-মামিদের আদর-স্নেহ পেয়েছিলেন, এটা জেনে ভালো লাগলো।

১৫ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার মন্তব্যে প্রীত হলাম।

৪| ১৫ ই জুন, ২০২৪ রাত ২:৩৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। চলতে থাকুক, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

১৫ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন।

৫| ১৫ ই জুন, ২০২৪ ভোর ৪:০৬

কামাল১৮ বলেছেন: পড়তে পড়তে মামা বাড়ীর কথা মনে পড়ে গেলো।সে সব কতো স্মৃতি।আজ মামা খালারা কেউ বেঁচে নেই।
সরল স্বীকারোক্তি জন্য লেখা মর্মস্পর্শী হয়েছে।


১৫ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনি তো কিছুই লেখেন না। রাজনৈতিক কিছু না লিখলেও অন্তত জীবনের ছোটোখাটো ঘটনাগুলো লিখতে পারেন।

৬| ১৫ ই জুন, ২০২৪ সকাল ৮:১৭

সোহানী বলেছেন: মন খারাপ করা লিখা।

১৫ ই জুন, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমাদের ওই সময়গুলো খুব বেদনাদায়ক ছিল।

৭| ১৫ ই জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

ইসিয়াক বলেছেন: আপনার জীবনটা তাও কত সহজ ছিল।অন্তত কঠিন সময় কিছু আত্নীয় পাশে ছিল। আমাদের কেউ ছিল না। অবশেষে কাজের বিনিময়ে এক সহৃদয়ের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলাম দারুণ বিপদের দিনে। তার উদ্দেশ্য প্রথমে ভালো থাকলেও পরবর্তী নানাকারনে তার/তাদের সীমাহীন লোভের খেসারত দিয়ে আবারও রাস্তায় এসে দাঁড়িছিলাম।
জীবনে লড়াই করতে আমার কোন অলসতা নেই। একটু ভালো মুখ ভালো ব্যবহারে কত জনের কত কাজ করে দিয়েছি। তবু একটা পরিবার, একটু ভালোবাসার সন্ধান পাওয়া হলো না এ জীবনে । বড় স্বার্থপর এই দুনিয়া। তবু কিসের টানে নিরন্তর ছুটে চলা... আপনার সফলতা কামনা করছি। ভালো দিন আসবেই।

১৫ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অবশেষে কাজের বিনিময়ে এক সহৃদয়ের বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছিলাম দারুণ বিপদের দিনে। তার উদ্দেশ্য প্রথমে ভালো থাকলেও পরবর্তী নানা কারণে তার/তাদের সীমাহীন লোভের খেসারত দিয়ে আবারও রাস্তায় এসে দাঁড়িছিলাম। বিস্তারিত লিখবেন প্লিজ। জানতে চাই।

৮| ১৫ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৪:০০

ঢাবিয়ান বলেছেন: আপনার এই সিরিজের লেখাগুলো পড়লে পথের পাচালীর অপু দুর্গার কথা মনে পড়ে। মনে ছুয়ে যাবার মত একটা লেখা। আপনার লেখার হাত বেশ ভাল। ঝরঝরে লেখা। আপনি এই সিরিজটা নিয়ে সামনের বইমেলায় বই বের করার কথা ভাবতে পারেন। এই সিরিজটা পাঠকপ্রিয়তা পাবার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে। হয়ত কিছুটা কাটছাট বা সম্পাদনার প্রয়োজন আছে। কত হাজার হাজার মানহীন বই প্রতিবছর বই মেলায় বের হয় , আর সেখানে আপনার লেখাতো যথেষ্ঠ মানসম্পন্ন। বই বের করতে খরচ কত হতে পারে ব্লগে জানাতে পারেন। আমার মনে হয় সব ব্লগাররা মিলে এই খরচটা বহন করা যায়।

১৫ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লেখাগুলো একত্র করে আবার এডিট করছি। প্রকাশক পেলে বই করব। আপনার/আপনাদের সহযোগিতা কাম্য।

৯| ১৫ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৫

সামরিন হক বলেছেন: লেখাটা পড়ে দু’চোখ জলে ভরে উঠল।
এটা কি লেখকের জীবনকাহিনী ? জানবার ইচ্ছে রইলো।

শুভেচ্ছা রইলো।

১৫ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এটা কি লেখকের জীবনকাহিনী? হ্যাঁ। লেখাটা আপনাকে আলোড়িত করেছে জেনে ভালো লাগল।

১০| ১৫ ই জুন, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

ইসিয়াক বলেছেন: আমার ব্লগে লেখা যাপিত জীবন সিরিয়ালে সব ঘটনাই সত্য। দুর্বিষহ শৈশব সিরিজে চারটি পর্বে আছে। এছাড়া আমার উপন্যাস "নিমফুলের গন্ধ " আমার স্মৃতি কথা বলা চলে।
সবশেষে আমার নতুন সিরিজ " আমাদের গল্পগুলো" আমার জীবনের বাস্তব সত্য। এক পর্ব দিয়েছি। স্মৃতি হাতড়ে লিখছি একটু সময় লাগবে।ইদের পরে আরেক পর্ব পোস্ট করবো নিশ্চয়।

১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার লেখাগুলোও যে বাস্তব ঘটনা, পড়তে গেলে বোঝা যায়। লিখুন। একসময় বই করা যাবে।

১১| ১৬ ই জুন, ২০২৪ রাত ১:০২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: চাচারা আপনাদের দিকে ফিরে না তাকালেও আপনি চাচাতো ভাই বোনদের চাল বিক্রি করে খাবার খাইয়েছেন হাঁটে গিয়ে। এটা আপনার মহানুভবতার পরিচয়। কম বয়স থেকেই জীবনের বাস্তবতা বুঝতে পেড়েছিলেন। আপনার মা-ও সেটা বুঝতে পেড়েছিলেন তাই আপনাকে নিয়ে গর্ব করতেন। শৈশবের এই গুণাবলী এখন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। আপনি অবশ্যই অনেক দূর যাবেন।

মামা বাড়ি থেকে ফিরে আসাটা হয়তো ঠিকই ছিল। আপনি স্বার্থপর না এবং মাকে ভালোবাসেন এই কারণেই ফিরে এসেছিলেন।

১৬ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.