নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সমাজ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি....

মো: হাসানূর রহমান রিজভী

একদিন তুমি এসেছিলে ভবে,কেঁদেছিলে তুমি হেসেছিলো সবে... এমন জীবন করিবে গঠন,মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন......

মো: হাসানূর রহমান রিজভী › বিস্তারিত পোস্টঃ

জানোয়ার

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১০



একরঙা একঘুড়ির প্রকাশক সাধু ভাইয়ের আহবানে সাড়া দিতে এই অনূগল্পটি লিখি।লিখেই পড়লাম বিপদে!সাধুভাই চাইছে চারশ শব্দ,বাট আমার হয়েছে ছয়শ প্লাস! এক্কেবারে মাথায় হাত।গল্প পাঠানোর বালি এক দিন,আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আর একটি চারশ শব্দে অনূগল্প লিখে ফেল্লাম।যেটা এই বইমেলায় প্রকাশিত হওয়ার কথা।তাই আগের গল্পটি আপনাদেট সামনে উন্মুক্ত করে দিলাম।সামান্যতম আনদ্দ পেলেও সার্থক হব....ধন্যবাদ।

"আমার চেয়ারম্যানের নাম এমডি জাফরুল্লাহ চৌধুরী।বয়স বিয়াল্লিশ। সুদর্শন চেহারা।ভাল স্বাস্থ্য। পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি মত লম্বা।ওজন হবে আশি কেজির মত।যতক্ষন অফিসে থাকে কফি খায়।সাথে সিগরেট।আমার দূরসম্পর্কের বোন জামাই।এমএ পাশ করার পর বছর দুয়েক ঘোরাঘুরি করে অনেকটা বোনের হাতে পায়ে ধরেই এই অফিসে চাকুরি জুটিয়েছি।জাফরুল্লা চৌধুরির সামান্য চরিত্র গত ত্রুটি আছে।আমার দূরসম্পর্কেরর বোন রুবিনা আক্তার চাকুরি ঠিক হওয়ার পর চোখ বড় বড় করে বলেছিলেন চোখে চোখে রাখতে।এবং সব খবরা খবর পাস করতে।জামাই বাবুকে আমি চোখে চোখে রাখি কিন্তু কিছু কিছু কথা বাদ ছাদ দিয়ে বোন কে বলতে হয়।

আজ এক বছর হল জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অধীনে চাকুরি করছি।এক বছরেই বেতন বেড়েছে পঞ্চাশ পারসেন্ট।কিন্তু শুরুটা মোটেও সুখকর ছিল না। আমার বোন রুবিনা আক্তার ডালে ডালে থাকলেও জামাইবাবু থাকেন পাতায় পাতায়।এক্সিকিউটিভ হিসেবে জামাইবাবুর রুমের পাশে একটি রুম সহ চেয়ার টেবিল দেওয়া হলেও আমি বস্তত জাফরুল্লাহ চৌধুরির পিয়নের কাজ করি।জাফরুল্লাহ স্যার প্রথমদিনই আমাকে ডেকে বলেছেন
"চাকুরি করার ইচ্ছা আছে?"
আমি আমতা আমতা করে বলেছি "জ্বী স্যার"
স্যার বল্লেন"গুড,তোমার চোখ আছে,কান আছে কিন্তু মুখ নাই,বুঝেছ?"
কিছু না বুঝেই "জ্বী স্যার" বলে দিলাম।স্যার আরো বল্লেন"ইন্টারকমে একটি রিং হয়ে যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে আমার রুমে চলে আসবে।বুঝবে আমি কল দিয়েছি।মুখের ব্যাপারটা মাথায় রাখবে।যাও এই জিনিস গুলো কিনে আনো।"বলে জাফরুল্লাহ স্যার একটি ভাজ করা কাগজ আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।আমি হাত বাড়িয়ে ভাজ করা কাগজ খানি নিয়ে "জ্বী-আচ্ছা স্যার" বলে রুম থেকে বেরিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেল্লাম।আমার রুমে এসে প্রায় দুই গ্লাস পানি খেয়ে চেয়ারে বসলাম।বুকের ভেতর হ্যামার চলছে।এক বিচিত্র কারনে আমরা উর্ধতন ধনী কর্মকর্তা দেখে ভয় পাই।

