![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])
ফিরে ফিরে আসা
ভালুকা ছেড়েছি আট বছর হলো। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালুকা ও এর আশেপাশে কয়েক জায়গায় বসবাস করেছি, কোচিং করিয়েছি, স্কুলে পড়িয়েছি। বেকারত্বের সময়ের কত শত স্মৃতি যে এখানে জড়িয়ে আছে! এরপর গাজীপুরে, এরও পর ঢাকায় থিতু হলাম। মাঝেমধ্যে গ্রামে যাওয়া হলেও পুরোনো কর্মস্থলগুলোতে যাওয়া হয়নি বহুদিন।
এবার ইদের পর বেশ লম্বা ছুটি পেলাম। ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম পুরোনো জায়গাগুলো ঘুরে দেখব।
একদিন বাড়িতে বিশ্রাম নিলাম। এর পর প্রথমে দেখা করলাম নাজমুলের সাথে। সে আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী। অনেকদিন যোগাযোগ নেই তার সাথে। আমাদের বাড়ি থেকে বেশ দূরত্বে তার বাড়ি। যাহোক, মাঝামাঝি দূরত্বে এলাম দু’জন। অনেক বছর পর আমাদের দেখা হলো। দাড়ি রেখে পুরোপুরি হুজুর বনে গেছে। ঠাট্টা-মশকরা করলাম, তারপর দু’জন ঘুরলাম ফুলবাড়িয়ার অনেক জায়গায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কত স্মৃতিচারণ! সারাদিন একসাথে থেকে যে যার মতো বাড়ি ফিরলাম।
পরদিন দেখা হলো স্কুলজীবনের কয়েকজনের সাথে। তাদের একজন হারুনের সাথে দেখা হলো ১৭ বছর পর। মাধ্যমিকের পর আর দেখা হয়নি। সে কয়েক বছর বিদেশে ছিল। এখন দেশে পুরোনো স্কুলের পাশ দিয়ে হাঁটলাম আমরা।
এলাকায় ঘোরাঘুরির পর ভালুকা শহরের যে কোচিংটায় কাজ শুরু করেছিলাম ভান্ডাব এলাকায়, হাঁটতে হাঁটতে সেখানে গেলাম। গিয়ে দেখি কোচিংটা আর নেই। বসতবাড়ি হয়ে গেছে। বাড়িতে কাউকে পেলাম না। লোকজন কোথাও বেড়াতে গেছে হয়তো। পাশে একটা চায়ের দোকানে চা-পান খেয়ে ইমন নামে এক সহকর্মীর খোঁজ লাগালাম। একে-ওকে জিজ্ঞেস করে ইমনের মোবাইল নম্বর পেয়ে ফোন দিলাম তাকে। জানালেন, গাজীপুরে একটা এনজিওতে আছেন।
হাঁটলাম একা একা কিছুক্ষণ। হয়তো এদিকে আর কখনও আসা হবে না। আমি সবার কথা মনে করলেও তারা হয়তো জীবনের বাস্তবতায় পুরোনো কিছু মনে রাখেনি।
মনটা একটু খারাপ হলো। এর পর ভাবলাম নাহিদদের খোঁজ নিয়ে যাই। কিন্তু তারা আগের বাসায় আছে কি? খোঁজ নিয়ে দেখি সেখানে কেউ থাকে না। আশপাশে একে-ওকে জিজ্ঞেস করে ঠিকানা পেয়ে গেলাম। বাসার কাছাকাছি গিয়ে দেখি আমার ছাত্র নাহিদের মা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কয়েকজন মহিলার সাথে কথা বলছেন। আমাকে চিনলেন না। পরিচয় দেওয়ার পর উনি চিনতে পারলেন। উনার সাথে বাসায় গেলাম।
নাহিদ তখন আধোঘুমে। ওর মা ওকে ডেকে তুললে ও দৌড়ে এসে আমার হাত ধরল। ক্লাস এইটের ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। ডিপ্লোমা শেষ করেছে। তবে আমার সাথে তার আচরণ আগের মতোই। কথার ঝাঁপি খুলে বসল। ওর বোন এবং মাও যোগ দিল। থ্রিতে পড়ত মেয়েটা, নাম নিঝুম। এবার এসএসসি দেবে।
নাহিদের মায়ের অনুযোগ কেন এতদিন যোগাযোগ রাখিনি। উনারা মিস করেছেন। মোবাইল বদলের কথা বললাম।
মোবাইলে কথা হলো নাহিদের বাবার সাথেও। তারও উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। বললেন, পাগলা টিচারের পাগলা ছাত্র। কত মিস করেছে। উনি বললেন, ছেলেটাকে যেন ভালোমন্দ জ্ঞান দিয়ে যাই।
ফিরে আসার সময় সবাই খুব করে বলল আবার যেন আসি। অবশ্যই আসব বলে বিদায় নিয়ে এলাম।
২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ঢাকা।
ভালুকায় কাটানো আমার শেষ দিনগুলো
