নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
রাস্তার পাশ দিয়ে আনমনে হাঁটছিলাম। মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত। পৃথিবীর প্রতি কেমন বিরক্তি জন্মে গেছে। এলোমেলো চিন্তা মাথায় ভর করছিল। এমন সময় একজনকে সামনে দিয়ে যেতে দেখা গেল। খুব চেনা চেনা লাগল তাকে। কে সে?
হ্যাঁ, চিনতে পেরেছি। মনে মনে যাকে অনুমান করেছিলাম, সে-ই। কিন্তু অনেকটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার মধ্যে। আগেও মোটা ছিল অবশ্য, এখন একটু বেশিই লাগছে। অথচ আমার তেমন পরিবর্তন হয়নি। পঁচিশ বছরের আমি যেমন ছিলাম, এখনও তেমনই আছি। তেরো বছরের সে এত বদলে গেল কী করে?
সাথে কে হেঁটে যায় মধ্যবয়সী লোকটা? তার বর হতে পারে। অনেক আগেই শুনেছিলাম তার বিয়ে হয়ে গেছে।
দু’জন একটা গলির ভেতরে ঢুকল। আমিও তাদের পিছু নিলাম। বাসাটা কোথায় দেখা দরকার।
তালা খুলে তিনতলার এক নম্বর ঘরে প্রবেশ করল তারা। আমি এসে দাঁড়ানোর আগেই দরজা বন্ধ করে দিল। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। ভাবলাম, কলিং বেলে চাপ দিই। একটু সুখ-দুঃখের আলাপ করা যাক। চলে আসার পর তার সাথে আর কথা হয়নি। সে কি এখনও নাচে? পড়ালেখা কি চালিয়ে যাচ্ছে? তার ছোটো বোনটা, কী যেন নাম? হ্যাঁ, প্রীতি; তার কী খবর? তার মায়ের সাথে যোগাযোগ আছে?
কলিংবেলে চাপ দিলাম। বাজল কিছুক্ষণ। অথচ কেউ দরজা খুলল না। মনটা খুব খারাপ হলো। অপমানিতও বোধ করলাম। এক পাশে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
একটু পর বারো-তেরো বছরের এক কিশোরী এসে কলিংবেলে চাপ দিল। এবার দরজা খুলে গেল। কিশোরী মেয়েটা ভেতরে ঢুকে গেল। তার সাথে ভেতরে ঢুকতে যাব; এমন সময় পেছন থেকে কেউ একজন আমার কাঁধে হাত রাখল।
“কে?” আমি চিৎকার করে উঠলাম।
পেছনে তাকাতেই দেখি বিপুল। আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বন্ধু। বহুবছর পর তার সাথে দেখা হলো। তার চেহারাটা এখনও মনে আছে আমার, যদিও অনেকটা পরিবর্তন এসে গেছে।
তার সাথে সর্বশেষ যেদিন ফুটবল খেলেছিলাম, সে স্মৃতিও মনে আছে। খুব দৌড়াতে পারত সে। একটা বর্ণ ভুল শিখিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক। সে সেটা শুধরে দিয়েছিল। বর্ণটা ছিল ং। শিক্ষক উচ্চারণ করতেন উনিসকার। আসলে ওটা হবে অনুস্বার।
“এতদিন পর?” বিপুলকে জিগ্যেস করলাম।
সে হাসল।
“তোমার সাথে অনেক কথা আছে। তার আগে চলো এই বাসা থেকে একটু বেড়িয়ে যাই। তুমি জানো না একটা মেয়েকে আমি খুব পছন্দ করতাম। তার হাসিটা ছিল অসম্ভব সুন্দর। টেনে টেনে কথা বলত যখন, কী যে ভালো লাগত!” এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললাম।
বিপুলের মুখটা কালো হয়ে গেল। থমথমে গলায় বলল, “ওরা কেউ তোমার সাথে কথা বলবে না।”
“কেন?” অবাক হয়ে জানতে চাইলাম।
“কারণ, মৃতদের সাথে কেউ কথা বলে না।” বিপুল বলল।
বিপুলের কথা শুনে আমার বিস্ময় কাটে না। একটু দম নিয়ে বলতে লাগল, “মৃতদের বয়স কখনও বাড়ে না। স্থিরচিত্রের ন্যায় একই জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।”
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, ওর বয়স এত বাড়ল কীভাবে, যেখানে আমি এখনও আগের মতোই আছি। “আমি কি তাহলে মৃত?” বিপুলকে জিগ্যেস করলাম।
“হ্যাঁ, তুমি মৃত। জাগতিক সকল চাওয়া-পাওয়ার উর্ধ্বে উঠে গেছ?” বিপুল বলল।
“তুমি আমার কথা বুঝতে পারো কীভাবে? তুমিও কি মৃত?”
“হুঁ। আমিও মৃত। সড়ক দুর্ঘটনায় আমার মৃত্যু হয়েছিল।
দূরে কোথাও কোকিল ডাকছে। বড় সুমধুর সে ধ্বনি। মন-প্রাণ জুড়িয়ে দিচ্ছে। এত শান্তি কখনও পাইনি। বিপুলকে বললাম, “চলো কোকিলের সাথে কথা কই। লোকালয়ে আর আসব না। আমরা তো এখন অন্যভুবনের বাসিন্দা।”
বিপুল বলল, “চলো।”
আমরা দুই বন্ধু হাত ধরাধরি করে প্রকৃতিতে মিশে যাচ্ছি। নাগরিক কোলাহল আর কানে আসছে না।
৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
ছবি: কোকিল
০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধণ্যবাদ আপনাকে। শুভেচ্ছা রইল।
২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৪
শায়মা বলেছেন: আহা!
আমারও ধারনা মৃত্যুর পর আত্মারা এমনই ঘুরে বেড়ায়।
শক্তিহীন কিছু ধরতে পারে না, কথা বলতে পারে না, দেখাও দিতে পারে না।
শুধু দেখা দিলেই ভূত হয়ে যায়। সবাই তাকে ভয় পায়।
০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হতে পারে সবই আমাদের কল্পনা !
৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩১
আহমেদ জী এস বলেছেন: রূপক বিধৌত সাধু,
ভালো হয়েছে লেখা।
এ সময়ের নাগরিক কোলাহল আর না শোনাই ভালো! এখানে আর কোকিল ডাকে না, কেবল কাকের কা ... কা শোনা যায়...........
০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: সত্যিই ঢাকা শহরে কোকিলের ডাক শোনা যায় না, শোনা যায় কাকের ডাক।
৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১০
নয়ন বড়ুয়া বলেছেন: চমৎকার হয়েছে লেখা...
মৃত্যুরপরের জীবনটা হয়তো এমনই হয়...
কে জানে!
১১ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হতেও পারে।
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো লাগলো!