মাত্র তিনদিন হল অফিসে জয়েন করেছি স্যার কেনাকাটার লিস্ট দিয়েছেন,কিন্তু টাকা পাব কোথায় এই আশংকায় আমার হৃদস্পন্দন আরো দ্রুত হল।কাছে শ-তিনেক টাকা আছে।পকেট থেকে লিস্টিটা বের করলাম এই আশায় যদি শ-তিনেক টাকার ভেতর বাজারটা হয়।ভাজ করা কাগজ খুলতেই ভেতর থেকে একহাজার টাকার কয়েকটি নোট উঁকি দিল।গুনে দেখি পাঁচটা।অবাক হলাম লিস্ট দেখে।
১.একটি টুথব্রাশ
২.পাঁচটি মিনি প্যাক শ্যাম্পু
৩.একটি মিনি প্যাক টুথ পেস্ট
৪.একটি ছোট সাবান
৫.এক হালি কমলা।

এই কয়েকটা আইটেমের জন্য পাঁচ হাজার টাকা! ব্যাপারটা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হল।নিশ্চয় কোন ব্যপার আছে।আমি দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম।দেখে দেখে সবচে ভাল টাই কিনলাম।কিনে দ্রুত অফিসে এসে পড়লাম।বড়লোক গুলো পাগল হয়।বুকে খানিকটা ধুকধুকানি অনুভব করলাম এই ভেবে হয়ত এর ভেতরেই স্যার আমার খোজ করেছে!

আমাদের গার্মেন্টস এর ব্যাবসা।নিজেদের একটি বায়িং হাউজও আছে।আমাদের তিনটা ফ্যাক্টরিতে হাজার খানেক ওয়ার্কার কাজ করে।আমার বোন জামাই জাফরুল্লাহ স্যার এর বাবার একটি ছোট টেইলার্স এর দোকান ছিল সাভারে।জাফরুল্লাহ স্যার সেই তিল কে তাল নয় বড় কাঁঠাল বানিয়েছেন।মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগছে এই ভেবে,গত তিন দিনে এটা দিয়ে আমি মাত্র দুটো কাজ করলাম।দীর্ঘশ্বাস ফেলি।তবে চল্লিশ হাজার টাকার এই বেতনে আমি যথেষ্ট খুশি।এই বাজারে এটা অনেক।আমার ফ্যামেলিকে এখন পুরো সাপোর্ট দিতে পারব।ইন্টার কমের এক রিংটোন আমার চিন্তায় ছেদ পড়ল।বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগল,ইন্টার কমে মিসকল কেন??ঝুঝতে পারার সাথে সাথে আমি ধরমড়িয়ে উঠে বাজারের থলে সহ স্যারের রুমের দিকে হাটা দিলাম।এবং আমার বুকের ধুকধুকানি আবার শুরু হল।

স্যারের রুমে ঢোকার নিয়ম আমাকে শেখানো হয়েছে।দরজা যদি নব ঘুরিয়ে খোলা যায়,খুলে মাথা ঢুকিয়ে অনুমতি নিতে হবে।স্যার গ্রিন সিগন্যাল দিলে ঢুকে পড় নীতি।আমি দরজা খুলে দেখি স্যারের অপজিট চেয়ারে একটি মলিন কাপড়ের চুল বেনিকরা মেয়ে বসে আছে।আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।স্যার আমার দিকে তাকালেন।বল্লেন"এসো ভেতরে এসো"

আমি ভেতরে গেলাম।সরাসরি স্যারের দিকে সদ্য কিনে আনা জিনিস গুলো বাড়িয়ে দিতে যাচ্ছিলাম,স্যার ধমকে উঠলেন"হেই,মিঙা!এগুলো দিয়ে আমি কি করব।টাকাটা তোমার কাছে রাখ।কমলা চারটা টেবিলের উপর রাখ।বাকি গুল বাথরুমে নিয়ে যাও।বাথটাবে ড্রেইন প্লাগ লাগাবে,ট্যাপ ছেড়ে অর্ধেকটা পানিতে ভরবে।তারপর শ্যাম্পু চারটা পানিতে মেশাবে।যাও।"