‘রোজ বাড প্রি-ক্যাডেট স্কুল’ থেকে বিদায় নেওয়ার পরও কয়েকমাস ভালুকায় ছিলাম। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের ৮ তারিখ পর্যন্ত, যতদিন না গাজীপুরে স্থানান্তরিত হই। আমার বাসা ঐ আগেরটাই থাকে। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের পেছনে। কাজিনের বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতাম আর তার মেয়ে মিলিকে পড়াতাম। জেরিন নামে ৫ম শ্রেণির আরও এক ছাত্রী মিলির সঙ্গে পড়ত।
‘রোজবাড’- এর আরেক ছাত্র নাফিস নাম, যে মিলির সঙ্গে ৪র্থ শ্রেণিতে পড়ত, তাকে বাসায় গিয়ে পড়াতাম। বছরের শুরু থেকেই তাকে পড়ানো শুরু করেছিলাম; এজন্য বোধহয় তাদের পরিবারের সঙ্গে একটা আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আর্মি অফিসার নাফিসের বাবা আমাকে সম্মান করতেন, তার মা আমাকে ছোট ভাই জ্ঞান করতেন। তার নানি আমাকে পুত্রজ্ঞান করতেন আর নাফিসের ভাই নাঈমও আমাকে পছন্দ করত।
এদের পড়ানোর পাশাপাশি রোজবাডের প্রিন্সিপাল হান্নান স্যারের ছেলে শাকিক ও ভাগ্নে ফাহাদকে পড়াতাম। প্রিন্সিপাল সাহেব আমাকে বিশেষ পছন্দ করতেন, তার স্ত্রীও পছন্দ করতেন। শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। তবুও আমার মধ্যে একটা চাপা কষ্ট কাজ করে। আমার বিরুদ্ধে সবাই যখন একাট্টা, তখন তারা কেন আমার পক্ষে কোনো কথা বললেন না? অবশ্য স্রোতের বিপরীতে কে আর যেতে চায়? আমার জন্য তারা কেন বিব্রত হবেন? আমি তো ক্ষণিকের অতিথি।
নাহিদ নামে ৮ম শ্রেণির একজনকে পড়াতাম। তার মা বিরুনিয়া মহিলা কলেজে পড়াতেন। এছাড়াও শান্ত, আমি যেখানে থাকতাম সে বাসার মালিকের ছেলে শরিফও পড়ত। আরও দু’জন তাদের সঙ্গে পড়ত। দু’ভাইবোন। মাত্র একমাস পড়েছিল। মেয়েটার নাম ছিল মিম আর ছেলেটার সাঈদ। তাদের সঙ্গে তুহিন নামে একজন পড়ত।
এদের বাইরে রাহাত নামে একজনকে পড়াতাম। সে নাহিদের সঙ্গেই ৮ম শ্রেণিতে পড়ত। হোটেলওয়ালা ফারুক ভাই’র ছেলেকেও পড়াতাম। তার নাম মনে নেই।
টিনা আর আতিকা নামে ৮ম শ্রেণির দু’জন মেয়েকেও পড়াতাম। তারা ‘ভালুকা গার্লস স্কুল’-এ পড়ত। হঠাৎ তাদের পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। বাসায় গিয়ে পড়াতে আমি বিব্রত বোধ করি; এ কারণে না স্কুলে মারামারির ঐ ঘটনার পর থেকে আমার প্রতি বিরুপ মনোভাব- জানি না ঠিক কী কারণে ওরা আর পড়েনি। স্কুলের ঘটনাটা অবশ্য অনেক পরের। ঐ ঘটনার দু’মাস আগে থেকেই ওরা পড়েনি। কেন পড়েনি; এজন্য একটা খুঁতখুঁতানি মনের মধ্যে সবসময় ছিল।
হঠাৎ করে লুৎফর ‘ভালুকা আইডিয়াল একাডেমি’ নামে একটা কোচিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। রোজ আধ ঘণ্টা হেঁটে সেখানে যেতাম। যাওয়া-আসা মিলিয়ে একঘণ্টা। সকালে যেতাম বলে ব্যয়ামও হয়ে যেত। এরমধ্যে এক লোক গৃহশিক্ষকের খোঁজ করছিলেন তার মাতৃহীন ছেলেকে পড়ানোর জন্য। ‘রোজবাড- এর প্রিন্সিপাল আমার ঠিকানাটা দিয়ে দেন। ছেলেটার নাম স্বাধীন, তার সঙ্গে রামিম নামে আরও একজন পড়ত।
কোচিংটা ছিল থানার পূর্বদিকে পনাশাইল রোডে। প্রধান ছিলেন সুমন আর লতা নামে দু’জন। লতা ম্যাডাম আমাকে খুব ইজ্জত করতেন। কিছু কিছু ছেলেমেয়ে বাদে কোচিংয়ের বেশিরভাগ ছেলেমেয়েই শান্তশিষ্ট ছিল। স্বপ্না নামে একটা মেয়ের কথা মনে পড়ে। তার বড় বোন ভালুকা থানায় কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বপ্না আমার কাছে প্রাইভেট পড়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিল। আমি বলেছিলাম ইদের পর থেকে পড়াব।
কলেজের কাছ থেকে পনাশাইল রোড- প্রতিদিন হেঁটে যেতে কষ্ট হতো বেশ। কলেজ কোচিংও শুরু করেছিলাম। শেষদিকে বিকেলের কোচিংও। মানে আমাকে দিনে তিনবার যাতায়াত করতে হতো। হাঁপিয়ে ওঠেছিলাম।
বাসা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিই। কোচিংয়ের কাছাকাছি হলে ভালো হয়। তাই বাসা ঠিক করি মেঘার মাঠে। কোচিংয়ের খুব কাছেই। এখান থেকেই স্বাধীন-রামিম, নাফিস এবং মিলি-জেরিনদের পড়াতে যেতাম।
