![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন তুমি এসেছিলে ভবে,কেঁদেছিলে তুমি হেসেছিলো সবে... এমন জীবন করিবে গঠন,মরনে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভূবন......
প্রথম দেখা।
হাসানূর রহমান
পৃথিবীর সবগুলো সকালে সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠলেও সব গুলো সকাল এক রকম হয় না।একজন মানুষের জীবন চলে যায়।কাজ খাওয়া ঘুম।পরিবারের দায়িত্ব পালন।মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব।একটা বয়সে এসে মোটামুটি সবাই একবার হলেও ভাবে,হে আল্লাহ আমার গাড়ী বর বাড়ীর দরকার নেই,কোনওমতে দুটো ডালভাত হলেই চলবে।এই দুটো ডালভাত যোগাতেই হিমশিম খেতে হয়।জগতের বাস্তবতায় কিছু চাওয়া পাওয়া গুলি সামনে এলেও অতীতের কিছু চাওয়া বাস্তবতার ভারে চাপা পড়ে।ওগুলো আর কোন মতেই মুখ তুলতে পারে না।আমরা এক সময় ভূলে যাই।যতদিন না পর্যন্ত সেই সব ভারি বাস্তবতা গুলো সরানোর দরকার হয়।
এক দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা করে চা খাচ্ছি,অফিসে যাওয়ার প্রিপারেশান নিচ্ছি মনে মনে।অনান্য দিনের মতই সকাল।আমার স্ত্রীরর নাম অনিতা।অনিতাও খুব ব্যাস্ত অনান্য সকালের মত।হটাৎ অনিতা আমার সামনে এসে মুখ কাল করে ঠাস করে কপালে চাপ দিলো।বুঝলাম হয়ত কিছু ভূলে গিয়েছে,আমি খুব একটা পাত্তা দিলাম না।এটা হরহামেশা হয়েই থাকে।একটি সিগরেট ধরিয়ে আমি চা পানে মন দিলাম।
অনিতা হন হন করে গিয়ে ঘর থেকে একটি বড়সড় খাম নিয়ে এলো।আমার সামনে টেবিলে রাখল।আমি খামটা হাতে নিলাম।একটি বিয়ের কার্ড।মুহুর্তে একটি ঝটকা বাতাস আমার জীবনে জড় বস্তুর মত পড়ে থাকা ভাড়ি বাস্তবতা এক নিমিশে সরিয়ে কিছু অনুজ্জল মিইয়ে যাওয়া স্মৃতি হটাৎ চোখের সামনে মেলে ধরল।বাস্তবতার ভাড়ে চাপা এই শ্বাস আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়া বুক হটাৎই অনাগত মুহুর্তের আশংকায় শংকিত হয়ে অস্বাভাবিক একটা অনুভূতির জন্ম দিল।
আমি আর খামটা খুলে দেখলাম না।কন্ঠ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে অনিতা কে জিঙ্গেস করলাম' কবে অনুষ্ঠান?'
'নেক্সট মান্থের চার তারিখ,বাট আমাদের চার দিন যেতে হবে।আমি কিন্তু অনেক কিছু ভেবে রেখেছি,এবার কিন্তু অনেক মজা করব।তুমি কিন্তু না করতে পারবে না....'
'আমি এসব ব্যাপারে কখনও তোমাকে নেগেটিভ কিছু বলেছি??'
অনিতা এসে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরল।কপলে কপল ছোয়ালো।
"আমি জীবনে কি ভাল কাজ করেছিলাম জানি না,যার প্রতিদান আল্লাহ আমাকে তোমার মত একজন জীবনসঙ্গী দিয়ে দিয়েছেন,আমি অনেক হ্যাপি"
"তো এই ভাল জীবনসঙ্গী কে কি অফিস যাওয়ার আগে আর এক চা কি খাওয়ানো যাবে?" আমি সুযোগের সৎব্যাবহার করলাম।চা বানাতে বললে অনিতা রেগে যায়।যখন মুড ভাল থাকে তখন পরপর কয়েক কাপ চা খেয়ে নিই।
অনিতা তুড়ি বাজিয়ে কিচেন এ গেল।আমি দীর্ঘশ্বাস ফেল্লাম।চা মনে হয় না গলা দিয়ে নামবে।গলার ভেতর কিছু একটা দলা পাকিয়ে আছে।আমি কার্ডের দিকে তাকিয়ে আছি।
অফিস যাওয়ার আগে সময় নিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখলাম।এই আটত্রিশ বছর বয়সে অনেক কিছুই আমার ভেতর থেকে চলে গেছে।অনেক কিছুই নতুন করে যোগ হয়েছে।
আজ অফিসে একটু দেড়িতেই পৌছালাম।মাথায় হাজার খানেক চিন্তা এসে ঘুরপাক খাচ্ছে।আমার ছোট অফিস।বসের ইটভাটা, রেস্টুরেন্ট আর কিছু কোম্পানির এজেন্সি আছে।আমি এই অফিসের ম্যানেজার।তিন জন ম্যানপাওয়ার।আমি সহ চার জন।আমার বস বাবার বন্ধু ছিলেন।অনার্স কম্পলিট করার পর কোথাও কিছু না পেয়ে শেষে বাবার রিকোয়েস্টে আমাকে এখানে চাকুরি দিয়েছিলেন।আমি এখানে বেশ ভাল আছি।স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার।বস আমাকে বিশ্বাস করে সব কিছু আমার উপরে দিয়ে রেখেছেন।আমিও চেষ্টা করে যাচ্ছি।আমি পুরো অফিসে চোখ বোলালাম।খুবই সাধারন অফিস।আমার কোন পারসোনাল কামরা নেই।ছোট্ট একটা টেবিল আমার জন্য ছোট্ট একটি চেয়ার।গেস্টদের জন্য আমার টেবিলের সামনে দুটি চেয়ার।একজন পিয়ন আছে মালিকের আত্বিয়।তাকে অর্ডার করার চেয়ে নিজে কাজ করা অনেক ভাল।এখানে আমায় কেউ স্যার ডাকে না।বেল দিলে চা কফি আসে না।মাস শেষে মোটা মাইনে পাই না।এসির বাতাস নেই ক্রেতা দূরস্ত পোশাক নেই।একজন ছেড়ে যাওয়া প্রেমিকার প্রতিশোধের জন্য এরচে ভাল নিদর্শন আর হতেই পারে না।ব্যার্থতার সব উপকরনই আমার, আমার কাজের মধ্যে বিদ্যমান।যেন অদৃষ্টের হাসি।
আমি অফিসে বসে এসিট্যান্ট ম্যানেজার রেজা কে ডাকলাম।
"শফিক ভাই খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে,ব্যাপার কি?"
