![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
স্কুলে ক্লাস করাচ্ছিলাম। হঠাৎ ফোন এলো ফুফুর যায় যায় অবস্থা। আমাকে এখনই যেতে হবে। পকেটে কানাকড়ি নেই। কী করে যাব? কিছুদিন আগে এক জ্যাঠা মারা গেছেন, তখনও যেতে পারিনি।
প্রধান শিক্ষককে ছুটির কথা বললাম। সব শুনে ছুটি দিলেন তিনি। অস্বস্তি হচ্ছিল এটা বলতে যে, আমার কাছে কোনো টাকা-পয়সা নেই। মাত্র কয়েকদিন হলো এখানে জয়েন করেছি।
লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেললাম। উনি ক্যাশে বলে দিলেন পাঁচশো টাকা দেওয়ার জন্য। টাকাটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহগামী গাড়িতে উঠলাম। ফুফুর কথা বারবার মনে পড়ছিল। উনাকে সবশেষ দু’বছর আগে দেখেছিলাম উনার মেয়ে হাজেরা আপার বাসায়। আমাকে খুব আদর করলেন। ভাত বেড়ে খাওয়ালেন। খুব দুঃখ করলেন এই ভেবে যে, ভাইপোর এখনও কোনো একটা গতি হলো না।
ভরাডোবা এসে গাড়িটা থামল। সেখান থেকে অটোরিকশায় চড়ে বগাজান চলে এলাম। ফুফুর বাড়ি চিনি না। এসেছিলাম প্রায় এগারো বছর আগে। এখন চারপাশ বদলে গেছে।
ফোন দিলাম হাজেরা আপাকে। উনি উনার মেয়ে মিলিকে পাঠালেন আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরমধ্যে আমি রিকশা নিয়ে নিলাম। ভাবলাম, মিলির সাথে পথেই দেখা হবে।
রিকশা চলতে লাগল অনেকক্ষণ ধরে। পথঘাট চিনতে পারছি না। রিকশাওয়ালা জিজ্ঞেস করলেন, “কোথায় যাবেন?”
বললাম, “নেছারদের বাড়ি।”
আমার কথায় রিকশাওয়ালা খুব বিরক্ত হলেন। বললেন, “আগে বলবেন না? পেছনে ফেলে এসেছি।”
রিকশাওয়ালা রিকশা ঘোরালেন। ফুফুর বাড়ির কাছে এসে বললেন, “এটাই নেছারদের বাড়ি।”
ভাড়া চুকিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দেখি রাজ্যের ভিড়। ভিড় ঠেলে ফুফুর কাছে এসে বসলাম। উনার জবান বন্ধ। কাউকেই চিনতে পারছেন না।
কেউ একজন আমার হাতে এক চামচ দুধ এনে দিলেন। ফুফুর মুখে ঢেলে দিলাম। একবার আমার দিকে তাকালেন। কিছু কি বলতে চাইলেন? বোঝা যাচ্ছে না। উনার চোখে ভয়।
বাড়িভর্তি লোকজন, আত্মীয়স্বজন দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। সারাদিন কারও খাওয়া-দাওয়া হয়নি। ভাবলাম, কিছু শুকনো খাবার আনা যায় কী না।
ভাগ্নি মিলি ও লামিয়াকে খুঁজে বের করলাম, বললাম, “মায়েরা, চলো একটু পাশের বাজারে যাই।” মনে মনে ওদের জন্য খুব কষ্ট লাগছিল এটা ভেবে যে, বেচারিরা অনেকক্ষণ খুঁজেও আমাকে না পেয়ে কেমন বোধ করছিল?
বাজার থেকে কিছু বিস্কুট, মুড়ি এবং মিষ্টান্ন কিনে আনলাম। বললাম, সবাইকে দিতে।
রাত বারোটা। ফুফাত ভাইয়ের ঘরে শুয়েছিলাম। চোখে লেগে আসছিল। হঠাৎ ফুফুর ঘরে চিৎকার শুনতে পেলাম। দৌড়ে এসে দেখি, উনি ইতোমধ্যেই দেহত্যাগ করেছেন। সবাই কান্না জুড়ে দিল। কাকে রেখে কাকে সান্ত্বনা দেব?