ইদের পর আবার যখন কোচিং শুরু করলাম, এবার একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেললাম। ক্লাসে শোরগোল করায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছেলের মাথায় বেত্রাঘাত করে বসলাম। মামলা-মোকদ্দমা হওয়ার জোগাড়। সুমন স্যার আমাকে কোচিংয়ে আসতে বারণ করে দিলেন। আমাকে মারতে নাকি লোক লেগে গিয়েছিল।
যে কষ্ট লাঘব হওয়ার জন্য মেঘার মাঠে বাসা নিলাম, সে কষ্ট আর লাঘব হলো না। প্রতিদিন কলেজ এলাকায় আসতেই হতো। সেই একই দূরত্ব।
আইডিয়ালের চাকরি চলে গেলেও আরও একটা কোচিংয়ে চাকরি জুটে যায়। এটা ‘হলি চাইল্ড স্কুল’- এ। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা বেঁকে গেছে, সেখান দিয়েই কিছুদূর যেতে হয়। হাসপাতাল রোড দিয়েও যাওয়া যায় অবশ্য।
স্বাধীন-রামিমকে পড়িয়ে নাহিদকে, তাকে পড়িয়ে নাফিসকে; তারপর কোচিং। কোচিং শেষে শাকিক ও ফাহাদকে পড়ানো শুরু করি। তারপর মিলি আর জেরিনকে পড়াতে যাই। সেখানেই খাওয়া-দাওয়া-বিশ্রাম নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে ১১টা-১২টা। এভাবেই চলতে থাকে আমার জীবনসংগ্রাম যতদিন না গাজীপুর চলে আসি।
৪ ভাদ্র ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
ভালুকা, ময়মনসিংহ।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:২৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আর কখনও ওই কোচিংয়ে যাইনি। বিষয়টা সুমন স্যার হ্যান্ডেল করেছিলেন।
২| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ২:৩৪
এইচ এন নার্গিস বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পড়তে । বাস্তব জীবন নিয়ে লিখা পড়তে ভালো লাগে। গাজীপুরে নিশ্চয় বেটার জব পেয়েছেন ।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৪:৪২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: গাজীপুরের জীবনটাও সংগ্রাম নির্ভর ছিল।
৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: বাচ্চাদের মারতে হয় না।
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়- আপনার মতো নিরীহ মানুষ এক ছাত্রদের মাথায় বেত দিয়ে মেরেছে।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় আপনার মতো নিরীহ মানুষ এক ছাত্রর মাথায় বেত দিয়ে মেরেছে। তাহলে বুঝুন কতটা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে এমন কাজ করেছি। যদিও পরে অনুতপ্ত হয়েছি।
৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪৮
নতুন নকিব বলেছেন:
বাচ্চাদের মারধোরের মত নেতিবাচক বিষয়গুলো থেকে এখনও আমাদের সমাজ বেড়িয়ে আসতে পারেনি। এটা দুঃখজনক।
আপনার জীবন অনেক সংগ্রামের। আপনার সাফল্য কামনা করছি।
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এই যুগে ছেলেমেয়েদের পড়ানো খুব কঠিন। বিশেষ করে নানান জেলার ছেলেমেয়ে যখন একত্রে পড়ে, ওদের সামলানো যায় না। যাহোক, মারধর অবশ্যই নিন্দনীয়। এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম।
৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৫০
রাজীব নুর বলেছেন: সময় করে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা নিয়ে প্রবন্ধ আছে অবশ্যই পড়বেন।
১১ ই এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:২৭
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ওকে।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১২:১৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: মামলা-মোকদ্দমার শেষে কি হয়েছিলো?