আমি কথা না বলে তারাতারি স্যারের রুম লাগোয়া বাথরুমে ঢুকে গেলাম।আমার বুঝতে বাকি রইলনা কি হতে যাচ্ছে এখানে,আমার ধারনা ঘন্টা খানেক পড় ভূল প্রমানিত করে কঠিন শিক্ষা দিল এ পৃথিবী ।বাথরুমে কাজ করার সময় আমি মেয়েটার উচ্চস্বরে হাসির শব্দ শুনলাম।অল্প বয়েসি মেয়ে।মুখ দেখতে পাইনি,মেয়েটির ঘাড় দেখেছি।অতিরিক্ত ফরসা।

লজ্জা,ক্ষোভে ঘৃনায় আমার আঙ্গুল গুলি আরোষ্ঠ হয়ে আসছিল! এ আমি কি করছি??আমি একজন হায়ার এডুকেটেড যুবক!নিজের বোনের সাথে বেইমানি। কিন্তু সেইসব দিনগুলি "যখন প্রতিদিন দূপুরে না খেয়ে রাস্তায় চাকুরির জন্য ঘুরতাম"মনে পড়াতে আমার সকল ইগো মহুর্তে অদৃষ্য হয়ে গেল।আমি স্যারের রুমের সেই কিশোরি মেয়েটির হাসির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাথরুমে মৃদু হেসে নিলাম।

আমি বাথরুম থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে স্যার মেয়েটিকে আদেশ দিলেন "যাহ বাথটাবে শরীর ডুবিয়ে আধাঘন্টা থাকবি,আর গা ডলবি।ব্রাশ করবি দুই বার।সাবান দিয়ে ভাল করে গোশল করে বের হবি।গা-মুখ থেকে গন্ধ আইলে এক লাথি দিয়ে আট তলা থেকে নিচে ফেলে দিব।"

কথাটা শুনে মেয়েটি খিলখিলিয়ে হেসে উঠল।যেন অনেক মজার কথা।মেয়েটি বাথরুমে ঢোকার পর স্যার আমার দিকে ফিরলেন।আমার দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকবা।কেউ এলে বলবা স্যার জরুরি মিটিঙ করছেন।আর তোমার বোন এলে কি বলবা?? বল কি বলবা??"

আমি জিজ্ঞাস করলাম" কি বলব স্যার??"স্যার মৃদু হেসে বল্লেন"বলবা স্যার নাই,মিটিঙে গিয়েছেন,বুঝেছ??"

আমি "জ্বী স্যার "বলে বাইরে বেরিয়ে এলাম।" স্যারের রুমের সামনে পায়চারি করতে করতে আর উল্টো পাল্টা ভাবতে কত সময় কেটেছে জানিনা।চিন্তায় ছেদ পড়ল যখন স্যারের রুম থেকে চিৎকার সাথে গোঙ্গানি একসাথে ভেসে এলো,আমি উদ্দিগ্ন হয়ে স্যারের দরজায় কান লাগালাম।স্যারের স্পষ্ট কন্ঠ শোনা যাচ্ছে"উপর হ,উপর হ,টেবিলের উপর উপর হয়ে শো....এহ কথা শোনে না...হ কইলাম.....হারামজাদি"

আমার গা কাপতে লাগল...আমি রুমে চলে এলাম।দরজা ছেড়ে দিয়ে এলাম।আসুক সবাই।দেখুক এই জানোয়ারটাকে।জাফরউল্লাহর আসল চেহারা সবার দেখা দরকার আছে।কেউ আসেনা,কেউ আসবেও না।নিপীড়িত হওয়া মানুষের জায়গায় নিজে না থাকতে পেরেই সবাই খুশি!এ সমাজ, প্রশাসন, আইন,হিউম্যান রাইট সব কিছু জাফরউল্লাহর পাশে থাকবে।মেয়েটি অল্পকিছু টাকাতে মুখ বুজে নিবে।আবার কখনও ভয়াবহ আর্থিক সংকটে মেয়েটি কি জাফরুল্লার কথা ভাববে??? হয়ত,হয়ত না।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:০৩

সিলেক্টিভলি সোশ্যাল বলেছেন: :(

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৬

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: এটা নিছকই একটা গল্প....

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


প্লটটা মোটামুটি, লেখায় জড়তা আছে, সাডলীল হয়নি।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:০৪

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,লেখা পড়ে মন্তব্য করার জন্য।

কষ্ট করে যদি একটু পরামর্শ দিতেন জড়তা কাটিয়ে কিভাবে সাবলীল ভাবে লেখা যায় তাহলে খুব উপকৃত হতাম।

ধন্যবাদ গাজীভাই।

[email protected]

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.