ভোর হয়ে এলো। দিকে দিকে মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা কয়েকজন ছুটলাম কবর খোঁড়ার জন্য। কেউ কেউ গেল খাটিয়া আনতে।
সব আয়োজন সম্পন্ন করতে দুপুর গড়িয়ে গেল। পাশের বাড়ির লোকজন জোর-জবরদস্তি করে সবাইকে খাওয়ানোর চেষ্টা করল। এই শোকাবহ পরিস্থিতিতে কার মুখে খাবার রোচে?
ফিরে আসার সময় বারবার চোখ যাচ্ছিল ফুফুর কবরটার দিকে। মনে হচ্ছিল উনি বলছেন, “বাজান, আবার আসিস।”
চোখ ফেটে কান্না এলো। ফুফু নেই। হয়তো আর কখনোই উনার বাড়িতে আসা হবে না।
২৭ বৈশাখ ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
ভালুকা, ময়মনসিংহ।
ছবি।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গত পরশু ফুফাও মারা গেলেন।
২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১২
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নইলাহি রাজিউন।
আল্লাহপাক আপনার ফুফুজানকে বেহেস্ত নসীব দান করুন।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গত পরশু মারা গেলেন ফুফা। গত ২২ ডিসেম্বর মারা গেলেন দাদি।
৩| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩৫
শায়মা বলেছেন: খুব কাছাকাছি সময়ে এতগুলো পরমাত্মীয়ের চিরবিদায়!!! খুবই কষ্টকর!
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৪০
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: প্রকৃতির বিধান সত্যিই বড় নির্মম।
৪| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৯
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: কারো মৃত্যুর কথা শুনলে খুব খারাপ লাগে। মনে পরে যায় আমার প্রিয়জনদের কথা।
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১০:০৫
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কেউ মারা গেলে আমার বিশ্বাসই হতে চায় না। তবে ধীরে ধীরে তার শূন্যতা অনুভব করতে থাকি।
৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:১৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কেউ মারা গেলে আমার বিশ্বাসই হতে চায় না। তবে ধীরে ধীরে তার শূন্যতা অনুভব করতে থাকি- সেইম আমার ও।
১১ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন:
৬| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: মৃত্যু শুনে অবাক হবেন না। সব কিছু মিথ্যা হতে পারে কিন্তু মৃত্যু টাই সত্যি।
১১ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিক।
৭| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: একেবারে শূন্য হয়ে থাকবেন না।
পুরুষ মানুষের শক্তি হলো টাকা।
১১ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৪:০৬
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এখন সচেতন আছি।
৮| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:০৩
মিরোরডডল বলেছেন:
২২শে ডিসেম্বর দাদি আর ০৭ জানুয়ারি ফুফা চলে গেলেন।
ফুফুর মৃত্যু কবে হয়েছে, এর মাঝে?
একই পরিবারে একসাথে এতোগুলো মানুষের চলে যাওয়া, পরিবারের অন্যদের জন্য মেনে নেয়া অনেক কষ্টকর।
শুনেছি যেসব কাপলের সম্পর্ক খুব গভীর হয়, একে অপরের ওপর মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তাদের একজন চলে গেলে, আরেকজনও খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়।
যদিও শোনা কথা, কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কাকতালীয়ভাবে এমন হয়েছে বলেই মানুষ এটা বলে থাকে।
আমার এক খালা খালু বেশ কানেক্টেড ছিলো, খুব অল্পদিনের ব্যবধানে দুজন চলে যায়।
১১ ই জানুয়ারি, ২০২৫ বিকাল ৩:০৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এই লেখাটা ২০১৯ সালের দিকে লেখা। তখন ফুফু মারা যান। ২০২৪ এর ৭ জানুয়ারি ফুফা মারা গেলেন। এর আগে ২২শে ডিসেম্বর দাদি; এর মাসখানেক আগে এক আঙ্কেল। এরও কয়েক মাস আগে কাকা মারা গেছেন।
খুব খারাপ গেল এই কয়েকটা মাস।
৯| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৫৪
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লাগলো ।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ওকে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৫৫
শায়মা বলেছেন: ফুফুর জন্য দোয়া রইলো।