"রেজা,নেক্সট মান্থের ফাস্ট উইকে কি কোন ট্যাুর আছে ঢাকা চিটাগাং?"
"আগামী দুই মাস কোন ট্যুর নেই,কেন শফিক ভাই ভাবির সাথে ঝগড়া করেছেন নাকি? "গলা নিচু করে কথাটি বলে,গলা চড়িয়ে হো হো করে হাসল রেজা।
"না না একটা বিয়ের অনুষ্ঠান আছে তো তাই আস্ক করলাম।"
"এইটা কোন কোথা বল্লেন শফিক ভাই,আমি আছি,রিমন আছে।ট্যুর থাকলে আমরা যাব।আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন"
আমি দীর্ঘশ্বাস ছারলাম।অফিসের কাজে মন বসল না।আমি তারাতাড়ি অফিস থেকে বেরিয়ে এলাম।
সন্ধ্যা সাতটায় বাসায় ঢুকে আমার মনটা ভাল হয়ে গেল।আমার একমাত্র সন্তান দৌড়ে আমার কাছে এসেই অভিযোগ করতে শুরু করল,আমি এত দেরিতে কেন এলাম।আমি মাহিম কে কোলে তুলে নিলাম।অনেক বড় হয়েছে।আর দু মাস পর সাতে পরবে।মাহিমের মাঝে আমি নিজেকে দেখতে পাই।সেই গায়ের রঙ,সেই নাক,সেই চোখ মাথা ভর্তি কালো চুল।আমরা মতই লম্বা হবে ছেলেটি।চেহারায় মায়ের কোমলতা আছে।আমার বুকের ঘনীভূত কষ্ট মাহীম কিছুটা কমিয়ে দেয়।আমার বড় বাড়ী নেই,বড় চাকরি নেই,গাড়ী নেই কিন্তু আমার অনীতা আছে মাহীম আছে।এক সময় আমি সন্ধ্যাকে ছারা কিছু কল্পনা করতে পারতাম না।এখন মনে হয় সেই সব কল্পনা ছিল ছাই পাশ।মাহীম অনীতার কাছে সেই সব ধুলোও হবে না।মনে মনে হাসলাম।যেন আমি হেরেও জিতেছি।
আমার সেঝ খালার ছেলের বিয়ে।একই শহরে বাড়ি।আমার সেঝ খালার ছেলে আর সন্ধ্যা চাচাত ভাই বোন।আমার আর সন্ধ্যার সম্পর্কটা সেখান থেকেই শুরু।লম্বা সম্পর্কের পরিনতিটা সুখকর হয় নি।সন্ধ্যা অবস্যই তার কাজিনের বিয়েতে আসবে।আমাকেও আমার বউ বাচ্চা নিয়ে হাসিমুখে যেতে হবে।অনিতা কিছুই জানে না।অনেকেই আমাকে আর সন্ধ্যাকে লুকিয়ে দেখবে আমাদের রিএকশ্যন দেখার জন্য।অনিশ্চয়তার কালো আধারে ডুবে আমি সেই অনাগত মুহুর্তের অপেক্ষায় থাকি কিছুটা শঙ্কা নিয়ে।আমাদের নিজ,সমাজ,পৃথিবীর সাথে অভীনয়ের এক নতুন মাত্রা যোগ হবে সেদিন সন্দেহ নেই।প্রথম দেখা হবে।সম্পর্ক ভাঙার প্রায় বারো বছর পর প্রথম দেখা.........
২৮ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪০
মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: গাজী ভাই সালাম নিবেন।মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।এটা একচুয়ালি মন খারাপ নয়।অনিশ্চয়তা বলতে পারেন।
২| ২৭ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:৪৩
বিজন রয় বলেছেন: পৃথিবীর সবগুলো সকালে সূর্য পূর্ব দিক থেকে উঠলেও সব গুলো সকাল এক রকম হয় না।
সুন্দর শুরু।
এটা প্রথম দেখা হয় কিভা্বে?
২৮ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪১
মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: বিজন ভাই,সম্পর্ক ভাঙ্গার পর প্রথম দেখা।
৩| ২৮ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:০০
মক্ষীরাজা বলেছেন: ভাইয়ুমণিতা!!!!!!!!!
বাহ!!!!!!!!
মুগ্ধ মুগ্ধ মুগ্ধ!!!!!!!!
ঠিক পরীর দেশের রাজণ্যদের লেখা !!!!!!!!
উলে জাদুরে। উম্মা
২৮ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:০৬
মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: আপনার মন্তব্যের অর্থ বুঝলাম না!
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
সম্পর্ক ভেংগে গেলে ১২ দিন পর দেখা হলে মন খারাপ হতে পারে; বিয়ে করার পর, মন খারাপ হবে কেন?